somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পার্বত্য চট্টগ্রামে জুম্ম জাতির ঐক্যের নতুন প্রদীপ নিভতে দেয়া যাবে না

০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কোলে থাকা নিজের সন্তান ইয়োদ্ধা নয়, যেন সমগ্র জুম্ম জাতিকেই বলছেন, ঐ যে দেখুন মুক্তির দিন সমাগত ক্রমেই।

বর্তমান চাকমা সার্কেলের রানী Yan Yan এর পূর্বে আরো একজন রানীর কথা শুনেছিলাম। তিনি কালিন্দী রানী নামেই পরিচিত ছিলেন। যদিও উনার ভিন্ন একটি নাম ছিল তথাপি তখনকার চাকমা রাজার সাথে বিয়ের সুবাদে উনার নাম হয়ে যায় কালিন্দী রানী। ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে আমরা যে কয়জন মহীয়সী নারীর কথা জানি তা বেগম রোকেয়া সহ আরো দুই একজন পর্যন্ত সীমাবদ্ধ। অথচ উনাদের অনেক আগেই কালিন্দী রানী ইতিহাস রচনা করতে সক্ষম হন যা অনেকের কাছেই অজানা রয়ে গেছে। কালিন্দী রানী সম্পর্কে আমার জ্ঞান অতি সীমিত বিধায় উনার সম্পর্কে কিছু লিখবার দুঃসাহস আমি কখনোই করবোনা। তবে আমার মত নগন্য একজন মানুষকে যে মহীয়সী নারী "দাদা" বলে সম্বোধন করে থাকেন যদিও এটুকুর যোগ্যও আমি নিজেই জানি আমি নই- সেই মহান নারীর কথা কিছু লিখতে অবশ্যই সাহস করতে পারি।

অনেক আগে থেকেই রানী ইয়েন ইয়েন এর কথা শুনে আসছিলাম। বিশেষ করে যখন বর্তমান রাজাবাবু প্রথম স্ত্রী কে হারানোর পর রাখাইন-মারমা বংশোদ্ভূত এই নারীকে নিজের সহধর্মিণী করে চাকমা রানীর আসনে বসিয়েছিলেন তখন থেকেই রানীমা আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসে পড়েন। তাকে ঘিরে আলোচনা সমালোচনা দুইই চলছিলো, তবে একসময় সেটা স্তিমিত হয়ে যায়। ইতিমধ্যেই রানী নানাবিধ সামাজিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে অনেকেরই মন জয় করে নিতে সক্ষম হন। তারপর অনেক দিন পর পুনরায় রানী ইয়েন ইয়েন আলোচনার মধ্যমণি হয়ে উঠেন গতবছর লংগদুতে জ্বালাও পোড়াও ঘটনার পর পরই।

এতবড় একটা অঘটন ঘটে যাওয়ার পরও যখন পাহাড়ের নেতৃস্থানীয় কাউকেই এগিয়ে আসতে দেখা যাচ্ছিলোনা সেভাবে এর প্রতিবাদে জ্বলে উঠতে তখন সাধারণ জুম্মদের হতাশা দুর করতে নতুন এক আশার প্রদীপ হাতে এগিয়ে এলেন রানী। পাহাড় থেকে সমতল অবদি সর্বত্র সাড়া জাগিয়ে তোলে রানীর আহ্বান, প্রতিবাদের প্রতিরোধের ডাক। রানীর ডাকে সাড়া দিতে দেরি করেননি পাহাড়ী আর সমতলের প্রগতিশীল সমমনারা। গতবছরের ষোল জুলাই শান্তিপূর্ণ সম্মিলিত মানববন্ধনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। দলে দলে প্রস্তুতি নিচ্ছিলো পাহাড়ী বাঙ্গালী একযোগে এই কর্মসূচি কে সফল করে তোলার জন্য। চারদিকে সাজ সাজ রব দেখে শাসক গোষ্ঠীও নড়েচড়ে বসে। যেকোন মূল্যে এই কর্মসূচি পালনে বাঁধা দেয়ার পাঁয়তারা করতে থাকে তারা। সর্বশেষ উপায় না দেখে রাঙামাটি জেলাতে পরবর্তী এক মাসের জন্য সকল ধরণের সভা সমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে। তারপরও সবাই প্রস্তুত ছিলেন সেই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই মানববন্ধন সফল করার জন্য। এরমধ্যে ঘটে যায় দূর্ভাগ্যজনক পাহাড় ধ্বসের দূর্ঘটনা। হয়তো সৃষ্টিকর্তা নিজেই আরো ভয়ংকর কোন দূর্ঘটনার আশঙ্কায় মানববন্ধন কর্মসূচি ঠেকাতে এই প্রাকৃতিক দূর্ঘটনা ঘটিয়ে ছিলেন। এই দূর্ঘটনার কারণে পরবর্তীতে সকল কর্মসূচি স্থগিত করে তখন প্রাকৃতিক বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে সর্বশক্তি নিয়োগ করা হয়।

