somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আরন্যক পৃথিবী(পর্ব ১-৫)

৩১ শে মে, ২০১৪ বিকাল ৪:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(পর্ব-১)

অরন্য টিশ্যু পেপার হাতে পার্কের বেঞ্চে বসে আছে।তারপাশে বসে তিথি কাদছে আর সে কিছুক্ষন পরপর টিশ্যু সাপ্লাই দিচ্ছে।আর মাত্র দুইটা টিশ্যুই বাকি আছে।মেয়ের কান্নার অবস্থা ভাল না।বোধহয় কান্না এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে আছে।কান্নার কয়েকটা ধাপ থাকে।প্রাথমিক অবস্থা,মধ্যবর্তী অবস্থা এবং শেষ অবস্থা।প্রাথমিক অবস্থায় নাকটানা এবং নিরব চোখের জল থাকে।মধ্যবর্তী অবস্থা সবচেয়ে ভয়ানক।এই পর্যায়ে হাউমাউ টাইপ কান্না হয়।অনেক সময় ক্রন্দন্কারীদের সামলানো ব্যাপক কষ্টসাধ্য হয়।শেষ পর্যায়ে থাকে অশ্রুমোচন এবং এক বুক অভিমান।তিথির কান্না এখন আছে প্রাথমিক পর্যায়ে।এখনো দুইটা পর্যায় বাকি।তাই আরো টিশ্যু লাগবে।পকেটের অবস্থাও ভাল না।দশটাকার একটা ছেড়া নোট আছে।এক প্যাকেট ফেসিয়াল টিশ্যু পাওয়া যাওয়ার কথা।কিন্তু কথা সেটা না।কথা হচ্ছে টাকাটা চলবে কি না।আমাদের দুইটাকাপ্রীতি আছে।দুই টাকা ছেড়া হলে আমরা সেটা হাসিমুখে নেই।কিন্তু অন্য নোটে টেপ মারা থাকলেও নেই না।কি কারন জানা নেই।

তিথি টিশ্যুর জন্য হাত বাড়ালো।অরন্য আগ্রহ সহকারে টিশ্যু এগিয়ে দিল।সে এই কাজ করে চরম মজা পাচ্ছে।মানুষের চোখের পানি মুছে দেয়া অবশ্যই অত্যন্ত পূন্যের কাজ।আর সেটা যদি হয় রুপবতী কোন রমনী তাহলে তো সেটা অত্যাবশকীয় কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম।

আর মাত্র একটা টিশ্যু বাকি আছে।অরন্যের চিন্তা বাড়ছে।টিশ্যু চিন্তার পাশাপাশি নতুন চিন্তা যুক্ত হয়েছে।নতুন চিন্তা হচ্ছে রিতু চিন্তা।এই একটা সমস্যা।একটা চিন্তা মাথার ভিতর ঢুকে গেলে এই চিন্তা ডালপালা মেলে দেয়।এক চিন্তা থেকে আরো হরেক রকম চিন্তার উদয় হয়।

রিতু অরন্যের ছাত্রী।মেয়ের মাথায় মারাত্মক সমস্যা।একটু দেরিতে পড়াতে গেলে তুলকালাম কান্ড করে ফেলে।এতক্ষনে বোধহয় বাসায় কেয়ামত হয়ে গেছে।কারন অরন্য ইতোমধ্যে আধা ঘন্টা দেরি করে ফেলছে।যাওয়ার কথা তিনটার সময়।এখন বাজে সাড়া তিনটা।আচ্ছা ঘড়িটা কি ঠিক সময় দিচ্ছে?এমন তো হতে পারে ঘড়ি ভুল সময় দিচ্ছে।পঞ্চাশ টাকার সস্তা ঘড়ি ভুল সময় দিলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।বরং এটাই স্বাভাবিক।
অরন্য কি করবে বুঝতে পারছে না।তিথিকে একা ফেলে সে কিভাবে যাবে?একটা মেয়ে পার্কে বসে একা একা কাদবে তার পাশে কেউ থাকবে না এটা তো হতে পারে না।কান্নার সময় প্রতিটা মানুষ তার পাশে কাউকে আশা করে।তিথিও হয়তো করে।হয়তো কেনো?অবশ্যই করে।তিথিও তো মানুষ!

তিথি আবার হাত বাড়ালো।অরন্য শেষ টিশ্যুটা দিয়ে বলল-টিশ্যু শেষ।চিন্তার কারন নেই।এখনি নিয়ে আসছি
-টিশ্যু লাগবে না অরন্য ভাই
-কেনো?আর কাদবে না?

অরন্যের কথায় তিথির মেজাজ খুব খারাপ হয়ে গেল।গাধা বলে কি!সে কি তার কান্না নিয়ে উপহাস করার চেষ্টা করছে?প্রতিটা ছেলেই মেয়েদের কান্না নিয়ে উপহাস করতে পছন্দ করে।সেও নিশ্চই উপহাস ই করছে।গলার স্বর তো তাই বলে।একটা মানুষকে দুইভাবে চেনা যায়।তার গলার স্বর আর চোখের ভাষা।কিন্তু পরিতাপের বিষয় এই গাধা চাশমিস গাধা।মোটা ফ্রেমের চশমা ভেদ করে চোখের ভাষা পড়া যাচ্ছে না।তিথি চিন্তা করেছিল বেচারা এত কষ্ট করে যখন টিশ্যু এনে দিচ্ছে তাই তাকে কিছু বলবে না।কিন্তু কিছু না বললে তো আর হচ্ছে না।কঠিন কিছু কথা বলার সময় এসে গেছে।

