আমি ব্যক্তিগত জীবনে অনেক শর্টকাট থিওরি মেনে চলি । শার্টের উপরের দুইটা বোতাম খুলে গেঞ্জির মত করে আস্তে করে কাপড় শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করি । এতে বোতাম খোলা ও পরবর্তীতে আবার গায়ে দেওয়ার সময় তা লাগানোর ঝামেলা ও সময়ক্ষেপণ দুই থেকেই মুক্তি পাওয়া যায় ।
টি-শার্ট পড়া কিংবা খুলবার ক্ষেত্রে তা উল্টো থাকলেও সেভাবেই পড়ি । কেননা পরেরবার খোলার সময় আবার সোজা হয়েই যাবে । শুধু শুধু মাঝখানে কেন বেকার কষ্ট করা ।
প্যান্ট কিনবার সময় প্রয়োজনের চেয়ে এক সাইজ বিস্তৃত প্যান্ট কিনি । আর সাথে পড়ি বেল্ট । এতে বেল্ট খুললেই সহজে প্যান্টের বোতাম খোলার ঝামেলা ছাড়াই ব্যবহার করা যায় ।
সপ্তাহে সর্বোচ্চ দুই দিন গোসল করি । যেদিন করি সেদিন বেশ সময় নিয়ে করি । তবে অবশ্যই তা বাকী পাঁচদিনের তুলনায় অতি নগণ্য । আমার যুক্তি, গোসল করার মূল উদ্দেশ্য পরিষ্কার হওয়া বা পরিষ্কার থাকা । অর্থাৎ যারা অপরিষ্কার থাকে তাদের জন্যই নিয়মিত গোসলের প্রয়োজন । কিন্তু আমি তো খুবই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন । তাহলে আমার কেন নিয়মিত গোসল করতে হবে । সেই সাথে আমি যদি একদিন গোসল না করি তবে পানির অপচয় কমে যাচ্ছে । আবার এই পানি তুলতে যে বিদ্যুৎ খরচ, সেই বিদ্যুৎ উৎপাদনে যে কয়লা বা তেল খরচ তা কমে যাচ্ছে । ফলে প্রাকৃতিক সম্পদের সাশ্রয় হচ্ছে । অন্য দিকে কিছুটা বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের ফলে বিদ্যুতের উৎপাদন যেটুকু কম করতে হচ্ছে তাতে পরিবেশ উষ্ণায়ন থেকে রক্ষা পাচ্ছে । বলতে পারেন ছোট-খাটো মাপের এক বিরল দেশপ্রেমিক ।
হয়ত আমার একার এই আত্মত্যাগে দেশের সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে তেমন কোন প্রভাব ফেলবে না । কিন্তু সবাই মিলে উদ্যোগী হলে সফলতাও কম হবে না ।
সেদিন মাঝরাতে হঠাৎ্ ঘুম ভেঙ্গে গেল । বুঝলাম শীত এসেই গেছে । শরীর উষ্ণতার খোঁজে আর এ প্রহর ঘুমোতে দেবে না । রুমমেট বন্ধু আগেই নিজের জন্য যথার্থ ব্যবস্থা করেছে । কিন্তু আলসেমির দাসত্বে আমি এখনও সেই উদ্যোগ নেই নি ।
বন্ধুকে বললাম তোর কাঁথাটা দে তো । ও তুলে রাখা কাঁথা সেই রাতে উঠে আমায় দিলো । আমি বেশ জড়িয়ে নিয়ে শুয়ে পড়লাম । কিন্তু হায় শীত মাত্র দুটো কাঁথার আলিঙ্গনে পোষ মানতে চায় না ।
যদি বুদ্ধিমান হন তাহলে উপরের লেখাটুকু পড়ে নিশ্চয় বুঝেছেন আমি মানুষটা কতখানি কুঁড়ে । দিন এমনও যায় ২০ কদম এগিয়ে গিয়ে পানি এনে খাওয়ার ভয়ে সারাদিন পানি ছাড়াই কাটিয়ে দিই অবলীলায় । বিছানায় থাকতে অপেক্ষায় থাকি কখন রুমমেট উঠবে আর আমি তাকে বলব অমুক জিনিসটা দে তো ।
সেই আমি ঐ রাতে বিছানা ছেড়ে উঠে লেপের কাভার ভরে তারপর ঘুমানোর সুযোগ পেলাম । শীত রাজশাহীতে বেড়েই চলেছে । আমার মত জাত-আলসেকেও দমিয়ে রাখতে পারছে না ।
আমি মাঝে মাঝে রাতের শহর দেখতে বের হই । ১টার পর থেকে সাড়ে তিনটা-চারটা পর্যন্ত চলে পায়ে হেঁটে পথ চলা । রাতের শহরে সৌন্দর্যের পাশাপাশি থাকে কলঙ্ক । এমন সৌন্দর্য যেমন দুর্লভ তেমনি এসব কলঙ্ক অত্যন্ত সুলভ ।
রাস্তার পাশে মানবতা কুকুরের সাথে সমশয্যাগত হয় । মাথার তলে ইট কিংবা কাষ্ঠ বালিশের মর্যাদা পায় । আর শরীরজুড়ে শতছিন্ন বস্ত্রসামগ্রী কম্বলের সাজে সজ্জিত হয় । আপনি কি ভাবতে পারেন সেই বস্ত্রটুকু হতে পারে একখানি চট বা বস্তা ???
হয়ত আপনার অবশ্যম্ভাবী কল্পনাবিলাসী মন সে দৃশ্য নির্দ্বিধায় ভাবতে পারবে, কিন্তু শীতাস্ত্রের ছুরিকাঘাতে যে শরীর নিত্য ছিন্নভিন্ন হয়, রক্তাক্ত শরীর যখন গোটা নরকের আগুণের সাথে সহবাসেও ন্যুনতম দিধাগ্রস্ততায় ভোগে না, আপনি-আমি হাজারবার জন্ম নিলেও তার কিয়দাংশও কোনদিন অনুভবে আনতে পারব না । বৈষম্যপুষ্ট এই সময়ে মানবতা এখন এমন একটা অবয়বে এসে দাঁড়িয়েছে যা দেখলে মৃত মানুষটিও লজ্জায়, ঘৃনায় আবার আত্মহত্যা করবে ।
আমাদের উঁচুতে তুলবার সিঁড়ি যারা গড়ে দিচ্ছে তাদের জীবনের এতটুকু অধিকার বিধান কি আমরা দশ মিলে করতে পারি না ??
আপনার হাজার টাকার কম্বল যেখানে সাধারণ বিলাসিতা সেখানে সামান্য কাপড় ওদের মৌলিক চাহিদা । আপনার একটি পুরাতন কাপড়ই হতে পারে ওদের শীত মোকাবেলার যথার্থ অস্ত্র । আপনার সাধ্যের আওতায় যে অর্থ জোটে তাতেই হতে পারে শীতের বিরুদ্ধে ওদের বুলেট প্রুফ জ্যাকেট ।
আমরা কি পারি না সেই নিশ্চয়তা বিধান করতে ??
আসুন, সংঘবদ্ধভাবে শীতার্তদের পাশে দাঁড়াই । যাদের কাঁধে চড়ে চলছে আমাদের জীবন গাড়ি, তাদের অবহেলা করলে যে বন্ধুর এ পথ আরও দুর্গম হয়ে পড়বে ।।
ইভেন্ট লিঙ্কঃ Click This Link
পোষ্ট লিঙ্কঃ Click This Link