- রিংকু, ব্লগ ডের ভেন্যু ঠিক হলো?
- মুশাসি ভাই, শুধুমাত্র আপনার সম্মানে আমরা পদ্মা গার্ডেনে ব্লগ ডে উদযাপন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আপনার ফোনটা পদ্মায় বিসর্জনের মাধ্যমে আমাদের ব্লগ ডে শুরু হবে !
মানলাম আজকের মিটিং মিস করছি। ফোন সাইলেন্ট থাকায় দশ বারোবার ফোন দিয়েও কেউ পায়নি আমাকে। তাই বলে এত সম্মান? অবশ্য আয়োজকদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ফাঁকিবাজি করেছি আমিই। তাই প্রতিবাদ না করে বললাম তথাস্তু।পদ্মা গার্ডেন রাজশাহী নগরীর সবচেয়ে সুন্দর ও মনোমুগ্ধকর বিনোদন স্পট। পদ্মা নদীর তীরে ব্লগ ডে পালন করবো ভাবতেই অন্যরকম উত্তেজনা অনুভব করছিলাম।
ব্লগ ডের আগের দিন থেকেই ব্লগে উৎসব উৎসব ভাব। ব্লগারদের মনেও। কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে আমিনুর ভাইয়ের পাঠানো ১০০ টা পোষ্টার আমরা পেলাম ১৮ ডিসেম্বর বিকেল ৩ টা নাগাদ। তবে হরতালের কারনে তা রাজশাহীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে লাগানোর কাজ শুরু করতে করতে সন্ধ্যা হয়ে গেলো। সে কাজ শেষ করতে করতেও বাজলো রাত ৯:৩০ টা। এর মধ্যেই ব্লগারদের সাথে শেষ সময়ের যোগাযোগ সেরে নিলাম আমরা। ঠিক সময়ে উপস্থিত হওয়ার জন্যে তাগাদা দেয়া হলো সবাইকে।
বাক স্বাধীনতা বাক দায়িত্বশীলতা মোটোতে তৈরী পোষ্টারটি পছন্দ হয়েছে তবে বিভিন্নজেলায় পাঠানো পোষ্টারগুলোতেও স্থান হিসেবেও ঢাকার ঠিকানা দেয়া ছি এটা পরেরবার ঠিক হবে আশা করি
আমাদের সবরকম আয়োজনও সমাপ্ত। শুধু পরদিনের অপেক্ষা। সকাল ১০ টা থেকে র্যালি হওয়ার কথা থাকায় তাড়াতাড়ি ঘুমাতে যাচ্ছিলাম। ঘুমানোর আগে ভুলোমনের পোষ্টে চোখ বুলিয়ে জানতে পারলাম ব্লগ ডের প্রোগ্রাম অনিবার্য কারনবশত সকাল ১০ টার পরিবর্তে দুপুর ৩টায় শুরু হবে। অনিবার্য কারনটি হলো রাজশাহীতে ১৯ ডিসেম্বর অর্ধদিবস হরতাল!
১৯ ডিসেম্বর পূর্ব নির্ধারিত স্থান আলুপট্টির গ্রামীন ফোন সেন্টারে মিলিত হলাম সবাই।
উপস্থিত ব্লগারদের একাংশ
তবে সেখানে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিলো আরেকটি দুঃসংবাদ! হরতালের কারনে জানা আপুর পাঠানো ব্যানার রাজশাহীতে এসে পৌছায় নি। আমাদের হাতে যদিও কিছু অবশিষ্ট পোষ্টার রয়েছে যদিও কিন্তু ব্যানার ছাড়াতো র্যালি অসম্ভব। তাই অনুষ্ঠানের প্রোগ্রামে পরিবর্তন আনতে হলো। চা চক্র শেষে আমরা দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে আমাদের গন্তব্য স্থল পদ্মা গার্ডেনের উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। সেখানে আমাদের জন্যে অপেক্ষা করছেন ফিমেল ব্লগার স্বপ্নবিলাস এবং শাকিলা জান্নাত।
পদ্মা গার্ডেনে গিয়ে দেখলাম আরো কিছু ব্লগার সেখানেই সরাসরি চলে এসেছেন। সবাই মিলে চললো ফটোসেশন। রসিক ব্লগার পলক শাহরিয়ার স্বভাবসুলভ রসিকতায় ছবিতে সবার মুখ যেন হাসি হাসি আসে তা নিশ্চিত করলেন।
এই ছবিতে ফটোগ্রাফার ভুলো মন বাদে উপস্থিত সবাই রয়েছেন
