somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অর্থনৈতিক মন্দা (Economic Crises) সাধারনের উপযোগী

০৪ ঠা সেপ্টেম্বর, ২০১০ সকাল ১১:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অর্থনৈতিক মন্দা কি তা আমরা একটু পরে আলোচনা করবো, তবে তার আগে আসুন একটু গল্প করি। গল্পের শেষে হয়ত আপনিই বুঝতে পারবেন অর্থনৈতিক মন্দা কাকে বলে। ধরুন আপনার চাকরীতে পদোন্নতি হয়েছে, এখন আপনার বন্ধুরা আপনার কাছে চাইনিজ খেতে চাইলো। আপনি জানেন আপনি বেতন পাবেন একমাস পর, কিন্তু আপনাকে এই মাসেই খাওয়াতে হবে। এখন আপনি কি করবেন? আপনি হিসাব করে দেখলেন, ঈদের মাস খরচ বাদ দিয়ে হাতে থাকে মাত্র একহাজার টাকা, যা দিয়ে চাইনিজে যাবার স্বপ্নও দেখা যায়না। আপনি চিন্তা করলেন এমাসে বাড়িওয়ালাকে ম্যানেজ করতে হবে, তাই এককেজি মিষ্টি নিয়ে বাড়িওয়ালাকে আপনার পদোন্নতি ঘবরটা দিলেন। মিষ্টি খাওয়ার ফাঁকে এমাসে ভাড়াটা না নেওয়ার অনুরোধ করলেন। আপনি স্পষ্ট বুঝতে পারছেন বাড়িওয়ালা মিষ্টিটা কষ্ট করে গিলতে গিলতে আপনাকে সম্মতি দিলেন, তাতে কি আপনি তো এবারের মত বাঁচলেন। চাইনিজ খেয়ে বের হতে হতে একটু রাত হলো, রিক্সা চালকে বললেল তাড়াতাড়ি চালাও কাল সকালে অফিস। রিক্সা চালকও যুবক টাইপের তাই সে আপনাকে নিয়ে চললো বাতাসের গতিতে। আপনারও ভালই লাগছে, ঢাকার রাস্তা একদম ফাঁকা, আপনার ইচ্ছা হচ্ছে ছবি তুলে রাখতে কিন্তু রাতের ছবি ভাল হয়না। হটাৎ আপনার রিক্সার চালক রিক্সা থামাতে চেষ্টা করছে, আর অন্যদিক থেকে একটা ট্রাক প্রচন্ড গতিতে ছুটে আসছে। এরপর আপনার আর কিছু মনে নেই। আজ প্রায় দুইমাস পর আপনি হাসপাতাল থেকে বের হয়ে আসছেন, আর ভাবছেন এখন কি করবেন? বাড়িভাড়া বাকি আছে তিনমাস, পানি, বিদ্যুৎ, পত্রিকা সেই সাথে হাসপাতালের খরচ (১০ হাজার টাকা) ব্যাংক থেকে ধার করে পরিশোধ করেছে আপনার এক ব্যাংকার বন্ধু। আপনি আর জানলেন আপনার চাকরিটা নেই, প্রাইভেট কোম্পানী নতুন লোক নিয়ে ফেলেছে। আপনার এই অবস্থাকে অর্থনিতির ভাষায় ব্যক্তিগত অর্থনৈতিক মন্দা বলা যেতে পারে। আপনার জন্য এখন দুইটা পথ খোলা আছে; এক, নতুন চাকরির সন্ধান শুরু করা আর চাকরি না হওয়া র্পযন্ত সকল খরচ কমিয়ে নিয়ে আসা দুই, বাড়িওয়ালাকে ম্যানেজ করে আর কিছু দিন থাকার ব্যবস্থা করা, বাড়িওয়ালার মেয়েকে বিয়ে করতে যাচ্ছি বলে আসে-পাশের দোকান থেকে বাকি খাওয়া, ব্যাংকার বন্ধুসাথে সকল যোগাযোগ বন্ধ করা। আপনি যদি ২য় পন্থাটা মজা পেয়ে যান, তাহলেই সম্যসা, এসম্যসা কেবল আপনার একার নয়, বরং অনেকের। আপনি যদি ২য় পদ্ধতিতে চলতে থাকেন তাহলে এটা যেমন আপনাকে, আপনার বাড়িওয়ালাকে, আপনার বন্ধুকে ডুবাবে তেমনিভাবে আপনার এই এলাকার দোকানদারদেরকেও ডুবাবে। ধরুন আপনার এলাকার সবাই এইভাবেই চলে, তাহলে কি হবে? প্রশ্নটা জটিল মনে হলেও উত্তরটা খুব সহজ। আপনাদের মধ্য থেকে একজনকে নেতা মানতে হবে আর এই নেতা আপনাদের পক্ষে কাজ করে যাবে। সবাইকে পুলিশের হাত থেকে বাঁচাবে এবং বাটপারিতে মদদ দিবে। যেই কথা সেই কাজ, একজন নেতা আপনারা বানিয়ে নিলেন। সে এলাকার দোকানদারদেরকে বাকিতে মাল কিনার ব্যবস্থা করে দিল। দোকানদাররা এলাকার সবাইকে বাকিতে মাল দিতে থাকলো। যারা পারে তারা বাকী টাকা মাস শেষে পরিশোধ করে আর যারা পারে না তারা আপনার মত একদোকানের পর অন্য দোকানে বাকী খায়। দিন ভালই যেতে লাগল, হঠাৎ করে আপনাদের এলাকার নেতা কোন একটা মারা-মারিতে জড়িয়ে পরলো অন্য এলাকার সাথে। আমাদের গল্প এর্পযন্ত শেষ, আসুন আমরা আমরা মূল্য বিষয়ে যাই।

