somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শিশু ক্রুসেড ... মধ্যযুগের ইউরোপের এক বিস্মৃত পাতা

১৯ শে জানুয়ারি, ২০১২ রাত ৮:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইতিহাসের পাতায় এসমদ্ধে খুব স্বল্পই লিখা আছে... অনেক পশ্চিমা ইতিহসাবিদই ঐ ঘটনাকে স্বীকার করতে চান না..। তাদের মতে এরকম কোন ঘটনা ঘটেই নি কখনো।চরম অন্যায় কে অস্বীকার করে চেপে যাওয়ার চেস্টা মানুষের বহু পুরানো মজ্জাগত অভ্যেস। আধুনিক ইউরোপও এর বাইরে না।

কারো কারো মতে শিভালরি ক্রুসেডের বর্নময় যুগের গ্রামীন লোকগাঁথা হিসেবেই এমন কাহিনীর প্রচলন...যখন ক্রুসেডারদের একের পড় এক পরাজয়ের খবরে হতাশ সাধারন মানুষের মনে ধর্মীয় উদ্দিপনা আর আশার সঞ্চারের জন্য এই গল্পগাঁথা গুলি রচিত হয়েছিলো।

ইতিহাস থেকে যতটুকু জানা যায় ৪র্থ ক্রুসেডে ভেনিসীয় বনিকদের চরম বিশ্বাসঘাতকতা আর ক্রুসেডারদের ব্যার্থতার পর সমগ্র ইউরোপ জুরে যখন সামাজিক অস্থিরতা আর হতাশা বিরজা করছিল তখন ইউরোপের কিছু ধর্মান্ধ মানুষ শিশু ক্রুসেডের পরিকল্পনা করে। ১২১২ সালের দিকে তারা ইউরোপের বিভিন স্থান থেকে এই দরিদ্র এতিম শিশুদের সংগ্রহ করে এদের মানব ঢাল হিসাবে যুদ্ধে ব্যবহারের জন্য ক্রুসেডে প্রেরন করে।যুদ্ধে চাইল্ড সোলজার ব্যাবহারের ইতিসাহ শুরু সম্ভবত এখান থেকেই।




সেই সময়ের একের পড় এক ক্রুসেডের ব্যার্থতা,সম্পদহানী আর বীর যোধ্যাদের হারিয়ে ইউরপে চরম সামাজিক জীবনে চরম বিশৃংখল অবস্থা বিরাজ করছিলো। এইসব ব্যার্থতার জন্য মানুষ গীর্জা আর নাইটদের দায়ি করে আঙ্গুল তোলার সাহস করছিলো..।এ অবস্থায় পোপতন্ত্রের ক্ষমতা দুর্বল হয়ে যাবার ভয়ে দিশাহারা পোপ তৃ্তীয় ইননোসেন্ট ইউরোপের দিকে দিকে যাজক আর প্রিস্টদের পাঠালেন ৫ম ক্রুসেডের জন্য লোকবল সংগ্রহের জন্য। জেরুজালেম নগরী কে “বন্দি রানী” আখ্যা দিয়ে একে উদ্ধারের আহবান জানালেন পোপ। যীশুর বানীর দোহাই দিয়ে পোপ পুনরায় জেরুজালেম যাত্রার জন্য সাধারন মানুষলে অনুপ্রানিত করার চেস্টা করতে লাগ্লেন।কিন্তু টানা ব্যার্থতার পড় ইউরোপের মানুষ যখন পোপের ্ধর্ম যুদ্ধের আহবান থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে...তখন ফ্রান্স আর জার্মানীর কিছু ধর্মান্ধ মানুষ ৬ থেকে ১৩ বছরের বালকদের সংগ্রহ করে তাদের পবিত্র ভুমি স্বপ্ন দেখিয়ে ক্রুসেডের জন্য প্রেরন করলো।




ঘটনার শুরু ফান্সের অর্লিয়েন্স প্রদেশে। ২৫ শে সেপ্টেম্বর সেন্ট মার্ক্স ডে’র দিনে এক রাখাল বালক দাবি করে বসলো প্রভু যীশু স্বপ্নে তাকে দেখা দিয়েছেন ও তাকে একজন নবী হিসাবে নির্বাচিত করে আর একটি ক্রুসেডের নেতৃত্ব দেয়ার দায়িত্ব অর্পন করেছেন।তার নেতৃত্বে শিশুদের এক বাহিনী জেরুজালেম পুনরুদ্ধার করবে ও তাদের পুর্বসুরিদের ব্যার্থতা ঘুচাবে এবং পবিত্র ভুমি মোহাম্মদানদের হাত থেকে উদ্ধার করবে। পরে তিনি ফ্রান্সের রাজায় পরিনত হবে। যা ছিলো একেবারেই নিছক একটি শিশুতোষ কল্পনা...।