-আপনার খেয়ে দেয়ে কোন কাজ নেই?মানুষকে টিশ্যু সাপ্লাই দেয়ার দায়িত্ব সরকার আপনাকে দিছে যে পার্কে বসে যারা কাদবে তাদের টিশ্যু সাপ্লাই দিবেন?এ জন্য আপনি প্রতিদিন পার্কে আসেন?
-না।পার্কে তো আসি ঘুমানোর জন্য।দুপুরে পার্কে ঘুমানো অভ্যাস হয়ে গেছে।

অরন্য মিথ্যা বললো।সে পার্কে আসে তার মেসমালিকের কাছে থেকে বাচার জন্য।দুই মাসের মেস ভাড়া বাকি।

-ঘুমাতে এসেছেন তো ঘুমাবেন।এখানে দাড়িয়ে আছেন কেনো?
-হঠাৎ তোমাকে কাদতে দেখলাম তো তাই
-হঠাৎ ই তো দেখবেন।আপনার কি ধারনা আমি মাইক ভাড়া করে ঘোষনা দিয়ে তারপর কাদবো?
-না আমি সেটা বলি নি।তোমার কান্না দেখে খুব খারাপ লাগলো তাই
- মানুষের কান্না দেখলে আপনার খারাপ লাগে?
-হুম


তিথি বিড়বিড় করে বললো-মহাপুরুষ কোথাকার!
-কিছু বললে?
-না কিছু বলি নি।আপনার টিউশনি নেই?
-ছিল।আধা ঘন্টা দেরি হয়ে গেছে।চিন্তা করছি যাব না।
-খুব ই বাজে চিন্তা করছেন।টিউশনি মিস দেয়া ঠিক না।মানুষ মাস শেষে কষ্ট করে উপার্জন করা টাকা দিবে আর আপনি মাসের মধ্যে চৌদ্দবার টিউশনি মিস দিবেন তা তো ঠিক না।তাও যদি উপযুক্ত কোন কারন থাকতো তাও হত।একটা মেয়েকে টিশ্যু দেয়া অবশ্যই গুরুত্বপূর্ন কোন কাজের মধ্যে পড়ে না।
-তাহলে কি আমি টিউশনীতে যাব?
-অবশ্যই যাবেন এবং এক্ষুনি যাবেন।
-আচ্ছা।

অরন্য মন খারাপ করলো।তিথি এখন এখানে একা একা বসে কাদবে।সে থাকবে না।বেচারী চোখ মোছার টিশ্যুটাও পাবে না।টিশ্যুর অভাবে হয়তো ওড়না দিয়ে চোখ মুছবে।কাপড় নষ্ট হবে।তিথি কেনো কাদছিল সেটাও জানা হয় নি।অরন্যের আরো বেশি খারাপ লাগা শুরু হল।অরন্যের চোখ ভিজে উঠলো।কিন্তু চোখ মোছা যাবে না।হয়তো তিথি তার দিকেই তাকিয়ে আছে।তাকে চোখ মছার দৃশ্য দেখানো ঠিক হবে না।একজন পুরুষ মানুষের কান্না খুব ই দু:খজনক ব্যাপার।

তিথি একবার ভাবলো অরন্যকে ডেকে স্যরি বলবে।বেচারা খুব ই মন খারাপ করছে।এমনভাবে কথা বলা ঠিক হয় নি।সে তো ভুল কিছু করে নি।সে তো বরং তাকে সাহায্য ই করছিল।না।স্যরি বলে লাই দেয়ার কিছু নেই।পুরুষ জাতিকে লাই দিতে নাই।লাই দিলে এরা মাথায় উঠে যাবে।পরবর্তীতে দেখা যাবে স্যরিটা দাবি হিসেবে মনে করছে।এদের যত কম স্যরি বলা যায় তত ভাল।

*********************

(পর্ব-২)

আজিজ সাহেবের মন অত্যন্ত খারাপ।তার একমাত্র মেয়ে রিতু জিনিসপত্র ভাঙচুর করছে।কেন করছে তার জানা নেই।শুধু তার না বাসার কারো ই জানা নেই।মেয়েটা দিনদিন মানসিক রোগি হয়ে যাচ্ছে।আজিজ সাহেব দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন।
রিতু আজিজ সাহেবের প্রিয় গ্লাসটি ভেঙে ফেলল।মৃত গ্লাসের ডেডবডি আজিজ সাহেবের পায়ের কাছে এসে পড়লো।রিতুর বয়স যখন ছয় বছর বয়স তখন তার মা মারা যায়।ক্যান্সারে মৃত্যু।অনেক আদরে তিনি রিতুকে বড় করেছেন।সকল অন্যায় মুখ বুজে সহ্য করেছেন।এখন মনে হচ্ছে কাজটা তিনি ঠিক করেননি।একটু শাসনের মধ্যে রাখলে মেয়েটা আজকে এতটা লাগামছাড়া হত না।এত নির্দ্বিধায় তার পছন্দের গ্লাসটি ভাঙতে পারতো না।তিনি এই গ্লাস ছাড়া অন্য কোন গ্লাসে কিছু খান না।এই গ্লাসটি তার স্ত্রী তাদের সংসার জীবনের শুরুতে তার জন্য কিনেছিলেন।প্রতিবার গ্লাস স্পর্শ করার সময় তিনি তার মৃত স্ত্রীর কথা স্মরণ করেন।আজিজ সাহেব খুব ব্যাথিত হলেন।তার ধারনা তিনি অন্য কোন গ্লাসে কিছু খেতে পারবেন না।আজীবন তাকে গ্লাসহীন জীবন কাটাতে হবে।

