কুরবানী একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত, এটি আদায় করা ওয়াজিব। এই ইবাদাতটি শুধু এই উম্মতের মধ্যে নয় বরং পূর্ববর্তী উম্মতের মধ্যেও ছিল। মানব সৃষ্টির সূচনালগ্ন থেকেই কুরবানীর বিধান চলে আসছে। হাবিল কাবিল দুই ভাই কুরবানী করেছিল। হাবিলের কুরবানী আল্লাহ তা'আলা কবুল করেছিলেন আর কাবিলের কুরবানী কবুল করেননি।
এই কোরবানীর পেছনে আমাদের পিতা ইবরাহীম আলাইহিস সালাম এর চরম আত্মত্যাগ জড়িয়ে আছে। তিনি আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে নিজের জীবন, পরিবার ও বৃদ্ধ বয়সে পাওয়া প্রাণাধিক পুত্রকে জবাই করার জন্য উদ্যত হয়েছিলেন। নিজ পুত্র যবেহ করার মত কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছিলেন ইবরাহীম আলাইহিস সালাম। এ বিষয়ে সূরা আস-সাফ্ফাতের ১০০ থেকে ১০৯ আয়াতে বলা হয়েছে, তিনি বললেন, হে প্রভু! আমাকে নেক সন্তান দান করুন। অতঃপর আমি তাকে সুসংবাদ দিলাম এক অতীব ধৈর্যশীল সন্তানের। পরে যখন সে সন্তান তার সাথে দৌড়াদৌড়ি করে বেড়ানোর বয়সে পৌঁছলো তখন তিনি (ইবরাহীম আঃ) একদিন বললেন, হে বৎস! আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, আমি আল্লাহর হুকুমে তোমাকে যবেহ করছি এখন তুমি চিন্তা-ভাবনা করে দেখ এবং তোমার অভিমত কী? তিনি (ইসমাঈল) বললেন, হে পিতা আপনি তাই করুন যা করতে আপনি আদিষ্ট হয়েছেন। আল্লাহ চাহেন তো আপনি আমাকে ধৈর্যশীলদের মধ্যে পাবেন। অতঃপর যখন দু'জনই আল্লাহর আদেশ মানতে রাজি হলেন, তখন তিনি (ইবরাহীম আঃ) পুত্রকে যবেহ করার জন্য শুইয়ে দিলেন। আমি তাকে ডেকে বললাম, হে ইবরাহীম! তুমি আমার স্বপ্নকে সত্যে পরিণত করেছ। আমি এভাবেই নেক বান্দাদেরকে পুরস্কৃত করে থাকি। নিশ্চয়ই ইহা বড় পরীক্ষা। আর আমি তাকে বিনিময় করে দিলাম এক বড় কুরবানীর দ্বারা এবং তা পরবর্তীর জন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করলাম। শান্তি বর্ষিত হোক ইবরাহীম (আঃ) এর উপর।’’ একমাত্র আল্লাহ তা'আলার নৈকট্য লাভের প্রত্যাশায় এবং আল্লাহ প্রদত্ত কঠিনতম পরীক্ষায় সাফল্যজনকভাবে উত্তীর্ণ হওয়ার উদ্দেশ্যে এক মহান পিতার প্রাণাধিক পুত্রকে কুরবানী করার মধ্যদিয়ে ধৈর্যশীলতার উত্তম নমুনা পেশ পৃথিবীর ইতিহাসে এক বিরল ঘটনা। কুরআন মাজীদে ইবরাহীম ও ইসমাঈল আলাইহিমুস সালামের আত্মত্যাগ এবং আল্লাহর প্রতি সীমাহীন আনুগত্যের সাবলীল বিশ্লেষণ তুলে ধরা হয়েছে। উল্লেখিত আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, স্বীয় পুত্র যবেহ না হয়ে দুম্বা যবেহ হয়েছে।
সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি এই ইবাদত পালন করে না তার ব্যাপারে হাদীস শরীফে এসেছে, প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আবু হুরায়রা (রা বর্ণনা করেন, রাসূল (সা বলেন, যে ব্যক্তির সামর্থ্য থাকা সত্বেও কোরবানী করে না, সে যেন আমার ঈদের মাঠের কাছেও না আসে। (সুনানে ইবনে মাজাহ : ৩১২৩, মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীস : ৩৫১৯; আত্তারগীব ওয়াত্তারহীব ২/১৫৫) রাসূল (সা মদিনার ১০ বছরের জিন্দেগীতে প্রত্যেক বছর কুরবানী করেছেন। কখনও কোরবানী পরিত্যাগ করেননি, বরং কোরবানী পরিত্যাগকারীদের ভৎসনা করেছেন।
কুরবানীর উদ্দেশ্য :
কোরবানীর উদ্দেশ্যে হবে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি আদায়। কুরবানী একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। আল্লাহ রাববুল আলামিন মানবজাতিকে সৃষ্টি করেছেন শুধু তার ইবাদত করার জন্য। তাই আল্লাহ তা'আলার বিধান তাঁর নির্দেশিত পথে পালন করতে হবে। তিনি বলেন, ‘আমি জিন ও মানুষকে এ জন্য সৃষ্টি করেছি যে, তারা শুধু আমার এবাদত করবে।' (আয্যারিয়াত-৫৬)
বলুন! আমার সালাত, আমার কুরবানী, আমার জীবন ও আমার মরণ জগৎসমূহের প্রতিপালক আল্লাহরই উদ্দেশ্যে, তাঁর কোন শরীক নেই, আর আমি এর জন্যই আদিষ্ট হয়েছি এবং আমিই প্রথম মুসলিম। (আনআম : ১৬২-১৬৩) এ আয়াতদ্বয়ের মর্মকথা হচ্ছে আমাদের জীবনের সকল ইবাদত ও কাজ কেবল আল্লাহর উদ্দেশ্যে হতে হবে। আমাদের কাজের প্রকৃত লক্ষ্য থাকবে আল্লাহর সন্তুষ্টি। ঈদ ও কুরবানী এ দু'টি কাজই মূলত আল্লাহর ইবাদত ও মুমিন বান্দাদের প্রতি মহিয়ান রাববুল আলামীনের বিশেষ অনুগ্রহ। কুরবানীর মধ্যে ত্যাগ ও উৎসর্গের মর্মনিহিত রয়েছ।
১. শর্তহীন আনুগত্য :
