শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
০০ মুহাম্মাদ রিয়াজ উদ্দিন
'শোন মেয়ে, তোমাকে বাঁচতেই হবে
জানি তবু জানি
নারীর হূদয়-প্রেম-শিশু-গৃহ-নয় সবখানি;
অর্থ নয়, কীর্তি নয়, সচ্ছলতা নয়
আরো এক বিপন্ন বিস্ময়।'
জীবনানন্দ দাশ এভাবেই তার কবিতায় তুলে ধরেছেন। শতবছর পরেও তাঁর কবিতার মধ্যে খুঁজে পাওয়া যায় মানবতাবোধ আর মানুষের প্রতি ভালোবাসার আহবান। বাংলাদেশে হঠাৎ করেই আত্মহত্যার হার বেড়ে গেছে। শুধু অশিক্ষিতদের মধ্যে নয় এখন শিক্ষিত সমাজেরও আত্মহত্যার প্রবণতা অনেক। কোনভাবেই যেন এ সমস্যার সমাধান পাওয়া যাচ্ছে না।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আত্মহত্যা কোনভাবেই একজন মানুষের সমস্যার একমাত্র সমাধান হতে পারে না। জীবনে নানা রকম সমস্যা-বিপদ আসবে, একে ভয় নয় সাহস দিয়েই জয় করতে হবে। আর তাহলেই সম্ভব হবে জীবনকে আরো সুন্দরভাবে সাজানো। সমাজে প্রতিনিয়তই আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়ে চলেছে। এ মিছিল যেন ক্রমশই দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। সংবাদের আড়ালে অনেক আত্মহত্যার কাহিনী অজানাই থেকে যাচ্ছে। কিন্তু আত্মহত্যা যে প্রকৃত সমাধান হতে পারে না এটা সমস্যাগ্রস্ত মানুষকে বোঝাতে হবে। সচেতন করে তুলতে হবে দেশের প্রতিটি নাগরিককে। আর সচেতনতার জন্য গণমাধ্যমগুলোর আরো কার্যকরি ভূমিকা পালনের আহবান জানালেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এ ক্যারাভান অফ পিস আয়োজিত সেমিনারের বক্তারা।
৭ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের মিনি অডিটোরিয়ামে বিকালে 'আত্মহত্যাকে না: মৃতু্যর সাথে আপোস নয়; জীবনের সাথে সংগ্রাম' শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। বক্তারা আত্মহত্যা কীভাবে হ্রাস করা যায় সেজন্য আরো গবেষণা করার জন্য গবেষকদের প্রতি আহবান জানানো হয়। আর কোন নারীকেই যেন আত্মহত্যার মাধ্যমে জীবনকে শেষ করতে না হয় সে ব্যাপারে পরিবারের প্রতিটি সদস্যসহ সমাজের সর্বস্তরের জনগণকে সচেতন হওয়ারও পরামর্শ দেওয়া হয়। সেমিনারে আমন্ত্রিত বক্তা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান, এসিপি'র প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, শিক্ষার্থীরা একজন শিক্ষককে অনেকভাবেই অনুসরণ করে, তাই শিক্ষককে আরো সহানুভূতিশীল হতে হবে। তাদের যেকোন সমস্যা সমাধানে আরো আন্তরিক হতে হবে। কোন সমস্যা হলে গবেষণার পরে যে কোন সিদ্ধান্ত নেয়ারও আহবান জানান তিনি। সিলেট এম.এ.জি ওসমানি মেডিকেল কলেজের মানসিক রোগ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ডা. গোপাল শংকর দে আত্মহত্যার নানা কারণ ও সমস্যা বিস্তারিতভাবে তুলে ধরে বলেন, কাউন্সিলিং-এর মাধ্যমে অনেক সমস্যা সমাধান করা যায়। সমস্যা চিহ্নিত করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। সিলেট এম সি কলেজের মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সালেহ আহমদ তার আলোচনায় বলেন, আত্মহত্যা রোধে সর্বস্তরের মানুষের এগিয়ে আসতে হবে। একে অপরের প্রতি বাড়িয়ে দিতে হবে সাহায্যের হাত। প্রতিটি মানুষের কাউন্সেলিং এর প্রয়োজন আছে। জীবনে নানাভাবেই