somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রুমী ইয়াসমীন
আয় ফিরে আয় শৈশব আমারnআয় ফিরে আয় আমার মেয়েবেলা nএক্কা দোক্কা, চড়কি চড়া, ডাঙ্গুলী আর পুতুল খেলা; nআয় ফিরে আয় শৈশব আমার nআয় ফিরে আয় আমার ছেলেবেলা nমাছ ধরা আর চড়ুইভাতী, ফড়িং, পাখির পিছে ছুটা; nআয় ফিরে আয় শৈশব আমার nআয় ফিরে আয় আবার আমার কাছে nগোল্লাছুট

ডায়েরির পাতাজুড়ে আমার শৈশবস্মৃতি কথন.....

০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ১০:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



প্রায় দুই যুগ হয়ে গেল! মনে হচ্ছে এইতো সেইদিনের কথা,,,,,

দক্ষিণের জানালায় তাকিয়ে আছি ৷ শীতের হিমহিম বাতাস গায়ে এসে লাগছে৷ বন্দরের ঝাঁঝালো সোনালী আলোর ল্যাম্পপোস্টগুলো জ্বলজ্বল করে জ্বলছে আর জাহাজের মাস্তুল ও ক্রেয়ানের মাথাগুলোর নড়াচড়া দেখা যাচ্ছে ৷ আর হঠাৎই ছোট্টবেলার ফেলে আসা পুতুলখেলার দিনগুলোর কথা খুব মনে পড়ছে৷
যখনই রাতে আমার হঠাৎ করে ঘুম ভেঙে যেত তখন আমি একাএকা চুপচাপ উঠে পুতুলের বাক্স বের করে নিয়ে খেলতে বসতাম, যতক্ষণ না খেলতে খেলতে আবার ঐ অবস্থায় ঘুমিয়ে পড়া যা নিজেই টের পেতাম না। পরে সকালে সবাই ঘুম ভেঙে দেখতো আমাকে ওই অবস্থায় পুতুলের বাক্স সাথে নিয়ে ঘুমিয়ে আছি!



মনে পড়ছে পুতুলের বিয়ে দেয়ার সেই অনুষ্ঠানটার কথা! আজও সেই দিনের আনন্দটা আমি পরম সুখে অনুভব করতে পারি ও তা স্পষ্ট আমার চোখের সামনে ভাসছে ৷
আমি প্রতিদিনের স্কুলের টিফিনের টাকা জমিয়ে আমার ছেলে পুতুল আর আমার সেজোবোন সুমীর মেয়ে পুতুলের সাথে বিয়ে দেয়ার অনুষ্ঠানটা করেছিলাম। আমরা দু'বোন মিলে দোকান হতে কেক, চকলেট, বিস্কিট, চানাচুর ও কলা কিনে এনেছিলাম। আমাদের একটা আলাদা খালি ঘরের রুম সাজানোর জন্য জরি সুতা ও রঙ্গীন কাগজ কিনে এনেছিলাম। খুব সুন্দর করে রুমের চারপাশে আম্মার তুলে রাখা রঙিন কাতান শাড়িগুলো দিয়ে ডেকোরেট করেছিলাম আর এতে সাহায্য করেছিল আমার বড় ভাইয়া, বড় আপা ও মেজো আপা। আমার আম্মা কাগজ দিয়ে সুন্দর সুন্দর আলপনা কাঁটতে জানতেন তাই আম্মা রঙ্গীন কাগজগুলো দিয়ে অনেক সুন্দর করে আলপনা কেঁটে দিয়েছিলেন সেগুলো দিয়ে পুরো রুমটা সাজিয়েছিলাম আমরা। আর আম্মা রেধে দিয়েছিলেন ভুনা খিচুড়ি ও ডিম।
সেদিন প্রায় ১৭/১৮ জন আমাদের সব খেলার সাথী হতে পাওয়া পুতুলের উপহার গুলোর কথা খুব মনে পড়ছে ৷ সবাই নিজ হাতে নানান ধরনের কাপড় দিয়ে ডিজাইন করে পুতুলের জন্য জামা কাপড় বানিয়ে প্যাকেট করে এনেছিল। আর সেসব উপহারগুলো পেয়ে আমার সে কী মহা আনন্দ লেগেছিল যা বলে বুঝানো যাবেনা!
মনে পড়ছে রোজ বিকেলে ধানের ক্ষেতে হাঁটু সমান কাদা পানিতে নেমে নারকেলের বড় মালা(বাটি) ও সুপারি গাছের খোল দিয়ে নৌকো বানিয়ে পুতুলকে চড়ানোর প্রতিযোগিতা আর তা চলতো একেবারে সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত৷
যেমন- কে সবার আগে তার পুতুলকে নৌকা চড়িয়ে অক্ষত নৌকা নিয়ে ধানক্ষেতের অপর প্রান্তে পৌঁছতে পারে!
তারপর কাদা-পানিমাখা শরীর নিয়ে বাসায় ফিরে বড় আপা ও আম্মার অসম্ভব বকা খাওয়া ছিল নিত্য দিনের ব্যাপার! আর সাথে বড় আপার হাতে ঐতিহাসিক চিমটি খাওয়া যা আজও আপা সেই বদ অভ্যাসটা পরিত্যাগ করতে পারেননি!

