নতুন একটি বিদেশি ভাষা শেখা মানে জ্ঞান-বিজ্ঞানের নতুন একটি সিংহদ্বার খুলে যাওয়া। সাহিত্যের মূল নির্যাস পাওয়ার জন্যও এটা গুরুত্বপূর্ণ কেননা অনুবাদকৃত সাহিত্যে মূল বইয়ের সম্পূর্ণ মজা পাওয়া সম্ভব নয়, লেখকের আবেগ আর শব্দচয়নের দ্যোতনার সম্পূর্ণ স্বাদ অনুবাদ মূল বইতেই থাকে । এতো গেলো মনের খোরাক; ভিনদেশী ভাষা প্রফেশনাল ক্যারিয়ারেও অন্যদের থেকে একধাপ এগিয়ে রাখতে পারে।
এখন আসি শুরুটা কিভাবে করা যেতে পারে। প্রথমে একটি মোটিভ সেট করুন কেনো আপনি নতুন ভাষাটি শিখছেন। ভাষা শেখাটাকে একটা রাস্তা আর আপনার মোটিভটাকে গন্তব্য মনে করুন। আপনার গন্তব্য কোথায় টা সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকলে রাস্তা পাড়ি দেয়া সহজ হয়ে যাবে।
শুনতে অবাক লাগলেও এটাই সত্যি যে ব্যাকরণ মুখস্ত বা চর্চা করে ভাষা শেখার চেষ্টা করা মানে প্রথমেই ভুল পদক্ষেপ নিচ্ছেন। ব্যাকরণ ভাষাকে শাসন করে না, ভাষা তার নিজস্ব গতিতে চলে। ব্যাকরণ শুধু সেই গতিকে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করে। তবে ৩০ দিনে শিখে ফেলার চটকদার বইয়ের ফাঁদে পড়লে ভাষা শেখা এ যাত্রায় আর হবে না।
তাহলে কিভাবে শেখা উচিত? কার্যকরভাবে ভাষা শেখার অনেক পদ্ধতি রয়েছে। ঐ ভাষার স্থানীয়দের কথোপকথন শুনুন এমনকি যদি কিছু না বোঝা যায় তাও। একটা শিশু যখন মাতৃভাষা শিখে তখন সে ভাষা বোঝার জন্য অন্য কোনো ভাষা কিন্তু তার জানা থাকে না। একেবারে শুন্য থেকেই শুরু হয়। আপনিও সেরকম সহজাতভাবে শিশুদের মত করে শিখতে পারেন। তারপরো মনে খটকা লাগতে পারে এটা কিভাবে কাজ করতে পারে যখন আমি তাদের কথাই বুঝছি না?
আমেরিকান ভাষাবিজ্ঞানী এটার চমৎকার ব্যাখ্যা দিয়েছেন। প্রতিটি ভাষার মধ্যেই একটি কমন বৈশিষ্ট্য রয়েছে এবং মানুষের মস্তিষ্ক সেগুলো প্রোগ্রাম করা। আপনাকে শুধুমাত্র সেই প্রোগ্রামগুলোকে সক্রিয় করতে হবে। সেই শব্দগুলো শুনতে হবে। তাছাড়া নতুন শব্দ বলার সময় বক্তার অভিব্যক্তি থেকেও আমাদের মস্তিষ্ক প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করে।
এবার যা শুনলেন তার অর্থ বুঝে বারবার বলার চেষ্টা করুন, এই ভাষাটি যাদের মাতৃভাষা তাদের মত করে বলার চেষ্টা করুন। উচ্চারনের উপর জোর দিন। নিয়মিত মুভি বা টিভি সিরিজ দেখতে পারেন এক্ষেত্রে। এর ফলে একইসাথে ঐ ভাষাভাষী লোকেদের সংস্কৃতি সম্পর্কেও ধারণা পাবেন। যে ভাষাটি শিখছেন সে ভাষার সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত ১০০০ শব্দ শিখে ফেলুন। এতে করে প্রাথমিক পর্যায়েই আপনি সে ভাষায় অন্যদের সাথে কথা বলার ক্ষেত্রে অনেক এগিয়ে যাবেন।
ভাষাকে দুইভাগে ভাগ করে শিখুন প্রথমে কথা বলা তারপর লিখতে চেষ্টা করুন। দুটোই একসাথে করতে গেলে সময় বেশি লাগবে আর মাঝপথে উৎসাহে ভাটা পড়তে পারে। তাছাড়া কেউ আপনাকে জিজ্ঞাসা করবে না “আপনি কি ফ্রেঞ্চ লিখতে পারেন”, বরঞ্চ জানতে চাইবে আপনি ফ্রেঞ্চ ভাষায় কথা বলতে পারেন কিনা। তাছাড়া ফ্রেঞ্চ ভাষার কথ্যরীতি আর লেখ্যরীতি দেখলে মনে হবে যেন ২টি আলাদা ভাষা। তাই যদি শুধু কথা বলতে পারাটাই লক্ষ্য হয়ে থাকে তাহলে কি দরকার লেখার পিছনে সময় ব্যয় করার!
যে ভাষাটি শিখছেন সে ভাষার সাথে আপনার মাতৃভাষার পার্থক্য যত কম থাকবে সেটি তত দ্রুত শিখতে পারবেন। এই যেমন আমরা খুব কম সময়ে বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী, হিন্দি, উর্দু ইত্যাদি উপমহাদেশীয় ভাষা খুব দ্রুত শিখতে পারবো। আবার ব্রিটিশ কলোনিগত কারণে ইংরেজি এবং ধর্মীয় কারণে আরবি ভাষা তুলনামুলক কম সময়ে শিখতে পারবো। যদি আপনি ইংরেজি ভাষায় পারদর্শি হয়ে থাকেন তাহলে ফ্রেঞ্চ, স্প্যানিশ, ইতালিয়ান, পর্তুগিজ তুলনামূলক কম সময়ে শিখতে পারবেন। এব্যাপারে উইকিবুকস এর একটি চার্ট আছে যেটা আনুমানিক সময়কাল সম্পর্কে ধারণা দেয় –
https://en.wikibooks.org/wiki/Wikibooks:Language_Learning_Difficulty_for_English_Speakers
তাহলে আজকেই পরিকল্পনা করে ফেলুন আর নেমে পড়ুন নতুন একটি বিদেশি ভাষা শেখার মিশন!