সমস্যাগ্রস্ত হই কিন্তু সেসব সমস্যার সমাধান পথ খুঁজে বের করতে এগিয়ে যেতে হবে। প্রতিটি জীবনই অনেক মূল্যবান তাকে কখনো আত্মহত্যার মাধ্যমে শেষ করা যাবে না। সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. আ. ক. ম মাহবুবুজ্জামান তার বক্তৃতায় সিলেটে আত্মহত্যা আশংকাজনক বৃদ্ধির কথা উলেস্নখ করে বলেন, আত্মহত্যার কারণ খুঁজে বের করে তার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আর কোনভাবেই যেন আত্মহত্যার সংখ্যা বৃদ্ধি না পায়। সেমিনারে আত্মহত্যার ওপর গবেষণামূলক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষিকা হালিকা আক্তার। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপর গবেষিত এ প্রবন্ধে তিনি একজন মেধাবী শিক্ষার্থী কেন মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে এবং শেষ পর্যন্ত আত্মহত্যার মতো জঘন্য কাজের দিকে পা বাড়ায় তার নানা কারণ এবং এর উত্তরণের নানা সুপারিশ তুলে ধরেন। ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক আফসানা সালাম বলেন, জীবন একবারই যা বার বার আসে না। আমরা ইচ্ছে করলেই তাকে টিকিয়ে রাখতে যেহেতু পারি না, ইচ্ছা করে তাকে বিদায় দেয়ার স্পর্ধাও আমাদের থাকা উচিত না। ভালোভাবে বেঁচে থাকার চেষ্টার মধ্যেই নিহিত জীবনের সৌন্দর্য। সেমিনারে প্রধান অতিথি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মো. সালেহ উদ্দিন সংগঠন প্রতিষ্ঠার জন্য স্বাগত ও সদস্যদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, সমাজের নানা বিষয় নিয়েই গবেষণা হতে পারে। আত্মহত্যার মতো এরকম বিষয়ে গবেষণা করে তার সমাধানও খুঁজে বের করতে হবে। শিক্ষকদের জন্য গবেষণার কাজে সহায়তা করার লক্ষ্যে বাজেট বৃদ্ধি করা হয়েছে। গবেষণামূলক কাজে শিক্ষকদের আহবান জানান তিনি। সেমিনারে এসিপি'র প্রকাশনা 'প্রতিশ্রুতি'র মোড়ক উন্মোচন করেন আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ। প্রতিশ্রুতি নামক ম্যাগাজিন বিশেষজ্ঞদের লেখা নিয়ে সাজানো হয় যা পড়ে অনেকেরই আত্মহত্যার নানা বিষয়ে জানতে সহায়তা করবে। সংগঠনের সভাপতি নূরুল হাই মোহাম্মদ আনাছ জানান, সমাজসেবা ও জনসচেতনতামূলক কাজের অংশগ্রহণের অঙ্গীকার ও সুদৃঢ় প্রতিশ্রুতি নিয়ে আমাদের যাত্রা। সবসময়ই সেবামূলক কাজে থাকার প্রত্যয় নিয়ে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। তারই অংশ হিসেবে এরকম জনগুরুত্বপূর্ণ সেমিনারের আয়োজন। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অনুপম রায় বলেন, এসিপি'র সেমিনারে অংশগ্রহণে বিশেষজ্ঞদের নানা গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ পেয়েছি যা সবারই কাজে লাগবে। ভবিষ্যতেও এরকম সচেতনতামূলক কাজে আমরা থাকবো। সেমিনারে কয়েক শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকবৃন্দ। দুপুর ১২টায় ক্যাম্পাসে সচেতনতামূলক র্যালি বের করা হয়। এসিপি ভবিষ্যতে আরো গুরুত্বপূর্ণ ইসু্যতে সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে সচেতন করবে এমনটি প্রত্যাশা করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী-শিক্ষকবৃন্দ।০০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।