আল্লাহ তা'আলা তার বান্দাহকে যে কোন আদেশ দেয়ার ইখতিয়ার রাখেন এবং বান্দাহ তা পালন করতে বাধ্য। তাই তার আনুগত্য হবে শর্তহীন। আল্লাহর আদেশ সহজ হোক আর কঠিন হোক তা পালন করার বিষয়ে একই মন-মানসিকতা থাকতে হবে এবং আল্লাহর হুকুম মানার বিষয়ে মায়া-মমতা প্রতিবন্ধকতা হতে পারে না। কুরআনুল কারীম আমাদেরকে জানিয়ে দিচ্ছে যে, আল্লাহ রাববুল আলামীন ইবরাহীম আলাইহিস সালামকে আনুগত্যের চরম পরীক্ষায় অবতীর্ণ করেছিলেন। ইবরাহীম আলাইহিস সালাম এর আনুগত্য ছিল শর্তহীন। তিনি বলতে পারতেন যে, হে আল্লাহ! তোমার জন্য আগুনে গিয়েছি, ঘরবাড়ি ছেড়েছি, আত্মীয়-স্বজন সব কিছু হারিয়েছি, এসব কিছুর বিনিময়ে আমার স্নেহের সন্তানটিকে কুরবানী করা থেকে রেহাই দাও। কিন্তু তা তিনি করেননি; বরং আল্লাহ হুকুম করেছেন তা শর্হহীনভাবে মেনে নিয়েছেন এবং তিনি আল্লাহর আনুগত্য পালনের ব্যাপারে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। এ জন্য মহান আল্লাহ যেমনিভাবে বিশ্ব মানবমন্ডলীকে বিভিন্ন জাতিতে বিভক্ত করেছেন ঠিক তেমনিভাবে সর্বশেষ জাতি হিসেবে মুসলিম জাতির পিতাও মনোনয়ন দিয়েছেন। কুরআনে এসেছে : ‘এটা তোমাদের পিতা ইবরাহীমের মিল্লাত তিনি পূর্বে তোমাদের নাম করণ করেছেন মুসলিম।' (হজ্ব : ৭৮)
২. তাকওয়া অর্জন :
তাকওয়া অর্জন ছাড়া আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায় না। একজন মুসলিমের অন্যতম চাওয়া হলো আল্লাহ তা'য়ালার নৈকট্য অর্জন। পশুর রক্ত প্রবাহিত করার মাধ্যমে কোরবানীদাতা আল্লাহ রাববুল আলামিনের নৈকট্য অর্জন করেন। যেমন আল্লাহ তা'য়ালা বলেন : ‘আল্লাহর নিকট পৌঁছায় না তাদের গোশত এবং রক্ত, বরং পৌঁছায় তোমাদের তাকওয়া। এভাবে তিনি এগুলোকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন যাতে তোমরা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা কর এজন্য যে, তিনি তোমাদের পথ প্রদর্শন করেছেন; সুতরাং আপনি সুসংবাদ দিন সৎকর্মপরায়ণদেরকে। (হজ্ব : ৩৭)
৩. আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করা :
প্রত্যেক ইবাদতই আল্লাহর শেষ্ঠত্বের প্রমাণ বহন করে। তাই কুরবানীর মাধ্যমে আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করা হয়। যেমন, আল্লাহ তা'য়ালা বলেন : আল্লাহ তোমাদের সহজ চান, কঠিন চান না, আর যাতে তোমরা সংখ্যা পূরণ করতে পারো এবং তিনি তোমাদেরকে যে, হিদায়াত দিয়েছেন তার জন্য আল্লাহর বড়ত্ব প্রকাশ কর এবং যাতে তোমরা শোকর কর। (বাকারাহ : ১৮৫)
৪. ত্যাগ করার মহান পরীক্ষা :
কুরবানীর অন্যতম উদ্দেশ্য হলো ত্যাগ করা মানসিকতা তৈরি করা। আল্লাহর বিধান পালনে জানমালের ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। কুরবানীর ঈদকে গোশত খাওয়ার অনুষ্ঠানে পরিণত করা নয়, বরং নিজেদের মধ্যকার পশুসুলভ আচরণ ত্যাগ করার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। নফসের আনুগত্য ত্যাগ করে আল্লাহর একান্ত অনুগত হওয়াই কুরবানীর উদ্দেশ্য। ‘আমি তোমাদেরকে অবশ্যই ভয়, দারিদ্র্য, সম্পদ ও জীবনের ক্ষয়ক্ষতি করার মাধ্যমে পরীক্ষা করবো। (বাকারাহ : ১৫৫)
কোরবানী কবুল হবার জন্য নিয়ত বিশুদ্ধ হওয়া শর্তঃ
কোরবানী একান্তই কোন উৎসব নয়; কোরবানী হতে হবে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নিজের মধ্যে আল্লাহর ভয় জাগ্রত করার লক্ষ্যে। গোশত খাওয়ার নিয়তে হলে কিংবা মানুষ খারাপ বলবে এই কারণে কোরবানী দেওয়া হলে আল্লাহ এ কোরবানী কবুল হবে না। কেননা আল্লাহর না গোশতের প্রয়োজন, না রক্তের প্রয়োজন। তিনি তো শুধু বান্দার তাকওয়াই দেখেন।
কুরআনে পাকে এরশাদ হয়েছে, আল্লাহর কাছে কখনও কোরবানীর গোশত বা রক্ত পৌঁছায় না। বরং তাঁর কাছে তোমাদের তাকওয়া টুকুই পৌছায়। (হজ্জ : ৩৭)
একজন কুরবানীদাতার ঘোষণা এমনই । "আমার নামায, আমার কোরবাণী, আমার জীবন, আমার মরণ সবকিছুই সারা জাহানের মালিক মহান আল্লাহ তা'আলার জন্যই।" (আনআম : ১৬২)
যাদের উপর কুরবানী ওয়াজিবঃ
যে ব্যক্তি নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক (সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপার যে কোন একটির সমপরিমাণ সম্পত্তি) তার জন্য গরু, মহিষ, উট এগুলোর সাত ভাগের একভাগ অথবা ছাগল, দুম্বা এসব পশুর একটি কোরবানী করা ওয়াজিব। প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থমস্তিষ্ক সম্পন্ন প্রত্যেক মুসলিম নর-নারী, যে ৯ জিলহজ্ব ফজর থেকে ১২ জিলহজ্ব সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনের অতিরিক্ত মালিকে নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হবে তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব। টাকা-পয়সা, সোনা-রূপা, অলঙ্কার, বসবাস ও খোরাকির প্রয়োজন আসে না এমন জমি, প্রয়োজন অতিরিক্ত বাড়ি, ব্যবসায়িক পণ্য ও অপ্রয়োজনীয় সকল আসবাবপত্র কুরবানীর মালিক নেসাবের ক্ষেত্রে হিসাবযোগ্য। আর মালিকে নিসাব হল-
