somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

থিসিস খসড়াঃ Theories to control minds

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৯ রাত ৯:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



পর্ব – ১
[ মানুষের মন আর মানসিকতার উপর অনেক দিন ধরেই আমার আগ্রহ। আর, এই ক্ষেত্রে এক্সপেরিমেন্ট আর পর্যবেক্ষণের জন্য সবচেয়ে সহজলভ্য গিনিপিগ আমি নিজেই। আমি মোটামুটি ভাবে এই লেখাটা লিখব বলে প্ল্যান করে আসছি অনেকদিন। কিন্তু শেষপর্যন্ত আর কোন কিছু গুছিয়ে ওঠা হয় না। ভাষা গোছাতে পারি না বা মাঝে মাঝে লেখার মুডও আসে না। লেখাটা আমি সিরিজ আকারে দেব। আমি জানিনা এটা কতদূর পর্যন্ত আগাবে।

এই পর্বটা শুরু করার আগে আমি পর্বগুলো সম্পর্কে কিছু ধারণা দিতে চাই। পুরো লেখাটা তাদের জন্যেই, যারা আগ্রহী। একটা বিষয় শেখাবার সবচেয়ে ভাল পদ্ধতি হচ্ছে ধাপে ধাপে শেখানো। এতে পুরো ব্যাপারটা আত্মস্থ করতে অনেক সুবিধা হয়। কিন্তু, মন মানসিকতা নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারটা এরকম না। ধাপে ধাপে বললে আত্মস্থ সহজ হবে, কিন্তু শেষ ধাপে এসে আমরা আগের ধাপ গুলো ভুলে যাব। তাছাড়া, এখানে শেষ ধাপটা ফাইনাল কোন কোন ধাপ না। বরং, প্রায়োগিক ক্ষেত্রে যেমনটা হয়, প্রতিটা ধাপ এখানে ফাইনাল ধাপের সমান গুরুত্বপূর্ণ। আমি যা বুঝাতে চাচ্ছি তা হচ্ছে, থিওরীগত ভাবে অর্থাৎ বোঝার জন্য ধাপগুলো লিঙ্কড কিন্তু প্রায়োগিক ক্ষেত্রে ধাপগুলোর প্রয়োগ ইনডিভিজুয়াল। তাই, মূল কথাটা সবগুলো পর্বেই ভিতরে দিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হবে।

যা প্রতি পর্বে শুনতে শুনতে একেবারে শেষের পর্বে পরিষ্কার হবে। প্রতিটা লেখা কিছুটা আগোছালো মনে হলেও শেষ পর্যন্ত সবই পরিষকার হয়ে যাবে। অর্থাৎ, পুরো ব্যাপারটা বোঝার জন্য অবশ্যই আগ্রহী পাঠকের বিকল্প নেই।

এই লেখার প্রতি পর্বের শুরুতে এভাবেই নিজের কিছু কথা আর পর্বগুলোর সম্পর্কে কিছুটা ধারণা আগাম দেয়ার চেষ্টা করা হবে।
হ্যা, আশা রাখি পুরো লেখাটা আত্মস্থ করতে পারলে আশেপাশের মানুষগুলোর উপর আপনার কন্ট্রোল কিছুটা হলেও বাড়বে। ]


প্রথমে এটা জানা উচিত যে, মন কিন্তু কোন আবস্ট্রাক্ট ব্যাপার না আসলে। বরং, এটা মস্তিষ্কেরই একটা অংশ। মনের অবস্থান আমাদের হৃদয়ে না, বরং মস্তিষ্কে। সুতরাং, পুরো ব্যাপারটা শুধু মনস্তত্ব না, কিছুটা বায়োলজিকালও বটে।

আমাদের মানসিকতা দুটো বিষয়ের উপর নির্ভর করে। প্রথমটা হল পরিবেশ আর দ্বিতীয়টা হল বংশানুক্রম। এর মাঝে পরিবেশটা হল প্রধান বিবেচ্য বিষয়। বংশানুক্রমে আপনি জেদী হতে পারেন, ওল্পতেই জেদ উঠতে পারে। কিন্তু সেই জেদটার প্রকৃতি ঠিক করে দেয় পরিবেশ। জেদ করে কেউ ঝাপিয়ে পড়ে, কেউ হয়ত মনে মনে রাগ পুষে রাখে, কেউ কিছুক্ষণ পরে ভুলে যায়, কেউ সহ্য করতে না পেরে কেঁদে ফেলে। একটা মানুষের মনের উদ্দেশ্যটাই হচ্ছে, তার জন্য প্রতিটা ক্ষেত্রে রিএকশন ঠিক করে দেয়া। সেক্ষেত্রে আপনি কোন পরিবেশের বড় হয়েছেন, তার উপর নির্ভর করবে যে আপনি আপনার জেদটাকে কেমন ভাবে কোন পরিস্থিতিতে প্রকাশ করবেন।

কোন ঘটনার প্লেমেকার হওয়ার জন্য প্রথমে বের করতে হবে ঘটনাটা কেন ঘটল ! আর, প্রতিটা ঘটনায় আমরা কীভাবে রিএকশন করব তা ঠিক করে দেয় আমাদের মন। উল্টাভাবে, আমরা যদি রিএকশন এনালাইসিস করতে পারি, তাহলে আমরা ধারণা পাব যে, কার মন মানসিকতা কেমন। একইভাবে আমরা যদি রিএকশন কন্ট্রোল করতে পারি, তাহলে তার মনের উপরও কিছুটা কন্ট্রোল এসে যাবে।


