শীতকালীন সর্দি-কাশি, জ্বর, হাঁপানি, অ্যালার্জিক রাইনাইটিস, কনজাংকটিভাটিস, নিউমোনিয়া কিংবা খুশকি মতো কমন রোগের কথা আমরা জানি। উইন্টার ডিসঅর্ডার বা শীতকালীন হতাশা নামক রোগের কথা কখনো শুনেছেন? যে ডিসঅর্ডারের কারণে আপনি সুসাইড পর্যন্ত করতে পারেন।
আজ স্কুল অফ মেডিসিন "ইয়েল"-এর একটি গবেষণা পড়লাম। গবেষণায় মনোরোগ বিশেষজ্ঞ পল দেশান, (এমডি, পিএইচডি) শীতকালীন মৌসুমী ব্যাধি Seasonal Affective Disorder বা “SAD” সম্পর্কে আলোচনা করেন। ঋতু পরিবর্তনের ফলে এই রোগটি হয়ে থাকে। যা ১৯৮৪ সালে নরম্যান রোসানথাল এবং তার সহকর্মীদের দ্বারা বর্ণনা করা একটা সিনড্রোম। তদন্তকারীরা মৌসুমী খিটখিটে ও খারাপ মেজাজের ব্যক্তিদের খোঁজে স্থানীয় পত্রিকায় একটি বিজ্ঞাপন দিয়ে জরিপ চালান। জরিপে জনসাধারণের বেশ সারা পাওয়া যায়। বেশ কিছু মানুষের মধ্যে এই সিনড্রোম দেখা যায়।
SAD-এর প্রভাব মধ্য-আটলান্টিক রাজ্যে, উত্তর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডায় পাওয়া যায়। ফ্লোরিডায় 1%, নিউ ইয়র্কের অক্ষাংশের প্রায় 5% এবং নিউ হ্যাম্পশায়ারের অক্ষাংশে প্রায় 10% অনুমান করা হয়।
এসএডি- আক্রান্ত ব্যক্তিরা শীতকালে তাদের মেজাজ, শক্তি, ঘুম, ওজন এবং ক্ষুধার নিয়মে পরিবর্তন ঘটায়। সবসময় হতাশাগ্রস্ত মেজাজ এবং ঘুমের অনিয়ম, এইসব ব্যক্তিদের পাগল করে তোলে। খুব সকালে ঘুম ভেঙ্গে যাওয়া এবং সন্ধ্যায় দ্রুত ঘুমিয়ে যাওয়া। সবসময় খিটখিটে মেজাজ, ক্ষুধা মন্দা, ওজন হ্রাস পাওয়া, বেশির ভাগ সময় ক্লান্তি অনুভব করা এসএডি-র উল্লেখযোগ্য লক্ষণ। গবেষণাটিতে বলা হয়, "এসএডি পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের মধ্যে ২ থেকে ৪ গুণ বেশি হয়। এসএডি-তে আক্রান্ত মহিলাদের মাসিকের আগে তাদের মেজাজের পরিবর্তন ঘটে। ঋতুস্রাবের আগে মেজাজ পরিবর্তন হওয়া মহিলাদের এসএডি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।" এসএডি সাধারণত যৌবন থেকে ৩০-৪০ বছরের মাঝে শুরু হতে দেখা যায়। এসএডি-এর প্রভাবে অনেক সুইসাইড পর্যন্ত করে। ঋতু পরিবর্তন যারা গ্রহণ করতে পারে না তাদের মাঝে এসএডি- সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে। বসন্তকাল এবং গ্রীষ্মকাল শুরু হলে তারা আবার ঠিক হয়ে যায়।
গবেষণাতে বলা হয়, যারা ঋতু পরিবর্তনে নিজেদের মাঝে মেজাজ খারাপ, ক্ষুধামন্দা বা ঘুমের অনিয়ম এমন সব সিনড্রোম দেখতে পারবেন তারা যেন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। চিকিৎসার মাধ্যমে এই রোগ থেকে সুস্থ হওয়া সম্ভব।
ঋতু পরিবর্তন কতটা ভয়াবহ হতে পারে এই ডকুমেন্টা না পড়লে জানতে পারতাম না। আমরা বসবাস করি ছয় ঋতুর দেশে। যেখানে প্রতি দুই মাস অন্তর ঋতু পরিবর্তন ঘটে। যেখানে শীতকালে মানুষ ডিসঅর্ডারে নয় বরং উষ্ণ কাপড়ের অভাবে মারা যায়। মাঝে মাঝে মনে হয় যত উন্নত দেশ তত উন্নত এবং আরামদায়ক সব রোগ-বালাই। এমন না যে আমাদের দেশের মানুষ ডিসঅর্ডারে ভোগে না। অন্য সাধারণ ডিসঅর্ডারের চেয়ে আমাদের দেশের মানুষজনেরা সাংসারিক ডিসঅডারে সবচেয়ে বেশি ভোগে। যার মাঝে অন্যতম "বাজার" করা এবং বাসায় এসে শোনা, "কি সব বাজার এনেছো এগুলা?"
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৭