somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রাঙামাটিতে পাহাড় ধসে ক্ষতিগ্রস্থদের ত্রাণ সহায়তা প্রদান নিয়ে প্রশাসনের হাস্যকর সিদ্ধান্ত

২০ শে জুন, ২০১৭ দুপুর ১২:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রাঙামাটিতে পাহাড় ধসে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা দিতে হবে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে” এমন সংবাদে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সকল স্তরের মানুষরাই। এটা কেমন কথা! মানবিক বোধসম্পন্ন মানুষগুলো নিজ বিবেকের তাড়নায় একক বা দলগতভাবে বাড়ি বাড়ি খুঁজে মেগে, হাত পেতে মানুষের দ্বারে দ্বারে ত্রাণ সামগ্রী সংগ্রহ করবেন, তারপর সেটি তুলে দিতে হবে জেলা প্রশাসনের হাতে! পুরো বিষয়টাই একটি হাস্যকর কাহিনীতে রূপ নিয়েছে আজ কয়েকদিন ধরেই।

রাঙামাটিতে পাহাড় ধসে গৃহহীনদের পাশাপাশি ফের ধসের আশঙ্কায় বেশ কয়েকটি আশ্রয় কেন্দ্রে আড়াই হাজারের বেশি মানুষ ঠাঁই নিয়েছেন। এসব মানুষকে ব্যক্তিগত এবং সাংগঠনিকভাবেও ত্রাণ সহায়তা নিয়ে এগিয়ে আসছেন অনেকেই। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখন পযর্ন্ত উল্লেখযোগ্য কোন সহায়তাই পাওয়া যায়নি। বরং তারা জানিয়েছেন সরকারী ত্রাণ এসে পৌঁছাতে আরো কয়েকদিন দেরী হবে। যার কারণে বেসরকারীভাবে ত্রাণ সংগ্রহ ও বিতরণের পরিমাণ বাড়ছে আরো বেশী।

বেসরকারি মাধ্যম থেকে আসা সহায়তা বা ত্রাণ বিচ্ছিন্নভাবে প্রদান করতে নানা সমস্যা সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কায় জেলা প্রশাসন তা সমন্বয়ের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এখন থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা বা ত্রাণ দিতে চাইলে তা জেলা প্রশাসনের মাধ্যমেই দিতে হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছে। জেলা প্রশাসক মানজারুল মান্নান বলেন, “রাঙামাটি বা এর বাইরের জেলা থেকে ব্যক্তিগত অথবা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে মানবিক সহায়তা করতে চাইলে তা জেলা প্রশাসনের মাধ্যমেই করতে হবে। এখানে আলাদাভাবে দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।” এজন্য ব্যাংক হিসাব খোলার পাশাপাশি চার সদস্যের একটি কমিটি করে দিয়েছে রাঙামাটি জেলা প্রশাসন। অর্থ সাহায্য নেওয়ার জন্য ইসলামী ব্যাংক রাঙামাটি শাখায় একটি ব্যাংক হিসাব খোলার তথ্য জানিয়ে তিনি বলেন, “বেসরকারি উদ্যোগে দেওয়া সহায়তা বিতরণের বিষয়টি সমন্বয় করবে চার সদস্যের কমিটি। কেউ নগদ অর্থ সহায়তা দিতে চাইলে ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে তা জমা দিতে হবে। এর বাইরে কেউ ত্রাণসামগ্রী বিশেষ করে খাদ্যদ্রব্য ও কাপড় দিতে চাইলে তা প্রশাসনের কমিটির কাছে জমা দিতে হবে।”

ত্রাণ বিতরণে এই বাধ্যবাধকতার কারণ হিসেবে জেলা প্রশাসন একটিমাত্র কারণ দেখাতে সক্ষম হয়েছেন। তাদের মতে, “কোনো আশ্রয়কেন্দ্রে হয়ত দুইশজন আছেন, কিন্তু কেউ হয়ত সেখানে ৫০ জনের সমপরিমাণ সহায়তা নিয়ে গেলেন। তখন ত্রাণ বিতরণের সময় সেখানে বিশৃঙ্খলা দেখা দেওয়ার আশঙ্কা থাকে। সেজন্য আগ্রহীদের জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণের অনুরোধ জানাচ্ছি আমরা।” এই কারণটি একেবারেই শিশুসুলভ বক্তব্যেরই বহিঃপ্রকাশ মনে করি। কারণ ইতিপূর্বে সংঘঠিত সাজেকের খাদ্য সংকট, লংগদু'র বিপর্যয় এবং এখন পর্যন্ত রাঙামাটির ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে ব্যক্তিগত ও সাংগঠনিকভাবে যেটুকুই ত্রাণ সহায়তা প্রদান করা হয়েছে তার কোথাও কোন ধরণের বিশৃঙ্খলা বা অনিয়মের কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি, কেউ করেওনি। এমতাবস্থায় জেলা প্রশাসনের এহেন সিদ্ধান্তে অবাক না হয়ে উপায় নেই।

