somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দুটি সত্য ঘটনা

০৬ ই মে, ২০২২ বিকাল ৩:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ঘটনা ১: ছগির মিয়া ( ছদ্ম নাম ) প্রথম জীবনে ছিলেন বলিষ্ঠ পরিশ্রমী দিন মজুর। দিনকাল মোটামোটি ভালই চলে যেত। শোনা যায় সে নাকি এক সের চালের ভাত খেতে পারতো, তখন কেজির মাপ ছিলনা সের হিসেবে ধান চাল ও অন্যান্য ফসলাদি মাপা হতো। ছগিরের মতো ভারী বোঝা এলাকায় আর কেউ টানতে পারতোনা বলে তার খুউব সুনাম ছিল।

পরে যখন একটু বয়স হয় তখন তার জমানো টাকায় আরম্ভ করলো সুদের ব্যবসা। বসে বসে টাকা কামাই করতে থাকে, কোনো পরিশ্রম নাই। বেশ ভালই টাকা পয়সা জমতে থাকলো। ছগিরের বসত বাড়িটি ছিল তুলনামূলক সরু ও লম্বা। একই সাইজের তার ভাই এর বাড়িটিও ছিল পাশাপাশি। তার ভাই সরকারি কর্মচারী একটু দূরেই নতুন বাড়ি করে। তখন ছগির ভাই এর পুরোনো বাড়িটি নগদ টাকায় কিনে নিয়ে দুই বাড়ি মিলিয়ে বেশ সুন্দর ও বড় করে বাড়িটি তৈরী করে।

এদিকে ছগিরের টাকা আসল ও সুদ মিলে খুব দ্রুতই বাড়তে থাকে, চারিদিকে বিভিন্ন লোকের কাছে অনেক টাকা ধার দেয়।
আমি তখন ষষ্ঠ কি সপ্তম শ্রেণীতে পড়ি। একদিন সকাল বেলা আমি বারান্দায় বসে পড়াশোনা করছিলাম। ছগির একটা খাতা নিয়ে আমার কাছে আসে।
খুব আস্তে আস্তে বলে,ভাইস্তা আমার শরীরটা দিনকে দিন কে দিন খারাপ হয়ে যাচ্ছে কখন মরে যাই ঠিক নাই।
তুমি এই খাতায় কার কাছে কত পাবো একটু ভালো করে লিখে দাও ।
আমি খুব মনোযোগ সহকারে লিখতে থাকি, অনেক লোকের কাছে অনেক টাকার হিসাব।
আমি এক ফাঁকে বলি,চাচাআপনাকে প্রতিদিন আমি শুধুই আটার পাতলা জাউ খেতে দেখি। আপনার অনেক টাকা পয়সা আছে একটু ভালো-মন্দ খান। আপনার তো শরীর খুব খারাপ হয়ে যাচ্ছে দুধ-ডিম্ ও ভালো ফলমূল খাওয়া দরকার আপনার।
সে বলে, বাবারে আমি কিছু খেতে পারিনা। হজম হয়না।
শোনে আমার চোখে পানি চলে আসে।

সে তার পরিবার পরিজনকেও খুব একটা টাকা পয়সা দিতো না। একা ঘরে থাকতো।
তার অনেক দিন পর ছগিরের অসুখ খুব খারাপ পর্যায়ে গেলে সে মারা যায়।
পাড়ার ও বাড়ির লোকেরা তার ঘর থেকে লাশ বের করার সময় কৌটার মধ্যে, বাঁশের নলের ভিতর, মাটির হাড়ির ভিতর, বিছানার নিচে আরো জানা অজানা বিভিন্ন জায়গায় মোটামোটি ভালই নগদ টাকার হদিস পায়।

অনেক দিন কেটে গেছে।
ছগির মিয়ার একমাত্র ছেলে আবুল মিয়া বাপের রেখে যাওয়া টাকা পয়সার মালিক।
বিয়ে করেছে গ্রামেই, ঘরে বাচ্চা-কাচ্চাও হয়েছে।
একদিন কাজ করে তিন দিন বসে থাকে।
বাপের জমানো টাকা পয়সা ক্রমেই শেষ হয়ে আসতে থাকে।
আবুল ও তার বউ মিলে বিভিন্ন লোক ও এনজিও থেকে মোটা সুদে ঋণ নিতে থাকে, নিতেই থাকে।
এক ঋণ নিয়ে আরেক ঋণ শোধ করে।
দিনে দিনে ঋণের বোঝা অনেক ভারী হয়। ঋণ ও সুদ পরিশোধের চাপ বাড়তে থাকে।
এক পর্যায়ে বড় এক পাওনাদারের কাছে ঋণ ও সুদ পরিশোধের বিনিময়ে বাড়ির অর্ধেকের বেশি অংশ বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয় আবুল।
এখনো অনেক ঋণ পরিশোধ বাকি রয়ে গেছে আবুলের।