কিন্তু ধুরন্ধর প্রিস্টরা এই সুযোগকে লুফে নিলো এবং শিশু স্টিফেন কে “নির্বাচিত একজন” আখ্যা দিয়ে দিকে দিকে ধর্মীয় উন্মাদনা প্রচার করতে লাগলো। এরপর জার্মানীর এক প্রত্যন্ত গ্রাম কোলোজ এর এক বালক নিকোলাস একই দাবি করে এবং সহসাই কিছুদিনের মধ্যে জার্মানী আর ফ্রান্স থেকে ৬০,০০০ এর বেশি হতদরিদ্র বালক বালিকা ধর্মগুরুদের উন্মাদনায় প্ররোচিত হয়ে জার্মানীর কোলঞ্জ গ্রামে মিলিত হয় এবং ১২ বছরের বালক নিকোলাসের নেতৃত্বে পবিত্র ভুমি জেরুজালেম উদ্ধারের স্বর্গীয় স্বপ্নে বিভোর হয়ে জেরুজালেম যাত্রা জন্য তৈরি হতে থাকে।এ যেন এদল্কাফ স্কাউটের অ্যাডভেঞ্চার অ্যাডভেঞ্চার খেলা। চারিদিক থেকে দলে দলে ভ্যাগাবন্ড আর ঘুরে বেড়ানো নিশকর্মার দল স্বর্গ লাভের আশায় সেই বাহিনীতে যোগ শুরু করলো। পোপ সরাসরি এদের উদ্দেশ্যে আশির্বাদ না করলেও একদল প্রিস্ট আর কিছু সুযোগ সন্ধানী লোক এদের ধর্মীয় উন্মাদনাকে উস্কে দিয়ে পূরোপুরি পাগলামীতে রুপ দেয়ার কাজ সম্পন্ন করলো। আরাম্ভ হয় ইউরোপের ইতিহাসের এক মর্মস্পর্ষি অধ্যায়ের।



হতবাক ইউরোপবাসী একদিন দেখলো বাদ্যের তালে তালে প্রভু যীশুর প্রার্থনা সঙ্গীত গাইতে গাইতে শিশুরা দল বেধে চলেছে...যার সাথে দেখা হলো তাকেই শিশুর দল বললো ...”আমরা জেরুজালেমে যাচ্ছি প্রভুর পবিত্র সেপালচার ফিরিয়ে দিতে”... প্রার্থনা গান গাইতে গাইতে লেখার ছলে শুরু হলো এক ভয়াবহ অপরিনামদর্শী যাত্রা...যে যাত্রায় বাধা দেয়ার কেউ ছিলো না ।অবোধ ঐ শিশুদের বুঝানো হলো অলৌকিক ভাবে ভুমধ্যসাগর শুকিয়ে গিয়ে তাদের জন্য পথ তৈরী করে দিবে।



কিন্তু কোন সাগরই কখনো কোন ধর্মগুরুর কথায় শুকায় না... আলপাইন রেঞ্জের হীম শীতল ঠান্ডায় শত শত দরিদ্র আর পথ যাত্রায় ক্লান্ত অবোধ শিশু বনের কুয়াশায় চির কালের মত হারিয়ে গেলো।
বাদ বাকি যারা বহু কস্টে সাগর তীরে পৌছতে পারলো তাদের জন্য অপেক্ষমান ভুমধ্যসাগর কোনদিনই শুকিয়ে যায় নি...
প্রানে বেঁচে যাওয়াদের ইতালীয় বনিকরা জাহাজে তুলে জেরুজালেম পৌছে দেবার কথা বলে নির্মম অত্যাচার আর দিনের পর দিন অভুক্ত ফেলে রাখে ....শেষ পর্যন্ত টিকে থাকাদের বিক্রি করে দেয়া হয় আরব বনিকদের কাছে। এভাবে শেষ হয় শিশু ক্রুসেডের এক মর্মাস্পর্ষি অধ্যায়।


সুত্রঃ দি চিল্ড্রেন্স ক্রুসেড-গ্যারী ডিকসন
২৪টি মন্তব্য ২৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১৩

ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×