এবারের T-20, BTV এবং বাংলাদেশ বেতার বিষয়ক
সেই আইসিসি কাপের ফাইনাল ম্যাচ। এক বলে এক রান দরকার। স্ট্রাইকিং প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছেন হাসিবুল হোসেন শান্ত। শান্ত’র প্যাড থেকে আসা সেই এক বলে এক রান দিয়েই আমাদের জয়যাত্রার সূচনা। সেবার আইসিসি কাপের প্রতিটি খেলা বাংলাদেশ বেতার প্রচার করেছিল, এবং এটিই ছিল সেই ম্যাচগুলো প্রচারের একমাত্র মাধ্যম। এর আগেও বাংলাদেশ বেতার এর কল্যাণেই ঘরোয়া ক্রিকেট তরুণদের মাঝে অনন্য সাড়া ফেলেছিল এবং বাংলাদেশের একটি টগবগে ক্রিকেট কমিউনিটি গড়ে ওঠার পেছনে বাংলাদেশ বেতারের বিশেষ ভূমিকার কথা কোনভাবেই অস্বীকার করা যায় না। পাশাপাশি বাংলাদেশ টেলিভিশনও সমান তালে ক্রিকেটকে প্রজেক্ট করেছে। কিন্তু বলতে বাধ্য হচ্ছি এবারের T-20 বিশ্বকাপে এই দুই রাষ্ট্রায়ত্ব প্রচার মাধ্যমের আচরণ অত্যন্ত দুঃখজনক।
লোডশেডিং এর কারণে যেন খেলার রানিং আপডেট থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে না পড়ি সেজন্য রেডিও’র নতুন ব্যাটারি নিয়ে এসে বাংলাদেশ বেতারের উপর ভরসা করে থাকলাম। বিদ্যুৎ চলে গেলেই বাংলাদেশ বেতার অন হয়ে যায়। কিন্তু ধারাভাষ্য শুনতে শুনতে হতাশ হয়ে পড়ি যখন শুনি ভাষ্যকারকে উপেক্ষা করে ওভার শেষ হওয়ার সাথে সাথে বিজ্ঞাপন শুরু হয়ে যায়। বিজ্ঞাপনগুলো প্রচারের জন্য কি ধারাভাষ্যের একটা ভদ্রতাসূচক বিরতির জন্য অপেক্ষার সময়টুকুও নেই? ভাষ্যকার কথা বলছেন, তাঁর একটা বাক্য শেষ হতে পারছে না-বিজ্ঞাপন। যারা আমার মত লোডশেডিং এর সময় রেডিও’র ধারাভাষ্য শুনছেন, তারা নিশ্চয়ই খেয়াল করেছেন- ওভার শেষ, অ্যাড শুরু। এখানে কোন ছাড় নেই। অথচ ওভার শুরু হয়ে গেলেও বিজ্ঞাপন শেষ না হওয়া পর্যন্ত ধারাভাষ্য প্রচার শুরু হয় না।
শুধু তাই না। একটা চার-ছক্কার মার কিংবা একটা উইকেটের পতন এর সাথে সাথে বিজ্ঞাপন !?! ওভার শেষ হওয়াটা না হয় একটা পর্বের সমাপ্তি হিসেবে দেখা যায়, কিন্তু একটা চারের মার? একটা উইকেটের পতন? এই মুহূর্তগুলো তো ধারাভাষ্যের সবচেয়ে উত্তেজনাকর আবেদন তৈরি করে। এই সময়গুলোতে বিজ্ঞাপনের কোন যৌক্তিকতা আমার মাথায় ঢোকে না। এবং এই চার-ছক্কা-উইকেট এর পরপর যে বিজ্ঞাপন প্রচার শুরু হয় তা শেষ হতে হতে কয়েকটা বল পার হয়ে যায়। কী উদ্ভট !
তাহলে বিজ্ঞাপন প্রচারের নীতিমালাটা কেমন? বা বিজ্ঞাপন প্রচারের জন্য কী ধরণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে? ভাবতে অবাক লাগে, বিজ্ঞাপন যে এভাবেই প্রচার হবে এ বিষয়ে বিজ্ঞাপন দাতা এবং বাংলাদেশ বেতার উভয়েই সম্মত হয়েছে (তা না হলে এভাবে প্রচার হত না)। বাংলাদেশ বেতারের এই আচরণের সাথে ছিঁচকে চোরের আচরণের কোন মিল পান? ছিঁচকে চোর আমরা তাদেরকে বলি যারা যখন যেটুকু সুযোগ পায়, তার সবটুকু কাজে লাগিয়ে ভাবে যা পেলাম সেটাই বোনাস। একটা রাষ্ট্রায়ত্ব প্রচার মাধ্যম ! চারিদিকে ক্রেতার দল। অর্থের বিনিময়ে প্রচার কিনতে উন্মুখ সবাই। কিন্তু আমার ব্যক্তিত্ব থাকলে, কিনতে চাইলেই আমি বিক্রি হব কেন? কিংবা বর্তমান নতুন অর্থব্যবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বিক্রি হলেও একটা মাত্রাবোধ থাকতে দোষ কোথায়? উত্তর জানা নেই।
এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশ টেলিভিশনও কম যায় না। প্রথমেই তারা Star Cricket দিল বন্ধ করে ! পালাবি কোথায় শয়তান, বিটিভি তোকে দেখতেই হবে। ভাল কথা। দেখতে কোনই সমস্যা নেই। কিন্তু বিটিভি তো ক্রিকেট প্রচারের আদব আয়ত্ব করতে পারেনি এখনো। ইনিংস শেষ হওয়ার পর ব্যাটিং হাইলাইটস, উইকেট এবং ইনিংস সামারি নিয়ে আলাদা আলাদা কোন স্যাগমেন্ট তো দূরের কথা ইনিংস শেষ, প্রচার বন্ধ। ম্যাচ শেষেও কোন ধরণের সৌজন্যের তোয়াক্কা না করে সাথে সাথে প্রচার বন্ধ। বিটিভির উচিত আগে ক্রিকেট প্রচারের ইডিয়মসগুলোর সাথে পরিচিত হওয়া। কিংবা, এই চ্যাপ্টার খুব কঠিন মনে হলে পরিচিত হওয়ার দরকার নেই; অন্যান্য প্রতিষ্ঠিত চ্যানেল বন্ধ করে বিটিভি দেখতে বাধ্য না করলেই আমরা বাধিত থাকব।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা অক্টোবর, ২০১২ সকাল ৮:০৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




