প্রথম পর্বের পর
থানা থেকে বের হওয়ার পর আফ্ফানের অনেক পরিবর্তন!!!
বিশেষ করে বউকে আর জব্দ করতে যায় না। যখনই বউ পান থেকে একটু চুন খসাই আফ্ফান তখনই থানায় ঘটে যাওয়া সেই রাতের কথা চিন্তা করে দাঁতে দাঁত কামড়িয়ে সবুর করে। সবুরে নাকি মেওয়া ফলে তার কি ফলবে সেটা না দেখে কোন ছাড়াছাড়ি নেই। কিন্তু কত দিন দাঁতে দাঁত কামড়িয়ে বসে থাকা যায়!!! আফ্ফান নিজেই জানে যে দিন তার রাগের আগ্নেয়গিরি লাভা বিস্ফোরণ হবে সেই দিন আগের কাজ্বা কাফ্ফরা সব আদায় করা হবে!!!
তার মহামূল্যবান জাপানী 30-CC মোটরগাড়ী বিক্রয় করে দিয়েছিল আফ্ফান, আর তাই নিয়ে এক লঙ্কাকান্ডো। ঐ গাড়ীই যখন কাল হয়ে তার থানায় যেতে হয়েছে, তখন আর ঐ বিপদ রাখার কোন মানে হয় না। তাই থানা থেকে আসার পথে বাকের মিস্ত্রীকে বলে এসেছিল। অবশেষে কোটি টাকার গাড়ী তার মাত্র ৮,৩০০/= টাকায় ঠেকলো!!! মানি জিনিসের মান শেষ জামানায় থাকবে না এটাই স্বাভাবিক। তাই না হলে এমন একটি মূল্যবান দুস্প্রাপ্য গাড়ীটি এমন দামে কেউ কিনে??? মিস্ত্রী লোক গুলো এমনই, তারা কোন জিনিসের মর্ম বুঝে না। জাপানী কোন মিউজিয়াম খবর পেলে আফ্ফান নিশ্চিত তারা জাপানী 30-CC মোটরগাড়ীর ফসিল হিসেবে চড়া দামে কিনে নিত। আফ্ফানের এখন ঐসব জায়গাতে যোগাযোগ করার ইচ্ছে হচ্ছে না মোটেও!!!!
গাড়ী বিক্রয় যখন সব ঠিকঠাক করে মিস্ত্রী গাড়ী নিয়ে যাবে তখন হঠাৎ আফ্ফানের বুকে একটা মোচড় দিয়ে বুকটা হু হু করে ওঠলো। বাপের দেওয়া মূল্যবান গাড়ী সে বিক্রয় করবে??? তাই বাকের মিস্ত্রীকে বললো ভাই গাড়ী আমি বিক্রী করবো না । বাকের মিস্ত্রীও নাছোড় বান্দা টাকা দিয়ে সে ফেরৎ নিতে রাজী না, এতে নাকি তার ব্যবসার মান যাবে। অবশেষে ১,৭০০/= টাকা বেশি দিয়ে মোট ১০,০০০/= টাকায় দফারফা করে গাড়ী ফেরৎ নিলো আফ্ফান।
আজ ফাল্গুনের প্রথম দিন।
বাড়ির দক্ষিন পাশের আম আর লেবু গাছে ফুল হয়েছে। গন্ধে বাড়িটি মৌ মৌ করে। রাত যত বেশি হয় গন্ধ তত গাঢ় হয়। ইদানিং এমন একটা পরিবেশে আফ্ফানের মনটাও বেশ ফুরফুরা। যদিও রাতে মাঝে মাঝে ঘর থেকে বের হয়ে বুক ভরে গন্ধ নিতে ইচ্ছে করে আফ্ফানের কিন্তু অজানা এক ভয়ে সে কোন দিনই ভারি রাতে বের হতে পারে না!!!