- চাচাজানের গেলাস ভাইঙ্গা ফেললেন আফামনি?
রিতুদের বাসার কাজের লোক রহমত বললো।তার চোখে রাজ্যের বিস্ময়।তার কোলের কুকুরছানার চোখেও রাজ্যের বিস্ময়।এমন ঘটনা যেন তিনি জিবনে আর দেখেন নি।ভবিষ্যতে দেখবে বলেও মনে হয় না।কুকুরের চোখ ও বিস্মিত।কুকুর বলে আমরা তাকে অবহেলা করি।এটা ঠিক না।তারাও অনেক কিছু বোঝে।

- চোখে দেখতে পারেন না?দৃষ্টি শক্তি কমে গেছে আপনার?আজ থেকে আপনার ভাত খাওয়া বন্ধ।সারাদিন শুধু মাছ খাবেন।মলা এবং ঢেলা মাছ।ভিটামিন এ।
এই বলে রিতু আরো একটা গ্লাস ভাঙল।না।এটা তেমন গুরুত্বপূর্ন কোন গ্লাস না।অত্যনত নিরীহ প্রকৃতির গ্লাস।এই গ্লাস ভাঙনে তাই কেউ স্বল্পশ্বাস,দীর্ধশ্বাস কোন শ্বাস ই ফেললো না

আজিজ সাহেব রহমতকে ডাকলেন
-রহমত!
-জ্বে খালুজান

আজিজ সাহেব রহমতকে কষে একটা থাপ্পড় মারলেন।রহমত ভাবলেষহীন থাকে।কারন এটা নতুন কিছু না।সপ্তাহে তিন চার বার এই ঘটনা ঘটে

-তুই একবার আমাকে চাচাজান ডাকিস একবার খালুজান ডাকিস।ঘটনা কি তোর?
-ঘটনা কিছুই না চাচাজান।আফামনির চিন্তায় অস্থির আছি।মুখ ফসকে বলে ফেলেছি।আফামনি দশটা গেলাস ভাঙছে
-তোর এত ঘন ঘন মুখ ফসকায় কেন?আর এটা তো নতুন কিছু না।তুই আগেও বহুবার এমনটা করেছিস।এটা যেন আর না হয়।
-আচ্ছা চাচাজান।অহন যাই চাচাজান।কুত্তাডারে গোসল দেয়া লাগবে।বিকট গন্ধ বের হইছে।মনে হইতেছে এর শইল্লে কেউ গু দিয়া মালিশ করছে।কাচা গু।
আজিজ সাহেব রহমতকে আবার ও থাপ্পড় দেন।

-কুত্তা বলছিস কেন?
-কুত্তারে কুত্তা বলবো না তো কি বলবো?শিম্পাঞ্জী?
-এর একটা নাম আছে।নাম ধরে ডাকবি।বল এর নাম কী?
- জানি না খালুজান।নানান চিন্তায় অস্থির থাকি।এত কিছু মনে রাখার সময় কি?
- তুই আবার আমাকে খালুজান বলছিস!
-সরি মিসটেক হয়ে গেছে।আর বলবো না।

কলিং বেল বেজে উঠলো।রহমত দৌড়ে গেল দরজা খুলতে।এই কাজটা করে সে ব্যাপক আনন্দ পায়।অজানাকে জানার আনন্দ।অজানাকে জানার কৌতুহল সবার ই আছে।রহমতের ও আছে।অতি স্বাভাবিক এবন্হ নির্দোষ কৌতুহল।

রহমত দরজা খুলে দেয়।অরন্য এসেছে।অরন্যের চোখে চুখে আতঙ্ক।সব ধরনের বিপদের প্রস্তুতি নিচ্ছে তার সব কয়টি নিউরন

- আসসালামুআলাইকুম মাস্টার সাব।ভিতরে কেয়ামত হয়া গেছে।একশোর উপরে গেলাশ ভাঙছে আফামনি।অবস্থা বড়ই করুন।আল্লাহ খোদার নাম নেন।আল্লাহ খোদা ছাড়া বিপদ থেকে বাচানোর কেউ নাই।আয়াতুল কুরছি পড়েন।আয়াতুল কুরছি জানেন?
- না জানি না।
-বলেন কি?আপনে তো সাংঘাতিক লোক।বাচ্চা পোলাপাইন পর্যন্ত্য আয়াতুল কুরছি জানে আর আপনে জানেন না?কেয়ামতের লক্ষন।কেয়ামত আসন্ন।ইস্রাফিল শিঙ্গা হাতে রেডি হয়ে আছেন।যে কোন মূহূর্তে ফু দিয়া দিবেন।যান ভিতরে যান।আফামনি ভিতরে আছে।

অরন্য রীতুর পড়ার ঘরে ঢোকে।রিতু টেবিলের সামনের চেয়ারে বসে আছে।একে দেখলে কে বলবে একটু আগে এই মেয়ে ভাঙচুর করছিল?

