somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার আলসেমির নিদ্রাভঙ্গ ও ওদের প্রতি মানবতার হাত আহবান (সমানুপাতিক-রুয়েট)

২৪ শে নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি ব্যক্তিগত জীবনে অনেক শর্টকাট থিওরি মেনে চলি । শার্টের উপরের দুইটা বোতাম খুলে গেঞ্জির মত করে আস্তে করে কাপড় শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করি । এতে বোতাম খোলা ও পরবর্তীতে আবার গায়ে দেওয়ার সময় তা লাগানোর ঝামেলা ও সময়ক্ষেপণ দুই থেকেই মুক্তি পাওয়া যায় ।

টি-শার্ট পড়া কিংবা খুলবার ক্ষেত্রে তা উল্টো থাকলেও সেভাবেই পড়ি । কেননা পরেরবার খোলার সময় আবার সোজা হয়েই যাবে । শুধু শুধু মাঝখানে কেন বেকার কষ্ট করা ।

প্যান্ট কিনবার সময় প্রয়োজনের চেয়ে এক সাইজ বিস্তৃত প্যান্ট কিনি । আর সাথে পড়ি বেল্ট । এতে বেল্ট খুললেই সহজে প্যান্টের বোতাম খোলার ঝামেলা ছাড়াই ব্যবহার করা যায় ।

সপ্তাহে সর্বোচ্চ দুই দিন গোসল করি । যেদিন করি সেদিন বেশ সময় নিয়ে করি । তবে অবশ্যই তা বাকী পাঁচদিনের তুলনায় অতি নগণ্য । আমার যুক্তি, গোসল করার মূল উদ্দেশ্য পরিষ্কার হওয়া বা পরিষ্কার থাকা । অর্থাৎ যারা অপরিষ্কার থাকে তাদের জন্যই নিয়মিত গোসলের প্রয়োজন । কিন্তু আমি তো খুবই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন । তাহলে আমার কেন নিয়মিত গোসল করতে হবে । সেই সাথে আমি যদি একদিন গোসল না করি তবে পানির অপচয় কমে যাচ্ছে । আবার এই পানি তুলতে যে বিদ্যুৎ খরচ, সেই বিদ্যুৎ উৎপাদনে যে কয়লা বা তেল খরচ তা কমে যাচ্ছে । ফলে প্রাকৃতিক সম্পদের সাশ্রয় হচ্ছে । অন্য দিকে কিছুটা বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের ফলে বিদ্যুতের উৎপাদন যেটুকু কম করতে হচ্ছে তাতে পরিবেশ উষ্ণায়ন থেকে রক্ষা পাচ্ছে । বলতে পারেন ছোট-খাটো মাপের এক বিরল দেশপ্রেমিক । :P

হয়ত আমার একার এই আত্মত্যাগে দেশের সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে তেমন কোন প্রভাব ফেলবে না । কিন্তু সবাই মিলে উদ্যোগী হলে সফলতাও কম হবে না ।

সেদিন মাঝরাতে হঠাৎ্‌ ঘুম ভেঙ্গে গেল । বুঝলাম শীত এসেই গেছে । শরীর উষ্ণতার খোঁজে আর এ প্রহর ঘুমোতে দেবে না । রুমমেট বন্ধু আগেই নিজের জন্য যথার্থ ব্যবস্থা করেছে । কিন্তু আলসেমির দাসত্বে আমি এখনও সেই উদ্যোগ নেই নি ।

বন্ধুকে বললাম তোর কাঁথাটা দে তো । ও তুলে রাখা কাঁথা সেই রাতে উঠে আমায় দিলো । আমি বেশ জড়িয়ে নিয়ে শুয়ে পড়লাম । কিন্তু হায় শীত মাত্র দুটো কাঁথার আলিঙ্গনে পোষ মানতে চায় না ।

