গণশক্তি, ১৯শে জুন, ২০১৪
ষোড়শ লোকসভা নির্বাচন আমাদের দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির এক বিরাট পরিবর্তন ঘটিয়েছে। এই প্রথম হিন্দুত্ববাদী একটি রাজনৈতিক দল লোকসভায় ২৮২টি আসন লাভ করে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে। ইতিপূর্বে ভারতের রাজনীতিতে ঠিক এধরণের ঘটনা ঘটেনি। এই অবস্থা বিচার-বিশ্লেষণ করেই ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী)-সহ বামপন্থী দলগুলি এবং অ-কংগ্রেসী, অ-বি জে পি বিভিন্ন দলের পক্ষ থেকে নির্দিষ্ট কার্যক্রম তৈরি করা প্রয়োজন। তদনুযায়ী রাজনৈতিক কার্যকলাপ পরিচালনা করাও জরুরী। এখন এই প্রসঙ্গে আলোচনা না করে আমি পশ্চিমবাংলার উদ্ভূত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আমাদের করণীয় জরুরী কাজ সম্পর্কে কিছু কথা উল্লেখ করতে চাই।
২০১১ সালে বিধানসভার সাধারণ নির্বাচনে বামফ্রন্টের পরাজয় ঘটে। তৃণমূল কংগ্রেস ও কংগ্রেস জোট নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে রাজ্য সরকারে ক্ষমতাসীন হওয়ার পর রাজ্য রাজনীতিতে বিরাট পরিবর্তন ঘটে গেছে। সত্তরের দশকের সন্ত্রাস, গণতন্ত্র হত্যা ও মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ এবং নানা ধরণের দমন-পীড়নের অবসান ঘটিয়ে বামফ্রন্ট সরকার গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে। সন্ত্রাস ও ব্যক্তিহত্যার রাজনীতির অবসান করতেও সমর্থ হয়েছিল বামফ্রন্ট সরকার। যা পুনরায় প্রথমে তৃণমূল কংগ্রেস ও কংগ্রেস জোট সরকার ও পরে তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের পক্ষ থেকে বল্গাহীনভাবে চালিয়ে রাজ্যে এক বিশেষ পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হয়েছে। ২০১১-র ১৩ই মে নির্বাচনের ফল ঘোষণার পরদিন থেকে রাজ্যে বেপরোয়াভাবে গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক অধিকারের ওপর শাসক দলের হামলা ও সন্ত্রাসের বলি হয়েছেন এখনও পর্যন্ত ১৫৭জন বামপন্থী নেতা ও কর্মী। লোকসভা নির্বাচন ঘোষণার আগে ১৪৭ জন এবং নির্বাচনের প্রস্তুতি ও ফলপ্রকাশের পর আরো ১০জন অর্থাৎ সর্বমোট ১৫৭ জন বামপন্থী নেতা ও কর্মী শাসক দলের হাতে শহীদের মৃত্যুবরণ করেছেন। বামপন্থী নেতা ও কর্মীদের বাড়িঘরের ওপর হামলা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও জীবন-জীবিকার ওপর আক্রমণ এখনও অব্যাহত। গরু-ছাগল-হাঁস-মুরগী-পুকুরের মাছ, মাঠের ফসল-বীজ ইত্যাদিও লুট হচ্ছে। ২৭হাজার ২৮৩জন কৃষক, বর্গাদার ও পাট্টাদার জমির অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। ৪৮হাজার ৩৮২জনকে নিজভূমে পরবাসী হয়ে যাযাবরের মতো ঘুরে বেড়াতে হচ্ছে। প্রায় ৬হাজার ১৮২টি বাড়ি ভাঙচুর করা, পোড়ানো বা লুট করা হয়েছে। সর্বশেষ রিপোর্ট পর্যন্ত কমপক্ষে ৯হাজার ৫২৯জনের কাছ থেকে ভয় দেখিয়ে বা রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টি করে ২৭ কোটি ৮৭ লক্ষ ৮হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেছে শাসক দলের দুষ্কৃতীরা। এই দুষ্কৃতীরা বামপন্থীদের ১হাজার ৩৬৫টি পার্টি অফিস ও বিভিন্ন বামপন্থী গণসংগঠনের ৩৯৮টি অফিস হয় ভাঙচুর, নয় লুট বা দখল করেছে। মিথ্যা মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে ৫হাজার ৭৩২জন বামপন্থী নেতা-কর্মীকে। এই সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে।
আমাদের রাজ্য নারী নির্যাতন, শ্লীলতাহানি, ধর্ষণ ও নারীর ইজ্জত লুটের ঘটনায় সারা দেশে প্রথম স্থান অধিকার করেছে। শারীরিকভাবে নির্যাতিতা হয়েছেন ১হাজার ৩৫জন নারী। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পুলিস প্রশাসন অপরাধীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যথা স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় শাসক দলের সংগঠিত সন্ত্রাসের শিকার হচ্ছে। শাসক দলের প্রত্যক্ষ মদতে অসদুপায়ে ছাত্র ভর্তি নিয়ন্ত্রণ, নানা কায়দায় জোর-জুলুম করে তোলা আদায় ও পরীক্ষায় গণ-টোকাটুকিতে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে, যা শিক্ষার অঙ্গনকে কলুষিত করা হচ্ছে। এই সব কথা স্মারকলিপিতে উল্লেখ করে গত ৯ই জুন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আমরা পেশ করে প্রতিকার দাবি করেছি। দাবিপত্র উপসংহারে উল্লেখ করবো। এমনকি, কয়েকদিন আগে চিকিৎসক হওয়ার জন্য নেওয়া এম বি বি এস পরীক্ষাতেও শাসক দলের প্রতিনিধিরা টোকাটুকিতে সাহায্য করতে ইনভিজিলেশনের কাজ করেছে।