উপরের ছবিতে ব্লগ ডের যে কেক দেখা যাচ্ছে তাতে বাংলা লিখতে ব্লগার ভুলো মন এবং তততততত এর বেশ বেগ পেতে হয়েছে। বেকারির লোকটা নাকি বাংলায় লিখতে রাজিই হচ্ছিলো না। কারন তার বাংলা লেখা খারাপ! কিন্তু বাংলা ব্লগ ডে বলে কথা। বাংলাতেই লেখা হলো।
কেক কাটার আগে শুরু হলো পরিচয় পর্ব। একে একে নিজের পরিচয় দিলেন ব্লগার মিআমি, মোঃ আবু জাফর,ধূসর কুয়াশা, ইউসুফ আলী রিংকু, মুশাসি, পলক শাহরিয়ার, ভুলো মন , ততততত, মিজানুর রহলাম মিলন, ইমরান হাসান, স্বপ্ন বিলাসী, শাকিলা জান্নাত, ইমন মুর্শেদ, আমি বাঁধন হারা, অরন্য, বাপ্পী, জহুরুল, তন্দ্রাবিলাস, জাতির মামু, আশিকুর রহমান অমিত, তাসিদ, রাজদী, নীল ভ্রমর, ব্লেজিং ফয়সাল, হবু ইঞ্জিনিয়ার। অনুষ্টানের শেষে অবশ্য আমাদের সাথে যোগ দিয়েছিলেন প্রিয় ব্লগার গুপি গাইন। সব মিলিয়ে উপস্থিত ছিলেন ২৬ জন ব্লগার।
পরিচয় পর্ব
সামুর একেবারে প্রথম দিকের সিনিয়র ব্লগার মিআমি এবার উপস্থিত ব্লগারদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখলেন। তার প্রানবন্ত আলোচনায় আমরা উজ্জীবিত হলাম সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এ দেশকে এগিয়ে নিতে, নিজেদের প্রতিভা, সংস্কৃতি আর সম্ভাবনাকে সর্বাঙ্গীন সুন্দরভাবে উপস্থাপনে।
বেলা যে হয়ে এলো। এবার কেক কাটার পালা। তবে তার আগে জানা আপুকে কি ভুলতে পারি? আপু লাউড স্পিকারে আমাদের সবার উদ্দেশ্যে শুভকামনা জানালেন।
মোমবাতি জালালেন ব্লগার আবু জাফর ভাই
কেক কাটলেন প্রিয় মিআমি ভাই
ব্লগারদের ক্ল্যাপিং এবং কেকের ছবি তোলা পর্ব
কেক ভাগ করার দায়িত্ব পড়লো স্বপ্ন বিলাসি আপুর উপর।
আমার স্পষ্ট মনে আছে তিনি কেক কেটে ২৮ ভাগ করেছিলেন। ২৫ জনের প্লেটে ২৫ টা আর মিআমি ভাইকে খাওয়ানো ১ পিস কেক ছাড়াও দুই পিস কেক মিসিং দেখে ব্লেজিং ফয়সাল একটি তদন্ত কমিটি গঠনের প্রস্তাব রাখলেন। তবে সুসাস্থ্যের অধিকারী ব্লগার আশিকুর রহমানের তীব্র আপত্তিতে সেই প্রস্তাব বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় নি।
রিভার ভিউয়ের ওরা খাবারটা মন্দ বানায় না। তাই তর সইছিলো না আমার। লোভাতুর চোখে তাকিয়ে ছিলাম। তবে সবাই একসাথে না হলে তো আর শুরু করা যায় না !
বেচারা রিংকু বলতে গেলে একাই খেটেছে আজকের এই সুন্দর আয়োজনের জন্য। সবার একটা করোতালি ওর প্রাপ্য।
এবার কিছু বলার সুযোগ পেলাম। জানালাম যে সামুর মুশাসি আজকের বাংলা ব্লগ ডে তে শুধু সামু নয়, বাংলাদেশের প্রথম সিনেমা বিষয়ক পূর্ণাঙ্গ ব্লগ মুভি লাভারজ ব্লগকেও রিপ্রেজেন্ট করতে এসেছে। আর অবশ্যই ভুললাম না সবচেয়ে গুরুত্বপূ্র্ণ কথাটি আবার সবাইকে মনে করিয়ে দিতে। রুশানের কথা। না কেউ ভুলেন নি। ব্লগার স্বপ্ন বিলাসী আমার হাতে তুলে দিলেন লেডিস হল, রুয়েট থেকে সংগ্রহ করা ৩৫৫০ টাকা। ব্লগার মিআমি দিলেন ৫০০ টাকা, ব্লগার নীল ভ্রমর দিলেন ৫০০ টাকা,শাকিলা জান্নাত এবং তততত উভয়ে দিলেন ১০০ টাকা করে।
সূর্য ততক্ষনে ডুব মারার শেষ প্রস্তুতিতে ব্যস্ত, আমাদের কি উঠার সময় হয়ে এলো? রিংকু ভাই জানালেন সবচেয়ে বড় সারপ্রাইজটা তখনও বাকী!
