somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গোলে নয় রানেই হারালাম

১২ ই মার্চ, ২০১১ সকাল ১১:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




ক্রিকেটেও নাকি গোলেই হারাতো ইস্টপাকিস্তান। বাংলাদেশ তো রানেই হারালো আয়ার্ল্যান্ডকে- তাও দু-এক রানে নয়, দু-দশের উপরে আরো সাতটি রানে। ঘটনাটা পরে বলবো। প্রথম কথা গরিবের খেলা ফুটবল ছেড়ে ধনীদের খেলা ক্রিকেটটাকেই কেন চেপে ধরলো অতি দরিদ্র বাংলাদেশ? তর্কই বেধে গেল। একপক্ষে ফুটবলপ্রেমী তুমি, আরেকপক্ষে ক্রিকেটপ্রেমী আমি। তুমি বললে :

ক্রিকেট অলস লোকদের এমন এক অলস খেলা, যে-খেলায় ২২ জনের দুটি টিমের ৯ জনকে মাঠের বাইরে বসে থাকতে হয় বাধ্যতামূলকভাবে। মাঠের ভেতরের অনেক খেলোয়াড়কেও কাজের অভাবে দাঁড়িয়ে-বসে হাই তুলতে হয়। তবে হাই তোলার বদলে গ্যালারির লোকজনের সঙ্গে গল্পগুজব করে সময় কাটাতে পারেন কেবল লাইনে দাঁড়ানো ফিল্ডারগণই। এ কারণেই উপমহাদেশে ভ্রমণ করতে এসে বন্ধুর অনুরোধে ক্রিকেট খেলা দেখে দেশে ফিরে জনৈক মার্কিন ট্যুরিস্ট এরকম মজার বর্ণনা দিতে পারেন :

“ইন্ডিয়ার বিরাট একটা স্টেডিয়ামে গিয়ে দেখলাম, মাঠের মধ্যখানে এক বেকার হাঁটু ভেঙে দাঁড়িয়ে মাটিতে অনবরত একটা খুঁটি ঠুকে যাচ্ছে। তার পেছনে উঁকি মেরে বসে আছে আরেক বেকার। মুখোমুখি কিছু দূরে তৃতীয় বেকার তেমনি একটি খুঁটিতে ভর দিয়ে স্রেফ দাঁড়িয়ে আছে, আর ১০ জন লোক সারা মাঠে এদিক ওদিক হেঁটে বেড়াচ্ছে গরুর মতো। সঙ্গীকে জিজ্ঞেস করলাম ১৩ জন শক্তসমর্থ জোয়ান চমৎকার একটা খেলার মাঠে এমন আচরণ করছে কেন? সে বললো- ওরা ক্রিকেট খেলছে। এমন পাগলা খেলা আমি আমেরিকায় দেখিনি। ইউরোপেরও কেবল ইংল্যান্ডেই থাকতে পারে। কারণ ইংরেজরাই নাকি এই পাগলামি ইস্টইন্ডিয়া আর ওয়েস্ট ইন্ডিয়াকে শিখিয়েছে।

তুলনায় ফুটবল খেলায় প্রতিটি মুহূর্ত ২২ জনের দুটি টিমের প্রতিটি খেলোয়াড় একই সঙ্গে ঊর্ধ্বশ্বাস এবং রুদ্ধশ্বাস কর্মতৎপর অণুর মতো ঘুরে বেড়াচ্ছে সমগ্র ময়দানময়। হীরার টুকরার মতো দ্যুতি ছড়ানো এ-খেলার কোটি কোটি দর্শকের শ্বাসরুদ্ধকর অ্যাকশান-প্যাক্ড দেড় থেকে দুটি ঘণ্টা সময় যেন দৃষ্টিনন্দন এক গীতিকাব্য। যে-কারণে বর্তমান বিশ্বে ফুটবলফ্যানের সংখ্যা ৩.৫ বিলিয়ন। এরা ছড়িয়ে আছে পৃথিবীর প্রতিটি মহাদেশ জুড়ে। ক্রিকেটফ্যানের সংখ্যা মাত্র ২ থেকে আড়াই বিলিয়ন। কারণ এদের দেখা মেলে কেবল যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ওয়েস্টইন্ডিজ আর এই উপমহাদেশে।

শোনা যায়, খেলার রাজা ক্রিকেট। কথাটা ভুল। বরং বলা যায়, রাজার খেলা ক্রিকেট। কারণ খেলাটা এদেশে এনেছেন ইংরেজ রাজারাই। এদেশি রাজারা খেলাটাকে এখনো রাজাদের খেলা করেই রেখেছেন- অর্থাৎ গরিবের দেশে ধনীদের খেলা। অথচ সমগ্র বিশ্ব জুড়েই আমজনতার পরানপ্রিয় খেলা হিসেবে সত্যকার খেলার রাজা হল সহজ সরল সুলভ সুন্দর ফুটবল। গণমানুষের খেলা ফুটবল গোলের খেলা। এজন্য লোকে জেতাকে গোল দেওয়া বলে, উইকেট পাওয়া বলে না। আর হারাকেও রান খাওয়া বলে না, গোল খাওয়া বলে।

আমি বললাম :

