somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমাদের অর্থোপার্জনের ভবিষ্যত ভাবনা

২৬ শে জানুয়ারি, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কসময় মজা করে বলতাম, যার আর কোন কর্ম করার যোগ্যতা নেই, তার করা উচিত অভিনয়!
পরিস্থিতি এরপর পাল্টালো। নতুন প্রবাদ হল, যার কোন কর্মের যোগ্যতা নেই সে হয় ভ্লগার! কিছু একটা ভিডিও বানিয়ে ছাড়লেই পাবলিক খায়, এবং বেশ ভালো অঙ্কের টাকা আসে।

অনেক প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসেও অনেকে বিবিধ ভিডিও বানিয়ে ভালোই পয়সা কামাচ্ছে। এই বিবিধের আবার স্পেসিফিকেশন আছে, এর মানে হল শরীর প্রদর্শন, আদিরস নিঃসরণ ইত্যাদি। এসব থাকলেই পাবলিক খায়। মানে আপনার আমার মত শুদ্ধ সভ্য মহানাত্মারা খায় আর কি। ফলাফল, অনেকে নিজের স্ত্রীকে দিয়েই অশ্লীল ভিডিও বানিয়ে ছাড়ছে মুখে মাস্ক লাগিয়ে! ঘরে বসে ভিডিও বানাবে, ছাড়বে, টাকা আসবে আপনাআপনি, খাবারও চলে আসবে, ঘর থেকে বের হতেই হবে না। দুনিয়াতেই কেমন জান্নাত জান্নাত ফিলিং, তাই না?

একসময় ভাবতাম, একটা দশতলা বিল্ডিং হলে কেমন হয়, মাস শেষে বাড়ি ভাড়া তুলব, নিশ্চিন্ত ইনকাম, ঘর থেকেই বের হওয়া লাগবে না, খাতা কলম নিয়ে বসে থাকব সারাদিন, দুই হাতে লিখব, লিখতে লিখতে রবীন্দ্রনাথকে ছাড়িয়ে যাব একটা সিএনজি ভাড়া করে! অতঃপর কয়েকদিন বসে খেয়ে দেখলাম, এরচেয়ে বাজে জীবন আর হয় না। তখন মনে হল, মানি ইজ নট অল ইনডিড! মানে ওই অর্থে না, আপনার কাছে কুটি কুটি টেহা আছে, কিন্তু আপনাকে কেউই চেনে না, আপনার পকেট ভর্তি টেকা, আপনি ভালো রেস্টুরেন্টে ঢুকতে গেলেন, আপনারে দারোয়ান মিডল ক্লাস মনে করে ঢুকতেই দিল না, বা দোকানদার আপনাকে পাত্তাই দিচ্ছে না, আপনাকে দাঁড় করিয়ে রেখে আরেকজনকে প্রোডাক্ট সার্ভ করছে! আপনি কোটিপতি বাট কোথাও আপনার এই স্বীকৃতি নাই, এমন যদি হয় তখন আপনি নতুন করে বুঝবেন, টাকার চেয়েও বড় হল ক্ষমতা! আপনি হাত তুললেই একশো মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়বে, আপনি বলামাত্রই মানুষ জয়জয়কার করবে, এই হাতছানি টাকা দিয়ে কিনতে হয়। টাকার চেয়ে এটাই তখন বেশি উপভোগ্য হয়।

আচ্ছা, আমি সিএনজি নিয়ে রবীন্দ্রনাথকে ছাড়াতে গিয়ে টপিকটাকেই ছাড়িয়ে যেতে আরম্ভ করেছি। টপিকে আসি। বসে বসে উপার্জন পেলে ওই জীবনেরও কোন আনন্দ নেই। আপনাকে জায়গা থেকে নড়তেও হল না, মাস শেষে আপনার একাউন্টে ঢুকল লাখ লাখ টাকা, আপনি এই বসে থাকা জীবন নিয়ে কী করবেন? কতক্ষণ কয় জায়গায় গিয়ে টাকা উড়িয়ে জীবন উপভোগ করবেন?? কতক্ষণ? সর্বোচ্চ এক বছর! এরপর আপনার কাছে জীবনটা একঘেয়ে লাগতে শুরু করবে। এজন্যই দেখবেন এমন নিশ্চিত উপার্জনের মানুষেরা শখের দোকান দিয়ে বসেন বেশিরভাগ।

