somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রানীর হাতে লাগানো কফিগাছ শুধু একটি গাছ নয়, বরং একটি স্বপ্ন

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৩:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রাঙামাটির চাকমা রাজবাড়ির খোলা জায়গায় একবার একটা কফি গাছ লাগিয়েছিলেন চাকমাদের বর্তমান রানী ইয়েন ইয়েন নিজের হাতে, পরম যত্নে। পরিচর্যা করতেন নিজেই। চাইলেই পরিচর্যা করার দায়িত্ব তিনি রাজবাড়ির কোন কর্মচারীর হাতে সঁপে দিতে পারতেন, কিন্তু তা না করে দায়িত্বটা নিজের কাছে রেখেছিলেন ঐ গাছের সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্যই। কারণ শ্রেফ একটা কফি গাছ না, একটা স্বপ্ন বুনেছিলেন রানী। ধীরে ধীরে রানীর পরম মমতায় বেড়ে উঠতে লাগলো সেই গাছটা, এখন হয়তো ফল দেয়ার সময় সমাগত না হলেও অনেকটাই বড় হয়ে গেছে গাছটা। যথারীতি ফলও একসময় দিতে শুরু করবে এটা নিশ্চিত।

গাছের কথাটা টেনে আনলাম একটা কারণে। যে রানী রাজকীয় জীবন পরিহার করে নিজের হাতে গাছ লাগিয়ে তার সঠিক যত্ন নিতে পারেন সেই রানী তার প্রজাদের কতখানি ভালোবাসতে পারেন, আপন করে নিতে পারেন তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ইয়েন ইয়েন সাধারণ এক রাখাইন-মারমা পরিচয় থেকে যেদিন চাকমারাজার হাতে আংটি পরিয়ে আর ধর্মীয় মতে মন্ত্র পাঠ করে রাজবাড়ির তোরণ পেরিয়ে মূল রাজবাড়িতে পা রেখেছিলেন সেদিন থেকেই তিনি তার রানী চরিত্রের অধিক মায়ের চরিত্রে অবতীর্ণ হয়েছিলেন। কারোরই অজানা নয়, রাজাবাবুর প্রথম স্ত্রী এই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলে রাজাবাবু বেশ খানিকটা সময় পার করে তবেই বর্তমান রানীকে ঘরে তোলেন। প্রথম রানীমা'র সন্তান আর্যদেব আর তার বোন দুইজনকেই ইয়েন ইয়েন অনেকটা নাবালক অবস্থায় রাজ পরিবারে এসে পেয়েছিলেন। আর তাই রানী হবার সাথে সাথেই তিনি মা হয়ে গিয়েছিলেন বলেই রানীর কঠিন চরিত্রের চেয়ে মায়ের কোমল চরিত্রটাই সর্বপ্রথম ধারণ করতে সক্ষম হন তিনি। নিজের সন্তান ইয়োদ্ধা জন্মগ্রহণ করে অনেক পরে।

