শিরোনামটা পড়ে পাঠক পারসেপশন এর দিক থেকে আমার বিশ্বাস এক পার্সেন্ট পাঠকও পাওয়া যাবে না যারা মনে করেন ১/১১ এর ক্ষমতা দখলের পরিকল্পক প্রাক্তন সেনা প্রধান মইন একা নিজে।
কিন্তু মইন সৌভাগবান।
ঢাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বিদায়ী রাষ্ট্রদূত স্টিফেন ফ্রোয়েন গত বৃহস্পতিবার নিজেকে বাচাতে সাংবাদিকদের সামনে এমন এক ক্রেডিট দিয়েছেন। এডিআরইউ মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে বিদায়ী ইইউ রাষ্ট্রদূত যুদ্ধাপরাধ বিচারের বর্তমান প্রক্রিয়ার সাথে ইউরোপীয় ইউনিয়ন একমত নয়
ডিআরইউ মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে বিদায়ী ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) রাষ্ট্রদূত এক সমাবেশে এমনি এক মন্তব্য করে নিজের হাত ধুয়ে ফেলে আমাদের বোকা বানানোর চেষ্টা করেছেন। ফলে ঐ অবৈধ ক্ষমতা দখলের এককভাবে সবদায় অথবা গৌরব এখন মইনের।
পাঠককে মনে করিয়ে দেই, ‘টিউসডে গ্রুপ" (সমমনা ১৬ বিদেশি কূটনীতিকের জোট) বা মঙ্গলবারের ষড়যন্ত্রী জোটের কথা। ২০০৭-এ জরুরি অবস্থা জারি হঠাৎ করে হয়নি। এর প্রায় বছর খানেক আগে থেকেই এই গ্রুপ তাদের তৎপরতা চালিয়ে গিয়েছিল। ফ্রোয়েইন ছিলেন এই গ্রুপের সম্পাদক। সে সময়ের মিডিয়ায় তারা খবর হয়ে আসতেন। তখনকার মত এখনও প্রথম আলো আমাদের ‘টিউসডে গ্রুপ" এর কথা স্বীকার করে খবর দিয়েছেন। Click This Link
মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে ফ্রোয়েইন আমাদের জানিয়ে বলেছেন,
"আমি, আনোয়ার চৌধুরী বা জার্মানি, ইউকে, ভারতসহ যে ১৬ জন কূটনীতিকে ওয়ান ইলেভেনের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ করা হয়, আসলে তারা কেউই এর সাথে জড়িত ছিলেন না" -
এর জবাব হলো,
মিঃ রাষ্ট্রদূত স্টিফেন ফ্রোয়েন, আপনি একজন মিথ্যাবাদী।
আপনি বলছেন, যারা সরাসরি এই অভিযোগ করেন তারা ননসেন্স। আর আপনি হলেন প্রখর সেন্স-ওয়ালা মিথ্যাবাদী। একজন কুটনীতিক মিথ্যাবাদী মানে সারা ইঊ যাদের আপনি প্রতিনিধি এরা সবাই মিথ্যাবাদী।
আপনারা প্রথম 'সাহসী যোদ্ধা' হিসাবে জেনারেল মাসুদকে হাত করেন। এরপর সেই সাহসে সব গুছিয়ে নেবার পর ১/১১ এর দুই দিন আগে আনোয়ার আর বিঊটিনিস মইনের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলেন কেন?
টিউসডে গ্রুপ (সমমনা ১৬ বিদেশি কূটনীতিকের জোট) প্রধান দুই দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান নিশ্চিত করতে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত প্রয়াস চালিয়েছিল। এক-এগারো অনেককে বিস্মিত করেছিল। বিস্মিত হয়েছিলাম আমরাও" প্রথম আলো। এখন যদি বিস্মিতই হন তাহলে ২০০৬ সালে হাসিনা দলের নমিনেশন জমা দেবার পরেও শেষ নির্বাচনী সভায় হঠাত করে নির্বাচনের আগে নতুন ভোটার তালিকা তৈরী করতে হবে বলে দাবী তুললেন কেন?
আপনাদের চয়েজ ইঊনুসকে প্রধান উপদেষ্টা করতে চেয়ে শেষে কার আপত্তিতে ফকুরুদ্দিনকে বেছে নিতে রাজি হলেন?
রেট এর সাথে সমস্ত রফা করার পর শেষে হাসিনার সাথে ডিল করলেন কেন?