আপনি জব পাচ্ছেন না, রীলস বানাতে বসে গেলেন, নেট ঘেঁটে বিবিধ তথ্য নিয়ে ইউটিউবে ইনফো চ্যানেল বানিয়ে বসে গেলেন, হিট করল, আর্থিক স্বচ্ছলতা এলো, আপনি লাগাতর উপার্জন করতে লাগলেন। আমিও করতে লাগলাম, উনিও করতে লাগলেন, তিনিও করতে লাগলেন। টাকা তো আসছেই, মার্কেটটা সারা বিশ্বে ছড়ানো, যত কনটেন্ট তত মানি! সো কজি ম্যাটার, তাই না?

না, এতেও একটা সমস্যা আছে। আপনার কাছে আমার কাছে টাকা সহজলভ্য বা দরকারের চাইতে বেশি হলে তার প্রভাব পড়বে আমাদেরই এলাকার বাজারে। আপনার টাকা বেশি, আপনি রিকশাওয়ালাকে ত্রিশ টাকার জায়গায় পঞ্চাশ টাকা দেবেন আপনার গায়ে লাগবে না, কিন্তু বাকিদের গায়ে লাগবে। ওদিকে যুব সমাজের একটা বড় অংশ অনলাইন ভিত্তিক উপার্জক হয়ে গেলে তাতেও আমাদের কর্মসংস্থান মেধা হারানোর হুমকিতে পড়বে।

আরেকটু উদাহরণ দিয়ে বলি, আউটসোর্সিংএ উপার্জন করা যায় ভালোই। এতক্ষণ যা বলছি, একটা উপার্জনও হাতের মোয়া না, অনেক শ্রম দিয়েই আনতে হয় উপার্জন। আমরা অর্থের বিনিময়ে বিদেশের বিভিন্ন কোম্পানিকে কাজ করে দিচ্ছি অনলাইনে, তারা আমাদের কাছ থেকে সার্ভিস নিয়ে তাদের দেশে বসে উন্নতি করছে, আমাদের হচ্ছেটা কী তাতে? আমাদের ডলার আসে, দাম বাড়ে, টাকার মূল্য কমে! আমাদের দেশের খুব একটা লাভ কোথায় হয়? যে শ্রম আর মেধা আমরা ছয় থেকে আট ডলারের বিনিময়ে দিয়ে দিচ্ছি, তা আমাদের দেশের কোন প্রতিষ্ঠানকেও তো আমরা দিতে পারতাম। সার্ভিসটা দিয়ে আমার দেশের কোন প্রতিষ্ঠান উপকৃত হতে পারত! কিন্তু তা না, বিশ্ব উন্নতি করবে, আমরা ডলার কামিয়ে শুয়ে থাকব, এতেই আমরা খুশি।

এমন অর্থনৈতিক উন্নতিতে আমি কোন ভালো কিছু দেখি না। বিজ্ঞজনেরা কী দেখেন আমি জানি না, আমার বিজ্ঞ অজ্ঞ কারো সাথেই ওঠাবসা আলাপআলোচনা হয় না।

এখন উপসংসার বা উপসংহার বলি, উন্নয়ন বলতে আপনি অর্থ কামানো বোঝেন, টাইলস বিল্ডিং বোঝেন, বেশ, এখন আপনি আমি সবাই সারা দেশের পথঘাটে টাইলস বসিয়ে দিলাম, ননঅর্গানিক ফ্যাক্টরি খুলে খুলে, বিল্ডিং তুলে তুলে দেশ তুঙ্গে তুলে ফেললাম, এতই উন্নতি করলাম যে আমাদের সবার একেকটা ব্যক্তিগত বিল্ডিং হল, সেই বিল্ডিংএর ছাদে গেলিকপ্টার হেলিকপ্টার বসালাম, এমনকি ক্ষেপণাস্ত্রও বসালাম! আমার মত আরো একশো উন্নয়নকামী দেশ এভাবেই শতভাগ ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজড হয়ে গেল, এতে লাভ লস কী?