-আপনি দেরি করলেন কেন?
-কাজ ছিল
-কি কাজ?
-সেটা তোমার না জানলেও চলবে।বই বের করো
-আচ্ছা আমি অনুমান করছি।আপনি কারো সাথে দেখা করতে গিয়েছিলেন
- না।আমি কারো সাথে দেখা করতে যাই নি
-তাইলে কি করছিলেন?
-বাসার যে কাজগুলা দিয়েছিলাম সে গুলো করেছো?
-আপনি টপিক পাল্টাচ্ছেন স্যার!
-আমি কি করেছি এটা তোমাকে বলতে চাচ্ছি না।
-কেনো এটা কি নারী ঘটিত কোন ব্যাপার
-হ্যা নারী ঘটিত ব্যাপার।এবার বই বের কর
-আপনি চলে যান স্যার।আমি পড়বো না আজকে
-কেনো?পড়বে না কেন?
-আমার মন খুব খারাপ।এই জন্য পড়বো না
-আচ্ছা ঠিক আছে

অরন্য উঠে দাড়ালো

-জিঞ্জাসা করলেন না কেন মন খারাপ?
-না।জিঞ্জাসা করলাম না।আমার কৌতুহল কম

রিতু চরম অপমান বোধ করলো।তার ইচ্ছা করছে অরন্যের চুল টেনে ছিড়ে ফেলতে

রিতু প্রায় চিৎকার করে বলে-আপনি আর কখনো আমাদের বাসায় আসবেন না।কখনো না।আপনাকে আমার অসহ্য লাগে
রিতুর চোখে পানি টলমল করছে।আপ্রান চেষ্টায় সে সেটা আটকিয়ে রেখেছে।

-আচ্ছা ঠিক আছে আসবো না।

অরন্য দ্রুত ঘর থেকে বের হয়ে যায়।এখানে যতক্ষন থাকবে ততক্ষন রিতুর পাগলামী সহ্য করতে হবে।
অরন্য চলে যাওয়ার পর রিতু বাথরুমে ঢোকে।বাথরুমে ঢুকে আয়নার সামনে দাড়ায়।আয়নার সামনে দাড়িয়ে এখন সে কাদবে।অনেক্ষন কাদবে।

******************

(পর্ব-৩)

বাসা থেকে বের হ ওয়ার সময় রহমত চাচার সাথে দেখা।তার হাতে সূরার বই
-নেন।বইটা রাখেন।আয়াতুল কুরসি মুখস্ত নাই শুনে বড় কষ্ট পাইছি ভাইজান।আয়াতুল কুরসি মুখস্ত করবেন।মুসলমান হয়ে জন্ম নিছেন এখন উপায় কি?
অরন্য বইটা হাতে নিল।
-হায়! হায়! করছেন কি! বই দেন।বই দেন
রহমত অরন্যের হাত থেকে বইটা নিয়ে নেয়
-আপনের তো অযু করা নাই।যান বাথরুমে যান।অযু কইরা আসেন।অযু ছাড়া সূরার বই ধরলে আল্লাহ পাক নারাজ হন
- চাচা বইটা রাখেন।বইটা আমি নিতে পারবো না।আমি আর আপনাদের বাসায় আসবো না
-ক্যান ভাইজান?আসবেন না ক্যান?
-রিতু মানা করে দিয়েছে
-এইটা কোন ঘটনা না ভাইজান।মেয়ে মানুষ অনেক কিছুই কয়।তাদের মুখে এক কথা মনে ভিন্ন কথা।আর বই ফেরত দিতে এমন কোন কথা নাই

অরন্য দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।বই না নেওয়া পর্যন্ত তার মুক্তি নেই এটা সে বুঝছে।অরন্য অযু করে আসলো।

-নেন ভাইজান।১০৪ নাম্বার পৃষ্ঠায় আছে।বাংলা অর্থসহ দেওয়া
-আচ্ছা।
অরন্য বইটা হাতে নেয়।
-ভাইজান চলেন চা খাই।আর কোনদিন সুযোগ মিলবে কি না আল্লাহ জানে।সব কিছুই তার হাতে।আমাদের হাতে কিছু নাই।আমরা আসছি শুন্য হাতে চইলাও যাব শুন্য হাতে
রহমত দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।তাকে খুব উদাস মনে হয়
-চাচা আমার কাছে চা খাওয়ার মত টাকা নেই
-সমস্যা নাই।রিজিকের মালিক আল্লাহ পাক।টাকা আমি দেব

অরন্য আর রহমত চায়ের দোকানে বসে আছে।অরন্যের মনটা খুব খারাপ।টিউশনিটা চলে গেল।একমাত্র উপার্জনের মাধ্যম।এখন আবার টিউশনি খুজতে হবে।সহজে পাবে বলেও মনে হয় না।ওই দিকে মেসে দুই মাসের ভাড়া বাকি।মেস মালিক জানিয়ে দিয়েছে টাকা তাড়াতাড়ি দিতে না প্রলে সিট ছেড়ে দিতে হবে।অযথা একটা সিট নষ্ট করার কোন কারন নেই।

-রহিম মিয়া,ইসপেশাল পাত্তি দিয়া চা দাও।আজকে সাথে অতিথি আছে।আমাগো বাড়ীর মাস্টার।অতিথির কাছে যেন ছোট না হই।এলাকার মান ইজ্জতের ব্যাপার
রহমত বললো