ক) স্বর্ণের ক্ষেত্রে সাড়ে সাত (৭.৫) ভরি,
খ) রূপার ক্ষেত্রে সাড়ে বায়ান্ন (৫২.৫) ভরি,
গ) টাকা-পয়সা ও অন্যান্য বস্ত্তর ক্ষেত্রে নিসাব হল এর মূল্য সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার মূল্যের সমপরিমাণ হওয়া।
ঘ) আর সোনা বা রূপা কিংবা টাকা-পয়সা এগুলোর কোনো একটি যদি পৃথক ভাবে মালিকে নেসাব পরিমাণ না থাকে কিন্তু প্রয়োজন অতিরিক্ত একাধিক বস্ত্ত মিলে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার মূল্যের সমপরিমাণ হয়ে যায় তাহলেও তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব। (আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪৫৫; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৭/৪০৫)
আল্লাহতা'আলার ইরশাদ করেন, ‘‘তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সালাত আদায় কর এবং পশু কুরবানী কর। আল্লাহ তা'আলার নির্দেশ পালন মূলত ওয়াজিব। রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কুরবানী করে না সে যেন আমাদের ঈদগাহের নিকটেও না আসে। (ইব্ন মাজাহ-৩১২৩ হাদীসটি হাসান) যারা সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কুরবানী ত্যাগ করে তাদের প্রতি এ হাদীসটি একটি সতর্কবাণী।
মালিকে নেসাবের মেয়াদঃ
মালিকে নেসাবের মেয়াদ কুরবানীর মালিকে নেসাব পুরো বছর থাকা জরুরি নয়; বরং কুরবানীর তিন দিনের মধ্যে যে কোনো দিন থাকলেই কুরবানী ওয়াজিব হবে। (বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৬, রদ্দুল মুহতার ৬/৩১২)
কুরবানীর সময়ঃ
মোট তিনদিন কুরবানী করা যায়। জিলহজ্বের ১০, ১১ ও ১২ তারিখ সূর্যাস্ত পর্যন্ত। তবে সম্ভব হলে জিলহজ্বের ১০ তারিখেই কুরবানীকরা উত্তম। (মুয়াত্তা মালেক ১৮৮, বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৮, ২৩, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/২৯৫)
কুরবানীর ব্যাপারে কুরআন ও হাদীসের ভাষ্যঃ
কুরআনের ভাষ্য :
১. আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, “আমার নামায, আমার কোরবানী, আমার জীবন ও মরণ বিশ্বপ্রতিপালক আল্লাহর জন্যে। তাঁর কোন অংশিদার নেই। আমি তাই আদিষ্ট হয়েছি এবং আমি প্রথম আনুগত্যশীল।”( আনয়াম : ১৬২)
২. আল্লাহ তায়ালা বলেন, “আল্লাহর নিকট পৌছায়না এর গোশত ও রক্ত, পৌছে তোমাদের তাকওয়া।”(হজ্জ : ৩৭)
৩. আল্লাহ তায়ালা বলেন, “উৎসর্গীকৃত উটকে আমি তোমাদের জন্য আল্লাহর অন্যতম নিদর্শন করেছি। এতে তোমাদের জন্য মঙ্গল রয়েছে।” (হজ্জ : ৩৬)
৪. মহান আল্লাহ তা'আলা বলেন প্রত্যেক উম্মতের জন্য আমি কোরবানীর একটি পদ্ধতির প্রচলন করেছি। যে পশু আল্লাহ তাআলা তাদের দান করেছেন তার ওপর যেন তারা তাঁর নাম উচ্চারণ করে। (হজ : ৩৪)
৫. আল্লাহ তা'আলা আমাদের আদি পিতা হযরত আদম (আ-এর দুই ছেলে হাবিল ও কাবিলের কুরবানীর কথা বলেছেন। হাবিল কাবিল দুই ভাই কুরবানী করেছিল। কাবিলের কুরবানী আল্লাহ তা'আলা কবুল করেছিলেন আর কাবিলের কুরবানী কবুল করেননি। (মায়েদার : ২৭)
৬. আল্লাহ এরশাদ করেন, তুমি তোমার রবের জন্য নামাজ পড়ো ও কুরবানী করো। (কাওসার আয়াত : ২)
৭. কোরআনের ভাষায় ইবরাহীম বলল। হে আমার প্রতিপালক! আমাকে একজন সৎকর্মপরায়ন সন্তান দান করুন। অতঃপর আমি তাকে এক স্থিরবুদ্ধি পুত্রের সুসংবাদ দিলাম। তারপর সে যখন তার পিতার সঙ্গে কাজ করার মতো বয়সে উপনীত হলো, তখন ইব্রাহীম বললো, পুত্র আমার! আমি স্বপ্নে দেখি, তোমাকে আমি জবাই করছি। এখন তোমার অভিমত কি বলো। পুত্র বললো, হে আমার পিতা! আপনি যা আদিষ্ট হয়েছেন তা সম্পাদন করুন। আল্লাহর ইচ্ছায় আপনি আমাকে ধৈর্য্যশীলদের মধ্যথেকে পাবেন। যখন তারা উভয়ে আল্লাহর নির্দেশের সামনে আত্মসমর্পণ করলো আর ইব্রাহিম তাঁর পুত্রকে কাত করে শায়িত করেন জবেহ করার জন্য, তখন আমি তাকে বললাম,হে ইব্রাহীম! তুমি তো স্বপ্নাদেশ সত্যই পালন করেছো। এভাবেই আমি সৎকর্মপরায়ণদের পুরস্কৃত করে থাকি। নিশ্চয়ই এটি ছিল এক স্পষ্ট পরীক্ষা। আমি তাকে (পুত্র ইসমাইলকে) মুক্ত করলাম এক কোরবানীর বিনিময়ে। আর আমি এটা (ঈদুল আজহায় কোরবানী করার রীতি প্রবর্তন করে) পরবর্তীদের স্মরণে রেখেছি। (সাফফাত : ১০০ - ১০৮)
হাদীসে ভাষ্য :