আগামীকাল ভালোবাসা না কি যেন দিবস!!! এই দিবসগুলো আফ্ফান কোন দিনই পছন্দ করে না। টয়লেট দিবস থেকে শুরু করে ঝাড়ু দিবস সারা বছর লেগেই থাকে, তাই এই গুলো নিয়ে মাতামাতির কোন কারন খুজে পায় না আফ্ফান।
পয়লা ফাল্গুন আর ভালবাসা দিবস উপলক্ষে নাকি উলিগঞ্জে মেলা শুরু হয়েছে, আর তার বউয়ের ইচ্ছা ঐ মেলায় তাকে সাথে করে নিয়ে যেতে হবে। মনটা বেশ ফুরফুরা থাকায় আফ্ফানও আজ গাড়ীর তেলও কিনে এনেছে। দু-চার দিন বাপের বাড়ি নিয়ে যাওয়া ছাড়া কোন দিন কোথাও বউকে ঘুরতে নিয়ে গেছে কিনা আফ্ফানের মনে পড়ে না। আফ্ফান জানে, "ঘর কোণা বউ আর গোঁয়লে বাধাঁ গরু মাঝে মাঝে এদিক সেদিক ঘুরাতে হয়, না হলে একবার ছাড়া পেলে তাদের আর নাগাল পাওয়া কঠিন হয়ে যায়"!!! তাই বউকে নাগালে রাখতে আগামীকালের ঘুরতে যাওয়া।
অনেক দিন পর গাড়ী চালিয়ে আফ্ফান আজ যে মজা পাচ্ছে, সে মজা আলাউদ্দিন তার দৈত্যর ঘাড়ে চড়েও কোন দিন পায়নি। যদিও গাড়ীর ব্রেকে একটু সমস্যা, তবে পা সামনে ঠেকিয়ে দিয়ে সে সমস্যা সমাধান করা যায়। কোন কিছু উপভোগের সময় কোন সমস্যার কথা ভাবতে নেই তাহলে উপভোগই নষ্ট হয়ে যায়। তাই আফ্ফানও সেটি নিয়ে এখন চিন্তিত না। আফ্ফান বাজার রেখে যখন পাকা রাস্তায় উঠলো তখন মনটা আরো ফুরফরা হয়ে গেল, কারন তার জাপানী গাড়ীতে লং ড্রাইভ করতে বেশ লাগে। কিছু পথ যেতে না যেতে কিছু চেড়াং ছেলে থামানোর জন্য সিগন্যাল দিল। থামার সাথে সাথে একটা গোলাপ ফুল আফ্ফানের বউয়ের হাতে ধরিয়ে দিল। সবার হতে গোলাপ মানায় না, আফ্ফান দেখলো তার বউয়ের হাতে মানিয়েছে। ফুল পাওয়াতে মনটা আরও ফুরফুরা হয়ে গেল। দেশ দিন দিন ইউরোপের মত উন্নত আর সচেতন হয়ে যাচ্ছে। ঐসব দেশে নাকি বিভিন্ন দিবসে ফুল দিয়ে অভ্যর্থনা জানায় এখন আমাদের দেশে হচ্ছে। ভেবে মন আরও ভাল হয়ে গেল, যেদিন মন ভাল হয় সেদিন ভাল হতেই থাকে, আজ মনে হয় তেমন একটি দিন। ফুরফুরা মেজাজে যখনই সামনের দিকে বাড়াবে ঠিক তখনই একজন বলে ওঠলো, “স্যার টাকা টা???”। স্যার কথা শুনে আফ্ফানের মন যত ভরে গেল তার থেকে টাকার কথা শুনে বিগড়ে গেল।
আফ্ফান একটু কষ্টের ছাপ নিয়ে হাসি মুখে বললো, কিসের টাকা???
ওরা বললো, ফুলের জন্য উপহার, ২০০ টাকা মাত্র!!!
কত বড় ফাজিল মার্কা ছেলেগুলো, উপহার বলে আবার টাকা ধার্য করে দিচ্ছে । দুটি কারনে আফ্ফান টাকা দিবো না বা ফুল ফেরৎ দিবে সেটি পারছে না। প্রথমত, তারা স্যার বলে ডেকেছে, দ্বিতীয় ও প্রধান কারণ তাদের সাথে কিছু রক বডির কিছু কালো ছেলে আছে তাদের তাকানোর স্টাইলটা কেমন যেন, তারা যদি কিছু করে বসে তাহলে বউয়ের সামনে বেইজ্জতের শেষ থাকবে না। টাকা না যেন নিজের আত্না ছিড়ে তাদের দিয়ে আফ্ফান তেতোঁ মেজাজ নিয়ে মেলার দিকে যাচ্ছে।