-বুঝলেন মাস্টার সাব।মন খুব ই খারাপ
-কেন?
-চাচাজান অযথা থ্প্পড় দেন।কুত্তাকে কুত্তা বলা নাকি আমার দোষ।ওনার ভাষ্য মতে কুত্তারে নাকি আমার শিম্পাজ্ঞি বইলা ডাকা লাগবে
-কুত্তাকে শিপাঞ্জি বলে ডাকবেন কেন?
-সেটাই তো আমার কথা।কুত্তাকে কোন দুখে শিম্পাজ্ঞি বইলা ডাকবো?আমার কি মাথা খারাপ?তাই সিদ্ধান্ত নিছি এই বাড়িত আর থাকবো না।
-তাইলে কোথায় যাবেন?
-গার্মেন্টে চইলা যামু
- ও আচ্ছা।আমি এখন উঠি
-আর এক কাপ চা খাইয়া যান।যদিও চা আগের মত স্বাদ হয় নাই
-চা খুব ভাল হয়েছে।এমন চা আমি কখনো খাই নি।
-তাইলে আর এক কাপ চা কাহিবে না ক্যান?

অরন্য উত্তর না দিয়েই চলে যায়।তার মাথায় এখন অনেক ধরনের চিন্তা।যাওয়ার সময় সূরার বইটা সে ফেলে গেল

-বুঝলা রহিম মিয়া!কেয়ামত আসন্ন।ইস্রাফিল শিঙ্গা হাতে রেডি হয়ে আছেন।যে কোন মূহূর্তে ফু দিয়ে দিবেন

রহিম মিয়া রহমতের দিকে কৌতুহলি চোখে তাকিয়ে থাকে।রহমতের কথা তার খুব ভাল লাগে।তিনি তার জীবনে এত জ্ঞানি লোক দেখেন নাই।জগতের সকল বিষয়ে তার অগাধ জ্ঞ্যান

- আয়াতুল কুরসি জানে না।এতবড় হয়েছে তবুও আয়াতুল কুরসি জানবে না ক্যান?নাউজুবিল্লাহ! মাস্টারের কথা বলতেছি।কেয়ামতের লক্ষন রহিম মিয়া।রেডি হইয়া যাও।যে কোন মূহূর্তে ফু দিয়া দিবেন

রহিম মিয়ার চোখে মুখে আতঙ্ক।কেয়ামতের কারনে না।তার ভয় হচ্ছে এই কারনে যে রহমত না বার তাকে আয়াতুল কুরসি বলতে বলে।আয়াতুল কুরসি সে নিজেও জানে না।মানুষের এটাই সমস্যা।আমরা স্রষ্টাকে ভয় পাই না।আমরা ভয় পাই স্রষ্টার সৃষ্টি মানুষকে।মানুষের কথাকে

- গার্মেন্টে চইলা গেলে তোমার দোকানে মাঝে মধ্যে আসবো।চা পান খেয়ে যাব
-কাম সত্যি সত্যি ছাইড়া দিবেন রহমত ভাই?
-অবশ্যই।মুসলমানের এক জবান।শহীদ হয়ে যাব তবুও জবানের নড়চড় হবে না।দরকার পড়লে তিনবেলা গু খেয়ে থাকবো।কাচা গু।তাও এই বাড়িতে আর কাম করমু না।কুত্তারে নাকি কুত্তা কউন যাইবো না।গরিলা ক ওন লাগবো।থাক তুই তোর গরিলারে নিয়া।গরিলার সাথে আমি থাকবার পারবো না
-মাস্টাররে তো মনে কয় শিম্পাজ্ঞি কইলেন রহমত ভাই
-জন্তু এক ই।নাম ভিন্ন
-জন্তুডা কি ভাইজান?
-বড়ই বিচিত্র জন্তু।টেলিভিশনে মাঝে মইধ্যে দেখায়।বান্দর টাইপ চরিত্র
-আচ্ছা আচ্ছা।
রহিম মিয়া এই বিচিত্র জন্তু সম্পর্কে জানতে পেরে খুব ই আনন্দিত
-থাকো রহিম মিয়া।শুনেছি গার্মেন্টে বেতন ভাল।বেতনের টাকা জমায় একটা হুন্ডা খরিদ করবো।তোমার এখানে আসলে তোমারেও চড়াবো
-আপনে ভাইজান ফেরেশতা।আপনার মত ভাল মানুষ আমি জিবনে দেখি নাই।
রহিম মিয়ার চোখে পানি এসে গেছে।সে পানি মোছে।সে এই কথা বহু জনকে বহুবার বলেছে।এবং প্রতিবার ই তার চোখে পানি এসেছে।আশ্চর্য্যের ব্যাপার!
-অযথা কাদবা না।পুরুষ মানুষের কান্না বড় অসহ্যকর।চোখ মোছ রহিম মিয়া।চোখ মোছ।হাসো।হাসি ছাড়া দুনিয়ায় কিছু নাই।হা হা হা

***********************

(পর্ব-৪)

