২০১৩ এর নির্বাচনকে সামনে রেখে সারা দেশে ভোটার হালনাগাত শুরু হয়েছে। দেশের সব এলাকাতে পূর্বের মত নতুন ভোটার অন্তরভুক্ত হলেও কিছু সীমান্তবর্তী এলাকা বান্দরবান,রামু,উখিয়া, টেকনাফ এইসব এলাকায় রোহিঙ্গা ভোটার ঠেকানোর জন্য নির্বাচন কমিশন বিশেষ এক ভোটার ফর্ম চালু করেছে, যেখানে কোন নতুন ভোটার নিবন্ধন হতে গেলে ঐ বিশেষ ফর্মে চাচা, ফুফু, বড় ভাই/বোনের আইডি নং উল্লেখ করতে হয় এবং সেই ফর্মের সাথে উক্ত আইডির ফটোকপি এবং সেই সাথে জায়গার খতিয়ানএর ফটোকপি সংযোজন করতে হয়। নির্বাচন কমিশনের রোহিঙ্গা ভোটার নিবন্ধন ঠেকানোর এই পদ্ধতি প্রশংসনীয় হলেও স্থানীয় বাসিন্দাদের কিছু দুর্ভুগের শিকার হতে হচ্ছে এবং জনমহলের কাছে কিছু প্রশ্নর উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
সীমান্তবর্তী এলাকা টেকনাফের অধিকাংশ নাগরিক রোহিঙ্গা। এইসব রোহিঙ্গা মায়ানমার থেকে টেকনাফ উপূকুলে এসে বসতি ঘড়ে তুলে। কিছু কিছু রোহিঙ্গা এসে সাধারণ দশ বাঙ্গালির মত কষ্ট করে জীবন জাপন করে আবার আর কিছু রোহিঙ্গা আছে যারা শরনার্ত্রী শিবিরে ঠাই নিয়ে UNICEF,UNIHR,WFP এর পুষ্টিকর ত্রাণ খেয়ে খেয়ে ঘুমাচ্ছে আর এই অলস মস্তিস্ক থেকে জন্ম নিচ্ছে জঙ্গি সংঘঠন, চোর, ডাকাত, আদমব্যাপারী, ইয়াবা ব্যবসায়ী এবং স্থানীয় ইয়াবা ব্যবসায়ী ও চোরাকারবারিদের যুগসাজোসে রাতারাতি হয়ে যাচ্ছে কোটি টাকার মালিক। চোরাচালানের কাল টাকার পাহাড় গড়ে কেউ আবার পরিবার পরিজন নিয়ে অবস্থান করছে চট্টগ্রামের খুলশিতে আর কেউ কেউ থাকছে ঢাকার বসুন্ধরাতে আর গড়ে তুলছে মরনব্যাধি ইয়াবার এক শক্তিশালী নেটওয়ার্ক, ধ্বংস করছে বাংলাদেশের যুবসমাজ।এমনকি এইসব রোহিঙ্গা কক্সবাজার জেলার পরিবেশেকে মারাত্মক হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে। বসতি গড়ার জন্য পাহাড় কাটছে, বন উজাড় করছে। সেই সাথে বিভিন্ন অপরাধী কার্যক্রমে লিপ্ত থাকার কারনে আইন শৃঙ্খলার চরম অবনতি হচ্ছে যার ফলে স্থানীয় পুলিশকে পরিস্থিতি সামাল দিতে রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে।
মায়ানমার থেকে প্রতিদিন নতুন নতুন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করে তাদের মধ্যে যারা বিজিবির হাতে ধরা পড়ে তারা স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকার শিরোনাম হয় আর বাকীরা পার পেয়ে যায় এবং পাড়ি জমায় ঢাকা, চট্টগ্রাম থেকে শুরু করে মধ্যপ্রাচ্যে। অথচ আপনি একজন বাংলাদেশী নাগরিক হয়ে কখনও মায়ানমার গিয়ে রেঙ্গুন যাওয়ার কথা চিন্তাও করতে পারবেন না। নির্ধারিত সময়ের একদিন বেশী থাকলে কয়েক বৎসরের সাজা গুনতে হবে।
সরকার আজ রোহিঙ্গা ভোটার নিবন্ধন ঠেকানোর জন্য যেইসব এলাকাতে এই বিশেষ ফর্মের ব্যবস্থা চালু করেছে সেইসব এলাকাতে রোহিঙ্গা ভোটার হচ্ছেনা(মেনে নিলাম)। তবে অনেক রোহিঙ্গা ঢাকা, চট্টগ্রাম গিয়ে ঐ বিশেষ ফর্মের বিড়ম্বনা থেকে মুক্তির স্বাদ নিচ্ছে এবং নিজেকে একজন বাংলাদেশী হিসেবে পরিচয় দিচ্ছে। কি সুন্দর পদ্ধতি! তাহলে কেন এই বিশেষ ফর্ম ব্যবস্থা শুধু নির্দিষ্ট কিছু অঞ্চলের জন্য সীমাবদ্ধ থাকবে? রোহিঙ্গা নিবন্ধন রোধ করতে চাইলে এই বিশেষ ফর্ম ব্যবস্থা সারা বাংলাদেশ চালু করা উচিত নয় কি? আর সারা বাংলাদেশে বিশেষ ফর্ম চালু করে লাভ কি, যদি না অবৈধ রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকাতে না পারি। কারন তাদের চোরাচালানি, আদমপাচার,ইয়াবা ব্যবসা থেকে শুরু করে জঙ্গি সংঘঠন তো আর থেমে থাকছে না। যতক্ষণ না পর্যন্ত সরকার মায়ানমারের মত কাঁটা তারের বেড়া ও বিজিবির ক্যাম্প বাড়াবে না ততদিন পর্যন্ত অবৈধ রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করতেই থাকবে, ইয়াবা চোরাচালান আরও প্রকট আকার ধারন করবে এবং জন্মনিবে শক্তিশালী রোহিঙ্গা জঙ্গি সংঘঠন আর ধরাশায়ী হয়ে উঠবে স্থানীয় লোকজন। তাই সীমান্তে অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকাতে কার্যকরী প্রদক্ষেপ না নিয়ে শুধু কিছু এলাকায় বিশেষ ফর্ম চালু করাটাই নিরর্থক।
প্রশাসনের নিকট আমার আকুল আবেদন থাকবে, মায়ানমারের মত বাংলাদেশেও যাতে কাঁটা তারের বেড়া দেওয়া হয়। সীমান্তে যাতে বিজিবির টইল বাড়ানো হয় এতে করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বন্ধ হবে এবং এর পাশাপাশি মরনব্যাধি ইয়াবা থেকে টেকনাফ এবং বাংলাদেশের যুবসমাজ রক্ষা পাবে এবং সেই সাথে টেকনাফ ইয়াবা নগরী নামক কালো দাগ মুছনে সক্ষম হবে। অন্যথায় বাংলাদেশ একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্রে পরিনত হবে।(আল্লাহ না করুক।)