১. রাসূল (সা ইরশাদ করেন, “হে লোক সকল!প্রত্যেক পরিবারের পক্ষে প্রতি বছর কোরবানী করা আবশ্যক।” (মেশকাত শরীফ)
২. রাসূল (সা কখনোই কোরবানী ত্যাগ করতেন না। প্রতি বছরই তিনি কোরবানী দিতেন। আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা বলেন, রাসূল (সা মদিনা শরীফে ১০ বছর অবস্থান করেছেন। আর প্রতি বছরই কোরবানী দিয়েছেন। তন্মধ্যে স্বহস্তে ৬৩টি উট কোরবানী করেন। বাকিগুলো হযরত আলী (রা এর কাছে সোপর্দ করেছেন। এক সাথে এতগুলো উট কোরবানী করা কোরবানীর ফজিলত ও গুরুত্ব বহন করে। (তারীখে কুরবানী, পৃষ্ঠা-২১)
৩. রাসূল (সাইরশাদ করেন, “কোরবানীর দিন কোরবানী করার চেয়ে প্রিয় ইবাদত আল্লাহর নিকট আর নেই।” (মেশকাত শরীফ)
তিনি আরো ইরশাদ করেন, “কোরবানীর রক্ত মাটিতে পড়ার আগেই তা আল্লাহর দরবারে কবুল করে নেওয়া হয়।”(মেশকাত শরীফ)
৪. রাসূল (সা বলেন, আজ আমাদের প্রথম কাজ হলো নামায পড়া, তার পরের কর্তব্য হলো, কোরবানী করা। যে ব্যক্তি এরূপ করবে সে আমার তরিকার উপরই থাকবে। আর যে ব্যক্তি নামাযের পূর্বেই কোরবানী করল, তার কোরবানী শুদ্ধ হয়নি; বরং তার কোরবানী শুধু গোশত খাওয়ার জন্য হলো। সাওয়াবের সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই।
৫. হযরত যায়িদ ইবনে আরকাম হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সা এর সাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! এ কোরবানী কী? তিনি বললেন, ইহা তোমাদের পিতা ইবরাহীম (আ এর সুন্নাত। তারা বলল, এতে আমাদের কী কল্যাণ নিহিত আছে? তিনি বললেন, এর প্রত্যেকটি পশমের বিনিময় একটি করে নেকী আছে। তারা পুনরায় জিজ্ঞাসা করলেন, বকরীর পশমেও কী তাই? জবাবে তিনি বলেন, বকরীর প্রতিটি পশমের বিনিময় ও একটি করে নেকী আছে।” (ইবনে মাজাহ, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা নং-২২৬)
৬. হযরত আয়েশা (রা হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (সা ইরশাদ করেন, কোরবানীর দিনে বনী আদম এমন কোন কাজ করতে পারে না যা আল্লাহর নিকট রক্ত প্রবাহিত করা অপেক্ষা প্রিয়তর হতে পারে। কোরবানীর পশুসমূহ কিয়ামতের দিন তাদের শিং, পশম ও খুরসহ হাজির হবে। আর কোরবানীর পশুর রক্ত মাটিতে পড়ার পূর্বেই আল্লাহর নিকট তা পৌছে। সুতরাং তোমরা প্রফুল্লচিত্তে কোরবানী কর। (তিরমিযী শরীফ : ১৪৯৩)
৭. হাদীস শরীফে এসেছে, “যে ব্যক্তি প্রফুল্ল চিত্তে কোরবানী আদায়ের নিয়তে কোরবানী করে। (কিয়ামতের দিন) তার এবং জাহান্নামের মাঝে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হবে।”, (সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী : ৪৪২২)
৮. হুসাইন ইবনে আলী (রা থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা বলেন, যে ব্যক্তি খুশি মনে সাওয়াবের নিয়তে কোরবানী করে, ঐ কোরবানী তার জাহান্নামে যাওয়ার পথে প্রতিবন্ধক হবে (আল মুজামুল কাবীর লিত তাবরানী)
৯. হযরত আয়েশা (রা থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা বলেন, ঈদুল আযহার দিন মানুষের কোন আমল আল্লাহ তা'আলার কাছে কোরবানী করার চেয়ে বেশি প্রিয় নয়। কোরবানীর পশু কেয়ামতের দিন তার সিংহ, পশম ও ক্ষুরসহ উপস্থিত হবে। অর্থাৎ কুরবানীদাতা ওই জিনিসগুলোর বিনিময়ে সওয়াব পাবে।
১০. কুরবানীর রক্ত মাটিতে পড়ার আগেই তা আল্লাহ তাআলার কাছে একটি বিশেষ স্থানে পৌঁছে যায়। তাই তোমরা খুশিমনে কুরবানী করো। বেশি খরচ হয়ে গেলেও মন খারাপ করোনা। (জামে তিরমিজি)
কুরবানী দিনের ফজিলতঃ
দশ যিলহজ্বের এ দিনটিকে ইয়াওমুল আজহা বা কুরবানীর দিন বলা হয়। এ দিনের অপরিসীম তাৎপর্য ও মর্যাদা পবিত্র কুরআন ও সহীহ হাদীস দ্বারা সাব্যস্ত হয়েছে।
১. এ দিনটি বছরের শ্রেষ্ঠ দিন : হাদীসে এসেছে : আব্দুল্লাহ ইবনে কুর্ত রাদি আল্লাহ আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা ইরশাদ করেছেন, আল্লাহর কাছে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ দিন হচ্ছে কুরবানীর দিন, এরপর কুরবানীর পরবর্তী দিন। (আবু দাউদ : ১৭৬৫, ইবনে খুযাইমা : ২৮৬৬) ইমাম ইবনুল কাইয়্যেম (রহ বলেন : এ হাদীস থেকে প্রতীয়মান হয় যে, বছরের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ও মহিমান্বিত দিবস হচ্ছে কুরবানীর দিন। এতে ঈদের সালাতের পাশাপাশি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কুরবানী ও করা হয়ে থাকে।’’ (তাহযীবুস্ সুনান : ২/২৯৫)
