অর্থনৈতিক মন্দা কি তা আমরা একটু পরে আলোচনা করবো, তবে তার আগে আসুন একটু গল্প করি। গল্পের শেষে হয়ত আপনিই বুঝতে পারবেন অর্থনৈতিক মন্দা কাকে বলে। ধরুন আপনার চাকরীতে পদোন্নতি হয়েছে, এখন আপনার বন্ধুরা আপনার কাছে চাইনিজ খেতে চাইলো। আপনি জানেন আপনি বেতন পাবেন একমাস পর, কিন্তু আপনাকে এই মাসেই খাওয়াতে হবে। এখন আপনি কি করবেন? আপনি হিসাব করে দেখলেন, ঈদের মাস খরচ বাদ দিয়ে হাতে থাকে মাত্র একহাজার টাকা, যা দিয়ে চাইনিজে যাবার স্বপ্নও দেখা যায়না। আপনি চিন্তা করলেন এমাসে বাড়িওয়ালাকে ম্যানেজ করতে হবে, তাই এককেজি মিষ্টি নিয়ে বাড়িওয়ালাকে আপনার পদোন্নতি ঘবরটা দিলেন। মিষ্টি খাওয়ার ফাঁকে এমাসে ভাড়াটা না নেওয়ার অনুরোধ করলেন। আপনি স্পষ্ট বুঝতে পারছেন বাড়িওয়ালা মিষ্টিটা কষ্ট করে গিলতে গিলতে আপনাকে সম্মতি দিলেন, তাতে কি আপনি তো এবারের মত বাঁচলেন। চাইনিজ খেয়ে বের হতে হতে একটু রাত হলো, রিক্সা চালকে বললেল তাড়াতাড়ি চালাও কাল সকালে অফিস। রিক্সা চালকও যুবক টাইপের তাই সে আপনাকে নিয়ে চললো বাতাসের গতিতে। আপনারও ভালই লাগছে, ঢাকার রাস্তা একদম ফাঁকা, আপনার ইচ্ছা হচ্ছে ছবি তুলে রাখতে কিন্তু রাতের ছবি ভাল হয়না। হটাৎ আপনার রিক্সার চালক রিক্সা থামাতে চেষ্টা করছে, আর অন্যদিক থেকে একটা ট্রাক প্রচন্ড গতিতে ছুটে আসছে। এরপর আপনার আর কিছু মনে নেই। আজ প্রায় দুইমাস পর আপনি হাসপাতাল থেকে বের হয়ে আসছেন, আর ভাবছেন এখন কি করবেন? বাড়িভাড়া বাকি আছে তিনমাস, পানি, বিদ্যুৎ, পত্রিকা সেই সাথে হাসপাতালের খরচ (১০ হাজার টাকা) ব্যাংক থেকে ধার করে পরিশোধ করেছে আপনার এক ব্যাংকার বন্ধু। আপনি আর জানলেন আপনার চাকরিটা নেই, প্রাইভেট কোম্পানী নতুন লোক নিয়ে ফেলেছে। আপনার এই অবস্থাকে অর্থনিতির ভাষায় ব্যক্তিগত অর্থনৈতিক মন্দা বলা যেতে পারে। আপনার জন্য এখন দুইটা পথ খোলা আছে; এক, নতুন চাকরির সন্ধান শুরু করা আর চাকরি না হওয়া র্পযন্ত সকল খরচ কমিয়ে নিয়ে আসা দুই, বাড়িওয়ালাকে ম্যানেজ করে আর কিছু দিন থাকার ব্যবস্থা করা, বাড়িওয়ালার মেয়েকে বিয়ে করতে যাচ্ছি বলে আসে-পাশের দোকান থেকে বাকি খাওয়া, ব্যাংকার বন্ধুসাথে সকল যোগাযোগ বন্ধ করা। আপনি যদি ২য় পন্থাটা মজা পেয়ে যান, তাহলেই সম্যসা, এসম্যসা কেবল আপনার একার নয়, বরং অনেকের। আপনি যদি ২য় পদ্ধতিতে চলতে থাকেন তাহলে এটা যেমন আপনাকে, আপনার বাড়িওয়ালাকে, আপনার বন্ধুকে ডুবাবে তেমনিভাবে আপনার এই এলাকার দোকানদারদেরকেও ডুবাবে। ধরুন আপনার এলাকার সবাই এইভাবেই চলে, তাহলে কি হবে? প্রশ্নটা জটিল মনে হলেও উত্তরটা খুব সহজ। আপনাদের মধ্য থেকে একজনকে নেতা মানতে হবে আর এই নেতা আপনাদের পক্ষে কাজ করে যাবে। সবাইকে পুলিশের হাত থেকে বাঁচাবে এবং বাটপারিতে মদদ দিবে। যেই কথা সেই কাজ, একজন নেতা আপনারা বানিয়ে নিলেন। সে এলাকার দোকানদারদেরকে বাকিতে মাল কিনার ব্যবস্থা করে দিল। দোকানদাররা এলাকার সবাইকে বাকিতে মাল দিতে থাকলো। যারা পারে তারা বাকী টাকা মাস শেষে পরিশোধ করে আর যারা পারে না তারা আপনার মত একদোকানের পর অন্য দোকানে বাকী খায়। দিন ভালই যেতে লাগল, হঠাৎ করে আপনাদের এলাকার নেতা কোন একটা মারা-মারিতে জড়িয়ে পরলো অন্য এলাকার সাথে। আমাদের গল্প এর্পযন্ত শেষ, আসুন আমরা আমরা মূল্য বিষয়ে যাই।