আর বার্ষিক পরীক্ষার শেষ দিনতো যেন স্কুল হতে নাচতে নাচতে বাসায় ফেরা, অনেকদিন স্কুল ছুটি ও পড়াশোনা হতে মুক্তির আনন্দে!
ফিরে সাথে সাথেই সব খেলার সাথীদের দলবল নিয়ে চলে যেতাম খেলতে না মেনে কারো শাসন বারণ!
চলতো চড়ুইভাতির আয়োজন৷ সকালে নাস্তা করেই দলবেঁধে ছুটে চলতাম পাহাড়ে বুনোফুল, লতাপাতা এনে খেলার ঘর সাজাতে৷ যেন এতেও চলত এক মহা প্রতিযোগিতা! কে কার চেয়ে সুন্দর করে তার খেলার ঘর সাজাতে পারে৷ আরো চলতো পাহাড়ি চড়ার (কর্ণফুলী নদীর ছোট খাল) পানিতে মাছ ধরার মহা ধুম! গামছা নিয়ে চলে যেতাম দল করে মাছ ধরতে চড়ার স্বচ্ছ হাঁটু পানিতে৷
আহা! সে কী মহা আনন্দ পেতাম যখন গামছায় অনেক ছোট ছোট মাছ আটকে যেত!
আর সারা দুপুর পর্যন্ত চলত এসব......

জানিনা এমন সুন্দর রূপকথার মতই সোনালী-রূপালী শৈশব স্মৃতি ক'জনার জীবনে আছে যতটা আমার জীবনে আছে!?!
যা বলতে গেলে লিখতে গেলে যেন সারাজীবনেও পুরাবে না সেই হাজার দুষ্টমিভরা দস্যিপনায় মাতানো খেলাধুলায় ভরপুর আমার প্রিয় শৈশব জীবনটা!


বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ আজ হতে বরাবর ৫ বছর পূর্বে এইদিনে ফেসবুকের ওয়ালে শেয়ার করা আমার শৈশব স্মৃতিকথনটা দেখে তা আবারো মনে পড়ে গেল। তাই এখানে শেয়ার না করে আর পারলাম না।

ছবি- ভাগ্নির(বড় আপার মেয়ে) জন্যে বানিয়ে দেয়া আমার হাতের কাপড়ের পুতুল। ভাগ্নি আপার কাছ হতে সবসময় আমার পুতুলখেলা নিয়ে বিভিন্ন গল্প শুনে তাকেও কাপড় দিয়ে আমার পুতুলের মতন একটা পুতুল বানিয়ে দেয়ার বায়না ধরেছিল।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ সকাল ৮:৪৫
১৯টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×