ধূসর নীলাভ গ্রহের এক কোণে শুয়ে থাকে নরসুন্দা
তার বুকের পাশে, শ্মশানে স্বজনের মুখাগ্নির ধোঁয়া,
ক্রন্দনরতা রমনীর বিলাপের ভেতর সন্ধ্যা ঘনায়
কালীমন্দিরে বাজে শঙ্খ, সন্ধ্যারতির সুরে
নরসুন্দা যেনো আজ নয়, এইখানে নয়, নয় এই শতাব্দীতে
যেনো আমাদের সম্মিলিত স্মৃতির ভেতর জেগে থাকা
দূর কোনো সহস্রাব্দের ভেতর মঞ্চস্থ হতে থাকে নরসুন্দা!
হায়! স্মৃতির প্রজাপতি!
ডানায় রোদ মেখে
নদীর ওপার থেকে এপারে উড়ে আসা হলুদ প্রজাপতি!
নরসুন্দার বুকের উপর তুমি আজও স্থির হয়ে আছ
ঠিক যেমন মহাকাল ধরে সূর্যের চারপাশে ঘুরে-ঘুরেও
স্থির হয়ে থাকে বসুন্ধরা ও মানুষের মিথ।
নরসুন্দা— লুপ্ত পৃথিবীতে ফিরে যাবার জাদুর আয়না
নরসুন্দার পাড়ে ময়মনসিংহ গীতিকার চরিত্রেরা হাসে,
পান খাওয়া লাল ঠোঁটে খুনসুটি করে পরস্পর,
তারা একে অন্যের দিকে ছুড়ে দেয় শিলুক:
‘থালি ঝুমঝুম থালি ঝুমঝুম থালি নিলো চোরে
বিন্নিঘরে আগুন লাগছে কে নিভাইতে পারে’?
কেউ একজন হঠাৎ গীতে টান দিয়ে গায়:
‘গাঙ্গের পাড়অ দেখা যায় গো কদম সারি সারি
তাহার মধ্যে বানাইয়া থুইছে সোনাবন্ধের বাঁশি’।
প্রেমে পড়া যুবকের দিকে আড়চোখে চেয়ে
শ্যামলবরণ মেয়ে নিচু স্বরে বলে:
‘লজ্জা নাইরে র্নিলজ্জ ঠাকুর লজ্জা নাইরে তোর
গলায় কলসি বাইন্ধা জলে ডুইব্যা মর।
নরসুন্দা— যেনো চন্দ্রাবতীর বাড়ির পাশে বয়ে চলা ফুলেশ্বরী নদী;
ফুলেশ্বরী ছিল
ফুলেশ্বরী নাই।
তবু নরসুন্দা, রোদে ঘোর লাগা একলা শালিকের বুকের ভেতর থাকে,
যেমন বিরহী চন্দ্রাবতীর দিলের ভেতর অহর্নিশি ছিল
দাগা দেয়া প্রেমাষ্পদ জয়ানন্দের মুখ।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জানুয়ারি, ২০২১ রাত ৮:৪৫