somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কাঠুরে ও জলপরি(আধুনিক ভার্সন)

১৭ ই নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চার-পাঁচশ বছর আগের কথা। সেই সময় চারদিকে ছিল পরিদের আনাগোনা। মানে, তারা যেমন এটা-ওটা আনত, তেমনি আবার মানুষজনকে গুণতও। এখন যেমন আমাদেরকে তারা গোণায়
ধরে না, পরিদের পরিস্থিতি তখন ও-রকম ছিল না মোটেই।




তো, সেই সময় এক কাঠুরে গেল বনের মধ্যে কাঠ কাটতে। পাশেই ছিল একটা মাঝারি গোছের পুকুর। আর সেই পুকুরে কী ছিল বুঝতেই পারছ। না, জলের কথা বলছিনে। জলপরির কথাই বলছি। সেই পুকুরে নিয়ম-মাফিক এক জলপরিও ছিল।

তো, কাঠ কাটতে কাটতে যা হওয়ার তাই হলো। কাঠুরিয়ার হাত ফসকে কুড়োলটা গিয়ে পড়ল পুকুরের পানিতে। কাঠুরিয়া হতভম্ব হয়ে পুকুর-পাড়ে বসে রইল। যথারীতি জলপরিও জল থেকে উঠে এল। এসেই কিন্তু সে মেজাজ গরম করে বলল—কুড়োলটা ইট্টু আস্তে ফেলা যায় না? বাব্বা, মাথাটা আরেকটু হলেই একেবারে ফেটে গেছিল আর কী!

কাঠুরে বলল—তুমি খালি তোমার মাথার কথাই চিন্তা করবে, না কি আমার কুড়োলটারও একটা হিল্লে করবে?

জলপরি কিন্তু সেদিকে ভ্রুক্ষেপই করল না। মোটা কাচের হাই পাওয়ারের চশমাটা একটু নেড়েচেড়ে নিয়ে নিজের মনেই বলল—বাব্বা! জলে থেকে-থেকে তো সর্দি লেগে গেল দেখছি। হ্যা গো কাঠুরে, তোমার কাছে সর্দি-জ্বরের ওষুধ-টষুধ আছে নাকি?

কাঠুরে বলল—না বাপু। আমি কি ব্যাঙ নাকি যে সর্দি হবে, আর তার জন্য ওষুধ পকেটে করে নিয়ে ঘুরে বেড়াব! এখন ভালোয় ভালোয় আমার কুড়োলটা দাও।

জলপরি কাঠুরিয়ার গতিক সুবিধের না দেখে আর কথা বাড়াল না। কুড়োলটা কাঠুরের দিকে বাড়িয়ে ধরে বলল—এই নাও।

কাঠুরে অবাক হয়ে বলল—এ কী! তুমি আমার কুড়োলটাই আগে দিচ্ছ যে?

জলপরি বলল—মানে?


কাঠুরে বলল—মানে আবার কী? সোনার কুড়োলটাই না আগে দিয়ে জিজ্ঞেস করবে, সেই কুড়োল আমার কিনা। বরাবর তাই-ই তো হয়ে আসছে।


পরি জিভ কেটে বলল—ওই যা! ভুলে গেছিলাম! তারপর শূন্যে হাত নেড়ে একটা সোনালি রঙের কুড়োল এনে বলল—এই কুড়োল কি তোমার?

কাঠুরে কুড়োলটা হাতে নিয়ে ভালো করে নেড়েচেড়ে দেখে বলল—উঁহু। আমার না।

পরি তখন হাওয়া থেকে আরেকটা রুপোলি রঙের কুড়োল এনে বলল—এইটা তোমার?

কাঠুরে মাথা নেড়ে বলল—জানোই তো। আমার কুড়োল লোহার।

জলপরি তখন আগের লোহার কুড়োলটা কাঠুরের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল—যাও বাপু। তোমার কুড়োল নিয়ে তুমি কেটে পড়ো।


কাঠুরে এবার রেগে গিয়ে বলল—শুধু আমার কুড়োলটাই দিচ্ছ যে, তবে আর ওইসব সোনা-রুপোর কুড়োল দেখানোর দরকার কী ছিল?

