স্তনের কথা শুনে চোখ কুঁচকে গেল? সুড়সুড়ি লাগলো?
আমার বড় খালা অজপাড়াগাঁয়ে থাকলেও চলনে বসনে অত্যন্ত আধুনিকা ছিলেন। খালা একদিন কথায় কথায় বললেন, নারীর প্রতি পুরুষের প্রধান আকর্ষণ কাজ করে যে ভরাট স্তনের কারণে, নারীর মৃত্যুর পর সেই স্তনই প্রথম পচেগলে তা থেকে পোকা বের হয়! সবচেয়ে আকর্ষণীয় জিনিসটাই তখন সবার আগে কুৎসিত হয়ে যায়!
নারী আর পুরুষের মধ্যে প্রধান বাহ্যিক দৃশ্যমান তফাত হল স্তনে, এ আমরা সবাই জানি, বুঝি, কিন্তু নারীমাত্রেই যে স্তন থাকবে এটা সম্ভবত সবাই মানতে পারি না। চলতি পথে কোন নারীর ওড়না বেসামাল হয়ে গেলে আমরা একদল চেঁচিয়ে উঠি, একদল লোলুপ হয়ে উঠি, কেউ কেউ তো ওটাকে একটা ইঙ্গিত ভেবেও বিচার করে বসি! একজন নারীর স্তন থাকবেই, এই সত্যটা আমরা মানতে চাই না, স্তন থাকাটা অপরাধ, ওকে ঢেকে রাখতে হবে, ওটার অস্তিত্ব যেন কোনভাবেই বোঝা না যায়!
এখন স্বভাবতই একদল ক্ষেপে যাবেন এই কথাতে, কেউ কেউ গালমন্দ করবেন, কেউ বা খানিক ভদ্রতার সুর ধরে তর্কের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করবেন, তবে কি মশায় সব মা বোনকে বুক বের করে হাঁটাতে চাইছেন?
তা চাইছি, না। শুধু চাইছি, বিষয়টাকে আপনি সহজভাবে নিতে শিখুন। মা বোনের যে স্তন আছে, এটাকে গর্হিত, অচ্ছ্যুত, ঢেকে রাখার মত পাপের বস্তু না ভেবে স্বাভাবিক একটি অঙ্গ হিসেবে যদি মেনে নিতে পারতেন তবে মা বোনই আরো বেশি নিরাপদ হত সমাজে। অনেকে তো মাথার মধ্যে এতই যৌন ফ্যান্টাসি গাদাই করে বসে থাকে যে, মা কিংবা বোনের দিকেও সরাসরি তাকাতে সংকোচ বোধ করে! কথাটা হজম করতে কষ্ট হচ্ছে?
আমি বেশ আগে একবার লিখেছিলাম, দুগ্ধপান করানো নারীর স্তন কখনও যৌনবস্তু হয় না, যেকোন নারীই যখন সন্তানকে দুধপান করান তখন তিনি মা হয়ে যান। একান্ত পারভার্ট না হলে সম্ভবত কেউ সেই মায়ের স্তনের প্রতি উঁকি দেয় না! সমরেশ মজুমদার একবার বলেছিলেন, দেবীমাতার হাতে যদি খড়গ না থাকত, তবে দেবীর যে অঙ্গসৌষ্ঠব তাতে দেবীমূর্তিও অনেকের কাছে লালসার বস্তু হয়ে যেত! খড়গ উপেক্ষা করে খেয়াল করলে দেখবেন, সব দেবীমাতারই স্তন ভরাট, পরিপুষ্ট! কেন জানেন? কারণ, সনাতনীরা দেবীকে মা বলেন! মায়ের মাতৃরূপ ওই পরিপুষ্ট স্তনেই নিহিত। বলুন, স্তন ঘৃণ্য বস্তু?
নারীর স্তন থাকবেই, চলাফেরা করার সময় সেই স্তন তাকে লুকাতেই হবে —এতটা ঘৃণ্য বস্তু আমরা একে কেন বিবেচনা করি? আমার লেখা যাঁরা পড়েন, তাদের একটা বিরাট অংশ অবশ্য পর্দা প্রথাকে অবশ্যপ্রতিষ্ঠিতব্য মনে করেন। সেটা অবশ্যই একজন নারীর পছন্দ ও অভিরুচির বিষয়। পর্দাপ্রথার ইতিবাচক দিক হল, এর দ্বারা অবাধ সংস্পর্শজনিত অপরাধের ক্ষেত্রে একটা দেয়াল তোলা সম্ভব হয়। ওই পজিটিভ দিকটা মাথায় রেখেই বিধানটি এসেছে। ইসলামের বিধান পালনকারী নারীরা এটা করতেই পারেন আমল আক্বীদাকে মাথায় রেখে, কিন্তু সমাজে তো সবাই ইসলামপন্থী নয়, সবাই তো ইসলাম ধর্মের অনুসারী নন, সেই বাকি নারীরা তো পর্দা না করতেই পারেন, তাই না?