২. এ দিন ইয়াওমুল হাজ্জিল আকবার বা বড় হজ্বের দিন। এ দিন হাজী সাহেবগণ হজ্বের হাদি যবেহসহ হজ্বের অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ কর্ম সম্পাদন করে থাকেন। রাসূলুল্লাহ (সা এভাবে ইরশাদ করেছেন : ইবনে উমার রাদি আল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ (সা কুরবানীর দিন লোকদের উদ্দেশ্য করে জিজ্ঞেস করলেন, এটা কোন দিন? সাহাবাগণ উত্তর দিলেন এটা ইয়ামুন নাহার বা কুরবানীর দিন, রাসূলুল্লাহ (সা বলেছেন : এটা হচ্ছে ইয়াওমুল হাজ্জিল আকবার বা বড় হজ্বের দিন। (আবু দাউদ : ১৯৪৫) হে লোক সকল, প্রত্যেক পরিবারের উপর কুরবানী দেয়া অপরিহার্য। (ইবনে মাজাহ : ৩১২৫, হাদীসটি হাসান)
৩. কুরবানীদাতা কুরবানীর পশুর জবাই-এর মাধ্যমে ইবরাহীম (আ ও শেষ নবী (সা এর সুন্নাতের বাস্তবায়ন করতে পারে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা'আলা বলেন : ‘‘আর আমরা মহা কুরবানীর বিনিময়ে তাকে মুক্ত করেছি।’’ (আস-সাফফাত : ১০৭) এ আয়াতের তাফসীরে তাফসীর বিশারদগণ উল্লেখ করেছেন, সকল কুরবানী এ মহাকুরবানীর অন্তর্ভুক্ত। এ জন্য রাসূল (সা যায়েদ ইবনে আরকাম বর্ণিত হাদীসেও কুরবানীকে ইবরাহীম আলাইহিস সালাম-এর সুন্নাত হিসাবে উল্লেখ করেছেন।
৪. কুরবানীর রক্ত প্রবাহিত করার মাধ্যমে আল্লাহ রাববুল আলামীনের নৈকট্য অর্জিত হয়। আল্লাহ তা'য়ালা বলেন- ‘‘আল্লাহর নিকট পৌঁছায় না তাদের গোশত এবং রক্ত পৌঁছায় তোমাদের তাকওয়া। এভাবে তিনি এগুলোকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন যাতে তোমরা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা কর এজন্য যে, তিনি তোমাদের পথ-প্রদর্শন করেছেন। সুতরাং আপনি সুসংবাদ দিন সৎকর্ম পরায়ণদেরকে।’’ (হজ্ব : ৩৭)
৫. কুরবানী আল্লাহতা'য়ালার অন্যতম নিদর্শন। সূরা হজ্বের ৩৬নং আয়াতে আল্লাহ বলেন- অর্থাৎ কুরবানীর উটসমূহকে আমরা তোমাদের জন্য আল্লাহর নিদর্শনের অন্যতম করেছি। তোমাদের জন্য যাতে কল্যাণ রয়েছে। সুতরাং সারিবদ্ধভাবে দন্ডায়মান অবস্থা এগুলোর উপর তোমরা আল্লাহর নাম স্মরণ করো আর যখন কাত হয়ে পড়ে যায় তখন সেগুলো হতে খাও। আর আহার করাও ধৈর্যশীল অভাবী ও ভিক্ষাকারী অভাবগ্রস্তকে এভাবে আমি ওদেরকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছি, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। এ আয়াতে কুরবানীর ফযিলত সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে এবং কুরবানীর পশুকে আল্লাহর অন্যতম নিদর্শন হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে।
৬. পশু দ্বারা কুরবানীর মাধ্যমে আল্লাহর জিকির বা স্মরণের বাস্তবায়ন করে থাকেন। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে : অর্থাৎ আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য কুরবানীর নিয়ম করে দিয়েছি। তিনি তাদেরকে জীবনোপকরণ স্বরপ যে সকল চতুষ্পদ জন্তু দিয়েছেন, সেগুলোর উপর যেন তারা আল্লাহর নাম স্মরণ করে। (হজ্জ : ৩৪) প্রকৃতপক্ষে পশু কুরবানীর মাধ্যমে আল্লাহর স্মরণকে বাস্তবায়নের এ সুমহান নিদর্শন বাস্তবায়িত হয়ে থাকে।
৭. কুরবানীর প্রবাহিত রক্ত আল্লাহ তা'আলার কাছে দুটি কুচকুচে কালো ছাগলের চেয়ে প্রিয় ও পবিত্র। এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে আবু হুরায়রা রাদি আল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন : অর্থাৎ কুরবানীর প্রবাহিত রক্ত আল্লাহ তা'আলার কাছে দুটি কুচকুচে কালো ছাগলের চেয়ে অধিক প্রিয়। (সুনান বায়হাকী)
৮. কুরবানীর দিন আল্লাহ তা'আলার নিকট সবচেয়ে প্রিয় আমল হচ্ছে কুরবানীর পশুর রক্ত প্রবাহিত করা। আয়েশা রাদি আল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, কুরবানীর দিনের আমলের মধ্যে ব্যক্তির সেই আমলই আল্লাহ তা'আলার কাছে প্রিয় যাতে সে পশুর রক্ত প্রবাহিত করে। (হাদীসটি হাকেম তার মুসতাদরাকে বর্ণনা করেছেন এবং সনদের দিক থেকে সহীহ বলেছেন)
৯. হাফেয ইবনে আব্দুল বার (রহঃ) বলেন, কুরবানী করা আমাদের কাছে সাধারণ দান খয়রাতের চেয়ে উত্তম। কেননা, কুরবানী সালাতুল ঈদের মত সকল প্রকার দান খয়রাত থেকে বিশেষ মহিমান্বিত ও বিশেষিত। এ প্রসঙ্গে শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যা ‘মাজমু' ফাতাওয়াহ’’ ৮/৪২৫ এ উল্লেখ করেছেন যে, সাধারণ দান-খয়রাত থেকে কুরবানী, আক্বীকা ও হজ্বের হাদীকে খুব বিশেষিত করা হয়েছে। সুতরাং কারো নিকট যদি সম্পদ থাকে এবং সে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে চায় তাহলে সে আল্লাহর উদ্দেশ্যে কুরবানী করার মাধ্যমে নৈকট্য অর্জনের চেষ্টা করবে।