মেলায় আফ্ফানের বউ এখন পরিবার পরিকল্পনার কি যেন পারিবারিক সচেতনা বিষয়ক চিত্র প্রর্দশন দেখতেছে। আফ্ফান একটি বইয়ের দোকানে এসে দাঁড়ালো। একটি বইয়ের উপর কয়েকটি ছবি দেখে বইটি হাতে নিয়ে দেখতে লাগলো। আফ্ফান বইয়ের দিকে একবার আর বউয়ের দিকে একবার তাকাঁয়। কারণ সে জানে বউ যদি দেখে ফেলে তাহলে মনে মনে নিশ্চিত বলবে, মিনষের এক লাইন পড়ার মুরোদ নেই আবার বই হাতে নিয়ে কবি, সাহিত্যিক সেঁজেছে। তাই বেশি সময় সেখানে না থেকে সামনে এগিয়ে গেল। সামনে একটি জায়গাতে কিছু লোকের জমাট। এক ফাইল'ই যথেষ্ট..... মাইকে এমন কি যেন বোঝাচ্ছে লোকেদের। সব কিছু বুঝে আফ্ফান শেষমেষ একটি ফাইল কিনে নিল। এটা কিনে সে মনে মনে ভাবলো মেলায় আসা তার একদম বিফলে যায় নি। খাওয়ার সমস্ত নিয়ম কানুন ভাল করে জেনে নিয়ে শরীরের একটি গোপন জায়গায় রেখে দিলো যেন কেউ না দেখতে পায়।
বউকে কিছু কেনাকাটার পর আফ্ফান এখন ফেরার পথে। রাত হয়ে গেলে আবার সমস্যা তাই একটু তাড়াতাড়ি বের হয়ে গেল। কিছু পথ চলতে না চলতে একটা মোড় পার হয়ে পুলিশের মোবাইল কোর্ট। পুলিশরা সব সময় মোবাইল কোর্টগুলো রাস্তার মোড়ে করে, তাতে গাড়ী ফসকে যাওয়ার সম্ভবনা কম থাকে। পুলিশ আগের থেকে অনেক চালাক হয়ে গেছে। তারা এখন আর বাংলা ছায়াছবির মারপিঠের পরে না আগেই হাজির হয়। আফ্ফান দেখতে পেল একজন পুলিশ কনস্টেবল থামার জন্য সিগন্যাল দিচ্ছে। পুলিশ দেখলেই কেমন যেন আফ্ফানের পেটের নাড়ি দূর্বল হয়ে যায়। কনস্টেবলের সামনে যেয়ে বুঝতে পারলো তার ব্রেকের অবস্থা । কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাকে সাথে করে নিয়ে চিৎপটাং... । কনেস্টেবল ওঠে কিছু বলার আগেই সেখানকার একজন বড় কর্মকর্তা বললো, তুমি না সেই গলা কাটাঁ...
জীঁ স্যার, স্যার এটা আমার বউ!!! (স্যার কে শেষ করার আগেই আফ্ফান বলা শুরু করলো কারন সে জানে এর পরে যা বলবে, তা বললে তার ইজ্জত কোথায় যেয়ে থামবে সে নিজেও জানে না। না জানি এবারও কোন পুলিশি প্যাঁচে পড়তে যাচ্ছে।)
বউকে বললো, স্যারকে সালাম দাও। বউ সালাম দিল।
পুলিশ: হয়েছে, হয়েছে! তোর গাড়ীর ব্রেক নেই তারপরও রাস্তায় ওঠেছিস কেন???
আফ্ফান: অনেক দিন পর বউ একটু....
পুলিশ: বাদ দে, গাড়ির লাইসেন্স আর তোর ড্রাইভারী লাইসেন্স বের কর।
আফ্ফান: ইয়ে.... মানে স্যার, জাপানী 30-CC গাড়ীরও কি লাইসেন্স লাগে !!! (চোখ কপালে তুলে)
পুলিশ: ফাজলমী করিস আমার সাথে???
অাবহাওয়া মোটে ভালর দিকে যাচ্ছে না। পুলিশি আবহাওয়া যখন ভাল থাকে না তখনই একপাশে ডেকে আবহাওয়া বদল করা যায়। আফ্ফানও তাই করলো। স্যার, আপাতত এটা রেখে এবারের মত মাফ করেন।
পুলিশ: মাত্র ৩০০/= !!! এটাতো ব্রেক নেই তার জন্য। দুটা লাইসেন্স, পুলিশের মেডিকেল ট্রিটমেন্টর খরচ কে দিবে????
সবমিলে পুলিশ ২৫০০/= টাকার কেস ১০০০/= টাকায় কেস ডিসমিস। মনে মনে ভাবছে মিস্ত্রীর কাছ থেকে জরিমানা দিয়ে গাড়ী রাখা ঠিক হয়নি। গাড়ী রেখে শুধু খাল কেঁটে কুমিরই না আলিশান কুমির এনেছে নতুন করে। এই আলিশান কুমির এবার যেই ভাবে হোক বিদায় করতে হবে। যাওয়ার সময় আবার বাকের মিস্ত্রীকে খবর দিয়ে যেতে হবে। নতুন ভাবনা নিয়ে আফ্ফান এখন বাড়ীর পথে। সন্ধ্যা হয় হয় অবস্থা হলেও দুর থেকে আফ্ফানের গাড়ি, বউ না দেখা গেলেও আফ্ফানের বউয়ের হাতে গোলাপটি যেন স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে....
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১:২৫