ইসলামের নামে জঙ্গিবাদ: আলোচিত ও অনালোচিত কারণসমূহ পর্ব -১২
ইসলাম পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা। এজন্য কুরআন ও হাদীসে মানব জীবনের সকল দিকের বিধিবিধান বিদ্যমান। কোনো বিধান ব্যক্তিগতভাবে পালনীয়, কোনো বিধান সামাজিকভাবে বা রাষ্ট্রীয়ভাবে পালনীয়। প্রত্যেক বিধান পালনের জন্য নির্ধারিত শর্তাদি রয়েছে। কুরআনে ‘সালাত’ প্রতিষ্ঠা করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আবার কুরআনে ‘চোরের হাত কাটার’, ‘ব্যভিচারীর বেত্রাঘাতের’ ও জিহাদ বা কিতালের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রথম ইবাদতটি ব্যক্তিগত, সামাািজক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে পালনীয়। অন্য কেউ পালন না করলেও মুমিনকে ব্যক্তিগভাবে পালন করতেই হবে। কিন্তু দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ নির্দেশটি ‘রাষ্ট্রীয় ভাবে’ পালনীয়। কখনোই একজন মুমিন তা ব্যক্তিগতভাবে বা গোষ্ঠিগতভাবে পালন করতে পারেন না।
এখানে লক্ষণীয় যে, কোনো ইবাদতের শর্তাবলি কুরআনে কখনোই একত্রে বা একস্থানে উল্লেখ করা হয় নি। এছাড়া অধিকাংশ ইবাদতের সকল শর্ত -এরকুরআনে উল্লেখ করা হয় নি। কুরআন ও হাদীসের সামগ্রিক বিধান বা রাসূলুল্লাহ সামগ্রিক জীবন ও এ সকল নির্দেশ পালনে তাঁর রীতি-পদ্ধতি থেকেই সেগুলির শর্ত ও পদ্ধতি বুঝতে হবে। দুই একটি আয়াত বা হাদীস সামনে রেখে মনগড়া অর্থ বা ব্যাখ্যা প্রদানের মাধ্যমেই বিভিন্ন ইসলামী পরিভাষার বিকৃতি ঘটানো হয়। জঙ্গিবাদীরা এভাবেই জিহাদ শব্দের বিকৃতি ঘটিয়েছে।
কুরআনে বারংবার সালাত প্রতিষ্ঠার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। উপরন্তু নির্দেশ দেওয়া হয়েছে:
أقم الصلاة لدلوك الشمس إلى غسق الليل
“সূর্য হেলে পড়ার পর হতে রাত্রির ঘন অন্ধকার পর্যন্ত সালাত কায়েম করবে।”
এই নির্দেশের উপর নির্ভর করে যদি কেউ সূর্যাস্তের সময় সালাতে রত হন তবে তিনি নিজে যতই দাবি করুন, মূলত তা ইসলামী ইবাদাত বলে গণ্য হবে না, বরং তা পাপ ও হারাম কর্ম বলে গণ্য হবে। ) হাদীস শরীফে ‘সূর্য হেলে পড়ার পর থেকে রাত্রি পর্যন্ত’ সময়েরকারণ রাসূলুল্লাহ ( মধ্যে সালাত আদায়ের বৈধ ও অবৈধ সময় চিহ্নিত করেছেন এবং সূর্যাস্তের সময় সালাত আদায় )-এর শিক্ষার বাইরে মনগড়াভাবেঅবৈধ করেছেন। এভাবে আমরা দেখছি যে, রাসূলুল্লাহ ( কুরআন কারীমের অর্থ বা ব্যাখ্যা করা আমাদেরকে ইবাদতের নামে পাপের মধ্যে লিপ্ত করে।
অনুরূপভাবে কুরআনে ‘কিতালের’ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কুরআন ও হাদীসে এই ইবাদত পালনের অনেক শর্ত উল্লেখ করা হয়েছে, যন্মধ্যে কতিপয় শর্ত আমরা ইতোপূর্বে আলোচনা করেছি। কেউ যদি সেগুলি পূরণ না করে হত্যা, খুন, রক্তপাত ইত্যাদি কর্মে লিপ্ত হয়ে এগুলি জিহাদ বলে দাবি করেন, তবে তা কখনোই ইসলামী ইবাদাত বলে গণ্য হবে না, বরং তা পাপ ও হারাম কর্ম বলে গণ্য হবে।
শর্ত পূরণ না করে সালাত আদায় করার চেয়েও অনেক ভয়ঙ্কর পাপ শর্ত পূরণ ছাড়াই কতল বা কিতালে লিপ্ত হওয়া। সালাত ও কিতালের মধ্যে পার্থক্য হলো, সূযাস্তের সময় সালাত আদায় করলে উক্ত ব্যক্তি গোনাহগার হলেও, তাতে কোনো বান্দার হক নষ্ট হবে না। কিন্তু কিতালের সাথে ‘বান্দার’ হক জাড়িত। কাউকে ভীতি প্রদর্শন করা, রক্তপাত করা, হত্যা করা, সম্পদ নষ্ট করা কঠিনতম কবীরা গোনাহ, যা স্বয়ং আল্লাহও ক্ষমা করেন না। কাজেই ইসলামী রাষ্টের রাষ্ট্রপ্রধানের নির্দেশে কাফির রাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর সাথে ঘোষিত ও আইনানুগ যুদ্ধের বাইরে যদি কেউ হত্যা, আঘাত, ভয় প্রদর্শন ইত্যাদি কাজে লিপ্ত হন, তবে ইবাদত কবুল না হওয়া এবং গোনাহগার হওয়া ছাড়াও তিনি বান্দার হক্ক নষ্ট করার ভয়ঙ্করতম পাপে লিপ্ত হবেন
মুলঃ ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর
পি-এইচ. ডি. (রিয়াদ), এম. এ. (রিয়াদ), এম.এম. (ঢাকা)
অধ্যাপক, আল-হাদীস বিভাগ,
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