এখনও বোঝেননি বিষয়টা। সবাই উন্নতি করে টাইলস বসালে ভাত খাওয়াবে কোন দেশ? আসছে ভবিষ্যতে কার কাছে ক্ষেপণাস্ত্র আছে তা দিয়ে কেউ ঘাস ছিঁড়বে না, বরং সারা বিশ্ব তাকিয়ে থাকবে হাত জোড় করে তোয়াজ করবে সেই সব দেশকে যারা এই উন্নয়নের প্রতিযোগিতায় না নেমে কৃষিপণ্যের দিকে নজর দিয়েছে! ক্ষেপণাস্ত্রের চাইতে শীঘ্রই ভাতের মূল্য হবে বেশি! এই সিম্পল ভবিষৎবাণীটা যদি আমাদের নীতি নির্ধারকরা বুঝত তাহলে রাস্তার দুই পাশে লক্ষ একর জমি অনাবাদী ফেলে রেখে কমিশনের বিনিময়ে অন্য অন্য দেশ হতে ধান পেঁয়াজ আলু আনার পলিসি করত না! আমি সরকার হলে এই জমিগুলোকে নিয়ে প্রোজেক্ট করতাম, সরকারি প্রোজেক্টে কাজ করতে দেশের সেই ছেলেরাই আসত, যারা তাদের বাপের জমিতে চাষাবাদ করতে লজ্জাবোধ করে!

আমি মনে হয় সিএনজি নিয়ে ররবীন্দ্রনাথকে ছাড়িয়ে কার্ল মার্ক্সকেও অতিক্রম করে ফেলতেছি।
ওকে, এবার থামা উচিত। হে ভারত মাতা, তোমারা পিঁয়াজ নেহি আতা!
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জানুয়ারি, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৪৯
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নেতৃত্ব না ‘পূজার আসন’? বিএনপির ভেতরেই কি এক নতুন ‘ফেরাউন’ উঠে আসছে?

লিখেছেন স্পর্শ, ১৫ ই জুলাই, ২০২৫ রাত ৩:১৫






নেতৃত্ব না ‘পূজার আসন’? বিএনপির ভেতরেই কি এক নতুন ‘ফেরাউন’ উঠে আসছে?

সম্প্রতি কওমি ভিশনের একটি পোস্টার সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। সেখানে উঠে এসেছে বিএনপি-সংশ্লিষ্ট কিছু... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের শাহেদ জামাল- ৮১

লিখেছেন রাজীব নুর, ১৫ ই জুলাই, ২০২৫ সকাল ৯:৫৭



শাহেদ। শাহেদ জামাল। আমার বন্ধু।
বড় ভালো ছেলে শাহেদ। অথচ তার চাকরিবাকরি নেই। চাকরিবাকরি তার দরকারও নেই। যার ঘরসংসার নেই সে চাকরি দিয়ে কি করিবে? অবশ্য টাকা এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি ভিক্ষা দিচ্ছেন মানে আপনি জাতিকে পঙ্গু করছেন

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৫ ই জুলাই, ২০২৫ দুপুর ১:০৫


ভিক্ষা হলো একটি সংস্কৃত শব্দ এর অর্থ হলো চাওয়া বা প্রার্থনা করা যা ভারতীয় ধর্ম যেমন জৈনধর্ম, বৌদ্ধধর্ম ও হিন্দুধর্মে ভিক্ষাকরা বা চাওয়ার কাজকে বোঝাতে ব্যবহৃত হতো। প্রাচীনকালে ভিক্ষা... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ভাল্লাগে না কোনো কিছু=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৫ ই জুলাই, ২০২৫ বিকাল ৫:২৩


ভাল্লেগা না কোনো কিছু
মন বসে না কাজে,
কোন সে দুঃখ জমা হলো
বুকের ভাঁজে ভাঁজে।

ভাল্লাগে না আজকে আমার
মন যে উদাস হলো,
দু'চোখ আমার নীল বেদনায়
জলে টলোমলো।

বৃষ্টি এলো বৃষ্টি গেলো,
আনমনা হই আরও,
মন জমিনে কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। পদ্মার ইলিশ বিখ্যাত গোটা পৃথিবীতে , কেন ??[/sb

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৫ ই জুলাই, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:১২









Padma Hilsa- বিশেষজ্ঞদের একাংশ দাবি করেন, পদ্মার জলে পুষ্টিগুণ ভাল। সেখানে কাঁকড়া, ঝিনুক, শৈবাল ইলিশের খাবার। আর তা থেকে পর্যাপ্ত পুষ্টি পায় ইলিশ। ফলে মাছের স্বাদও হয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×