জাতীয় দৈনিকগুলোতে খবর আসছে যে ভারত বাংলাদেশের বন্ধু, তাই বাংলাদেশকে সুদে টাকা ধার দেবে । যার সুদের হার ২.২৫%, সময় মত টাকা দিতে না পারলে সুদ হবে ৪.২৫%। সেই অর্থ দিয়ে পণ্য ও সেবা কিনতে হবে শুধু মাত্র ভারত থেকে । নির্মান করা হবে ট্রান্জিটের রাস্তা, যার সুবিধা গ্রহন করবে ভারত। অর্থাত্ কৈ এর তেলে কৈ ভাজা তো বটেই , সঙ্গে কড়াই গরম থাকতেই দুটো পুঁটি মাছ ও ভেজে নেওয়া । ইন্ডিয়া যখন বাংলাদেশের বন্ধু সেজে লগ্নি ব্যবসা করার এমন পাঁয়তারা চালাচ্ছে, তখন আমার বন্ধু সুবল পালের একটা ঘটনা বড্ড মনে পড়ছে। আজ সেই গল্পটাই শুনাব ।
রাজশাহী মেডিকেলে আমার প্রথম সারির বন্ধুদের মধ্যে সুবল ছিল অন্যতম । ওর দেশপ্রেম আর জাতীয়তাবাদ আমাকে মুগ্ধ করেছিল । আমাদের দেশে যারা বলে " হিন্দু মানে ভারত প্রিতি হিন্দু মানে নৌকা মার্কা" তাদের উচিত্ সুবলের সাথে কথা বলা । সুবলের সবচেয়ে বড় পরিচয় সে এক জন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান । যাইহোক , ওর এক মামার বাড়ি ছিল পশ্চিমবঙ্গে । আর সেই সুত্রে দুই এক বছর পর পর ডিসেম্বার মাসে (বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হলে) সুবলের ভারত বেড়ানোর সুযোগ হতো । এমনই এক ডিসেম্বার মাস, সুবলরা বেড়াতে যায় মামার বাড়ি , মামা ঘরজামাই, অর্থাত্ মামার শ্বশুর বাড়ি । সকাল ১০ টার দিকে পৌছে নাস্তায় মিলে এক কাপ চা আর ২টা শুকনা টোষ্ট । সকালে বাঙ্গালীর তো পান্তা নুন না হলে পেট ভরে না , তাই এক ফাঁকে মোড়ের হোটেলে গিয়ে দুটা পরটা, আলু পটলের ভাজি সঙ্গে একটা মিষ্টির অর্ডার দিল সুবল। একটু পর হোটেলের বয় খাবার গুলো দিতে এসে মিষ্টি হেসে বলে "দাদা বাংলাদেশ থাকে এসচেন বুজি?" সুবলের অবাক লাগে, এবেটা বুঝল কি করে? সুবলঃ তুমি বুজলে কি করে? বয়ঃ আমরা খাওয়া দেখলেই বুজি দাদা। নাস্তা সেরে এদিক ওদিক ঘুরে দুপুরের আগে সুবল বাসায় ফিরে।
ওর মামাতো ভাই এর বার্ষিক পরীক্ষা তখনো শেষ হয়নি,তাই দুপুরটা টিভি দেখে কাটানোর চিন্তা করে সে। টিভির ঘরে ঢুকে দেখে সেখানে এক মহা আয়োজন, পরিবারের ছোট বড় সকলেই আছে । বিশেষ এক সিরিয়াল হচ্ছে যা কেউই মিস্ করে না। সিরিয়ালটা এতটাই জরুরী যে পরীক্ষার্থী ও এসময় এক ঘন্টার ছুটি পায়।
পরিবারের কণিষ্ঠরা স্হান পেয়েছে মেঝেতে, রোজগেরেরা (মামা ও মামী ) সোফায় আর সুবলের দিদিমা অর্থাত্ ওর মামীর মা বসেছেন মেঝেতে, সবার সামনে। উনি নাকি চোখে কম দেখেন তাই টিভির খুব কাছে বসেন। ভদ্র মহিলা আর টিভিটার সামান্য বর্ণনা সুবলের ভাষায় না দিলেই নয়, কারন আজকের লিখাটা ওদের জন্যই। দিদিমার পরনে সাদা শাড়ি (ব্লাউজ, পেটিকোট ছাড়া), কপালে চন্দনের তিলক, গলায় কাঠের মালা, বয়স ষাট এর কোঠা পার। টিভিটাকে টিভি না বলে কাঠের বাক্স বললে খুব বেশি অপরাধ হবে না। সাদা-কাল টিভি, কিছুক্ষণ পর পর তার পর্দা থেকে সমস্ত ছবি হারিয়ে গিয়ে অসংখ জোনাকি পোকার আগমন ঘটে, আর শব্দটা এমন হয় যেন বাহিরে মুসুলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। তখন সুক্ষ হাতের ছোঁয়ায় চ্যানেল নব্টা নাড়াচাড়া করলে টিভির মাথা ঠান্ডা হয় এবং অভিনেতা-অভিনেত্রীরা আবার পর্দায় ফিরে এসে অভিনয় করতে থাকে ।
বয়সের মাপকাঠিতে সুবলের স্হান মেঝেতে হওয়ার কথা হলেও মেহমান বলে একটা মোড়া জোটে সুবলের ভাগে। মোড়াতে তখনো ঠিকমত বসাই হয়নি সুবলের, এমন সময় দিদিমা মিষ্টি হেসে, টিভির দিকে আঙ্গুল দেখিয়ে, সুবলকে উদ্দেশ্য করে বলে "বলোতো দাদু ভাই এটা কি? এটা ককনো দেকেচ ?" সুবল প্রথমে প্রশ্নটা বুঝতে পারে না তাই চুপ করে থাকে, পরে যখন বুঝতে পারে তখন উত্তর খুঁজে পায় না। এদিকে দিদিমা বলতে থাকে "চিনলে না তো , এটা টিবি গো নাগর এটা টিবি। খুব মজার জিনিস, দ্যাক।"
প্রথমে সে খুব লজ্জা পায়। কারন এমন প্রশ্ন তো কাওকে শুধু হেয় করার জন্যই করা হয়। ওর ভাষায় " আমি লজ্জায় খয়েরী হয়ে গেলাম।" কারন সুবলের গায়ের রং ছিল বেশ কাল তাই সে লজ্জায় লাল হতে পারেনি। লজ্জার পর খোভ, তার পর প্রতিশোধ মূলক উত্তর দেয়ার চিন্তা । সুবল অবাক হওয়ার ভঙ্গিতে বলে ওঠে " টিভি? এ কেমন টিভি গো দিদিমা? এখানে দেখছি ফুল, পাখি, মানুষ সকলেই ছাই রঙ্গের জামা পরেছে। আমাদের টিভি কিন্তু এমন না গো, ওখানে যার যা রং তাই দেখা যায়।" সুবলের কথায় সকলে হা হা করে হেসে ওঠে। সিরিয়ালটা শেষ হয়ে যায়। সকলের হাসিতে দিদিমা লজ্জায় লাল হয় সত্যি সত্যিই ।গল্পটা এখানেই শেষ। কিন্তু. আমার প্রশ্ন "আমাদের সরকারের কি এক জন সুবল ও নেই যে এমনই একটা জবাব ভারত কে দিতে পারে?"
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মে, ২০১০ রাত ১১:৩০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