যেখানে জেলা প্রশাসনের উচিত ছিল পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটবার পর পরই উদ্ধার কাজের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্থদের ত্রাণ সহায়তা প্রদান করা, সেক্ষেত্রে তারা পুরোপুরিই ব্যর্থ হয়েছেন। এখন পর্যন্ত তারা সরকারী ত্রাণের বিন্দুমাত্রও ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে বিতরণ করতে পারেননি, উপরন্তু যারা বাইরে থেকে নানা মাধ্যম হতে ত্রাণ সামগ্রী সংগ্রহ করে তা বিতরণে এগিয়ে আসছেন তাদের বাঁধাগ্রস্থ করছেন! মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে এটি মোটেই শোভনীয় ঠেকছে না। অনতিবিলম্বে তাদের এই উদ্ভট ও হাস্যকর সিদ্ধান্ত হতে সরে আসা সমীচিন মনে করছি।

এমনিতেই প্রশাসনের নানা কার্যক্রমে এটা প্রতীয়মান হতে চলেছে যে দেশের বিদ্যমান রীতিনীতি পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষেত্রে যেন অনেকটাই অচল! সেখানে চলে সেখানকার প্রশাসনের মনগড়া আইন-কানুন। এমতাবস্থায় ত্রাণ বিতরণ নিয়ে জেলা প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্ত সেই ধারণাকে আরো পাকাপোক্ত করতে সক্ষম হবে যা জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক উভয় ক্ষেত্রেই বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করবে একসময়। তাই বেসরকারীভাবে ত্রাণ সংগ্রহ ও বিতরণ যেভাবে চলছিল সেভাবেই চলতে দেয়া উচিত। পাশাপাশি অতিদ্রুত যেন সরকারী ত্রাণ সহায়তা ক্ষতিগ্রস্থদের নিকট এসে পৌঁছাতে পারে তার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দিকে জেলা প্রশাসনের মনোযোগী হওয়া অতি জরুরী এবং অগ্রাধিকার ভিত্তিতে জেলা প্রশাসন সেই কাজটিই করুক- এমনটাই সকলের প্রত্যাশা।

সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুন, ২০১৭ দুপুর ১২:৩০
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদিকে গুলি করলো কে?

লিখেছেন নতুন নকিব, ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:২৬

হাদিকে গুলি করলো কে?

ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা ৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী রাজপথের অকুতোভয় লড়াকু সৈনিক ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলিবিদ্ধ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জীবনের চেয়ে তরকারিতে আলুর সংখ্যা গণনা বেশি জরুরি !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:১৭


বিজিবির সাবেক মহাপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দেশবাসী একটা নতুন শব্দ শিখেছে: রুট ভেজিটেবল ডিপ্লোম্যাসি। জুলাই আন্দোলনের পর যখন সবাই ভাবছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইতিহাসের সেরা ম‍্যাটিকুলাস ডিজাইনের নির্বাচনের কর্মযজ্ঞ চলছে। দলে দলে সব সন্ত্রাসীরা যোগদান করুন‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৪:৪৪



বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ব নিকৃষ্ট দখলদার দেশ পরিচালনা করছে । ২০২৪-এর পর যারা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী দিয়ে দেশ পরিচালনা করছে । তাদের প্রত‍্যেকের বিচার হবে এই বাংলার মাটিতে। আর শুধুমাত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাচেষ্টা: কার রাজনৈতিক ফায়দা সবচেয়ে বেশি?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১৮


হাদির হত্যাচেষ্টা আমাদের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে একটি অশনি সংকেত। জুলাই ২০২৪ আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের দ্বিধাবিভক্ত সমাজে যখন নানামুখী চক্রান্ত এবং রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অন্তর্কলহে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আয়-উন্নতির গুরুত্বপূর্ন প্রশ্নগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×