somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অসহনীয় শব্দদূষণ: ডেভেলপারদের অত্যাচার হতে রক্ষা করবে কে?

০২ রা জুলাই, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

লিখবো লিখবো করছিলাম অনেকদিন থেকেই, সময় হয়েই উঠছিলনা যেন আর। শেষ হাত দিয়েই ফেললাম। লেখা উচিত এদের অত্যাচার নিয়ে। অসহনীয় এই যন্ত্রণা থেকে এবার মুক্তি দরকার, কিন্তু মুক্তিটা দেবেন কে?

সেই ২০০৮ থেকে আজ অবধি বলতে গেলে একটা রাতের জন্যও শান্তির ঘুম কি জিনিষ সেটা বুঝতে পারিনি। ভুলেই গেছি যেন শেষ কবে শান্তিতে একটা রাত ঘুমিয়ে কাটিয়েছিলাম কবে! কি দিন কি রাত, চলছে তো চলছেই ঠুসঠাস, দুম ধাম শব্দ। কখনো ইট ভাঙার মেশিন, কখনো পাথর-বালু-সিমেন্ট মিশ্রণের যন্ত্রের শব্দ, সাথে নির্মাণ শ্রমিকের চিৎকারতো আছেই। রাতের বেলা আসছে নির্মাণ সামগ্রী বোঝাইকরা ট্রাকগুলো। কেউ শুয়েছে, চোখ দুটো বন্ধ করবে- আর তখনই শুরু এদের অত্যাচার। এভাবেতো চলা যায়না। অথছ দেখবার যেন কেউই নেই। অসহায় আশে-পাশের সকল মানুষ।

রাজধানী ঢাকাসহ দেশের মেট্রোপলিটন শহরগুলোতে আজ ডেভেলপারদের এই মাতারিক্তভাবে যেন বেড়েই চলেছে। জমির মালিকেরাও তাদের পার্থিব লাভের সুবিধার্থে ডেভেলপারের কাছে জমি বুঝিয়ে দিয়েই খালাস কয়েক বছরের জন্য। বিনিময়ে তার প্রতিবেশীর কাঁধে চড়ে বসেছে যন্ত্রণার পাহাড়। শান্তিতে ঘুমানো তো দূরের কথা, আজ বারান্দায় কিংবা ছাদে কাপড়-চোপড় শুকাতে দেয়াটাও দায় হয়ে গেছে। পাশের বাড়ীর নির্মাণ কাজের সিমেন্ট মাখানো মশলা এসে বারোটা বাজাচ্ছে প্রতিনিয়ত ধোয়া কাপড়গুলোর। অধিকাংশ ডেভেলপার তার কাজের সময় কোন চট ব্যবহার করেনা। ফলে কাজের সময় ছিটকে পড়া মশলা কিংবা বাতাসের তোড়ে শুকনো বালু সব এসে পড়ছে আশ-পাশের ঘর-বাড়ীতে। চব্বিশ ঘন্টা ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করে রাখাটা কি সম্ভব!

শব্দদূষণ বলতে মানুষের বা কোনো প্রাণীর শ্রুতিসীমা অতিক্রমকারী কোনো শব্দ সৃষ্টির কারণে শ্রবণশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনাকে বোঝায়। যানজট, কলকারখানা থেকে দূষণ সৃষ্টিকারী এরকম তীব্র শব্দের উৎপত্তি হয়। মানুষ সাধারণত ২০-২০,০০০ ডেসিবেলের কম বা বেশি শব্দ শুনতে পায় না। তাই মানুষের জন্য শব্দদূষণ প্রকৃতপক্ষে এই সীমার মধ্যেই তীব্রতর শব্দ দ্বারাই হয়ে থাকে। বাহ্যিকভাবে শব্দদূষণ তেমন কোন ক্ষতিকর মনে না হলেও এটি মানুষের জন্য ভয়ানক ক্ষতিকর। শব্দদূষণ এক নীরব ঘাতক। এক জরিপে দেখা গেছে, ঢাকা শহরের শতকরা ১০০% লোক শব্দদূষণের শিকার।

শব্দদূষণের কারণে মানুষের স্বাস্থ্য এবং আচার-আচরণ এমনকি উভয় ক্ষেত্রেই সমস্যার সৃষ্টি করে থাকে। অপ্রয়োজনীয় ও অতিরিক্ত শব্দের কারণে ব্যক্তির শারীরিক ও মানসিক স্বাভাবিক কার্যকলাপ ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। শব্দদূষণের কারণে দুশ্চিন্তা, উগ্রতা, উচ্চ রক্তচাপ, টিন্নিটাস, শ্রবণশক্তি হ্রাস, ঘুমের ব্যাঘাতসহ অন্যান্য ক্ষতিকর ও বিরূপ প্রতিক্রিয়া ঘটতে পারে। এছাড়াও, অন্যান্য শারীরিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে ভুলোমন, মানসিক অবসাদ ইত্যাদি হতে পারে। ডেভেলপারদের কারণে যানবাহন আর কল-কারখানার চাইতে শব্দদূষণের মাত্রা এখন আবাসিক এলাকাগুলোতেই সবচেয়ে বেশী।