বলছেন, "দেশের রাজনৈতিক সংকট ও অনিশ্চয়তার এক পর্যায়ে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি দেশে জরুরি অবস্থা জারি হয় যাতে জড়িত ছিল সেনাবাহিনী"।
এর মানে একা মইনের মাথায় এত বুদ্ধি যে এখন সব দোষ "সেনাবাহিনীর জড়িত" থাকার। মইনের মাথায় এত বুদ্ধি থাকলে তো সবার আগে আপনাদেরকে দেশ থেকে বের করে দিত।
ইউএনডিপির প্রধান ফ্রান্সের নাগরিক রেনেটা ডেসালেন, কেন কফি আনানের বরাতে আমাদের জানলো যে বাংলাদেশী সেনাবাহিনীর শান্তিমিশন অংশগ্রহণে সমস্যা হতে পারে। মইন তাঁর বইয়ে একই কথা স্বীকার করেছে কেবল রেফারেন্সটা দিয়েছে নিইয়র্ক থেকে ইউ এন এর এক ব্যক্তির, যার নাম উল্লেখ করে নাই।
ঐ সপ্তাহে দুই বিগ্রেড সৈন্য ঢাকায় উপস্থিত ছিল বিভিন্ন মিশনে নিয়োজিত সেনাবাহিনীর নিয়মিত রোটেশনে যোগ দেবার জন্য। মিশনে সেনারা একবছরে জন্য যায়, বছর শেষে তাদের জায়গা নিতে নতুন সেনারা যায় - এটা সেই রোটেশন। আপনারা এই সময় ও সুবিধাটাকে কাজে লাগিয়েছেন। সেনাবাহিনী হাত মুচড়ে ধরতে রটিয়েছেন যে মিশন থেকে বাংলাদেশী সেনা প্রত্যাহার বা ভাগিয়ে দেয়া হতে পারে। আপনারা ভাল করেই জানেন এই খবরের প্রতিক্রিয়া অফিসার তো বটেই সাধারণ সৈনিকের উপর কী হবে। সৈনিকেরা সারা জীবন অপেক্ষা করে বসে থাকে টানাটানির জীবনে কবে দুটো আলগা পয়সা কয়েক লাখ টাকার তারা মুখ দেখবে। সেই আশায় স্বপ্নে যখন তারা ঢাকায় জড়ো হচ্ছে সেসময় মিশনে যাওয়া বন্ধ হয়ে যাচ্ছে এই গুজবের যে প্রতিক্রিয়া হবে, সারা জীবনের সব আশা ভঙ্গের ক্ষোভের সে আগুন থামাবার ক্ষমতা বাংলাদেশের কারো হাতে নাই। অফিসাররাও এক স্বার্থে একে সমর্থন করবেন আর তা না করলেও ঐ সৈনিক বিদ্রোহ ৭ই নভেম্বরের চেয়ে ভয়াবহ হবে তা বলাই বাহুল্য।
এসব জেনেশুনে আপনারা সেনাবাহিনী হাত মুচড়ে ধরতে মিশনে যাওয়া বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বলে খবর রটিয়েছেন। অথচ কে না জানে কোন দেশের আভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক গোলযোগের কারণে তাকে মিশন থেকে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হবে এমন কোন নিয়ম কোন আইন, কোন উদাহরণ নাই। এখনও এই ২০১০ সালেও নাই। সবচেয়ে বড় কথা একা জাতিসংঘের সেক্রেটারী জেনারেল কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। তিনি জাতিসংঘের পলিটিক্যাল সিদ্ধান্ত নেবার সর্বোচ্চ বডি নিরাপত্তা পরিষদ যেটা সিদ্ধান্ত নেয় এর পর সেটার বাস্তবায়নই তাঁর কাজের এক্তিয়ার। সিদ্ধান্ত তিনি নেন না। আর এধরণের সিদ্ধান্ত হবার আগে নিরাপত্তা পরিষদ বহু তর্কবির্তক হতে হয় এরপর তা নীতি পলিসি হয়ে জায়গা পায়। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলা অসম্ভব। আর ঐ সময় এটা একা বাংলাদেশের বিষয়কে কেন্দ্র করে নেয়া ছিল অসম্ভব। কারণ অন্তত মোশাররফের পাকিস্তান, মাওবাদী নেপালে সে সময় শুধু আভ্যন্তরীণ গোলযোগ না রীতিমত বন্ধুকযুদ্ধ চলছিল। সে তুলনায় বাংলাদেশের রাজনৈতিক গোলযোগ কিছুই না। এবং ঐ দুই দেশের সেবাবাহিনী বহাল তবিয়তে মিশন করে টাকা কামাচ্ছিল। মইনের তাঁর বইয়ে জাতিসংঘের নিইয়র্ক থেকে ফোনের যে উদ্ধৃতি দেয়া আছেন সেটাও ভিত্তিহীন। বরং অফিসিয়ালী মইন যদি নাম বলতে পারেন তবে জাতিসংঘের সে কর্মকর্তা যত বড়ই কেঊ হন এমনকি খোদ সেক্রেটারী জেনারেল হলেও তিনি তদন্তের মুখে পড়বেন ও চাকরি হারাবেন। মুল কথাটা আমাদের মনে রাখলেই চলে, জাতিসংঘ তার কোন সদস্য দেশকে হুমকি দিতে পারে না, আভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করতে পারে না। বরং যেনও তা না করে এটাই ওর ম্যান্ডেট।
জাতিসংঘের ওয়েব সাইটে সেক্রেটারী জেনারেলের বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে সেই মুল ষ্টেটমেন্ট এখনো আছে যাতে গতানুগতিক তাঁর উদ্বেগ প্রকাশ আছে কিন্তু মিশনে যাওয়া বন্ধ হয়ে যেতে পারে সে কথা দূরে থাকুক মিশন বিষয়েই কোন কথাই নাই। ফলাফলে আমরা দেখেছি সংকীর্ণ কুটিল স্বার্থে আপনারা কত নীচে নামতে পারেন, মিথ্যা বলতে পারেন। সেনাবাহিনী হাত মুচড়ে ধরে আপ্নারা নিজেদের স্বার্থে ওদেরকে জরুরী অবস্থা জারিতে জড়িত ও ব্যবহৃত হতে বাধ্য করেছেন।
সেসব মিথ্যাকে ঢাকতে এখন বাংলাদেশ ছেড়ে যাবার আগে আরো মিথ্যা বলে গেলে।
লেখার বিষয়বস্ত পেয়েছিলাম এই পোষ্টে থেকে, Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে অক্টোবর, ২০১০ রাত ১০:০৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