ভোগবাদী এই বিশ্বে আমেরিকানদের যেন কোন জুড়ি নেই। Credit Card এর মাধ্যমে তারা একবার ঋন করে, আবার সেই ঋন পরিশোধ করে অন্য আরও একটা ব্যাংকের Credit Card এর মাধ্যমে। এভাবে তারা ঋন উপর আবার ঋন করে। আর এ সকল ঋন পরিশোধের দায়িত্ব নেয় সরকার। আর এই সরকার যখন আফগান, ইরাক যুদ্ধে কোটি কোটি ডলার র্বতুকি দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছিল (অনেকটা আপনার রিক্সা দুর্ঘটনার মত) তখন ২০০৭ সালের শেষের দিকে Housing loan পরিশোধ করতে ব্যর্থ আমেরিকানদের সহযোগীতা করতে পারেনি সরকার। বন্ধ হয়ে গেল Bear Stearns এর মত বিশাল mortgage কোম্পানী। এরকমের বিশাল কোম্পানী বন্ধ হয়ে শুধু আমিরিকারই ক্ষতি করেনি বরং একেবারে নি:স্ব করেছে অসংখ্যা বিনিয়োগকারী প্রতিষ্টানকে। আর যেহেতু বিনিয়োগকারী প্রতিষ্টানগুলো কোন একটি দেশের নয়, তাই অর্থনৈতিক মন্দা ছড়িয়ে পরে অনেক দেশে। সেই মন্দা কাটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতা গ্রহন করার ১বছর ৭ মাস পর ওবামাহ ইরাক থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করলেন। যুদ্ধ বন্ধ হওয়ার কারনে মন্দা কটেছেও অনেকখানি।
বাংলাদেশে অর্থনৈতিক মন্দা প্রভাব ফেলেনি কেন? পাঠক আমার বিশ্বাস আপনারা এই উত্তরটা জানেন। আমাদের গল্পটা একটু মনে করুন। আপনি যে দোকানগুলোতে বাকি খেয়েছেন, সেই দোকানের লোকসানের কারনে মাদারীপুরে আপনার চাচার দোকানের কোন ক্ষতি হবে কি? উত্তর নিশ্চয় না, কারন আপনার চাচার কোন বিনিয়োগ ঢাকার এই দোকানে নেই। ঠিক সেরকম বন্ধ হয়ে যাওয়া প্রতিষ্টানগুলোতে বাংলাদেশের তেমন বিনিয়োগ না থাকায় আমাদের অর্থনীতিতে এর প্রভাব কম। আর একটি কারন হচ্ছে বাংলাদেশে ব্যাংক অনেকটা ডিফেনসিভ ব্যাংকিং করে থাকে। ফলে বাংলাদেশ থেকে Credit Card মাধ্যমে যার যা ইচ্ছা বাহির থেকে কিনতে পারেনা। এতে করে দেশ থেকে রেমিটেন্স কম বের হতে পারে, বিশ্ববাজারে কোন প্রতিষ্টান ভাল লাভ দিলে, নিজের Credit Card থেকে Invest করা যায় না। অনেকে হয়ত বলবেন, মাল্টিন্যাশনাল কোম্পনিগুলো stock market এ শেয়ার না দেওয়াতে তারা সহজে মুনাফা বের করে নিতে পারে। কিন্তু এখানে বুঝার বিষয় রয়েছে, মুনাফা চলে গেলেও তা বাংলাদেশে ব্যাংকের মাধ্যমেই যায়, ফলে তারল্য সংকট দেখা দেয়না অথচ অর্থনৈতিক মন্দা মূল কারন হচ্ছে তারল্য সংকট। আর বুঝার বিষয় হলো উন্নয়নশীল দেশে ৯০% বেশি হচ্ছে ক্ষুদ্র কোম্পানী(small and medium enterprise বা SME), সেখানে মাল্টিন্যাশনাল কোম্পনিগুলো অবস্থানই বা কি?
খুব সংক্ষেপে বুঝাতে চেষ্টা করলাম। প্রশ্ন থাকলে কমেন্টে উত্তর দিব।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