রাত দশটার মত বাজে।রিতু বারান্দায় বসে আছে।রিতুদের বাসার এলাকাটা অনেক শান্ত শিষ্ট।দিনের বেলাতেও এদিকে যানবাহন খুব কম চলে।রাতের বেলা নেমে আসে শশ্মানের নিস্তব্ধতা।রিতুর নিস্তব্ধতা ভাল লাগে।নিস্তব্ধতায় যে কোন বিষয়ে গভীর চিন্তা করা যায়।চিন্তায় ছেদ পড়ে না।
রিতুর মন খুব খারাপ।অরন্যের সাথে এরকম ব্যাবহার না করলেও চলতো।বেচারা হয়ত রাগ করে আর টিউশনি পড়াতেই আসবে না।আসবেও বা কেনো?রিতু তো নিজের মুখেই আসতে নিষেধ করে দিয়েছে।সারাদিন তপ্ত রোদে এখানে সেখানে ঘুরে বেড়াবে,টিউশনি খুজবে।মানুষটার কত কষ্ট হবে।রোদের উপর রিতুর ভিষন রাগ হ ওয়া শুরু হল।
রিতুর চোখ হঠাৎ বাড়ির বড় মেইন গেটের দিকে পড়লো।কে যেন দাড়িয়ে আছে।গেটের লাইটে তার ছায়া পড়ছে।জায়গাটায় ভাল মত আলো পড়ে না তাই বোঝা যাচ্ছে না মানুষটা কে।ছায়া দেখে মানুষ চেনা যায় না।
মানুষটা বারবার উকি দিয়ে নিজেকে আড়াল করে নিচ্ছে।কে এই লোক?তবে যেই হোক সে নিজেকে দেখাতে চাচ্ছে না।নিজেকে আড়াল করে রাখতে চাচ্ছে।যে নিজেকে আড়াল করে রাখতে চায় তাকে আড়াল হতে দেয়াটাই ভাল।

রিতু ঠিক করলো রহমত চাচাকে অরন্যকে ডেকে আনতে বলবেন।রিতু অরন্যের মেসের ঠিকানা জানে।কাল সকালেই রহমত চাচাকে অরন্যের মেসে পাঠায় দিতে হবে।পরক্ষনেই রিতু বুঝতে পারলো ব্যাপারটা হয়তো ঠিক হবে না।একজন প্রাইভেট টিউটরের জন্য এতটা উতলা হ ওয়ার কিছু নেই।রহমত চাচা কিছু না ভাবলেও রিতুর বাবা অনেক কিছুই ভাবতে পারে।এই অধিকার তার আছে।

রিতুর চিন্তায় ছেদ পড়লো রহমতের ডাকে।
-আফামনি,চাচাজান খাবার টেবিলে আপনারে বুলায়।
-আচ্ছা আপনি যান।আমি আসছি।
রহমত পিছনে ফিরে চলে যেতে ধরে।রিতুর ডাকে আবার ও পিছনে ফিরে তাকায়
-রহমত চাচা!
-জ্বে আফামনি?
- আপনাকে একটা কাজ দিলে আপনি করতে পারবেন?
-পারবো না ক্যান?দরকার পড়লে জান দিয়া দিব।কি করতে হবে কন

রিতু কিছুক্ষন কি যেন ভাবে তারপর বলে-না চাচা।কিছু না।আপনি যান।
-আচ্ছা।
রহমত চলে যায়।তাকে খুব ই চিন্তিত মনে হয়।

খাবার টেবিলে রিতু আর তার বাবা আজিজ সাহেব বসে আছেন।আজিজ সাহেব তার প্লেটের পাশে দাড়িয়ে থাকা গ্লাসটির দিকে তাকিয়ে আছেন।গ্লাসটি আস্তে আস্তে পানিতে ভরে উঠছে।রহমত গ্লাসে পানি ঢেলে দেয়।এটা নতুন কিছু না।শুধু ব্যাতিক্রম হচ্ছে এই জায়গায় প্রতিদিন যে গ্লাসটি থাকে সে গ্লাসটি আজ নেই।
-রহমত!
-জ্বে চাচাজান
-গ্লাসটি নিয়ে যা।একটা বাটি নিয়ে আয়।আমি বাটিতে পানি খাব।

রহমত অনুগত ভৃত্যের মত বাটি আনতে চলে গেল।কথা বাড়িয়ে লাভ নেই।কথা বাড়ালে থাপ্পড় খাওয়ার আশঙ্কা আছে।থাপ্পড় খাওয়ার মত বস্তু নয়।

- বাটিতে পানি খাবে কেন বাবা?
রিতু প্রশ্ন করে।
-গ্লাসে তো অনেক পানি খেলাম রে মা।এখন বাটিতে খেয়ে দেখি কি অবস্থা।

আজিজ সাহেব আসল ব্যাপারটা গোপন করলেন।তিনি তার পছন্দের গ্লাসটি হারিয়ে যে গ্লাসে পানি খেতে পারছেন না তা তিনি বললেন না।এতে রিতু মনে কষ্ট পেতে পারে।তিনি তার মেয়ের মনে কষ্ট দিতে চান না।অন্য কোন গ্লাসে পানি খাওয়া তার পক্ষে সম্ভব না।
-মিথ্যা বললে কেন বাবা?আমি জানি তুমি কেন বাটিতে পানি খাবে।মায়ের দেয়া গ্লাসটি আমি ভেঙে ফেলছি বলে তুমি বাটিতে পানি খেতে চাচ্ছো।
সত্য ধরা পড়ায় আজিজ সাহেব ইতস্তত করে বললেন-না মা।ওটা কোন বিষয় না।গ্লাস ভেঙেছে তো কি হয়েছে?অন্য গ্লাস আছে না?অন্য গ্লাসে ও তো পানি খাওয়া যায়।হঠাৎ ইচ্ছে হল বাটিতে পানি খাওয়ার।এই যা।
-আচ্ছা।তবে চিন্তার কিছু নেই।মায়ের দেয়া গ্লাস অক্ষত অবস্থায় আছে।আমি মায়ের দেয়া গ্লাসটির মত দেখতে হুবহু আর ও একটা গ্লাস কিনে রেখেছিলাম।তোমাকে চমকে দেয়ার জন্য নকল গ্লাসটি ভেঙেছি।