আপাত দৃষ্টিতে ডেভেলপারদের কারণে সৃষ্ট এই শব্দদূষণ রোধ এবং এর যন্ত্রণার হাত থেকে নাগরিকদের রক্ষা করাটা কঠিন মনে হলেও বাস্তবে এত কঠিন নয়। এর জন্য দরকার সুষ্ঠু পরিকল্পনা, আন্তরিকতা ও এর বাস্তবায়ন। মনে রাখা দরকার, এ দেশের শিক্ষাঙ্গনে নকল মহামারি রূপ ধারণ করার পর নকল তুলে দেয়া সম্ভব হয়েছে। এ দেশে পলিথিন ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করার পর পলিথিন ব্যবহার অনেকাংশেই বন্ধ করা সম্ভব হয়েছে। এ দেশ থেকে টু-ষ্ট্রোক থ্রি হুইলার তুলে দিয়ে পরিবেশকে বিপর্যয়ের হাত থেকে বাঁচানো সম্ভব হয়েছে। সুতরাং এ দেশে ডেভেলপারদের কারণে সৃষ্ট শব্দদূষণ রোধ সম্ভব হবে না- এমন কথা বলা বা শব্দদূষণ রোধ করতে না পারা অযোগ্যতা বা দায়িত্বহীনতা ছাড়া আর কিছু নয়।

শব্দদূষণ রোধের জন্য আমাদের দেশে আইনের কমতি নেই। কমতি রয়েছে প্রয়োগের। ২০০২ সালে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সংস্থা (বেলা) শব্দদূষণ বন্ধে আদালতে একটি রিট পিটিশন দায়ের করে। শব্দদূষণ রোধের আইন যেন ‘‘কাজীর গরু কেতাবে আছে গোয়ালে নেই’’ এর বাস্তবরূপ। এ রকম একটি নীরব ঘাতকের ব্যাপারে এ দেশের শাসকগোষ্ঠীকে সব সময় নির্লিপ্ত মনে হয়েছে এবং হচ্ছে। শব্দদূষণ রোধে দেশে বর্তমানে যে আইনগুলো রয়েছে সেগুলোকেই সামান্য পরিবর্তন করে নিলে অনায়াসেই নির্মাণপ্রতিষ্ঠান সহ অন্যান্য ক্ষেত্রেও সেটি প্রয়োগ করাটা সম্ভব হয়। পাশাপাশি সমগ্র দেশে পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে শব্দদূষণকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া। তাতে করে শব্দ দূষণের মাত্রা অনেকখানি কমিয়ে আনা সম্ভব হতে পারে। কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরিয়ে দেয়া সম্ভব নাগরিকদের। কারণ যুগের প্রয়োজনেই নির্মাণকাজ তো আর বন্ধ করে দেয়া সম্ভব নয়।

সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জুলাই, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:১০
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদিকে গুলি করলো কে?

লিখেছেন নতুন নকিব, ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:২৬

হাদিকে গুলি করলো কে?

ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা ৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী রাজপথের অকুতোভয় লড়াকু সৈনিক ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলিবিদ্ধ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জীবনের চেয়ে তরকারিতে আলুর সংখ্যা গণনা বেশি জরুরি !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:১৭


বিজিবির সাবেক মহাপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দেশবাসী একটা নতুন শব্দ শিখেছে: রুট ভেজিটেবল ডিপ্লোম্যাসি। জুলাই আন্দোলনের পর যখন সবাই ভাবছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইতিহাসের সেরা ম‍্যাটিকুলাস ডিজাইনের নির্বাচনের কর্মযজ্ঞ চলছে। দলে দলে সব সন্ত্রাসীরা যোগদান করুন‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৪:৪৪



বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ব নিকৃষ্ট দখলদার দেশ পরিচালনা করছে । ২০২৪-এর পর যারা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী দিয়ে দেশ পরিচালনা করছে । তাদের প্রত‍্যেকের বিচার হবে এই বাংলার মাটিতে। আর শুধুমাত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাচেষ্টা: কার রাজনৈতিক ফায়দা সবচেয়ে বেশি?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১৮


হাদির হত্যাচেষ্টা আমাদের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে একটি অশনি সংকেত। জুলাই ২০২৪ আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের দ্বিধাবিভক্ত সমাজে যখন নানামুখী চক্রান্ত এবং রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অন্তর্কলহে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আয়-উন্নতির গুরুত্বপূর্ন প্রশ্নগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×