যদি বুদ্ধিমান হন তাহলে উপরের লেখাটুকু পড়ে নিশ্চয় বুঝেছেন আমি মানুষটা কতখানি কুঁড়ে । দিন এমনও যায় ২০ কদম এগিয়ে গিয়ে পানি এনে খাওয়ার ভয়ে সারাদিন পানি ছাড়াই কাটিয়ে দিই অবলীলায় । বিছানায় থাকতে অপেক্ষায় থাকি কখন রুমমেট উঠবে আর আমি তাকে বলব অমুক জিনিসটা দে তো ।

সেই আমি ঐ রাতে বিছানা ছেড়ে উঠে লেপের কাভার ভরে তারপর ঘুমানোর সুযোগ পেলাম । শীত রাজশাহীতে বেড়েই চলেছে । আমার মত জাত-আলসেকেও দমিয়ে রাখতে পারছে না ।

আমি মাঝে মাঝে রাতের শহর দেখতে বের হই । ১টার পর থেকে সাড়ে তিনটা-চারটা পর্যন্ত চলে পায়ে হেঁটে পথ চলা । রাতের শহরে সৌন্দর্যের পাশাপাশি থাকে কলঙ্ক । এমন সৌন্দর্য যেমন দুর্লভ তেমনি এসব কলঙ্ক অত্যন্ত সুলভ ।

রাস্তার পাশে মানবতা কুকুরের সাথে সমশয্যাগত হয় । মাথার তলে ইট কিংবা কাষ্ঠ বালিশের মর্যাদা পায় । আর শরীরজুড়ে শতছিন্ন বস্ত্রসামগ্রী কম্বলের সাজে সজ্জিত হয় । আপনি কি ভাবতে পারেন সেই বস্ত্রটুকু হতে পারে একখানি চট বা বস্তা ???

হয়ত আপনার অবশ্যম্ভাবী কল্পনাবিলাসী মন সে দৃশ্য নির্দ্বিধায় ভাবতে পারবে, কিন্তু শীতাস্ত্রের ছুরিকাঘাতে যে শরীর নিত্য ছিন্নভিন্ন হয়, রক্তাক্ত শরীর যখন গোটা নরকের আগুণের সাথে সহবাসেও ন্যুনতম দিধাগ্রস্ততায় ভোগে না, আপনি-আমি হাজারবার জন্ম নিলেও তার কিয়দাংশও কোনদিন অনুভবে আনতে পারব না । বৈষম্যপুষ্ট এই সময়ে মানবতা এখন এমন একটা অবয়বে এসে দাঁড়িয়েছে যা দেখলে মৃত মানুষটিও লজ্জায়, ঘৃনায় আবার আত্মহত্যা করবে ।

আমাদের উঁচুতে তুলবার সিঁড়ি যারা গড়ে দিচ্ছে তাদের জীবনের এতটুকু অধিকার বিধান কি আমরা দশ মিলে করতে পারি না ??

আপনার হাজার টাকার কম্বল যেখানে সাধারণ বিলাসিতা সেখানে সামান্য কাপড় ওদের মৌলিক চাহিদা । আপনার একটি পুরাতন কাপড়ই হতে পারে ওদের শীত মোকাবেলার যথার্থ অস্ত্র । আপনার সাধ্যের আওতায় যে অর্থ জোটে তাতেই হতে পারে শীতের বিরুদ্ধে ওদের বুলেট প্রুফ জ্যাকেট ।

আমরা কি পারি না সেই নিশ্চয়তা বিধান করতে ??

আসুন, সংঘবদ্ধভাবে শীতার্তদের পাশে দাঁড়াই । যাদের কাঁধে চড়ে চলছে আমাদের জীবন গাড়ি, তাদের অবহেলা করলে যে বন্ধুর এ পথ আরও দুর্গম হয়ে পড়বে ।।

ইভেন্ট লিঙ্কঃ Click This Link

পোষ্ট লিঙ্কঃ Click This Link
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×