আজিজ সাহেবের খাবার তালুতে ওঠে।তিনি পাশে থাকা গ্লাসটিতে পানি খান এবং সাথে সাথে বমি করে ফেলেন।

************************

(পর্ব-৫)

তিথি পাকের বেঞ্চে বসে আছে অনেক্ষন ধরে।বারবার ঘড়ি দেখছে সে।প্রতিবার ঘড়ি দেখার পর মুখ দিয়ে বিরক্তির মত শব্দ করছে।হঠাৎ সে লক্ষ্য করলো রাশেদ সিগারেট টানতে টানতে হেটে আসছে।তিথি কিছুটা নড়েচড়ে বসলো।
রাশেদ এসে তিথির পাশে বসে পড়লো।

-কি ব্যাপার?তুমি এখানে কেনো?'খুব ই সাধারনভাবে রাশেদ প্রশ্ন করলো।
- সত্যিটা বলতে পারবো না।মিথ্যাটা শুনবেন?,তিথি উত্তর দেয়
- বল।মাঝে মধ্যে মিথ্যা শুনতে ভাল লাগে।
- থাক আপনার শুনতে হবে না।আমি চললাম।

তিথি উঠে দাড়ালো।সে দেখতে চায় সে চলে যেতে চাইলে রাশেদ তাকে ডাকে কি না।তার ধারনা রাশেদ তাকে ডাকবে।

তিথি ব্যাগ থেকে একটা সিগারেটের প্যাকেট বের করে রাশেদের দিকে এগিয়ে দেয়-নিন।এটা আপনার জন্য

- আমি সিগারেট খাই না তিথি
তিথি অবাক হয়ে বলে-সিগারেট টানতে টানতে বলতেছেন আপনি সিগারেট খান না?
-এটা সিগারেট না।গাজা।চরস গাজা
তিথি সিগারেটের প্যাকেটটা ব্যাগে রেখে দিল।তারপর সামনে দিকে পা বাড়াল।সে বুঝতে পারছে না আসলে কি করা উচিত বা কি বলা উচিত।

রাশেদ পিছনদিক থেকে উচু গলায় বললো-যদি পিছন দিক থেকে ডাক দেই শুনবেন?নাকি অমঙ্গল ভেবে সোজাই চলে যাবেন?
তিথি মাথা ঘুরিয়ে বললো ডেকেই দেখুন না কেন?এটা বলে তিথি নিজেই রাশেদের পাশে এসে বসলো।রাশেদ তাকে ডেকেছে এতেই তার মন খুশিতে ভরে গিয়েছে কিন্তু মুখে যাতে সেটা কোনভাবেই প্রকাশ না পায় তার জন্য প্রানপন চেষ্টা করে তিথি।যেন রাশেদকে জানতে দিলেই সব কিছু শেষ হয়ে যাবে।একদম শেষ হয়ে যাবে।

- একটা কথা জিজ্ঞাসা করলে সত্যি উত্তর দিবেন?-তিথি রাশেদকে জিজ্ঞাসা করে
-সম্ভাবনা কম।সত্য কথা বলা ছেড়ে দিয়েছি।সব ই যখন মিথ্যা তখন কথা সত্য রেখে লাভ কি?এটাও মিথ্যা হোক
- সব কিছুই আপনার কাছে মিথ্যা মনে হয়?
- একসময় মনে হত না।এখন হয়।
- আপনি কি কাউকে ভালবাসেন?
- ঘুঘু পাখিকে ভালবাসি।তার ডাক শুনতেই প্রতিদিন দুপুর বেলা এখানে আসি
- প্রতিদিন আসেন না।মাঝে মধ্যে আসেন।আপনি তের দিন পর আজকে আসলেন।
- ও আচ্ছা।
- আমি কিভাবে জানতে পারলাম জানতে চাইলেন না?
-না।আমার কৌতুহল কম।
- কারন আমি নিজেও প্রতিদিন এখানে আসি।
-তুমিও ঘুঘু পাখির ডাক শুনতে আসো?
- জ্বি না।আমি কি জন্য আসি এটা আপনাকে বলা যাবে না।
- বলা না গেলে থাক।সমস্যা নেই।
- আপনি কি আসলেই ঘুঘু পাখিকে ভালবাসেন?
- কেন সন্দেহ আছে?
- কিছুটা।মানুষ বাদে পাখি কেন?
- মানুষকে ভালবাসতে হয় না।মানুষের ভালবাসা পাওয়ার যোগ্যতা নেই।মানুষকে ভালবাসলে বিনিময়ে কষ্ট দেয়।পশু পাখিকে ভালবাসলে অন্তত তারা কষ্ট দেয় না।
-আপনি কাপুরুষ।তাই ভালবাসতে ভয় পান।আর এ জন্যই এইসব ফালতু যুক্তি দাড় করিয়েছেন।
-কাপুরুষ আর প্রেমিক পুরুষের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই।কাপুরুষ নিজের কাছে বারবার মরে আর প্রেমিক পুরুষ তার প্রেমিকার হাতে বারবার মরে।মনের মৃত্যু কি আসল মৃত্যু নয়?থাকো তিথি,এখন যাই।নিষ্ঠুর পৃথিবীটাকে একটু দেখে আসি

তিথি কে কথা বলার সুযোগ না দিয়েই রাশেদ চলে গেল।রাশেদের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে তিথির শুধু একটি কথা বারবার মনে হচ্ছিল- মানুষ সব সময় ভুল মানুষকেই কেন ভালবাসে?