১০. প্রত্যেক সামর্থ্যবান ব্যক্তি কুরবানী করার মাধ্যমে ঈদের প্রকৃত দাবি পূরণ করে থাকেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, সামর্থ্য থাকতে যে কুরবানী করে না সে যেন আমাদের ঈদগাহের নিকটেও না আসে। (সুনান ইবনে মাজাহ)
১১. ইসলামে হজ্ব একটি গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক ইবাদত। হজ্বের সাথে কুরবানীর অনেক বিষয় জড়িত। হাজীগণ এ দিনে তাদের পশু যবেহ করে হজ্বকে পূর্ণ করেন। এজন্য এর নাম হলো ইয়াওমুল হজ্জিল আকবার বা শ্রেষ্ঠ হজ্বের দিন। হাদীসে এসেছে : ইবনে উমার রাদি আল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুরবানীর দিন জিজ্ঞেস করলেন-- এটা কোন দিন? সাহাবাগণ উত্তর দিলেন এটা ইয়াওমুন্নাহর বা কুরবানীর দিন। রাসূলে কারীম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন : এটা হলো ইয়াওমুল হজ্জিল আকবার বা শ্রেষ্ঠ হজ্বের দিন। (সুনান আবু দাউদ)
১২. কুরবানীর মাধ্যমে সামাজিক ও পারিবারিক ঐক্য প্রতিষ্ঠা করার বিশেষ সুযোগ সৃষ্টি হয়। সমাজে আল্লাহর বিধান প্রতিষ্ঠার জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার প্রেরণা তৈরি হয়। আল্লাহ তা'আলা বলেন : তোমরা আল্লাহর রজ্জুকে ঐক্যবদ্ধভাবে আকঁড়িয়েয়ে ধর এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হইও না। (আলে ইমরান : ১০৩)
১৩. কুরবানীতে গরীব মানুষের অনেক উপকার হয়। যারা বছরে একবারও গোশত খেতে পারে না, তারাও গোশত খাবার সুযোগ পায়। দারিদ্র্যবিমোচনেও এর গুরুত্ব রয়েছে। কুরবানীর চামড়ার টাকা গরীবের মাঝে বণ্টন করার মাধ্যমে গরীব-দুঃখী মানুষের প্রয়োজন মেটাতে সম্ভব। অপরদিকে কুরবানীর চামড়া অর্থনীতিতে একটি বিরাট ভূমিকা পালন করে থাকে।
ঈদের করণীয় বিষয়গুলো হলঃ
ঈদ আমাদের জন্য এক বিরাট নিয়ামত। কিন্তু আমরা এ দিনকে নিয়ামত হিসেবে গ্রহণ করি না। এ দিনে অনেক কাজ আছে যার মাধ্যমে আমরা আল্লাহ তা'আলার নিকটবর্তী হতে পারি এবং ঈদ উদযাপনও ইবাদতে পরিণত হতে পারে।
১. ঈদের দিন গোসল করা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অর্জন করা, সুগন্ধি ব্যবহার করা : কেননা এ দিনে সকল মানুষ সালাত আদায়ের জন্য মিলিত হয়। ইবনে উমার (রা থেকে বিশুদ্ধ সূত্রে বর্ণিত যে, তিনি ঈদুল-ফিতরের দিনে ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে গোসল করতেন এবং তিনি দু'ঈদের দিনে সর্বোত্তম পোশাক পরিধান করতেন। আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা আল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসূল্লাহ (সা বলেছেন, ‘আল্লাহ রাববুল আলামিন তাঁর বান্দার উপর তাঁর প্রদত্ত নেয়ামতের প্রকাশ দেখতে পছন্দ করেন।' (সহীহ আল-জামে)
২. পায়ে হেঁটে ঈদগাহে যাওয়া : অধিকাংশ উলামায়ে কেরাম পায়ে হেঁটে ঈদগাহে যাওয়ার আমল করেন।
৩. এক পথে যাওয়া অন্য পথে আসা : যে পথে ঈদগাহে যাবে সে পথে না ফিরে অন্য পথে ফিরে আসবে। জাবের (রা আল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করিম (সা ঈদের দিন পথ বিপরীত করতেন। (সহীহ বুখারি)। অর্থাৎ যে পথে ঈদগাহে যেতেন সে পথে ফিরে না এসে অন্য পথে আসতেন। এটা এ জন্য যে উভয় পথের লোকদেরকে সালাম দেয়া ও ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করা যায়। (যাদুল-মায়াদ)
৪. ঈদের সালাত আদায় করা : দুই রাকাত ঈদের সালাত আদায় করা ওয়াজিব। কোন অবস্থায় ঈদের সালাত আদায়ে অলসতা করা যাবে না। শিশু-সন্তানদের ঈদের সালাতে নিয়ে যাওয়া ও ব্যবস্থা থাকলে মেয়েদের যেতে উৎসাহিত করা। মনে রাখতে হবে, ঈদের সালাত ইসলামের একটি শিআ'র তথা মহান নিদর্শন। শাহ ওয়ালী উল্লাহ দেহলভী (রহঃ) বলেছেন : ‘প্রত্যেক জাতির এমন কিছু উৎস থাকে যাতে সকলে একত্র হয়ে নিজেদের শান-শওকত সংখ্যাধিক্য প্রদর্শন করে। ঈদ মুসলিম জাতির এমনি একটি উৎসব। হাদীসে এসেছে : উমার রাদি আল্লাহু আনহু বলেন, জুমআর সালাত দু'রাকাত, ঈদুল ফিতরের সালাত দু'রাকাত, ঈদুল আজহার সালাত দু'রাকাত ও সফর অবস্থায় সালাত হলো দু'রাকাত। (সুনান আননাসায়ি)
৫. ঈদের খুতবা শ্রবণ করা : আব্দুল্লাহ ইবন সায়েব (রা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করীম (সা এর সাথে ঈদ উদযাপন করলাম। যখন তিনি ঈদের সালাত শেষ করলেন, তখন বললেন, আমরা এখন খুতবা দেব। যার ভাল লাগে সে যেন বসে আর যে চলে যেতে চায় সে যেতে পারে। (সুনান আবু দাউদ)
