somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অভিমন্যু মিশরা: ইতিহাসের সবচেয়ে কমবয়সী গ্র্যান্ডমাস্টার দাবাড়ু

০১ লা জুলাই, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



২০০২ সালের ১২ই আগস্ট রাশিয়ার সার্গ্যে আলেক্সোন্দ্রোভিচ কারয়াকিন মাত্র ১২ বছর ৭ মাস বয়সে ইতিহাসের সর্বকনিষ্ঠ দাবাড়ু হিসেবে, দাবা খেলার সর্বোচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন 'গ্র্যান্ডমাস্টার' খেতাবটি অর্জন করেন। সেই ঐতিহাসিক মুহূর্তের প্রায় দুই দশক পরে, গতকাল সার্গ্যে কারয়াকিনের রেকর্ডটি ভেঙ্গে দিয়েছেন ভারতীয় বংশোদ্ভুত আমেরিকান দাবাড়ু অভিমন্যু মিশরা। তুখোড় স্মৃতিশক্তির আশীর্বাদপুষ্ট এই শিশুটি গ্র্যান্ডমাস্টার খেতাব অর্জন করেছে মাত্র ১২ বছর ৪ মাস ২৫ দিনে! সবচেয়ে কম সময়ে গ্র্যান্ডমাস্টার খেতাব অর্জনের পাশাপাশি অভিমন্যুর ঝুলিতে আছে সবচেয়ে কম বয়সে দাবায় ইন্টারন্যাশনাল মাস্টার হওয়ার খেতাবটিও। তবে এত অল্প বয়সে বিশ্ববাসীকে চমকে দেয়ার মতো প্রতিভাধর এই শিশুটির যাত্রাপথও ছিলো অত্যন্ত দূর্গম।

জানলে হয়তো অবাক হবেন যে, অভিমন্যুর কোনো স্পন্সর না থাকায় দাবা খেলায় তার এগিয়ে যাওয়ার সমস্ত খরচ বহন করতো তার পরিবার এবং ভক্তরা। এখনো পর্যন্ত তার ক্যারিয়ারের পেছনে কয়েক কোটি ভারতীয় রুপি সমতুল্য অর্থ খরচ হয়ে গেছে। এছাড়া প্রফেশনাল দাবা খেলাটা অত্যন্ত কঠোর অধ্যাবসায় এবং বিরুপ পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়ানোর সক্ষমতা ছাড়া একেবারেই অসম্ভব। একজন ১২ বছর বয়সী শিশুর জন্য দাবায় গ্র্যান্ডমাস্টার হওয়াটা তাই অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং কেননা বড় বড় টুর্নামেন্টগুলোতে দাবা খেলা মস্তিস্ক এবং দেহ, উভয়ের জন্যই ভীষণ ক্লান্তিকর।

বলে রাখা ভালো যে, একজন গ্র্যান্ডমাস্টার দাবাড়ু হতে হলে নূন্যতম ২৫০০ ইলো রেটিং অর্জন করার পাশাপাশি তিনটি গ্র্যান্ডমাস্টার নর্ম অর্জন করতে হয়। শুধু মাত্র সে সমস্ত টুর্নামেন্টেই গ্র্যান্ডমাস্টার নর্ম দেয়া হয়, যেখানে ৫০ শতাংশের অধিক অংশগ্রহণকারী দাবাড়ু টাইটেলধারী এবং মোট প্রতিযোগীদের এক তৃতীয়াংশ স্বয়ং গ্র্যান্ডমাস্টার খেতাবী!