আমাদের রিএকশনের পুরো প্যাকেজটাই হল আমাদের আচরণ। সমস্ত রিএকশনের সার্বিক সেট। অর্থাৎ আমাদের কার আচরণ কেমন সেটা নির্ভর করে আমাদের মন মানসিকতা কেমন তার উপর। অর্থাৎ আপনি কারও আচরণে পরিবর্তন করতে পারলে, তার মনেরও পরিবর্তন করতে পারবেন। এখানে একটা ব্যাপার, অতি অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, একজন মানুষের আচরণ কিন্তু শুধু মাত্র বাহ্যিক না। তার রিএকশনের সাথে তার চিন্তাটাও যোগ হয়ে হয় তার আচরণ।


“ছেলেটা গুরুজনদের সালাম দেয়। তাই সে খুব ভাল ছেলে” – ব্যাপারটা আসলে এত সহজ না। ছেলেটার আচরণের সম্ভাব্য যতগুলো দিক সম্ভব আমরা আন্দাজ করার চেষ্টা করতে পারি। ছেলেটা মন থেকে সম্মান করে সালাম দিল। অথবা, ছেলেটা সালাম দিল আর মনে মনে একটা গালি দিল। অথবা, ছেলেটা সালাম দিল পাশের কাউকে দেখাতে যে সে খুব ভাল ছেলে। অথবা, ছেলেটা সালাম দিল কারণ তার বাপ তার পিছে, আর উনি বলেছেন সালাম না দিলে ছেলের হাড্ডি ভাঙবেন। অথবা, ছেলেটা সালাম দিল কারণ মুরুব্বীর মেয়েকে তার ভাল্লাগে, তাই ভবিষ্যতে কিছুটা আচরণগত ফায়দা পাওয়ার জন্য। অথবা, ছেলেটা সালাম দিল, কারণ মুরুব্বীর ছেলে তার বাপকে সালাম দিয়েছে। সব ক্ষেত্রেই ঘটনা একই যে সে সালাম দিল। কিন্তু প্রতিটা উপরের প্রতিটা অপশন, বাস্তব ক্ষেত্রে ছেলেটার আচরণ আলাদা আলাদা ক্যাটাগরীতে ফেলে দেয়।


এত গুলো অপশন দেখে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আসলে তা মূল উদ্দেশ্যটা যে কী সেটা এই ছোট ঘটনাতে আমরা বুঝতে না পারলেও আরও কয়েকটা জায়গায় তার আচরণ বের করতে পারলেই আমরা খুব সহজেই তার মানসিকতা ধরতে পারব।উপরের প্যারায় আমি যা বুঝাতে চেয়েছি তা হল, এই ছোট্ট ব্যাপারটার পিছে আরো অনেক কারণ থাকতে পারে। তাই আমি পিটিয়ে ছেলেকে সালাম দেয়া শিখালাম, আর তার মনের কুটিলতা ধুয়ে মুছে গেল, এমনটা না ভাবাই উত্তম।


সেই সালাম দেয়া ছেলেটার আচরণ যেমনই হোক, সেই আচরণটা কেন হল, তা বুঝার জন্য ছেলেদের মন মানসিকতা কীভাবে তৈরি হয়, তা নিয়ে কিছুটা ধারণা রাখতে হবে। ছেলেদের কৈশর যখন শুরু হয় তখন দশজন ছেলের মাঝে বিচার করলে এদের মাঝে অনেক ভেরিয়েশন দেখা যাবে। কিন্তু আস্তে আস্তে যখন তারা বড় হয়, তাদের মাঝে ভেরিয়েশন কমতে থাকে। শেষ পর্যন্ত দেখা যাবে, এরা সবাই কোন না কোন নির্দিষ্ট ক্যাটাগরীর আচরণ করছে,যা প্রেডিক্টেবল। যারা ব্যতিক্রম, তারা আসলে একাধিক ক্যাটাগরির মিশেল ছাড়া আর কিছু না।


মোটামুটি ভাবে খুব স্থূল চিন্তা করে আমরা কিছু ক্যাটাগরি বের করতে পারি, যেই ক্যাটাগরির আচরণ নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে কিছুটা প্রেডিক্টেবল। যেমন ধরা যাক, মাদ্রাসায় পড়া ছেলেরা। অথবা, নির্দিষ্ট এলাকায় যারা রিকশা চালান। পাছার নিচে প্যান্ট পড়া কিছু ছেলে অথবা হতাশাগ্রস্ত কিছু ছেলে। দাঙ্গাবাজ পোলাপান। গোড়া মুসলমান, হঠাৎ মুসলমান, প্রায় নাস্তিক মুসলমান(!), মাইনরিটি এবং নাস্তিক। খেয়াল করে দেখেন, টিপিকাল ম্যাঙ্গো জনগণের মাঝে এইসব গ্রুপের আচরণ প্রেডিক্টেবল। অর্থাৎ, নির্দিষ্ট পরিবেশে এরা কী ধরণের আচরণ করবে আমরা আগে থেকেই কিছুটা ধারণা করতে পারব।


আপাতত, এই পর্বে এটুকুই। আগামী পর্বে ধারণা দেয়ার চেষ্টা করব যে, একটা ছেলে এইরকম প্রেডিক্টেবল আচরণ কেন করছে আর তারপরের পর্বে ধারণা দেয়ার চেষ্টা করব যে, এই ক্যাটাগরি গুলো আসলে কীভাবে চিন্তা করছে। আরও পরের পর্বগুলোয় যথাক্রমে ধাপে ধাপে মেয়েদের মানসিকতার ব্যাপারটা আসবে। তারও পরে দুই পক্ষের পাশাপাশি মানসিকতা কেমন হবে তা নিয়ে আলোচনার ইচ্ছা রাখি।

অন্যান্য পর্বের জন্য Click This Link

© আকাশ_পাগলা
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই অক্টোবর, ২০০৯ রাত ১১:০২
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×