৬. দোয়া ও ইস্তগফার করা : মুয়ারিরক আলঈজলী রহ. বলেন, ঈদের এই দিনে আল্লাহ তা'য়ালা একদল লোককে এভাবে ক্ষমা করে দিবেন, যেমন তাদের মা তাদের নিাপ জন্ম দিয়েছিল। নবী কারীম (সা ইরশাদ করেন, তারা যেন এই দিনে মুসলিমদের জামায়াতে দোয়ায় অংশগ্রহণ করে। (লাতাইফুল মা'আরেফ)
৭. তাকবীর দেয়া : ঈদুল আজহা এর অন্যতম করণীয় হচ্ছে এ দিনের তাকবীর। ইবনে আবি শাইবা তার মুসান্নাফে (২/১৪১) উত্তম সনদে বর্ণনা করেন আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা তাকবীর বলতেন, ‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াআল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ'। ঈদেও দিনে আওয়াজ করে তাকবীর বলার প্রতি সালফে সালেহীন বিশেষভাবে গুরুত্ব দিতেন। এ দিনে বেশি বেশি তাকবীর বলাকে ইমাম শাফেয়ী (রহঃ) সুন্নাত হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
৮. কুরবানী করা : ঈদের সালাত আদায়ের পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো কুরবানী করা। হাদীসে এসেছে : আল-বারা ইবনে আযেব রাদি আল্লাহ আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন : আমি শুনেছি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খুতবাতে বলেছেন : এ দিনটি আমরা শুরু করব সালাত দিয়ে। অতঃপর সালাত থেকে ফিরে আমরা কুরবানী করব। যে এমন আমল করবে সে আমাদের আদর্শ সঠিকভাবে অনুসরণ করল। আর যে এর পূর্বে যবেহ করল সে তার পরিবারবর্গের জন্য গোশতের ব্যবস্থা করল। কুরবানীর কিছু আদায় হল না। (সুনান বায়হাকী)। সামর্থ্যবান প্রত্যেককে কুরবানী করতে হবে। রাসূলুল্লাহ (সা বলেছেন : ‘যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাক সত্ত্বেও কোরবানী করে না সে যেন আমাদের ঈদগাহের ধারে না আসে। (মুসনাদ আহমাদ, ইবন মাজাহ-৩১২৩ হাদীসটি হাসান)
৯. ঈদের দিনে খাবার গ্রহণ : ঈদুল আজহার দিন ঈদের সালাতের পূর্বে কিছু না খেয়ে সালাত আদায়ের পর কুরবানীর গোশত খাওয়া সুন্নাত। বুরাইদা (রা থেকে বর্ণিত, নবী করীম (সা ঈদুল ফিতরের দিনে না খেয়ে বের হতেন না, আর ঈদুল আজহার দিনে ঈদের সালাতের পূর্বে খেতেন না। সালাত থেকে ফিরে এসে কুরবানীর গোশত খেতেন। (মুসনাদ আহমাদ)
১০. ঈদে শুভেচ্ছা বিনিময়ের ভাষা : ঈদ উপলক্ষে পরস্পরকে শুভেচ্ছা জানানো শরিয়ত অনুমোদিত একটি বিষয়। বিভিন্ন বাক্য দ্বারা এ শুভেচ্ছা বিনিময় করা যায়। যেমন : (ক) হাফেয ইবনে হাজার রহ, বলেছেন, জুবায়ের ইবনে নুফাইর থেকে সহীহ সূত্রে বর্ণিত যে, রাসূলে কারীম (সা এর সাহাবায়ে কেরাম ঈদের দিন সাক্ষাৎকালে একে অপরকে বলতেন : ‘তাকাববালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকা' অর্থ-আল্লা তা'আলা আমাদের ও আপনার ভাল কাজগুলো কবুল করুন'। (ফাত্হুল বারী) (খ) ‘ঈদ মুবারক' বলে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করা যায়। (গ) ‘ওয়া কুল্লু আ'মীন ওয়া আনতুম বিখাইর' অর্থ-প্রতি বছরই আপনারা ভাল থাকুন : বলা যায়।
১১. আত্মীয়-স্বজনের খোঁজ খবর নেয়া ও তাদের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া : সদাচরণ পাওয়ার দিক দিয়ে আত্মীয়-স্বজনের মাঝে সবচেয়ে বেশি হকদার হলো মাতা-পিতা। তারপর পর্যায়ক্রমে অন্যান্য আত্মীয়-স্বজন। আত্মীয়-স্বজনের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ ও তাদের সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন এবং সকল প্রকার মনোমালিন্য দূর করার জন্য ঈদ হলো একটা বিরাট সুযোগ।
১২. মুসাফাহা ও মুআনাকা করা : আবু হুরায়রা (রা থেকে বর্ণিত, একদা হাসান ইবনে আলী (রা আল্লাহু নবী কারীম (সা এর নিকট আসলেন, তিনি তখন তাকে জড়িয়ে ধরলেন এবং মুআনাকা (কোলাকুলি) করলেন। (শারহুস সুন্নাহ) ঈদের দিন মু'আনাকা করা প্রসঙ্গে শাইখ বিন বায (রহ.) বলেন, এ দিন মু'আনাকা করতে কোন অসুবিধা নেই।
কুরবানীর ঈদে বর্জনীয় বিষয়গুলোঃ
১. কুরবানীর ঈদের সালাত আদায়ে বিলম্ব করা : এটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাতের পরিপন্থী। কোথাও কোথাও ১১/১২টা পর্যন্ত ঈদের সালাত বিলম্বে আদায় করা হয়। এটি সঠিক নয়।
২. সালাতের আগে কুরবানী: করাতাড়াতাড়ি কুরবানীর গোশত খাওয়ার জন্য ঈদের সালাতের আগে কুরবানী করা। এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন : অর্থাৎ সে তার পরিবারবর্গের জন্য গোশতের ব্যবস্থা করলো, কুরবানীর কিছু আদায় হলো না। (সহীহ বুখারী)
৩. ঈদের সালাতের আগে দীর্ঘ বক্তব্য, দো'য়া, মোনাজাত ইত্যাদি করা : বারা ইবন আল আযেব রাদি আল্লাহু আনহু বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, আমাদের এই দিনে যা দিয়ে আমরা শুরু করবো তা হচ্ছে ঈদের সালাত। (সহীহ বুখারী : ৯০৮)
