সুমেরু অঞ্চলে নিশি রাতে সূর্য দর্শন - ২য় পর্বে সবাইকে স্বাগতম। আমরা এখন স্টকহোম শহরের কেন্দ্রবিন্দু সেন্ট্রাল রেলওয়ে স্টেশনে, হাতে প্রায় সাড়ে তিন ঘন্টা সময় আছে। যারা ১ম পর্বে আমার সাথে ভার্চুয়্যাল ভ্রমণে আরলান্ডা এক্সপ্রেসে উঠেছিলেন তাদেরকে অনুরোধ করবো আসুন এখন আমরা একসাথে আশেপাশে শহরটা ঘুরে দেখি। আজকের পর্বে থাকবে স্টকহোম শহর দেখার সংক্ষিপ্ত বিবরণ এবং স্টকহোম থেকে কিরুনা অভিমুখি ১৫ ঘন্টার নৈস্বর্গিক ট্রেন ভ্রমণের প্রস্তুতি।
স্টকহোম সেন্ট্রাল স্টেশন খুব বেশি বড় নয় তবে বেশ সাজানো গোছানো চিমচাম। এটি হচ্ছে শুধুমাত্র আন্তঃসংযোগ রেলওয়ে স্টেশন। মেট্রো ও কমিউটার ট্রেন স্টেশন মাত্র এক কিঃমিঃ দূরেই অবস্থিত। এই স্টেশন থেকে আন্ডারগ্রাউন্ড করিডোর দিয়েও সেখানে যাওয়া যায়। এখানে সাইনবোর্ডে প্লাটফরম, মেট্রোরেল, ট্যাক্সি, ওয়াশিং রুম, লকার রুম ইত্যাদি সবকিছুর অবস্থানের দিক উল্লেখ করা আছে। নিচের তলায় লকার রুমে গিয়ে লাগেজ লকারে আমাদের মালপত্র রাখলাম। তিনতলা স্টেশন, প্রতি ফ্লোর থেকে বের হওয়ার রাস্তা আছে। প্রতিটি ফ্লোর থেকে আলাদা আলাদা রাস্তার সাথে বহিঃগমন সংযোগ। হাতে সময় আছে প্রায় সাড়ে তিন ঘন্টা। তাই আশেপাশে ঘুরতে স্টেশন থেকে বেরিয়ে গেলাম।
আমরা ২য় তলা দিয়ে বের হয়ে (Vasagatan) ডান দিকে থাকাতেই নদী চোখে পড়লো। সেদিকেই গেলাম। এটি একটি হ্রদ, দৈর্ঘ্য নাকি প্রায় নদীর মতোই। এর পাশেই স্টকহোম সিটি হল। হলটি বাহির থেকে দেখতে গির্জার মতই মনে হয়। স্টকহোম সিটি হল স্টকহোম সিটি কর্পোরেশনের মালিকাধীন ভবন। এটি অফিস এবং সম্মেলন কক্ষ পাশাপাশি আনুষ্ঠানিক হল। এখানে রয়েছে অভিজাত রেস্টুরেন্ট স্ট্যাডহুজসেলারেন (Stadshuskallaren)। এটি নোবেল পুরষ্কারের নৈশভোজের জায়গা এবং স্টকহোমের অন্যতম প্রধান পর্যটক আকর্ষণ। গাইডের নেতৃত্বে পর্যটকরা এটি পরিদর্শন করতে পারে। এটি নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছিল ১৯১১ সালে শেষ হয়েছিল ১৯২৩ সালে, টাওয়ারের উচ্চতা ১০৬ মিটার। বাহির থেকে ঘুরেফিরে দেখলাম। পাশের ঘাটে কিছু নৌযান দেখলাম যেগুলো কয়েক ঘন্টার জন্য পর্যটকদের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে নিয়ে যায়।