নৌভ্রমন !! পদ্মাপাড়ে আসবো আর নদীতে ভাসবো না। তাই কি হয়? ভেসে পড়লাম আমরা, মনে হয় সামুর ইতিহাসে প্রথম বারের মত নৌভ্রমন সংযুক্ত হলো ব্লগ দিবসের কর্মসূচীতে।
আহারে রিংকু ভাইটা। গত এক সপ্তাহের প্রস্তুতির ধকলে কেমন শুকিয়ে গেছে এই স্মার্ট ছেলেটা দেখেন..
সাঁতার পারিনা দেখে ঐ কোনাটায় যেতে চাচ্ছিলাম না। মিআমি ভাই বুঝতে পেরে শুরুতে হাসতে লাগলেন। তারপর আমার জীবনের দায়িত্ব নেবেন বলে অভয় দিলে দাড়ালাম উনার পাশে, যদিও ভরসা পাচ্ছিলাম না।
রিংকুকে একেবারে কোনায় দাড়াতে দেখে রীতিমত ভয় পাচ্ছিলাম। সে কিনা ফটোগ্রাফারকে টাইটানিক পোজ দিলো!
আজ আসলে ফিরে আসার ইচ্ছাই ছিলোনা কারো, তাই এই পারের কাছাকাছি হতেই ফাঁকিবাজ মাঝিকে এক সাথে ঐ পার দেখালেন মিআমি ভাইরা
কি ভেবেছেন? আয়োজন এখানেই শেষ? আরে, আমাদের সাথে কবি বাঁধন হারা ভাই আছেন না? তিনি তো এতক্ষন চুপ করেছিলেন এই সময় কথা বলা জন্যেই। একে একে তার নিজের লেখা কবিতাগুলো শুনলাম। প্রথমেই বললেন রাজশাহী নিয়ে লেখা তার একটি অসাধারন কবিতা। ব্লগার মিজানুর রহমানের রিকোয়েস্ট এ এরপর শোনালেন প্রেমের কবিতা ভালবাসার সংজ্ঞা। উনি আজকের পুরো আয়োজন নিয়ে একটি কবিতা লিখবেন এই প্রতিশ্রুতি নিয়ে আমরা তাকে ছাড়লাম।
সবই তো হলো। একটা গান না হলে যে মন ভরছিলো না। ঠিক সে সময় ব্লগার গুপি গাইনের আগমন। আনন্দে হাত তালি দিয়ে ওঠার অবস্থা আমাদের। আলাপ হলো বেশ খানিকক্ষন। আমরা।
বিদায়ের আগে পদ্মা তীরে গুপি গাইন ভাইয়ার গলায় গান শুনতে শুনতে আমরা যেন অন্য এক জগতে চলে গিয়েছিলা
মাত্র কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে সবাই এতটা আপন হয়ে গিয়েছিলেন যে বিদায় জানাতেই ইচ্ছে করছিলো না। অবাক হচ্ছিলাম এই লোকগুলোর অধিকাংশকেই আমি মাত্র কয়েক ঘন্টা আগেও চিনতাম না! ফিরে আসতে আসতে বুঝলাম দিনের পর দিন এক প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করতে করতে মনের অজান্তে যে আত্মিক সম্পর্ক গড়ে উঠছে আমাদের- তারই বহিঃপ্রকাশ ছিলো এটা।
ব্লগ ডে রাজশাহী উদযাপনের পেছনে সবচেয়ে বেশি পরিশ্রম করেছেন যিনি সেই ইউসুফ আলী রিংকু ভাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ, ধন্যবাদ আয়োজন এবং আয়োজনকে সফল করার পেছনে কাজ করা সকল সহব্লগারকে ।ধন্যবাদ সামহ্যোয়ারইন ব্লগকে।
উৎসর্গঃ সকল প্রবাসী ব্লগার ভাইদের। যারা ইচ্ছে থাকা সত্বেও আসতে পারেন নাই।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে ডিসেম্বর, ২০১২ ভোর ৪:১১