কথাগুলো পুরনো হলেও আরো একবার নতুন করে মনে করিয়ে দেয়া দরকার ভেবেই কয়টা কথা লিখতে হলো। এই রানীর পূর্ণ মাতৃরূপ প্রিয় জুম্মগণ পরিপূর্ণভাবে একবার প্রথম দেখেছিলেন গতবছর লংগদু বিভীষিকার পর, দ্বিতীয়বারের মত আবার দেখতে পেলেন অতিসম্প্রতি। গতবছর যখন লংগদুর ঘটনার প্রতিবাদে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ আহ্বান করেছিলেন রানী তখনই আমরা আশাবাদী হবার পাশাপাশি আতঙ্কিত ছিলাম এই ভেবে যে শেষতক রানীর উপর কোন অঘটন ঘটাতে পারে হায়েনার দল! তবে সেবার পাহাড় ধ্বসে সব এলোমেলো করে দিল, রানীর উদ্দ্যেগ এবং হায়েনাদের উদ্দেশ্য দু'টোই শেষ পর্যন্ত পন্ড হলো। কিন্তু এবার আর পাহাড় ধ্বসে পড়ে নাই বলেই রানীও ছিলেন পর্বতসম অটল আর হায়েনারা ছিল মরিয়া। শেষ মরন কামড় দিলো তারা পনেরো ফেব্রুয়ারি রাতের আলো নিভিয়ে কৃত্রিম উপায়ে পুরো রাঙামাটি সদর হাসপাতাল কম্পাউন্ডে অন্ধকার তৈরি করে। সেখানে থাকা ধর্ষণ আর যৌন নির্যাতনের শিকার মারমা মেয়েদের ছিনিয়ে নিতে সক্ষম হলেও রানীকে কেবল আঘাত করেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে। শেষ পর্যন্ত লড়াই করে গেছেন রানী, কারণ এই লড়াই কে রানী দেখেছিলেন আপন দুই সন্তান কে রক্ষার লড়াই হিসেবে। রানীকে অজানা কোথাও নিয়ে যেতে চাইলেও শেষ পর্যন্ত রানীর বুদ্ধির কাছে পরাজিত হতে হয় অপশক্তিদের। রণে ভঙ্গ দিয়ে পালাতে বাধ্য হয় হায়েনারা আর রানী নিরাপদে ফিরে আসেন বীরের বেশে নিজ গৃহে।

রানীর বাকি সন্তানরাও ছুটে এসেছিলেন রাজবাড়ি প্রাঙ্গণে গতকাল উনিশ ফেব্রুয়ারি রানী মাকে তথা পুরো রাজ পরিবারের প্রতি সংহতি জানাতে। শুধু চাকমারা নয়, এসেছিলেন সকল আদিবাসী জাতির মানুষ সহকারে বাঙ্গালি মুসলিম হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষও। মানবতার বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধের বিচার দাবিতে এক হয়ে গিয়েছিলো সেদিন পাহাড়ী বাঙ্গালী সবাই। প্রতিটি সন্তান একবাক্যে ঘোষণা দিলেন হাজার ঝড়ের মুখেও তারা মায়ের পাশেই থাকবেন বলে। রানী মায়ের নিজ হাতে লাগানো আর নিজের হাতে পরিচর্যা করে বড় করে তোলা সেই গাছ কিংবা স্বপ্নের সার্থকতা তো এটাই, তাই নয় কি?

সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৩:৫৯
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদিকে গুলি করলো কে?

লিখেছেন নতুন নকিব, ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:২৬

হাদিকে গুলি করলো কে?

ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা ৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী রাজপথের অকুতোভয় লড়াকু সৈনিক ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলিবিদ্ধ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জীবনের চেয়ে তরকারিতে আলুর সংখ্যা গণনা বেশি জরুরি !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:১৭


বিজিবির সাবেক মহাপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দেশবাসী একটা নতুন শব্দ শিখেছে: রুট ভেজিটেবল ডিপ্লোম্যাসি। জুলাই আন্দোলনের পর যখন সবাই ভাবছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইতিহাসের সেরা ম‍্যাটিকুলাস ডিজাইনের নির্বাচনের কর্মযজ্ঞ চলছে। দলে দলে সব সন্ত্রাসীরা যোগদান করুন‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৪:৪৪



বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ব নিকৃষ্ট দখলদার দেশ পরিচালনা করছে । ২০২৪-এর পর যারা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী দিয়ে দেশ পরিচালনা করছে । তাদের প্রত‍্যেকের বিচার হবে এই বাংলার মাটিতে। আর শুধুমাত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাচেষ্টা: কার রাজনৈতিক ফায়দা সবচেয়ে বেশি?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১৮


হাদির হত্যাচেষ্টা আমাদের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে একটি অশনি সংকেত। জুলাই ২০২৪ আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের দ্বিধাবিভক্ত সমাজে যখন নানামুখী চক্রান্ত এবং রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অন্তর্কলহে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আয়-উন্নতির গুরুত্বপূর্ন প্রশ্নগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×