somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমরা জাতি হিসেবে এমন কেন

২১ শে নভেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১) এক সুদর্শন এমপিপুত্র তার ভাইয়ের বিলাতি প্রকৌশল ডিগ্রি অর্জনের সুসংবাদ জানিয়ে পোস্ট করেছে ফেসবুকে, সাথে তার ভাইয়ের চেহারার ছবি, লম্বা চুল, অগোছালো, অবিন্যস্ত। নিচের অধিকাংশ (নারীকূল) মন্তব্য এরকমঃ- "আপনার মত সুন্দর হলে আরও ভালো লাগতো।" অথচ, সেই ইঞ্জিনিয়ার ভাই, তথাকথিত বিউটি স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী, পোস্টদাতার চাইতেও সুন্দর। পরের দিনই, সেই ইঞ্জিনিয়ার ভাইয়ের ট্রিম করা চুল-দাড়িসহ সেলফি পোস্ট করতেই হলো তার। সেটা দেখতেই শত শত মানুষের তৈলাক্ত ও পিচ্ছিল মন্তব্যে পোস্টের নিচে বন্যা বয়ে গেলো।

এত আদিখ্যেতা, এত আহ্লাদ, এত তৈলমর্দন, পৃথিবীর আর কোন দেশের জনগণের মধ্যে দেখা যায় কিনা সন্দেহ আছে। বিন্দুমাত্র আত্মগরিমা নেই এই জাতির মানুষগুলি। মুহুর্তেই কিছু মানুষকে দেবতার আসনে বসিয়ে দিতে পারে।
আবার মুহুর্তেই ইতিহাসের আস্তাকুড়ে ছুঁড়ে ফেলতে পারে। এই জন্য সামাজিক, রাজনৈতিক ও পেশাজীবি নেতাদের সবসময় সাধারণ মানুষের উদ্দেশ্যে সৎ প্রতিক্রিয়া দেওয়া উচিত। কেউ অতিরঞ্জিতভাবে প্রশংসা করতে থাকলেই সৎ সাহসের সাথে সেটাকে তিরস্কার করে জবাব দেওয়া উচিত।

২) এখন পর্যন্ত কোভিডের সবচেয়ে সফল ও আশাব্যঞ্জক ভ্যাক্সিনের পেছনে থাকা জার্মান বৈজ্ঞানিক/চিকিৎসক দম্পতির মুসলিম/তুর্কি উৎসের ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করে প্রতিবেদন ছাপিয়েছে প্রথম আলো। নিচে একজনের মন্তব্যঃ- "অথচ এরা নোবেল পাবে না।" (কারণ, সে মুসলিম)

সেই মন্তব্যের নিচে অসংখ্য রিপ্লাই, যাদের কেউই জানে না যে, ১৯৯৬ সালে চিকিৎসাশাস্ত্রে নোবেল পুরস্কার পাওয়া রলফ জিঙ্কারন্যাগেল গবেষণাগারে কাজ করতেন তরুণ বিজ্ঞানী উঘুর শাহিন। অর্থাৎ, ১৯৯৬ সালের চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেলের পিছনে একটা বড় অবদান ডঃ শাহিনের। বয়স কম না হলে, এবং দায়িত্বশীল ও বয়োজ্যেষ্ঠ পদে থাকলে, সেই সময়েই উনি নোবেল পেয়েই যেতেন।

৩) ফরেন মিনিস্ট্রির অফিশিয়াল পেইজের সর্বশেষ পোস্ট অনুযায়ী (পরিবর্তন করা হয়েছে কিনা জানি না), প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে WHO সহ আরো বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক প্রভাবশালী সংগঠনের নাম উল্লেখপূর্বক, কো-চেয়ার (সহসভাপতি) হওয়ার জন্য অভিবাদন জানানো হয়েছে। আর, সারাদেশে, আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের সবাই, এবং অন্যান্যরা (বাধ্য হয়ে বা লোকদেখানোর জন্য) ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে উনাকে অভিনন্দন দিয়ে যাচ্ছেন, গর্ববোধ করে যাচ্ছেন।

প্রকৃত ঘটনা হলো- FAO, OIE, WHO বিভিন্ন দেশের সমন্বয় “Antimicrobial Resistance” এর বিষয়ে একটি ডায়লগ ওপেন করেছে ও বার্বাডোসের প্রধানমন্ত্রীর পাশাপাশি, আমাদের পিএমকে সেখানে কো-চেয়ার হিসেবে একটা সভার দায়িত্ব দিয়েছে।

অথচ, লাগাতার বারবার- মিয়ানমারের রোহিঙ্গা হত্যাযজ্ঞ ও বাংলাদেশে পুশ-ইন, এবং বাংলাদেশ থেকে শরণার্থীদের ফেরত নিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে ভারত, রাশিয়া, চীন সহ বাংলাদেশের তথাকথিত বন্ধুরাষ্ট্রগুলি যে বিপক্ষে থাকছে, কিংবা নিশ্চুপ থাকছে, সেই ব্যাপারে কারোরই কোন মন্তব্য বা করণীয় নেই! কি দারুণ কূটনৈতিক সাফল্য!

নিরপেক্ষতা ও প্রাসঙ্গিকতা বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে আমাদের মধ্য থেকে। নির্লজ্জজনক চাটুকার আর ভীতু কাপুরুষে পরিণত হয়েছে গোটা জাতি। যখন প্রশংসা করতে থাকি, তখন অতিরঞ্জন করতে করতে সীমা অতিক্রম করে ফেলি। ঘৃণা বা নিন্দার ক্ষেত্রেও একই কাজ করি। তেলবাজ, মোসাহেব, অবৈধ সুবিধা পাওয়ার আশাবাদী এসব মানুষদের ব্যাপারেই বঙ্গবন্ধু সাবধান করে গিয়েছিলেনঃ-

“দুর্নীতিবাজদের যদি খতম করতে পারেন তা হলে বাংলাদেশের মানুষের শতকরা ২৫ থেকে ৩০ ভাগ দুঃখ চলে যাবে। এত চোরের চোর, এই চোর যে কোথা থেকে পয়দা হয়েছে তা জানি না। পাকিস্তান সব নিয়ে গিয়েছে কিন্তু এই চোর তারা নিয়ে গেলে বাঁচতাম। এই চোর রেখে গিয়েছে। কিছু দালাল গিয়েছে, চোর গেলে বেঁচে যেতাম।”
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে নভেম্বর, ২০২০ রাত ১:৪২
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০



'অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ'।
হাহাকার ভরা কথাটা আমার নয়, একজন পথচারীর। পথচারীর দুই হাত ভরতি বাজার। কিন্ত সে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারছে না। মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×