এরপর মেট্রো সেন্ট্রাল স্টেশনের দিকে আসলাম। এদিকে এসে পেলাম অনেকটা আমাদের ঢাকার শাপলা চত্বরের মতো ফোয়ারাসহ সড়কদ্বীপ। এর নাম সারগেলস স্কয়্যার (Sergels Torg)। সার্জেলস টর্গ ("সার্জেলস স্কয়ার") স্টকহোমের সর্বাধিক কেন্দ্রীয় পাবলিক স্কয়ার। অষ্টাদশ শতকের ভাস্কর জোহান টোবিয়াস সার্গেলের নামানুসারে ১৯৬৭ সালে স্কয়ারটির নির্মাণকাজ শেষ হয়েছিল। স্টকহোম শহরে পর্যটকদের কেনাকাটার জন্য সুপরিচিত সড়ক Drottninggatan (Queen street) এখান থেকেই শুরু।
এই শপিং সড়ক দিয়ে কিছুদূর গেলেই সুইডেনের সংসদ ভবন। এটি একটি সংযোগ খালের উপর স্থাপিত। সংসদ ভবন কমপ্লেক্সটি নওক্লাসিক্যাল স্টাইলে অরন জোহানসন ডিজাইন করেছিলেন। সংসদ ভবনটি ১৮৯৭ থেকে ১৯০৫ এর মধ্যে নির্মিত হয়েছিল। কমপ্লেক্সের দুটি বিল্ডিং, মূলত একটি সংসদের জন্য এবং অন্যটি সুইডিশ ন্যাশনাল ব্যাংকের জন্য অর্ধবৃত্তাকারে নির্মিত হয়েছিল।
সংসদ ভবন সংলগ্ন খালটি মেলারেন হ্রদকে (স্টকহোম সিটি হলের পাশে) বাল্টিক সাগরের জলের সাথে সংযোগ করে দিয়েছে। এখানে সুইস গেট রয়েছে যার মাধ্যমে হ্রদটির পানিকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। খালের পাড়ের রাস্তা ধরে সাগরের দিকে গেলাম। উপরের ছবিটি সেদিক থেকে নিয়েছি। উল্লেখ্য, গভীর সাগর এখান থেকে বেশ দূরে। ইচ্ছা থাকা স্বত্বেও সময়ের অভাবে এদিকে আর বেশি ঘুরতে পারলাম না। তাই একটি রেস্টুরেন্টে খাওয়াদাওয়া সেরে সেন্ট্রাল স্টেশনে ফিরে আসলাম।
স্টেশনের নির্দিষ্ট প্লাটফরমে স্টকহোম - নেরভিক ট্রেন দাঁড়িয়ে আছে। তবে এখনো যাত্রী উঠানো শুরু করেনি। রেলওয়ের স্টাফরা ট্রেনের সবকিছু ঠিক আছে কিনা শেষবারের মতো চেক করে দেখছে। এর মধ্যে আমরা লকার থেকে আমাদের মালামাল নিয়ে প্লাটফরমের বেঞ্চে আয়েস করে বসলাম। স্টকহোমে এখন (জুনের শেষ সপ্তাহ) সূর্যাস্ত ১০ টায়, সূর্যোদয় সাড়ে ৩ টায়। স্থানীয় সময় এখন বিকাল সাড়ে ৫টা হলেও সুর্যের আলো ও বাতাসের উষ্ণতায় মনে হয় বাংলাদেশের বসন্তকালের দুপুর ২টা! কিছুক্ষণের মধ্যে শুরু হবে আমার জীবনের দীর্ঘ ট্রেনযাত্রা 'সুমেরু অঞ্চলে নিশি রাতে সূর্য দর্শন - পর্ব ৩'। আজ এখানেই ইতি। আবার কথা হবে ৩য় পর্বে। সবাই ভালো থাকুন।
তথ্য ও ছবিসূত্র: কিছু ছবি নিজের তোলা, কিছু ছবি ও তথ্য ইন্টারনেট।
◄ পর্ব ১ ——— সুমেরু অঞ্চলে নিশি রাতে সূর্য দর্শন ——— পর্ব ৩ ►
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জুন, ২০২০ রাত ৩:২৮