পরি বলল—ওটা হলো নিয়মরক্ষা। আর তাছাড়া আমার স্টকে শুধু ওদুটো কুড়োলই বাকি আছে। ওদুটো আজকে দেওয়া যাবে না।

কাঠুরে তবু সেখান থেকে নড়ে না, বসে বসে ফুঁসতে লাগল। জলপরি বলল—আচ্ছা ঠিক আছে। তোমাকে আমি একটা বর দিচ্ছি। কী বর চাও বলো।

কাঠুরে ফোঁস ফোঁস করতে করতে বলল—বর নিয়ে আমি কী করব? বউ হলেও এক কথা ছিল। ব্যাটাছেলেকে বর দেবে মানে?

জলপরি ক্ষেপে গিয়ে বলল—ধুর ব্যাটা! এই বর ওই বর না। এ হলো ইচ্ছে পূরণ। তোর কী লাগবে বল। যা চাবি পাবি।

কাঠুরেও ভয়ানক ক্ষেপে গিয়ে বলল—চাবি পাবি আবার কী? চাবি নিয়ে আমি কী করব?

জলপরি বলল—আচ্ছা জ্বালা তো! এই, তুই ভাগ।

কাঠুরে বলল—তুই তোকারি করবে না মোটেই। ভালো হবে না কিন্তু!

পরি এবার একটু নরম হয়ে বলল—আহা! রাগ কোরো না, বাপু! তোমার কি কিছুই চাওয়ার নেই?

কাঠুরে বলল—চাওয়ার তো আছেই। আগের কুড়োল দুটো আমাকে দাও!

জলপরি ধাঁই করে সোনালি আর রুপোলি রঙের কুড়োলদুটো কাঠুরের দিকে ছুঁড়ে দিয়ে বলল—যা ভাগ! খালি এক কথা!

আরেকটু হলেই কুড়োলদুটোর ঘায়ে কাঠুরের মাথাটা যেত! সে কোনও মতে টাল সামলে কুড়োল তিনটে নিয়ে দে ছুট! তারপর গাছের গোড়ায় গিয়ে হি হি করে হাসতে লাগলো! জলপরিকে যা একখান ঠকানো সে ঠকিয়েছে—হি হি!

আসলে, সে কোনও কুড়োলই ফেলেনি পানিতে। শক্তপোক্ত ভারি একখানা ডাল সে ফেলেছিল পানিতে! জলপরির বয়স হয়েছে—বাতের ব্যাথায় নড়তে-চড়তে পারে না! তাই, কুড়োল না খুঁজেই সে যে ডালটাকে কুড়োল ভেবে নেবে, সেটা কাঠুরে আগেই জানত!

আপাতত, কাঠ-কাটা বাকি রেখে কুড়োলগুলো নিয়ে সে হাসতে হাসতে বাড়ির দিকে চলল।

জলপরি সেদিকে তাকিয়ে তার চশমাটা নাকের পরে ঠিকঠাক বসাতে-বসাতে বলল—ব্যাটা! আমার সাথে বাটপারি! দিয়েছি পিতলের কুড়োল গছিয়ে! সোনা আর পিতলের পার্থক্যও বোঝে না। বুদ্ধু কোথাকার!

—কাঠুরে ও জলপরি(আধুনিক ভার্সন)।
আহমদ মুসা।
১৭ নভেম্বর, ২০১৮।

সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:২৩
১৭টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দ্যা এডামেন্ট আনকম্প্রোমাইজিং লিডার : বেগম খালেদা জিয়া

লিখেছেন ডি এম শফিক তাসলিম, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৪

১৯৪৫ সালে জন্ম নেয়া এই ভদ্রমহিলা অন্য দশজন নারীর মতই সংসার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, বিয়ে করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের অন্যতম সুশাসক শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান কে! ১৯৭১সালে এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×