somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দৌলতদিয়া যৌনপল্লী: মোটাতাজার ওষুধে কিশোরীর বাড়ন্ত শরীর!

৩১ শে জানুয়ারি, ২০১২ রাত ১২:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দৌলতদিয়া, রাজবাড়ী থেকে ফিরে: শান্তা, দৌলতদিয়ার যৌনপল্লীর এক কিশোরী মা। বয়স ১৪’র কোটা পার হওয়ার আগেই গর্ভধারণ করে এই মেয়েটি। পল্লীতে এমন একটি ঘটনায় বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই, খুবই স্বাভাবিক, অন্তত শান্তা তাই মনে করে।

শান্তা বলছিল তার কথা। জানাল, মোটা-তাজা হওয়ার বড়ি এই পল্লীতেই পাওয়া যায়। যা তাকে ১২ বছর বয়সেই দেহব্যবসায় নামতে সাহায্য করে। শান্তার মা’ই তাকে খাওয়ায় সেই বড়ি। এরপর একদিন একটি রুমে ঠেলে দেয় কোনো এক খদ্দেরের হাতে।

শান্তারও জন্ম এই যৌনপল্লীতেই। রাজবাড়ী জেলার দৌলতদিয়ায় দেশের সবচেয়ে বড় যৌনপল্লী এটি।

শান্তার মা এখানে আছেন প্রায় ৪০ বছর ধরে। শান্তার মা জানেন না শান্তার বাবা কে। তবে কিশোরী মা শান্তা জানে তার মেয়ের বাবা কে। তারা দুজন দুজনকে ভালবাসে। তবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিয়ে করবে না।

শান্তার ভাষায়, ‘ক`দিন পর হয়তো সে আর আমারে ভালবাসবো না, তখন আমি কোথায় যাইমু, আমাগো তো বাইরে যাওনের কোন উপায় নাই।’

পল্লীতে চোখে পড়লো শান্তার মতো আরও অনেক কিশোরী। সমাজের ভাষায় নিষিদ্ধ অথচ অনেকের কাছে আকর্ষণের এই পল্লীতেই তাদের বাস। খদ্দেরের আশায় ঘরের দুয়ারে দাঁড়িয়ে থাকে। বয়স না হলেও মোটাতাজাকরণ ও যৌন উত্তেজক বড়ি খেয়ে শরীরের গড়নে, দাঁড়ানোর ভঙিমায় তারা আকর্ষণ বাড়ায়।

গরু মোটা তাজা করার ঔষধই দেওয়া হয় এইসব কিশোরীকে। এ ওষুধ বিক্রি হয় যৌনপল্লীর ফার্মেসিতেই। ডাক্তারও আছে সেখানে। তবে তাদের নেই কোনো ডিগ্রি বা যোগ্যতা।

এ ধরনের ওষুধ গরুগুলোর মতো কিশোরী মেয়েগুলোকেও সাময়িক মোটা-তাজা করে ঠিকই কিন্তু একটা পর্যায়ে তা তাদের শরীরের জন্য বয়ে আনে বড় সমস্যা। সেখানে বাসা বাধে নানা রোগ। স্বল্প রোগভোগেই শেষ হয় তাদের যৌবন-আকর্ষণ। পড়ে যায় ব্যবসা। সেই সঙ্গে সঙ্গে পতিত হয় তার জীবন। অকালে মৃত্যুও বরণ করতে হয় তাদের।

এখানে চিকিৎসারও নেই বালাই। ভুয়া ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায় অনেকেই মারা গিয়েছে, অনেকে ভুগছে নানা রকম জটিল রোগে।

মূলত উচ্চ দামে যৌন উত্তেজক ও মোটা তাজা করার ট্যাবলেট বিক্রির উদ্দেশ্যেই এখানেই ফার্মেসি খুলে বসেছে একটি চক্র।

দৌলতদিয়ার এই পল্লীতে গিয়ে জানা যায়, ডাক্তার পেশার সাইন বোর্ড তুলে এরা নারী ও মাদক পেশার সাথে জড়িত। কোনও কোনও চিকিৎসকের মদদে বাড়িওয়ালীরা দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে দালালদের মাধ্যমে অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েদের এনে মিথ্যা হলফনামা দাখিল করে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নেয়। এই মেয়েদের শরীরকে আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য মোটা-তাজা করার বিভিন্ন প্রকার ঔষুধ খেতে উৎসাহ যোগায়।

আরো জানা যায়, চিকিৎসক সাইনবোর্ডের পাশাপাশি `ডাক্তার` শহিদুল ইসলাম, মোস্তাক, ইয়াছিন, শহিদ, আক্কাস, উদয়সহ অনেকের যৌনপল্লীতে নিজস্ব বাড়ি আছে। যেখানে তারা নিজেরাই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়ে এনে জোর করে দেহব্যবসা করায়।

বিভিন্ন পেশা থেকে এরা এসে চিকিৎসা সেবার মত গুরুত্বপূর্ণ একটি পেশায় লিপ্ত হয়েছে। এতে প্রতারিত হচ্ছে দৌলতদিয়ার এই পল্লীর বাসিন্দারা।