তোমার এ কথাটা ঠিক যে লোকে জেতাকে “গোল দেওয়া বলে। আমাদের ছাত্রজীবনে শুজাউদ্দিন নামে পাকিস্তানের সাধারণ এক স্পিন-বোলার অসাধারণ স্পোর্ট-রিপোর্টার ছিলেন উর্দু পত্রিকার। উচ্চবিত্ত পাড়ায় ক্রিকেটের ফ্যাশন এবং সে বিষয়ে নারীমহলের আদিখ্যেতা সেকালেও ছিল। ঢাকায় পাঁচদিনব্যাপী পাক-ভারত ক্রিকেট-টেস্টের রেস্ট-ডে-তে জনৈক ধানমন্ডিবাসী ক্রিকেটফ্যানের প্রাসাদোপম হাবেলিতে পাকিস্তান-টিম ডিনারে আপ্যায়িত হচ্ছিল। সখ করে স্বহস্তে পরিবেশনের সময় লেডি-কিলার ফজল মাহমুদকে তাঁরই ক্লিন-বোল্ড গিন্নি জিজ্ঞেস করেছিলেন- আপনাদের আপ্যায়নের আয়োজনে ব্যস্ত থাকাতে আমি স্টেডিয়ামে যেতে পারিনি, কাল ইন্ডিয়াকে আপনারা কত গোলে হারালেন? শুজাউদ্দিনের ভাষায় বেস্ট-বডি-অফ ঢাকার প্রশ্নটি ছিল তাঁর পাতের দারুণ দুটি কাবাব মে নিদারুণ একটি হাড্ডি। এই ক্রিকেট-মূর্খতার সূত্রে প্রকাশিত বাঁটুল স্পিনারটির বিষাক্ত বাঙালি-বিদ্বেষপূর্ণ রিপোর্টটি আমি পড়েছিলাম করাচির সর্বজনপ্রিয় উর্দু দৈনিক জং পত্রিকায়।

পাকিস্তানিদের তীব্র সেই বাঙালি-বিদ্বেষের কারণে পূর্ববাংলার উদীয়মান কোনো প্রতিশ্রুতিশীল ক্রিকেটান্তপ্রাণ খেলোয়াড়কেও সুযোগ দিয়ে গড়ে তুলতেন না পাকিস্তানের কোনো ক্রিকেট-অভিভাবক। ফলে অনেক বাঙালি প্রতিভাই অকালে ঝরে পড়তো। তেমনি একজন মইনুলকে আমার মতো অনেক প্রবীণেরই এ-মুহূর্তে মনে পড়বে। সেই পূর্বপাকিস্তানই বাংলাদেশ হয়ে ২০১১ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি আয়ার্ল্যান্ডকে, ২৭টি গোলে নয়, ২৭টি রানেই হারালো। হারালো বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ ক্রিকেটেরই প্রতিযোগিতায়!

আজ বাংলাদেশের হাজারো গৃহিণী-তরুণী শুজাউদ্দিনদের বলে দিতে পারবে ইতিহাসসহ- বুমবুম আফ্রিদিদের মতো কামান-দাগিয়ে ব্যাটসম্যানদের নাকের ডগায় তোপের মুখে ফিল্ডিঙের “সিলি মিড-অন” “সিলি মিড-অফ” পজিশনগুলির সৃষ্টি হয়েছিল কেন এবং কীভাবে। এই সিলি-শব্দটি কিন্তু পঞ্চদশ শতকের অরক্ষিত-অসহায় অর্থে ব্যবহৃত নয়, ষোড়শ শতকের শেক্সপিয়ারের টিমন অফ এথেন্স-এ ব্যবহৃত আজকের “রিডিকিউলাস” কিংবা হাস্যাস্পদ বা অযৌক্তিক অর্থেই। ১৯৬৬ সালে ওয়েস্টইন্ডিজের কাছে হোয়াইট-ওয়াশ এড়াতে শেষ টেস্টে ইংল্যান্ডের নেতৃত্বে ডেকে আনা ব্রায়ান ক্লোজকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল- বোলারদের ঘাতক গারফিল্ড সোবার্সকে কীভাবে ঠেকাবেন? ক্লোজ বললেন- আমিই দাঁড়াবো নেক্সট টু হিম, আত্মঘাতী সিলি-মিডঅফ পজিশানে। রেজাল্ট হয়েছিল : সোবার্স, কট ক্লোজ, বোল্ড স্নো, শূন্য।

প্রতিপক্ষকে নির্মম চাবুক মারা সোবার্স স্মরণ করালো বাংলাদেশের এক সাবেক ক্যাপ্টেনকে, যিনি আয়ার্ল্যান্ডকে হারানোর পরদিন বলেছিলেন : আগে বাংলাদেশ কেবল চাবুকের মার খেত, পরে চাবুক ধরা শিখলো; এখন নিজেই চাবুক মারতে শুরু করেছে। আমি বলছি, এখন থেকে বাংলাদেশ চাবুক কেবল মারতেই থাকবে, কেবল মারতেই থাকবে।



আবদুশ শাকুর
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা সকলের দায়িত্ব।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩৮



এগুলো আমার একান্ত মতামত। এই ব্লগ কাউকে ছোট করার জন্য লেখি নাই। শুধু আমার মনে জমে থাকা দুঃখ প্রকাশ করলাম। এতে আপনারা কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি দায়ী না। এখনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখনো নদীপারে ঝড় বয়ে যায় || নতুন গান

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:২০

এ গানের লিরিক আমাকে অনেক যন্ত্রণা দিয়েছে। ২৪ বা ২৫ এপ্রিল ২০২৪-এ সুর ও গানের প্রথম কয়েক লাইন তৈরি হয়ে যায়। এরপর ব্যস্ত হয়ে পড়ি অন্য একটা গান নিয়ে। সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেতনার সময় জামায়াত বদ্ধ ইসলামী আন্দোলন ফরজ নয়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৮



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৩। তোমরা একত্রে আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধর! আর বিচ্ছিন্ন হবে না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর।যখন তোমরা শত্রু ছিলে তখন তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×