একটি মাত্র লেখা পড়েই কাউকে বিচার করা যায়না, তাতে ফলাফল ভুল হতে বাধ্য। এমনওতো হতে পারে লেখক বা লেখিকার ঐ একটি মাত্র লেখাই আপনার নজরে এসেছে!
সুপ্রীতি ধর দিদির সাথে আমার ব্যক্তিগত কোন পরিচয়ই নেই। থাকবার কোন সুযোগও নেই। কারণ উনার বন্ধু তালিকাতেই আমি যুক্ত হয়েছি মাত্র শুক্কুরে শুক্কুরে সপ্তাহ হলো এর মত। ব্যক্তিগত পরিচয় অনেকের সাথেই নেই, কিন্তু দীর্ঘদিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একই সাথে থাকবার কারণে এখন অনেকের সাথেই ব্যক্তিগতর চাইতেও আরো বেশী সম্পর্ক তৈরী হয়েছে বলেই মনে করি। তবে উনার সাথে তেমন কিছু এখনো হওয়ার মত সময়ই আসেনি। উনার লেখা আগে থেকেই পড়তাম মাঝে মধ্যে। মূলত উনার প্রতি আমার কৌতুহল জন্মানোর আসল কারণ উইমেন চ্যাপ্টার সাইটটি আর সাইটে প্রকাশিত লেখাগুলো। তাই উনারকে নিয়ে ভাল-খারাপ কোন মন্তব্য করবার মত ধৃষ্টতাই আমি দেখাতে পারিনা, সেটা সাজেও না।
আমি আমাকেই দিয়ে একটা বাস্তব উদাহরণ দিচ্ছি এখানে। বন্ধু তালিকার সবাই জানেন আমি আদিবাসী সম্পর্কিত লেখালেখি করি। এই কারণে প্রায়ই লিখতে হয় পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসকারী সেটেলার বাঙালীর বিপক্ষে, লিখতে হয় সেখানে নিয়োজিত সেনাবাহিনীর, বর্ডারগার্ড এমনকি সিভিল প্রশাসনেরও বিপক্ষে। অল্প কয়েকদিন আগে লংগদু’র ঘটনা নিয়ে আমার বন্ধু তালিকায় থাকা নোয়খালী জেলার মাইজদী শহর আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ জনাব ইফতেখার আলম সাহেবের সাথে আমার একটি ষ্ট্যাটাসে তুমুল বাক-বিতন্ডার সৃষ্টি হয় সেনাবাহিনী এবং পার্বত্যের ঘটনাবলী নিয়ে। ব্যক্তি ইফতেখার আলম সাহেবের পাহাড়ের প্রকৃত ঘটনাবলী নিয়ে তেমন কোন সঠিক অভিজ্ঞতা ছিলনা। তিনিও অন্যান্য অধিকাংশ সমতলীয় বাঙালীর মতই মনে করতেন, পাহাড়ী মানেই সন্ত্রাসী আর দেশদ্রোহী জনগোষ্ঠী যারা বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন করে, এই দেশে পৃথক একটি রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্নে বিভোর। স্বাভাবিকভাবেই উনার সাথে আমার দ্বন্ধ তৈরী হওয়াটা বিচিত্র ছিলনা। বাক-বিতন্ডার একপর্যায়ে আমি ক্ষিপ্ত হয়ে উনাকে আমার বন্ধু তালিকা থেকে বাদ দিয়ে দেই। তিনিও ক্ষিপ্ত হয়ে আমার বিরুদ্ধে উনার কিছু দলীয় ছেলেকে ক্ষিপ্ত করে তোলেন। যাদের মাঝে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন নেতৃবৃন্দও ছিলেন। তিনি আমাকে তাদের কাছে উগ্রবাদী বামপন্থী হিসেবে তুলে ধরেন এবং বলেন যে, আমিও সরাসরি পাহাড়ে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সাথে যুক্ত। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সেই নেতৃবৃন্দ যথারীতি তাদের নিজ নিজ আইডিতে আমার বিরুদ্ধে পোষ্ট লিখেন- আমি ছাত্রলীগ বিরোধী, এই দেশের গর্ব সেনাবাহিনীর বিরোধী, উগ্রবাদী, পাহাড়ের বিচ্ছিন্নতাবাদের নেতৃত্ব দিচ্ছি এমন নানাা কাহিনী সাজিয়ে ঠিক যেমনটা সেটেলার বাঙালীদের পেইজগুলোতে মাঝেমধ্যে আমাকে নিয়ে লেখা হয়! অনেকেরই জানা আছে অল্প কিছুদিন আগে ছাত্রলীগ যে কোন কারণেই হোক শাহবাগ আন্দোলনের সাথে জড়িত এবং বাম ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতৃবৃন্দের উপর ক্ষেপে উঠেছিল। সামনাসামনি পেলে নানা ধরণের অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটবার মত পরিস্থিতি তৈরী হয়েছিল তখন, তারউপর পুলিশী হয়রানির সুযোগতো ছিলই।
