ড. অমর্ত্য সেন এর ইনটাইটেলমেন্ট এবং ডিপ্রাইভেশান থিওরির একটা এক্সটেন্ডেড ভার্সানও থাকার কথা মনে হচ্ছে।
.
এই থিওরি বলছে সব মানুষই পরিশ্রম করেছে। কেউ খাদ্য উৎপাদনে, কেউ অন্য কিছুতে। কিন্তু দিন শেষে দেখা গেলো খাবার সবাই পাচ্ছে না। ফিজিক্যালি সরবরাহ নাই অথবা দাম নাগালের বাইরে। ড. সেন তার পভার্টি এন্ড ফেমিন বইয়ে চারটা কেইস এর মধ্যে নবব অধ্যায়ে ১৯৭৪ এর বাংলাদেশের দূর্ভিক্ষ নিয়েও বলেছেন। তাঁর থিওরি বলছে ইনটাইটেলমেন্ট ফেইলিউরের কারনেই মূলত দুর্ভিক্ষ হয়।
.
২০২০ এ এসে দেখছি খাবার ছাড়াও বাকি নিত্য প্রয়োজনিয় জিনিষের ক্ষেত্রেও তো তাঁর ইনটাইটেলমেন্ট ফেইলিউর থিওরি দারুন ভাবে খাটে।
.
প্রচুর মানুষ সারা জীবন হাঁড় ভাঙ্গা খাটুনি দিলো। দেশ উন্নত হলো। একটা গোষ্ঠী চিকিৎসা সেবার এয়ার এ্যাম্বুলেন্স, কেবিন, আই.সি.ইউ, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর সব যায়গায় ঢুকে গেলো। আরেকটা গোষ্ঠী প্রচন্ড জ্বর গায়ে, রাস্তার সূর্য্য মাথায় নিয়ে করোনা টেষ্টের লাইনেই চিৎ হয়ে চেগিয়ে মরে পরে থাকলো। দেখাগেলো স্বাভাবিক স্বাস্থ সেবায় তাদের কোন ইনটাইটেলমেন্ট নেই। যদিও দেশে সেই সুবিধা মজুদ আছে, আরেকটা গোষ্ঠীর জন্যে। যারা পাবলিকের খরচেই সুবিধাটা পাচ্ছে আরামসে।
.
আইন আর পুলিশি সেবার বেলায়ও হুবুহু একই তত্ত্ব কি খাটে! সোশাল মিডিয়ায় কোন ভিআইপি নিয়ে শুধু অশ্রাব্য কথা বলার জন্যে যখন লোকজনকে খুঁজে খুঁজে বের করে ধরা হয়, তখন বুঝা যায় দেশের এই সেক্টরটাও কত স্মার্ট, কত বিস্তৃত! অথচ সুবর্ণ চরের গৃহবধু পারুল, পুরান ঢাকার বিশ্বজিতরা এই সেবায় এনটাইটেল্ড না। শুধু পাসপোর্টের ঠিকানা ভেরিফাই করতে গিয়েই বুঝা যায় এই নিত্য দরকারি সেবাটা সাধারনের জন্যে কত ব্যয় বহুল, কত দূর্ভেদ্য। অথচ সাধারনের খরচেই এই সব সেবা খাত দাঁড়িয়ে থাকে। আর কেউ কেউ তাতে কি প্রচন্ড নিরাপত্তা বলয়ের ভেতরে জীবন কাটায়!
.
সুবিধা ভোগী গোষ্ঠীর সমাজ রক্ষায় আবার থাকে সামাজিক সুশীল। তারা বলবে- "ভাইজানরা, কেউতো বিচার পাইলো, কেউতো খেলো, কারোতো চিকিৎসা হলো। তখন কে পাইলো না, কার বিচার কখন হইলো না এই সব রিলেইট করে ছোটলোকি ছাড়েন না ক্যান!" অথচ কেউ যখন বিচার পায় তখনই বাকিরা বুঝে যে এখানে স্মার্ট একটা বিচার ব্যবস্থা ছিলো, যার সুবিধা তাদেরও পাওনা। আমি যখন ক্ষুধা নিয়ে থাকি, আর সামনে আরেক জন গুদাম খুলে খায়, যে গুদাম আমারো। তখনিতো কে পেলো আর কে পেলো না সেই প্রসঙ্গ আসবে।
.
ইনটাইটেলমেন্ট ফেইলিউর থিওরি আসলে বিশাল বিস্তৃত ইস্যু মনে হচ্ছে। এতে শুধু খাবারের অভাবেই মানুষ মরে না। চিকিৎসার অভাবেও মরে। আইনি গেঁড়াকলেও মরে।
.
#Afnan_Abdullah