অভিমন্যু মিশরা তার বাবা-মা এবং বোনের সাথে আমেরিকার নিউ জার্সি অঙ্গরাজ্যে বসবাস করেন। মহাভারতের গুরুতপূর্ণ একজন চরিত্রের নামে নাম রাখা অভিমন্যুকে পরিচিতরা 'অভি' নামে ডাকেন। দাবার জটিল দুনিয়ার বাইরে অন্য পাঁচজন শিশুর মতোই ভিডিও গেমস খেলতে ভালোবাসে অভি। আর নিঁখুত সাদা কালো ৬৪ খোপের সাথে অভির পরিচয় ঘটে বাবা হেমন্ত মিশরার আগ্রহে। আড়াই বছর বয়সে ছোট্ট অভিকে দাবা খেলতে শেখানো হলে খুব দ্রুতই খেলাটিকে নিজের বশীভূত করে ফেলে সে। কম বয়সী খেলোয়াড় হিসেবে আমেরিকান দাবা ফেডারেশনেরও অনেকগুলো অসাধারণ রেকর্ড রয়েছে তার।





অভিমন্যু মিশরা আজকে ইতিহাসের সোনালি পাতায় তার নামটি স্থায়ী করতে পেরেছে তার বাবার অক্লান্ত পরিশ্রম এবং নিরঙ্কুশ সমর্থনে। অভি যাতে তার দাবা খেলা চালিয়ে যেতে পারে, তাই অনেক ত্যাগ এবং তিতিক্ষার পরিচয় দিয়েছে তার পরিবার। বিশ্বের বড় বড় দাবাড়ুদের সাথে অভি যাতে দাবা খেলতে পারে, তাই তার বাবা তাকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের টুর্নামেন্টগুলোতে নিয়ে গেছেন। এমনকি যে টুর্নামেন্টে দারুণ পারফর্ম করে ইতিহাসের সবচেয়ে কমবয়সী গ্রান্ডমাস্টারের খেতাবটি অর্জন করেছে অভিমন্যু, সেটিও অনুষ্ঠিত হয়েছে হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টে। বিগত তিন মাস ধরে এই টুর্নামেন্টে অংশ নেয়ার জন্য বুদাপেস্টে অবস্থান করছিলেন অভি এবং তার বাবা। ঠিক এমনই একটি গল্প রয়েছে ইতিহাসের আরেক খ্যাতিমান দাবাড়ু বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ম্যাগনাস কার্লসেনের জীবনে। অভিমন্যু মিশরার মতো ম্যাগনাস কার্লসেনও অল্প বয়সে (১৩ বছর ৪ মাস) গ্রান্ডমাস্টার হয়েছিলেন তার বাবা হেনরিখ কার্লসেনের অসামান্য অনুপ্রেরণার শক্তিতেই। হয়তো অভিমন্যু মিশরাও একদিন পৌছাতে পারবে ম্যাগনাস কার্লসেনের মতো বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের শিখরে।



এই মুহূর্তে সারা পৃথিবী থেকে অভিমন্যু মিশরাকে অভিনন্দন জানানো হচ্ছে। অভিমন্যুর আগে সর্বকনিষ্ঠ গ্র্যান্ডমাস্টারের খেতাবধারী সার্গ্যে কারয়াকিনও এই মেধাবী দাবাড়ুকে নিজের আন্তরিক শুভেচ্ছা এবং শুভকামনা জানাতে ভোলেননি। এদিকে অভিকে ভবিষ্যতে নিজের ভালোলাগার পথেই এগিয়ে যেতে দিবেন সফল বাবা হেমন্ত মিশরা, তবে কঠোর তপস্বী অভির ইচ্ছা এই জীবনেই সর্বকালের সেরা দাবাড়ুর স্বীকৃতি অর্জন করা।

ছবি কৃতজ্ঞতা: চেসবেস ইন্ডিয়া


আমার অন্যান্য লেখা:
চল্লিশ বনাম এক: একজন গোর্খা কর্পোরালের বীরত্বগাথা
রেডিয়াম গার্লদের বেদনাদায়ক ইতিবৃত্ত
সেসিলিয়া প্যেন: বিজ্ঞানের নক্ষত্র, নক্ষত্রের বিজ্ঞান
জাদুঘরের জটিল পাঠ
মাতৃভূমির কবিতা : মাহমুদ দারবিশ


আমার ফেসবুক পেজ
আমার ইউটিউব চ্যানেল
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জুলাই, ২০২১ সন্ধ্যা ৭:৫৫
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×