আমি কূলহারা কলঙ্কিনী,আমারে কেউ ছইও নাগো সজনী বিখ্যাত এই গানের রচয়ীতা ভাটী বাংলার চারণ কবি বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমের পঞ্চম মৃত্যুবাষির্কী নানা আয়োজনের মধ্যে দিয়ে পালিত হচ্ছে আজ। দিরাই উপজেলার উজানধল গ্রামে ফুলের তোরা দিয়ে শ্রদ্বাঞ্জলী জানানোর পাশাপাশি মিলাদ মাহফিল,আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এ অনুষ্ঠানে সমবেত হয়েছেন দেশের বিভিন্ এলাকা থেকে আগত শত শত ভক্ত ও অনুরাগীরা।
বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমের পূত্র শাহ নুর জালাল জানান, আমার বাবার পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। কিন্ত আবার বাবার স্বপ্ন শাহ আব্দুল করিম একাডেমী ও সংগীত বিদ্যালয় চালু হয়নি। সঙ্গিত বিদ্যালয়টি চালু হলে বাউলেরা এখানে এসে গানের চর্চা করতে পারত। সঙ্গিত বিদ্যালয়টি চালুর ব্যাপারে তিনি সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন।
বাউল সম্্রট শাহ আব্দুল করিম দিরাই উপজেলার তাড়ল ইউনিয়নের উজানধল গ্রামে ১৯১৬ সালের ১৫ ফেব্র“য়ারী এক সাধারণ কৃষক পরিবারে জন্ম গ্রহন করেন শাহ আব্দুল করিম । আর ২০০৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর বার্ধক্যজনীত কারণে সিলেটে একটি বেসরকারী ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় মারা যান। কালনী নদীর তীরে বসে করিম রচনা করেছেন অসংখ্য বাউল গান। সাধারণ মানুষের দুঃখ দুর্দশা তাকে তিলে তিলে পীড়ন করতো। তাই তিনি কালজয়ী সাধক। উজানধল গ্রামের কৃষি শ্রমিক ইব্রাহিম আলীর ছয় ছেলেমেয়ের মধ্যে আব্দুল করিম ছিলেন একমাত্র পুত্র সন্তান। কৈশরে অভাব অনটনের কারণে ছোট্ট করিম মানুষের বাড়িতে রাখালের কাজ করেছেন। মাঠে গরু চড়ানোর সময় রচনা করতেন বাউল গান। অভাবের তাড়নায় প্রচলিত শিক্ষা গ্রহণ বাদ দেন। তার জীবনের প্রথম পাঠ শুরু হয়ে ছিলো হাওরের গোচারণ ভুমিতে। প্রকৃতি ছিলো তার প্রথম শিক্ষক। দীর্ঘ বাইশ বছর যাবৎ প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণ করেনি তিনি । পুরো সময় ছিলেন নিরক্ষর। আভিধানিক ভাবে তিনি নিরক্ষর থাকলেও তাঁর তৃতীয় নয়ন তখন অনেক কিছু আয়ত্ব করে নিয়েছে। সে গুলো ধারণ করার জন্য তিনি ভর্তি হন নাইট স্কুলে। অক্ষর জ্ঞান লাভের পর সহপাঠীদের নিয়ে গাজীর গান, বাউল গান, ঘাটু গান, সারিগান, কবিগান গাইতেন। মানুষের শ্রেণী বৈষম্য ও বিভেদ দূর করতে আজীবন চেষ্টা চালিয়ে গেছেন। মানব প্রেমের মধ্যদিয়ে জগৎ সংসার কে আলোকিত আর সমাজের নিপীড়ত মানুষের মুক্তির আস্বাদ দিতে প্রাণান্ত চেষ্টা করেছেন । নির্যাতিত মানুষের শোকগাথা, শোষণ-বঞ্চণার প্রতিবাদ, শাসিত ও শোষক গোষ্ঠীর কথাই বেশী রয়েছে। ১৯৫৪-এর জাতীয় পরিষদ নির্বাচনে , ৫৭ সালের ঐতিহাসিক কাগমারি সম্মেলনে, ৬৯-এর গণঅভ্যুথানে , ৭১-এর মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে, ৯০-এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে তিনি জনতার সমুদ্রে স্বরচিত গণসঙ্গীত পরিবেশন করেন। যুক্ত-ফ্রন্টের সময় বিভিন্ন সভা -সমাবেশে গান পরিবেশন করেছেন বাউল আবদুল করিম। ৭১ এ মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে তিনি রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে মুক্তিযোদ্ধের গান গেয়ে জনতাকে উজ্জিবিত করেছেন। ঐতিহাসিক কাগমারি সমাবশে বাউল করিম মাওলানা আব্দুল হামিদ খাঁন ভাসনী কে নিয়ে গান গেয়ে ছিলেন। মাত্র বিশ বছর বয়সে আফতাব সঙ্গীত নামে তার রচনাবলী নিয়ে প্রথম বই প্রকাশিত হয় । আজ তার পঞ্চম মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষ্যে উজানধলের বাড়িতে দোয়া-মাহফিল,আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্টানের আয়োজন করা হয়েছে। পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকীর এ দিনে শাহ আব্দুল করিম একাডেমী ও সঙ্গিত বিদ্যালয় চালু করে বাউলের স্মৃতিরক্ষার্থে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার এলাকাবাসী ও করিম ভক্তবৃন্দের ।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