দূর্ভাগ্যজনক ভাবে তখন লংগদু ঘটনার পর রানীর মাঠে নামা এবং কর্মসূচি ঘোষণা করাকে কেন্দ্র করে একটি শ্রেণীকে দেখা যায় রানীর সমালোচনায় মুখরিত হয়ে উঠতে! আসলে তারা ভীত হয়ে পড়ে। রানীকে ভাবতে শুরু করে নিজেদের প্রতিপক্ষ হিসেবে। অথচ এটা ছিল তাদের সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। রাজনীতি নয়, রানী এগিয়ে এসেছিলেন নিজ বিবেক বোধের তাড়নায়। তাই রানী কারো সমালোচনায় কর্ণপাত না করে অটল ছিলেন নিজ সংকল্পে। রানীর এই মনোভাব সকলের প্রশংসা অর্জন করতে সক্ষম হয়।

সম্প্রতি রাঙামাটি জেলার বিলাইছড়ির দূর্গম এলাকা ফারুয়াতে দুই মারমা মেয়েকে যৌন নির্যাতনের প্রতিবাদে একইভাবে রানী ইয়েন ইয়েন মাঠে নেমেছেন। ইতিমধ্যেই রানীর কর্মকান্ড সকলেই অবহিত হয়েছেন। রানীর এই কর্মকান্ডে আবারো পূর্বের মতোই মাথা খারাপ হবার যোগাড় হয়ে পড়েছে শাসক গোষ্ঠির জন্য। ইতিমধ্যেই শাসকের দোসররা রানীকে নানাভাবে হেনস্থা করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। সমাবেশ বিবৃতি শত আয়োজন কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বরাবরের মতোই রানী স্থির রয়েছেন নিজ সংকল্পে। রানীর কাছে প্রশাসন নেই, পুলিশ সেনাবাহিনী নেই। কিন্তু আছে দৃঢ় মনোবল আর লাখো মানুষের সমর্থন ও রানীর উপর পূর্ণ আস্থা।

জুম্ম মুক্তির আন্দোলনে রানী ইয়েন ইয়েন ছাড়িয়ে যাবেন রানী কালিন্দীকেও। ঐক্যবদ্ধ হওয়ার একটা সুযোগ এসেছিল লংগদু ঘটনার পর, যেকোন কারণেই হোক সেটা হাতছাড়া হয়েছিল। মারমা মেয়ে দুটো নিজেদের সম্ভ্রমের বিনিময়ে আরেকটা সুযোগ এনে দিয়েছে এবার। রানীর হাত ছাড়বেন না দয়া করে আর কেউ। এবার সুযোগ হারালে আর কখনোই আলোর মুখ দেখতে হবেনা এটা নিশ্চিত।

সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১:২৫
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদিকে গুলি করলো কে?

লিখেছেন নতুন নকিব, ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:২৬

হাদিকে গুলি করলো কে?

ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা ৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী রাজপথের অকুতোভয় লড়াকু সৈনিক ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলিবিদ্ধ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জীবনের চেয়ে তরকারিতে আলুর সংখ্যা গণনা বেশি জরুরি !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:১৭


বিজিবির সাবেক মহাপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দেশবাসী একটা নতুন শব্দ শিখেছে: রুট ভেজিটেবল ডিপ্লোম্যাসি। জুলাই আন্দোলনের পর যখন সবাই ভাবছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইতিহাসের সেরা ম‍্যাটিকুলাস ডিজাইনের নির্বাচনের কর্মযজ্ঞ চলছে। দলে দলে সব সন্ত্রাসীরা যোগদান করুন‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৪:৪৪



বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ব নিকৃষ্ট দখলদার দেশ পরিচালনা করছে । ২০২৪-এর পর যারা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী দিয়ে দেশ পরিচালনা করছে । তাদের প্রত‍্যেকের বিচার হবে এই বাংলার মাটিতে। আর শুধুমাত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাচেষ্টা: কার রাজনৈতিক ফায়দা সবচেয়ে বেশি?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১৮


হাদির হত্যাচেষ্টা আমাদের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে একটি অশনি সংকেত। জুলাই ২০২৪ আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের দ্বিধাবিভক্ত সমাজে যখন নানামুখী চক্রান্ত এবং রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অন্তর্কলহে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আয়-উন্নতির গুরুত্বপূর্ন প্রশ্নগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×