এই বিশাল নারীরূপী মাতৃসমাজের কথা মাথায় নিয়েই আমি স্তন সমাচার লিখতে বসেছি। পর্দার প্রশ্ন তো গেল, আপনি মুসলিম আপনি পর্দা চাইছেন, আপনার পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া নারীটি মুসলিম নন, তিনি পর্দা করেননি, এ নিয়ে আপনি ছ্যা ছ্যা গেলো গেলো করার চেয়ে আপনার উচিত হয় নিজের আখলাক বাঁচাতে দৃষ্টি সংযত করা। আল্লাহ আপনাকে পাঠিয়েছেনই একটা পঙ্কিল সমাজে, যেখানে প্রতি পদে পদে পাপের পায়তারা থাকবে, আপনাকে সেই পাপ থেকে নিজেকে নিজের পরিবারকে বাঁচাতে হবে, তবেই না আপনি আখেরাতে পুরস্কার পাবেন— আমি বিষয়টাকে এভাবে দেখি। আজীবন নারীর পর্দা, নারীর টিপ- লিপস্টিক নিয়ে ওয়াজ শোনা যায়, কিন্তু কোন বয়ানেই আমি কোথাও কাউকে বলতে শুনি না যে, নারীর পর্দা নিয়ে বহুত বলা হয়েছে, এবার পুরুষ তুমি তোমার চোখের পর্দা ঠিক কর! নারীকে নির্যাতন শ্লীলতাহানি তো পুরুষই করে, অথচ পুরুষকে সংযত হতে কেউ বলে না, সব দায় নারীর— এ কেমন কথা!
আমরা নারীকে নারী হিসেবে স্বাভাবিক দৃষ্টিতে গ্রহন করলে নারীর নিতম্ব বা স্তন এসব নিয়ে লোলুপতা আসত না। হ্যাঁ, প্রসঙ্গটা ক্রিটিকাল, নারী পুরুষের এই আবেদন আকর্ষণ চিরন্তন, এটা আছে বলেই প্রেম হয় ভালোবাসা হয় ইত্যাদি ইত্যাদি। আকর্ষণের কথা বলতে গেলে শরীর সৌষ্ঠবের প্রতি যে মোহ বা রঙিন নেশা তার বিভিন্ন ধাপ আছে যা পুরুষ বয়সের সঙ্গে সঙ্গে অতিক্রম করে বা অভিজ্ঞতা লাভ করে। একজন কিশোর উঠতি বয়সে নারীর খোলা বাহু দেখেও কাতর হয়ে ওঠে ভেতরে ভেতরে, একদিন তার কাছে খোলা বাহু স্বাভাবিক হয়, খোলা শরীরও স্বাভাবিক বিষয় হয়ে ওঠে, যখন সে বিবাহিত হয়, যখন সে পিতা হয়, বিশেষত কন্যার পিতা!
(আপাতত মোহ, লালসা বা চোখের ক্ষুধার কথাই হল, লালসা এক ব্যাপার, আর সফল রতিক্রিয়া নেহাতই আলাদা এক বিষয়, এ নিয়ে পরে কখনও লিখব, আপাতত এটুকু বলি, আপনার চোখের ক্ষুধা আপনার নারীকে ঘিরেই হোক, পরনারীর দিকে হলে সেটা অন্তত ভদ্রতা হয় না।) এই মোহ বা আকর্ষণটা কিংবা নারী শরীরের প্রতি ধ্যান ধারণা মানুষের বয়সের সঙ্গে সঙ্গে পাল্টায়। যে পুরুষ কখনই নারী স্পর্শ পায়নি তার কাছে নারীর হাত স্পর্শ করার অনুভূতি এক রকম আর যে পুরুষ পর্ন ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করে তার কাছে একজন নারীর খোলা শরীরের প্রতি অনুভূতি আরেক রকম। জানি, বোঝানো কঠিন, ঠিক আছে, আরো সহজ একটা দৃষ্টান্ত বলি, যে ছেলে আইবুড়ো বয়সেও মায়ের সঙ্গে এটাচড থাকে, নিঃসঙ্কোচে মাকে জড়িয়ে ধরে, সে ছেলেটা নারীর শরীর নিয়ে তুলনামূলক কম কুৎসিত ফ্যান্টাসিতে ভোগে। যে কখনও নারীর সঙ্গে মেশার সুযোগ পায়নি, তার ফ্যান্টাসি বলাই বাহুল্য আকাশছোঁয়া হয়! আমার ধারণা, ভীড়ের মধ্যে নারীকে নোংরা স্পর্শ করা পুরুষের মধ্যে একটা বিরাট অংশ এই নারী সংসর্গ বঞ্চিত কৈশোরের ফ্যান্টাসিতে ভোগা অভাগা সম্প্রদায়! বলতে চাইছি, নারীর স্পর্শকে সহজ হিসেবে যে পেয়েছে, তার মধ্যে নোংরামিটা কম আসার সম্ভাবনা তৈরি হয়।