দেশের বৃহত্তম এই পতিতাপল্লীকে ঘিরে ঔষধের অর্ধশতাধিক দোকান গড়ে উঠেছে। বিভিন্ন পেশা থেকে এসে চিকিৎসক সেজে এক শ্রেণীর লোক এই দোকানগুলো চালাচ্ছে। এই সব ভুয়া চিকিৎসক যৌনকর্মীদের কাছে বিভিন্ন প্রকার মোটা-তাজাকরণ ঔষুধ এবং খদ্দেরদের কাছে বিভিন্ন ধরনের যৌন উত্তেজক ঔষধ বিক্রি করে আসছে দীর্ঘদিন ধরে।

বাড়িওয়ালীরা অপ্রাপ্তবয়স্ক ও চিকন মেয়েদের মোটাতাজা করে খদ্দের আকৃষ্ট করার জন্য এদের থেকে নিয়মিত ঔষধ কিনছে। দোকানের পাশাপাশি এসব তথাকথিত চিকিৎসক সারারাত ঘুরে ঘুরে হকারদের মত ঔষধ বিক্রি করে থাকে। এর বাইরেও তারা স্থানীয় সাধারণ রোগীদেরও বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা দিয়ে আসছে।

তাদের ভুল চিকিৎসার কারণে রুবি (৩০ ), মনি (২৫ ), রেশমা (২৫ ) সহ বেশ ক`জন যৌনকর্মী সাম্প্রতিক সময়ে অকালে মারা গেছে বলে জানিয়েছে এই পল্লীর অনেক বাসিন্দা। এ ছাড়া অনেক মেয়ে বিভিন্ন জটিল রোগে ভুগছে।

মোটা-তাজা করার ঔষধ খেয়ে ভুগছেন মিনা। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, অসুস্থতার জন্য ডাক্তারের কাছে গেলে ডাক্তার জানায় এই সব ঔষুধ খেলে শরীর ভালো হয়। ডাক্তারের উৎসাহে মোটা-তাজা করার ঔষধ খাওয়া শুরু করি। আজ বুঝতে পারছি এই ঔষধ খেয়ে আমার কত বড় ক্ষতি হয়েছে। মিনা আরও বলেন, যারা এই মরণ-ঔষধ বিক্রি করে তাদের বিচার হওয়া দরকার।

পল্লীর চিকিৎসক মুস্তাক বলেন, আমরা এই যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট ও মোটা-তাজাকরণ ঔষধগুলো বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানির রিপ্রেজেনটেটিভদের কাছ থেকে কিনি। তারা সাপ্লাই না দিলেই তো হয়।

পল্লীর অপর এক চিকিৎসক বিপ্লব জানান, কোনও কোনও ডাক্তারের উৎসাহে যৌনকর্মীদের বিভিন্ন প্রকার ঔষধ এক সঙ্গে বেটে পানি ও জুস দিয়ে মিলিয়ে এক ধরনের নেশার দ্রব্য বানিয়ে খাওয়ানো হয়। যা খাওয়ার পর ঘন্টার পর ঘন্টা ঘুমাতে হয়। বর্তমানে অনেক যৌনকর্মী এই মরণনেশায় আসক্ত। ডাক্তারা বেশি লাভ করতেই এভাবে ঔষধ বিক্রি করে।

দৌলতদিয়া পল্লী চিকিৎসক সমিতির সভাপতি মো. সামসুল হক বলেন, `আমাদের সমিতির অর্ন্তভুক্ত ৩৭জন চিকিৎসক আছে। এর বাইরেও অনেকে চিকিৎসা দেয় ও ঔষধ বিক্রি করে। এর হিসাব আমার কাছে নেই। যার ঔষধ বিক্রি করার প্রশিক্ষণ নেই তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া দরকার এবং নিষিদ্ধ ঔষুধ বিক্রি করা বন্ধ করা জরুরি।`

অপর দিকে অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের এই পল্লীতে এনে বিক্রি করার সঙ্গে জড়িত রয়েছে একটি নোটারি পাবলিক প্রতিষ্ঠান। এর বিরুদ্ধে একাধিকবার অভিযোগ করেও কোনো ফল পাওয়া যায়নি বলে বাংলানিউজকে জানান যৌন কর্মীদের নিয়ে কাজ করা সংস্থা পায়াকট বাংলাদেশ।

পায়াকট বাংলাদেশের হিউম্যান রাইটস প্রজেক্টের প্রোগ্রাম অফিসার মো শফিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, `বাজবাড়ীতে ৭ জন নোটারি রয়েছেন। পায়াকট এর পক্ষ থেকে ৬ জন নোটারিকে বোঝাতে সক্ষম হলেও এক জন নোটারী কিছুতেই কোনও নিয়ম মানছেন না।`

আনোয়ারুল ইসলাম বাকু নামের এই নোটারি টাকার বিনিময়ে অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের ছাড়পত্র দিয়ে দেন বলেও অভিযোগ করেন শফিকুল ইসলাম।

আনোয়ারুল ইসলাম বাকুর সঙ্গে কথা বলার জন্য ফোন দিলে সাংবাদিক পরিচয় শুনে ফোন কেটে দেন। এরপর তিনি আর ফোন রিসিভ করেন নি।

এর পর রাজবাড়ী জেলা বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোসলেম উদ্দিন খানের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বললে তিনি জানান, আনোয়ারুল ইসলাম বাকুর বিরুদ্ধে তিনি কোনও অভিযোগ কখনো পান নি। তাই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব নয়।

তবে রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক সৈয়দা সাহানা বারী বাংলানিউজকে বলেন, `আমরা তার বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেয়েছি। খুব তাড়াতাড়িই তার বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেবো।`
View this link
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট

লিখেছেন ঢাকার লোক, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:২৬

আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×