৪. গোশত বণ্টন নিয়ে ঝগড়া-বিবাদ করা : শরীকদের পরস্পরের মাঝে কুরবানীর গোশত বণ্টন নিয়ে ঝগড়া-বিবাদ করা। মূলতঃ কুরবানী যবেহ করা হয়ে থাকে আল্লাহর জন্য। এর প্রকৃত উদ্দেশ্য আল্লাহর সন্তুষ্টি। গোশত খাওযার উদ্দেশ্য নিয়ে কুরবানী করা উচিত নয়। তাই গোশত নিয়ে শরীকরা পরস্পর বাড়াবাড়ি করা গর্হিত ও কুরবানীর প্রকৃত উদ্দেশ্য পরিপন্থী কাজ।
৫. ঈদের দিন সিয়াম পালন করা : সহীহ বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিনে রোজা রাখতে নিষেধ করেন।
৬. বিজাতীয় আচরণ প্রদর্শন করা : আবদুল্লাহ বিন আমর (রা থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি অন্য জাতির সাথে সাদৃশ্য রাখবে সে তাদের দলভুক্ত বলে গণ্য হবে। (আবু দাউদ)
৭. পুরুষ কর্তৃক নারীর বেশ ধারণ ও নারী কর্তৃক পুরুষের বেশ ধারণ : ইবনে আববাস রাদি আল্লাহু থেকে বর্ণিত, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পুরুষের বেশ ধারণকারী নারী ও নারীর বেশ ধারণকারী পুরুষকে অভিসম্পাত করেছেন। (সুনান আবু দাউদ)
৮. নারীদের খোলামেলা অবস্থায় রাস্তা-ঘাটে বের হওয়া : নারীগণ পর্দা পালন করে বের হবে। আবু হুরায়রা রাদি আল্লাহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, জাহান্নামবাসী দু' ধরনের লোক যাদের আমি এখনও দেখতে পাইনি। একদল লোক যাদের সাথে গরুর লেজের ন্যায় চাবুক থাকবে, তা দিয়ে তারা লোকজনকে প্রহার করবে। আর একদল এমন নারী যারা পোশাক পরিধান করেও উলঙ্গ মানুষের মতো হবে, অন্যদের আকর্ষণ করবে ও অন্যরা তাদের প্রতি আকৃষ্ট হবে, তাদের মাথার চুলের অবস্থা উটের হেলে পড়া কুঁজের ন্যায়। ওরা জান্নাতে প্রবেশ করবে না, এমনকি তার সুগন্ধিও পাবে না, যদিও তার সুগন্ধি বহুদূর থেকে পাওয়া যায়। (সহীহ মুসলিম)
৯. গান-বাজনা করা, অশ্লীল সিনেমা ও নাটক দেখা : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমার উম্মতের মাঝে এমন একটা দল পাওয়া যাবে যারা ব্যভিচার, রেশমি পোশাক, মদ ও বাদ্যযন্ত্রকে হালাল (বৈধ) মনে করবে। (সহীহ বুখারী)
১০. অবাধে নারীদের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করা : উকবাহ ইবনে আমের রাদি আল্লাহু থেকে বর্ণিত, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন : তোমরা মহিলাদের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করা থেকে নিজেদের বাঁচিয়ে রাখবে। মদিনার আনসারদের মধ্য থেকে এক লোক প্রশ্ন করলো হে আল্লাহর রাসূল! দেবর-ভাসুর প্রমুখ আত্মীয়দের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ সম্পর্কে আপনার অভিমত কি? তিনি উত্তরে বললেন, এ ধরনের আত্মীয়-স্বজন তো মৃত্যু। (সহীহ মুসলিম)
১১. অপচয় ও অপব্যয় করা : আল্লাহতা'আলা বলেন, ‘‘আর তোমরা কোনভাবেই অপব্যয় করো না, নিশ্চয়ই অপব্যয়কারী শয়তানের ভাই’’। (বনী ইসরাঈল : ২৬-২৭)। ‘এবং তোমরা খাও, পান করো কিন্তু অপচয় করো না।' (আরাফ : ৩১)।
১২. ঈদের দিনকে কবর যিয়ারতের জন্য নির্দিষ্ট করা : অনেকে এ দিনকে কবর যিয়ারতের জন্য নির্দিষ্ট করে থাকেন, যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরাম থেকে সাব্যস্ত হয়নি। অতএব ঈদের দিনকে কবর যিয়ারতের জন্য নির্দিষ্ট করা যাবে না।
১৩. জুয়া খেলা ও আতশবাজি করা : এগুলো শরীয়াত বিরোধী কাজ। আল্লাহতা'আলা বলেন, হে মুমিনগণ, নিশ্চয় মদ, জুয়া, প্রতিমা-বেদী ও ভাগ্যনির্ধারক তীরসমূহ তো নাপাক শয়তানের কর্ম। সুতরাং তোমরা তা পরিহার কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও। (আলমায়িদাহ-৯০)
১৪. ঈদের সালাত আদায় না করে কেবল আনন্দ ফূর্তি করা : অনেকে ঈদের আনন্দে মাতওয়ারা হয়ে নতুন জামা-কাপড় পরিধান, সেমাই, ফিরনী ইত্যাদি নিয়ে এতই ব্যস্ত হয়ে পড়েন যে, ঈদের সালাত আদায় করার কথা ভুলে যান। অথচ এই দিনে ঈদের সালাত আদায় করা হচ্ছে মূল করণীয়।
পরিশেষে বলা যায়, কোরবানী একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা আল্লাহর পক্ষ থেকে এক কঠিন পরীক্ষা। এটা একমাত্র তার সন্তুষ্টির জন্যই করতে হয়। এতে সামান্যতমও ত্রুটি করা যাবে না। এর মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর সাথে নিবিড় সম্পর্ক করতে পারে। সে বিভিন্ন হিংসা-বিদ্বেষ, লৌকিকতা থেকেও মুক্তি পায়। আল্লাহ পাক আমাদেরকে হযরত ইবরাহীম (আ এর মত দৃঢ় মনে কোরবানী করার তাওফিক দান করুক। আমিন।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুলাই, ২০২০ বিকাল ৫:২৮