বাঁশের চেয়ে বরাবরই আমার লেখাতে কঞ্চি বড়ো হয়, আরেকটু প্রাসঙ্গিক আলাপ দিয়ে মূল কথায় ফিরছি। কেউ যদি দাবি করেন তাঁর নারী দেখলেই লোভ তৈরি হয়, বা নারী দেখলেই তার কাপড় ভেদ করে এক্সরে করে ফেলার কল্পনা মাথায় ঘুরপাক খায়, সেই ব্যক্তিকে যদি সারাদিন কিছুসংখ্যক নগ্ন নারীর মধ্যে রেখে দেওয়া হয়, তখন দেখা যাবে তার আর ফ্যান্টাসি কাজ করছে না। আমরা জানি এটা সম্ভব না, এই সমস্যা এতই জনযুক্ত যে, পশম বাছতে গেলে কম্বলই উধাও হয়ে যাবে। একজন আমাকে একবার প্রশ্ন করেছিল, পর্ন আসক্তি থেকে মুক্তি পাব কীভাবে? আমি তাকে বললাম, এক দিন ছুটি নাও, দরজা লাগিয়ে সারাদিন একটানা পর্ন দেখতে থাকো, পরদিন থেকে তোমার আর পর্ন দেখতে ইচ্ছে করবে না! যাহোক, উদ্দিষ্ট আলাপে আসি।
স্তন যৌনবস্তু তো, আচ্ছা, একটা গল্প বলি। একটা আশ্রমের গল্প, আশ্রমটা খুবই গহীন এক জঙ্গলে, যেখানে সন্ন্যাসীরা থাকেন, শুধুই সন্ন্যাসী, সন্ন্যাসিনী নয়। এক দুধের শিশু ভাগ্যক্রমে সেই আশ্রমে বড় হয়, সে কখনও নারী দেখেনি। বালক বয়স হবার পর ছেলেটি দেখে যে, সন্যাসীদের একটা অংশ রোজ মুষ্ঠি চাউল তুলতে যায়, বা অন্নভিক্ষা করে নিয়ে আসে আশ্রমের জন্যে। সারাদিন অপেক্ষার পর সেই অন্ন এলে তবেই বাকিদের খাবারের যোগান হয়! এই খাবারের দুশ্চিন্তা দেখে ছেলেটি গুরুকে বলতে থাকে, আমরা এমন জঙ্গলে কেন থাকছি, আমরা এমন কোথাও গিয়ে কেন থাকছি না যেখান থেকে বাকি সাধুরা গিয়ে খাবার নিয়ে আসছে?
তখন গুরু একদিন ছেলেটিকে নিয়ে লোকালয়ে গেলেন অন্নভিক্ষা করতে। এক বাড়ির উঠোনে দাঁড়ালেন, গৃহকর্ত্রী চাউল নিয়ে এলো। ছেলেটি প্রথমবারের মত একজন নারীকে দেখার পর আঁৎকে উঠে বলল, গুরুজী ওর বুকে তো ফোঁড়া হয়েছে!
গুরুজী বললেন, ফোঁড়া নয় বেটা, ও হল স্তন!
ছেলে বললে, এমন স্ফীত কেন?
গুরুজী বললেন, যখন নতুন শিশু পৃথিবীতে আসে, তখন তার খাবারের ব্যবস্থা ঈশ্বর মায়েদের এই স্তনের মধ্যে দিয়ে থাকেন!
ছেলেটি তখন বলল, একটা নবজাতকের খাবারও যখন ঈশ্বর অগ্রিম দিয়ে রাখছেন, তাহলে আমি কী অবুঝ এতদিন খাবারের চিন্তায় আশ্রম ছেড়ে চলে আসতে চাইলাম!!
গল্পটা শেষ।
স্তনের পরিচয় মাতৃরূপে। স্তন যৌনবস্তু হয় কেবল রতির সময়ে। এটুকু মনেপ্রাণে মানতে পারলেই আপনি একজন ভদ্রলোক। কথা সোজা! নাহলে ওই যে আকর্ষণের কথা বলেন, তা আপনি নারী পুরুষের স্বাভাবিক আকর্ষণের দোহাই দিয়ে পথেঘাটে এর ওর শরীরের দিকে লোলুপ চোখে তাকিয়ে নিজেকে স্মার্ট বা রোমান্টিক মানুষ যদি ভেবে থাকেন তাহলে আপনার সে কদাচারের দায় আমাদের গোটা পুরুষ সমাজকেই বইতে হয়! নারীর শরীর স্ফীত হবে, তুলতুলে হবে, নারীর স্তন থাকবে, নিতম্ব থাকবে এই সহজ সত্যগুলো আমরা যত সহজে মেনে নিতে পারব, আমাদের সহাবস্থানও তত সাবলীল হবে, নোংরা চেতনা তত লোপ পাবে। আর ওই যে, স্তনের কথা শুনেই যদি সুড়সুড়ি বোধ করেন, তাহলে আর কী, কিছুই না!
ওহ, আচ্ছা, অতি সুড়সুড়িতে কিন্তু প্রিম্যাচিউর এজাকুলেশন হয়।
পুনশ্চ:—
ছবি দেখে হাসবেন না প্লিজ, আমি স্তন image লিখে সার্চ করেছিলাম, গুগল আমাকে পাত্থর ধরিয়ে দিলো!
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:১৪