ঘটনা ২: জুলেখা বানুর (ছদ্ম নাম) স্বামী সেনাবাহিনীতে ছোট পদে চাকরি করে, তবে স্বামীর পৈতৃক সূত্রে মোটামোটি ভালই জমা-জমি আছে। নিজে স্বামীর গ্রামের বাড়িতে সন্তান-সন্তানাদি নিয়ে থাকে আর স্বামী থাকেন কর্মস্থলে। স্বামী ছুটিতে বাড়ি এলে তার মায়ের নামে যা তা বলে কান ভারী করে।
শোনা যায় জুলেখা নাকি তার স্বামীকে জাদু-টোনা করে বশ করেছে, তাই স্বামী রমিজ ভূইয়াঁ বউ এর কথা শোনে মায়ের খবর তো নেয়ই না তার উপর অনেক জুলুম অত্যাচার করে।
বাস্তব কল্পনাকেও হার মানায়।
জুলেখা বৃদ্ধা শাশুড়িকে থাকতে দিয়েছে একটা ভাঙ্গা একচালায় যার প্রায় তিন দিকই খোলা।
প্রায়ই তাকে খেতে দেয় না।
ক্ষুদার জ্বালায় বৃদ্ধা ভাত ভাত হায় ভাত বলে চিৎকার করে আকাশ-বাতাস ভারী করে তোলে।
জুলেখা বলে বুড়ির মাথা খারাপ হৈছে তাই চিৎকার করে খালি। খাবার দিলে খায় না!
পাশের বাড়ির আনোয়ারা বেগমের খুব মায়া হয় বুড়ির জন্য।
গোপনে লুকিয়ে লুকিয়ে প্রতিদিন খাবার দিয়ে আসে বুড়িমার ঘরে, জুলেখা যদি দেখে ফেলে তবে আর আস্ত রাখবে না। নিশ্চিত ঝগড়া ঝাটি বাধিয়ে দেবে।
দিন যায় মাস যায় বছর যায়।
একদিন বুড়িও মরে গিয়ে দুনিয়ার জ্বালা-যন্ত্রনা থেকে বেঁচে যায়।

রমিজ ভূইয়াঁ চাকরি থেকে অবসর পেয়ে বাড়িঘর ঠিক করে বেশ ভালোভাবেই চলতে থাকে।
সেও একসময় দুনিয়া ছেড়ে চলে যায়।
তার বড় ছেলে হাকিম সেনাবাহিনীতে চাকরি পায়।
বিয়ে করে।
তারপর তুলনামূলক কম বয়সেই অবসর নিয়ে বউ-বাচ্চা নিয়ে শহরতলিতে বাড়ি কিনে বসবাস করতেছে। কিন্তু কোনোদিন মা জুলেখা বানুর কোনো খবর নেয় না, কিংবা টাকা পয়সা পাঠিয়ে মাকে সাহায্য করার নাম গন্ধও নাই।

জুলেখা বানুর ছোট ছেলে দয়াল, তার অন্তরে দয়ার কোনো চিহ্নই নাই।
সারাজীবন বখাটেপনা করেই পার করেছে।
এখন স্বাস্থ হারিয়ে কোনোমতে চলাফেরা করে, অন্যের দান খয়রাতের আশায় চেয়ে থাকাই তার মূল কাজ। কোনোদিন মাকে সাহায্য করেনি, এখন সামর্থ আর ইচ্ছা কোনোটাই নাই।

কালের সাক্ষী হয়ে জুলেখা আজও বেঁচে আছে। স্বামীর পেনশনের টাকা তার ঔষধ কিনতেই শেষ হয়, অন্যের দান খয়রাত ছাড়া তারও দিন আর চলে না। নিঃসঙ্গতা আর অভাব তার নিত্য সঙ্গী। বৃষ্টি নামলেই ভাঙা ঘরের চালের ফুটো দিয়ে পানি পরে, তখন ঘর আর ঘর থাকেনা।


(প্রকৃত ঘটনা আরো করুন আর দীর্ঘ। আমি শুধু কাট-ছাট করে সংক্ষেপে বর্ণনা করলাম।)
সম্মানিত ব্লগার এবং পাঠক, ঘটনা দুটির ব্যাপারে আপনাদের নিজস্ব ব্যাখ্যা ও মতামত কি রকম?
জানার প্রবল ইচ্ছা নিয়ে অপেক্ষায় রইলাম।


সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মে, ২০২২ বিকাল ৩:২১
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×