তেমন পরিস্থিতিতে আমাকে উগ্রপন্থী বাম সংগঠনের সাথে জড়ানো এবং পাহাড়ের বিছিন্নতবাদীদের সাথে সাথে সরাসরি যুক্ত ঘোষণা করবার পরিণতিটা কি হতে পারে বা পারতো তা সহজেই অনুমান করা যায়! এতবছর লেখালেখি করে কখনোই আমি এতখানি বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়িনি যতখানি তখন পড়েছিলাম। তবে আমি খুব শান্ত মাথায় পরিস্থিতিটি মোকাবেলা করবার সিদ্ধান্ত নেই এবং সৃষ্টিকর্তার আশির্বাদে সফলও হই। জনাব ইফতেখার আলমকে কোন কথা না বলে বা কথা না বাড়িয়ে আমি প্রথমেই তাপস নামে প্রধান যে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতাটি ছিল তার ইনবক্সে মোটামুটি বেশ বড়সড় আকারের একটি চিঠিই বলতে পারেন লিখি। আমার এটুকু বিশ্বাস ছিল তাপস ছেলেটি যদি প্রকৃতেই একজন শিক্ষিত বিবেকসম্পন্ন মানুষ হয়ে থাকে তাহলে সে অবশ্যই আমাকে নক্ করবেই। অপেক্ষার প্রহর যখন প্রায় ঘন্টা দেড়েক পার হলো তখন আমার ইনবক্সে নোটিফিকেশন দেখতে পেলাম। যথারীতি ইনবক্স চেক করে দেখি তাপসের রিপ্লাই। তারপর অনেক কথাই হয় ইনবক্সে আমাদের দীর্ঘসময় ধরে। তাপস আবার পাহাড় সম্পর্কে কিছুটা ধারণা রাখে কারণ সে যথেষ্ট ভ্রমণপ্রিয় ছেলে। তবে সমস্যা ছিল তার ধারণা পাহাড়ী ছেলেগুলো দিনভর শুধু মদ খাবে আর রাতে ঝামেলা করতে বের হবে। যাই হোক অনেক কথার পর তাকে আমি বুঝাতে সক্ষম হই আসল বিষয়গুলো। এরপর সবশেষ। পুরনো বন্ধুদের অনেকেই জানেন বিষয়টি আশাকরি কারণ আমি স্ট্যাটাসের মাধ্যমেও সেটি জানিয়েছিলাম। এই ক্ষেত্রে আমার কিছুটা প্লাস পয়েন্ট ছিল অপোনেন্ট গ্রুপের মেজরিটিই ছিলেন নোয়াখালীর বাসিন্দা। তাই সহজেই বুঝাতে সক্ষম হয়েছিলাম সবকিছু। তারা আমার আইডি ঘুরে দেখলো সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লিখলেও কোনটিই অযৌক্তিক কিছু লিখিনাই্। আর কথিত জুম্মল্যান্ডের পক্ষে নয় বরং আমার লেখাগুলো সব সাধারণ পাহাড়ীদের সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে লেখা। এগুলোই তাদের সহায়তা করে আমার বিরুদ্ধে তাদের যে মনোভাব জন্মেছিল সেটিকে ভুল প্রমানিত করবার জন্য।
এতকথা বললাম বা লিখলাম একটামাত্র কারণে। সেটি হলো সুপ্রীতি ধর গৃহকর্মী সাবিনা বিষয়টিতে কিছুটা ভিন্নভাবে বর্ণনা করেন যেখানে তিনি গৃহকর্মীদেরও কিছু কিছু দোষ-ত্রুটি তুলে ধরেণ। তবে সাবিনাকে আঘাত করার ধরণ দেখে সাধারণ জনতার মধ্যে বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিয়মিত থাকা মানুষগুলোর মাঝে যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছিল কার্ণেল সাহেবের স্ত্রীর প্রতি সেটার কাছে গৃহকর্মীদের ঐ দোষ-ত্রুটি কোন আমলেই আসবার মত ছিলনা। আর তাই জনরোষটা উল্টো সুপ্রীতি ধরের দিকে চলে গেছে। তার পরের ঘটনাতো সবারই জানা। আমার এই লেখার একটাই উদ্দেশ্য তা হলো সুপ্রীতি ধরের হয়ে চামচামি নয়, বরং এটা বলা যে, আসলে কেবলমাত্র একটি লেখা বা একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে কখনোই কোন মানুষকে বিচার করা যায়না, যেতে পারেনা। একজন মানুষকে বিচার করতে হলে অবশ্যই তার আগে-পিছে অনেক কিছুই বিবেচনায় আনতে হয়। তারপর গিয়ে সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া সম্ভব, তার আগে নয়। কর্ণেলের স্ত্রী আয়েশা’রও যে একেবারেই কোন ভাল গুণ নেই না হয়তো নয়। কারণ মানুষ মাত্রই ভাল-মন্দ মিশিয়েই তার চরিত্র। কিন্তু প্রথমত একটি অল্পবয়সী শিশুকে দিয়ে আগুন-চুলা ইত্যাদি বিপদজনক কাজ করানো এবং সামান্যতম ভুলের জন্য গুরুতর আঘাত করে আহত করাটাই তার অতীতের সকল ভাল কাজকে মুহুর্তের মধ্যে ধুলিস্যাৎ করে দিয়েছে। এটাই বাস্তব, এটাই সত্য। যার মাশুলটা কর্ণেলের স্ত্রীকে একাই নয়, বরং এখন সুপ্রীতি ধরকেও গুণতে হচ্ছে।
(লেখাটি মূলত ফেসবুক আইডিতে প্রকাশের জন্য লিখা হয়েছিল)

সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ১২:৫৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