ভোগবাদী এই বিশ্বে আমেরিকানদের যেন কোন জুড়ি নেই। Credit Card এর মাধ্যমে তারা একবার ঋন করে, আবার সেই ঋন পরিশোধ করে অন্য আরও একটা ব্যাংকের Credit Card এর মাধ্যমে। এভাবে তারা ঋন উপর আবার ঋন করে। আর এ সকল ঋন পরিশোধের দায়িত্ব নেয় সরকার। আর এই সরকার যখন আফগান, ইরাক যুদ্ধে কোটি কোটি ডলার র্বতুকি দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছিল (অনেকটা আপনার রিক্সা দুর্ঘটনার মত) তখন ২০০৭ সালের শেষের দিকে Housing loan পরিশোধ করতে ব্যর্থ আমেরিকানদের সহযোগীতা করতে পারেনি সরকার। বন্ধ হয়ে গেল Bear Stearns এর মত বিশাল mortgage কোম্পানী। এরকমের বিশাল কোম্পানী বন্ধ হয়ে শুধু আমিরিকারই ক্ষতি করেনি বরং একেবারে নি:স্ব করেছে অসংখ্যা বিনিয়োগকারী প্রতিষ্টানকে। আর যেহেতু বিনিয়োগকারী প্রতিষ্টানগুলো কোন একটি দেশের নয়, তাই অর্থনৈতিক মন্দা ছড়িয়ে পরে অনেক দেশে। সেই মন্দা কাটানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতা গ্রহন করার ১বছর ৭ মাস পর ওবামাহ ইরাক থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করলেন। যুদ্ধ বন্ধ হওয়ার কারনে মন্দা কটেছেও অনেকখানি।
বাংলাদেশে অর্থনৈতিক মন্দা প্রভাব ফেলেনি কেন? পাঠক আমার বিশ্বাস আপনারা এই উত্তরটা জানেন। আমাদের গল্পটা একটু মনে করুন। আপনি যে দোকানগুলোতে বাকি খেয়েছেন, সেই দোকানের লোকসানের কারনে মাদারীপুরে আপনার চাচার দোকানের কোন ক্ষতি হবে কি? উত্তর নিশ্চয় না, কারন আপনার চাচার কোন বিনিয়োগ ঢাকার এই দোকানে নেই। ঠিক সেরকম বন্ধ হয়ে যাওয়া প্রতিষ্টানগুলোতে বাংলাদেশের তেমন বিনিয়োগ না থাকায় আমাদের অর্থনীতিতে এর প্রভাব কম। আর একটি কারন হচ্ছে বাংলাদেশে ব্যাংক অনেকটা ডিফেনসিভ ব্যাংকিং করে থাকে। ফলে বাংলাদেশ থেকে Credit Card মাধ্যমে যার যা ইচ্ছা বাহির থেকে কিনতে পারেনা। এতে করে দেশ থেকে রেমিটেন্স কম বের হতে পারে, বিশ্ববাজারে কোন প্রতিষ্টান ভাল লাভ দিলে, নিজের Credit Card থেকে Invest করা যায় না। অনেকে হয়ত বলবেন, মাল্টিন্যাশনাল কোম্পনিগুলো stock market এ শেয়ার না দেওয়াতে তারা সহজে মুনাফা বের করে নিতে পারে। কিন্তু এখানে বুঝার বিষয় রয়েছে, মুনাফা চলে গেলেও তা বাংলাদেশে ব্যাংকের মাধ্যমেই যায়, ফলে তারল্য সংকট দেখা দেয়না অথচ অর্থনৈতিক মন্দা মূল কারন হচ্ছে তারল্য সংকট। আর বুঝার বিষয় হলো উন্নয়নশীল দেশে ৯০% বেশি হচ্ছে ক্ষুদ্র কোম্পানী(small and medium enterprise বা SME), সেখানে মাল্টিন্যাশনাল কোম্পনিগুলো অবস্থানই বা কি?

খুব সংক্ষেপে বুঝাতে চেষ্টা করলাম। প্রশ্ন থাকলে কমেন্টে উত্তর দিব।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে কোন প্রজন্ম সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত? ১৯৭১ থেকে একটি সংক্ষিপ্ত ভাবনা

লিখেছেন মুনতাসির, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৩

বাংলাদেশে দুর্নীতির প্রশ্নটি প্রায়ই ব্যক্তি বা দলের দিকে ছুড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু একটু গভীরে গেলে দেখা যায়, এটি অনেক বেশি প্রজন্মভিত্তিক রাজনৈতিক - অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে যুক্ত। ১৯৭১ এর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×