somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে রয়েছ নয়নে নয়নে...

১৯ শে জুলাই, ২০১৪ রাত ৮:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার পড়ার ডেস্কের উপর একটা বিশাল পোস্টার। পোস্টারটায় গুটিগুটি অক্ষরে লিখা, "নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে রয়েছ নয়নে নয়নে... হুমায়ূন আহমেদ (১৯৪৮ নভেম্বর ১৩ - ১৯ জুলাই ২০১২)"

এখনো মনে আছে ওইদিনটার কথা যেদিন স্যার পরলোকগমন করেন। স্যার অসুস্থ, তাঁর প্রিয় মাতৃভূমি ছেঁড়ে নিউ ইয়র্কের ঝলমলে আলোর দেশে। স্যারের ভাষায় "কর্কট রোগ" নামক মরণ ব্যাধির চিকিৎসা করাতে পৃথিবীর সর্ব শ্রেষ্ঠ ক্যান্সার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন স্যার। এর মাঝে দেশে এসে ঘেটুপুত্র কমলার প্রিমিয়ার শোতে অংশগ্রহণ করে গিয়েছেন।

সোহানের অনেকগুলা ভালো অভ্যাসের একটা হচ্ছে সবসময় এসএমএস দিয়ে সব সময় খোঁজখবর রাখা, বিভিন্ন বিষয়ের আপডেট সবাইকে দিয়ে বেড়ানো। একদিন রাতে হঠাৎ সোহানের এসএমএস, "The legendary writer Humayun Ahmed is no more." আমার ভাগিনার দুস্টামি করার অনেক বাতিক আছে আর সে ভালোমতই জানে আমি হুমায়ূন আহমেদের যে কোন ব্যাপারে যথেষ্ট সিরিয়াস। ভাবলাম হয়ত দুষ্টামি করছে, ফোন দিলাম। ফোনে সোহানের সাথে কি কথা হয়েছিলো সেটা মনে নেই। স্রেফ এটা মনে আছে, ওইদিন একটা কুৎসিত চাঁদের আলোয় রাস্তায় অনেকটা পথ হেটেছিলাম। না হিমু মোতাহারদের কারো ভুতই আমার কাধে চড়ে নি। Forrest Gump মুভির একটা ডায়লগের মত, "I just felt like walking."

একটা সময় আমাদের দেশের একটা বিশাল অংশ বই পড়া থেকে হাজার মাইল দূরে ছিলো। বই মেলায় বই বিক্রি হতো হাতে গোনা পাঁচ। স্যার এই বই বিমুখ জাতিকে বই পড়া শিখিয়েছেন, বই কিনা শিখিয়েছেন। একটা সময় বাংলা টেলিভিশানে ছিলো কোলকাতার ভাষা প্রভাব। হুমায়ূন আহমেদ তাঁর নাটক দিয়ে, তাঁর খাঁটি বাংলাদেশি ভাষাশৈলী দিয়ে ওই ভূত তাড়িয়েছেন। স্যারের হাত কিং মিডাসের হাত অপেক্ষা কম শক্তিশালী ছিলো না। স্যার যেখানে তাঁর সোনার হাত বুলিয়েছেন সেখানেই সাফল্যের চূড়ান্ত দেখেছেন। এই দেশকে দিয়ে গেছেন নতুন এক প্রজন্ম। যে প্রজন্ম বই পড়ে, বই কিনে। এক জন রসায়নের অধ্যাপক যার সাহিত্যে অবদানের জন্য বাংলা একাডেমী পুরস্কার আছে আবার চলচিত্রে অবদানের জন্য পেয়েছেন জাতীয় চলচিত্র পুরষ্কার।

জীবনের এমন কোনো মুহুর্ত এমন কোনো পরিস্থিতি এমন কোনো কথা বাকি নেই যা স্যার তাঁর লেখায় তুলে আনেন নি। তাঁর লেখনি, তাঁর নাটক, তাঁর চলচিত্রের প্রত্যেক বর্ণনায়, প্রতি দৃশ্যে আমাদের জীবনের গল্প তুলে ধরে গিয়েছেন হুমায়ূন আহমেদ।

হালের অনেক জনপ্রিয় লেখক আছেন যারা সজ্ঞেনে হুমায়ূন আহমেদকে অনুসরণ করেন। মুখে হয়ত অস্বীকার করবেন, কিন্তু তাদের লেখনীর ধাঁচ তাঁর সাক্ষী দেয়। সবচে মজার ব্যাপার হচ্ছে এই সব লেখকরা হুমায়ূন সমালোচনায় খুবই তুখোড়। নিজের জনপ্রিয়তা বাড়ানোর নোংরা উপায়। তসলিমা নাস্রিন তো হুমায়ূন সমালোচনা করতে যেয়ে সত্যি কথা বলে ফেলেছেন তাঁর এক লেখায়, "ঈশ্বরকে বাঁচিয়ে রেখেছে যেমন তাঁর বিশ্বাসীরা, তেমনি হুমায়ূন আহমেদকে বাঁচিয়ে রেখেছে তাঁর পাঠকরা।" হুমায়ূন আহমেদের বইয়ের পাঠক কোনদিন কমবে না আর তাঁর অমরত্বও বাড়বে বৈকি কমবে না।

হিমু হবার চেষ্টা কোন ছেলেটি না করে? রুপা কিংবা তিথি হওয়ার ইচ্ছা কতো মেয়ের? মিসির আলির মত যুক্তি কে না দিতে চায়? কিংবা বাকের ভাই? কিংবা শুভ্র? কিংবা বদি? কিংবা মহামান্য ফিহা? কিংবা 'দুই দুয়ারী'র নাম না যান সেই যুবক? 'কবি'র আতাহার হতে চেয়েছে আমার মত কত নির্বোধ...

প্রিয় হুমায়ূন আহমেদ, মাফ করবেন। গুরুদাক্ষিনাটা দেয়া হয় নি আপনাকে। দাঁড়ানোর সাহস পাইনি আপনার সামনে কখনো। মেঘের ওপারে চলে গেলেন আজ দুই বছর হল। এখনো কেন জানি বিশ্বাস হয় না। কেন জানি মনে হয় আপনি আছেন, এখনো আছেন এই সাজঘরে। হয়ত দেখা হবে গৌরীপুর জংশনে রোদনভরা এক বসন্তে কিছুক্ষণের জন্য। চলে যাক বসন্তের দিন মেঘের ছায়া হয়ে, আমি থাকব অপক্ষায় যদি সে আসে ধীরে আমাদের এই নগরে কোন অন্যদিনে......

"চোখ মোছ, কলমটা নে হাতে।
কী লিখবি, মন যা লিখতে চায়।

কাগজ তো নেই, বিছিয়ে দিলাম আঁচল।
আর দেরি না, লিখতে বস রে পাগল।
আমি লিখতে বসেছি, লিখে যাচ্ছি।"

(স্যারের লেখা শেষ কবিতার শেষ পাঁচ লাইন।)
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×