অরণ্য দ্রুত পায়ে পার্ক থেকে বের হয়ে গেল।সে রাস্তা ধরে হাটছে।তার মাথা প্রচন্ড ঘুরছে।তিথি কি তাহলে রাশেদকে ভালবাসে?রাশেদের জন্যই সে পার্কে আসতো?
মেঘ ডেকে উঠলো।অরণ্য আকাশের দিকে তাকালো।কালো মেঘে আকাশ ঢেকে গেছে।যে কোন মূহূর্তে বৃষ্টি নামবে।এক দু ফোটা করে বৃষ্টি অরণ্যের গায়ে পড়তে থাকলো।বৃষ্টিতে ভেজা ঠিক হবে না জেনেও অরণ্য রাস্তায় হাটতে থাকলো।সে যদি জ্বর গায়ে তিথির সামনে গিয়ে দাড়ায় তবে কি তিথি একবার ও তার কপাল ছুয়ে দেখবে না?দেখবে না কেন?অবশ্যই দেখবে।অরন্যের চোখ চকচক করতে থাকে।সে আকাশের দিকে আবার তাকায়।মনে মনে প্রার্থনা করে-আয় বৃষ্টি আয়।আমার আর একবার জ্বর হোক।আর একবার।

অরন্য হাত দিয়ে আবার ও চিঠিটা স্পর্শ করে যেটা হয়তো আর কখনো তিথিকে দিতে পারবে না।
অরন্য কাঙ্গালের মত আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে।একটুখানি বৃষ্টি হোক না।কি এমনটা ক্ষতি হবে মেঘের?একটুখানি বৃষ্টিতে অরন্যের একটুখানি জ্বর আসুক।তিথি তার কপাল একটুখানি ছুয়ে দেখুক।অরন্যক পৃথিবীতে সে একটুখানি ভালবাসা পাক।একটুখানি ভালবাসা পেলেই তো মানুষগুলো সুখে থাকে।মানুষগুলো বেচে থাকে।

ঝুম বৃষ্টি শুরু হল।তিথি আর রাশেদ পার্কের বেঞ্চে বসেই বৃষ্টিতে ভিজছে।

- বৃষ্টিতে ভিঝবে তিথি? রাশেদ তিথিকে বলে
- কেন আমরা বৃষ্টিতে ভিজছি না?তিথি অবাক হয়ে প্রশ্ন করে
-না।এটাকে বৃষ্টিতে ভেজা বলে না।বৃষ্টিতে ভেজার পদ্ধতি আলাদা
- কি পদ্ধতি?
- নগ্ন হতে হবে।সম্পূর্ন নগ্ন।প্রকৃতির সাথে একাত্ম হয়ে বৃষ্টি কে উপভোগ করতে হয়।পোশাখ বাহুল্য ছাড়া কিছু নয় তিথি।প্রকৃতি বাহুল্য পছন্দ করে না।

তিথি খুব ই অবাক হয়।একটা মানুষ একটা মেয়েকে এই ধরনের কথা কিভাবে বলতে পারে?

-আপনি কি জানেন আপনি একজন অসুস্থ মানুষ?
- হা-হা-হা।আমরা সবাই অসুস্থ তিথি।অসুস্থ না হলে আমরা বাচতে পারতাম না।আত্মহত্যা করে মরে যেতাম।

রীতু অনেকদিন বৃষ্টি দেখে না।আজকে সে জানালার ধারে বসে একমনে বৃষ্টি দেখছে।অন্যদিনের চেয়ে আজকে তার মন আর ও বেশি খারাপ।কারন রহমত চাচা অনেক খোজাখুজির পর ও অরন্যকে খুজে পায় নি।
রীতু জানালা দিয়ে বাইরে তাকায়।সেই ছেলেটা চায়ের দোকানের সামনে দাড়িয়ে রীতুদের বাসার বারান্দার দিকে উকি দিচ্ছে।পায়ের উপর ভর দিয়ে খুব সাবধানে উকি দিচ্ছে।দেখতে খুব ভাল লাগছে।কে এই ছেলে?এই ছেলে কি রীতু কে ভালবাসে?ভালবাসার মানুষগুলো এত দূরে দূরে থাকে কেন?কাছে থাকলে কি হয়?ভালবাসলে কি হয়?




**পুনশ্চ-অনিবার্য কারনে আরণ্যক পৃথিবীর আর কোন পর্ব পোস্ট করা হবে না।







০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাঁর বোতলে আটকে আছে বিরোধী দল

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



সেই ২০০৯ সালে তিনি যে ক্ষমতার মসনদে বসলেন তারপর থেকে কেউ তাঁকে মসনদ থেকে ঠেলে ফেলতে পারেনি। যারা তাঁকে ঠেলে ফেলবে তাদের বড়টাকে তিনি বোতল বন্দ্বি করেছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×