ষোড়শ লোকসভা নির্বাচনে সঙ্ঘ পরিবারের নেতা শ্রীযুক্ত নরেন্দ্র মোদী নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের মতো তিনি নির্বাচনী প্রচারে সারা দেশে চার্টার্ড বিমানে ঘুরে ঘুরে উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান করার কথা বলেছেন। আরো বলেছেন, তিনি সুশাসন দেবেন। এই কথা হয়তো নতুন প্রজন্মের ভোটদাতাদের আকৃষ্ট করেছে। আর আকৃষ্ট করেছে সমাজের বিভিন্ন অংশের মানুষের স্বার্থে উন্নয়নের কর্মসূচীর একটু ভিন্ন কায়দায় পরিবেশিত প্রচার। বিভিন্ন সংবাদসূত্রে জানা যাচ্ছে, দীর্ঘদিন ধরে এই প্রচারধারা চালানোয় সম্ভবত বি জে পি-র খরচ হয়েছে কম করে ১০হাজার কোটি টাকা। এবার লক্ষ্যণীয় ছিল, বৃহৎ ব্যবসায়ী ও কর্পোরেট হাউসের পক্ষ থেকে শ্রীযুক্ত মোদী ও তাঁর দলের প্রতি ব্যাপক পৃষ্ঠপোষকতা। স্বাভাবিকভাবে, বৃহৎ ব্যবসায়ী ও কর্পোরেট হাউসের স্বার্থের প্রতি নজর দিয়ে দেশের আপামর জনগণের স্বার্থ দেখা মোদী সরকারের পক্ষে সম্ভবত কষ্টকল্পিত পরিকল্পনা। ভবিষ্যতে আমরা দেখতে পাবো এই সরকার কাদের জন্য অর্থনৈতিক নীতি পরিচালনা করে। বারান্তরে মোদী সরকারের কার্যকলাপ নিয়ে আলোচনা করা যাবে। কারণ, এখন হয়তো কোনো কোনো ক্ষেত্রে জনগণের মনমোহিনী কিছু কর্মসূচী বি জে পি সরকার গ্রহণ করবে। কিন্তু মৌলিক অর্থনৈতিক কার্যকলাপ না হলে শ্রমিক, কৃষক ও সাধারণ মানুষের জীবনযন্ত্রণা বাড়বে ছাড়া কমবে না।
১৯৭১ সালে পঞ্চম লোকসভা নির্বাচনের সময় শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী সারা দেশে ‘গরিবি হটাও’-এর স্লোগান সামনে রেখে নির্বাচনী প্রচার পরিচালনা করেছিলেন। সেই সময় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষিতে শ্রীমতী গান্ধীর একটু ভিন্ন মাত্রার ভাবমূর্তি গড়ে উঠেছিল। এবং নির্বাচনে শ্রীমতী গান্ধীর কংগ্রেসের ৩৫২টি আসনে (৪৩.৬৮শতাংশ ভোট) জয় হয়েছিল। তখন লোকসভায় মোট আসন ছিল ৫১৮টি। দেশে গরিবি হটানোর চটকদারি কথা ও জনগণের জীবনের সমস্যা সমাধান করার কথা বলে শ্রীমতী গান্ধী নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার তৈরি করার পর ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী)-র পলিট ব্যুরোর পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল....‘নির্বাচন আসে যায়। জনগণের সমস্যা যথারীতি থেকেই যায়। একমাত্র মুর্খেরাই মনে করবে যে ইন্দিরা গান্ধীর সাফল্য জনগণের মৌলিক সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করবে। যতদিন পুঁজিবাদী পথে দেশের নীতিসমূহ পরিচালিত হবে, ততদিন জনগণের দুঃখকষ্ট বেড়েই যাবে। যদিও বেকার সমস্যা সমাধান ও অন্যান্য সমস্যা সমাধানের জন্য বড় বড় বুলি শোনা যাবে। পক্ষান্তরে ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক সঙ্কটের জন্য দেশের জনগণের দুঃখ-দুর্দশা বাড়তেই থাকবে। বিরাট সংখ্যাগরিষ্ঠ কংগ্রেস তখন শুধু আক্রমণই সংগঠিত করবে। স্থায়ী কংগ্রেস সরকার স্থায়ী অত্যাচার এবং স্থায়ী আক্রমণের সরকারে পরিণত হবে।’ অতীতে শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে ক্ষমতায় আসা কংগ্রেস সরকার যেভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিল এবং শ্রমজীবী মানুষের অধিকার হরণ করেছিল, তা বি জে পি সরকারের পক্ষ থেকেও অন্য পদ্ধতি-প্রকরণে প্রয়োগ করা হবে।
সারা দেশের সঙ্গে আমাদের রাজ্যেও বি জে পি এবং আর এস এস হিন্দুত্বের আদর্শভিত্তিক কার্যকলাপ প্রচারে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। কেন্দ্রে এই দলের সরকার থাকায় যে কোনো সময়ে রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত সরকারের সঙ্গে বোঝাপড়া করে এখানে বিপদ ডেকে আনতে পারে। আমাদের কখনও ভুলে গেলে চলবে না যে ১৯৯৮ সালে তৃণমূল কংগ্রেস তাদের জন্মলগ্ন থেকেই বি জে পি-র সঙ্গে জোট বেধেছিল এবং আজকের মুখ্যমন্ত্রী শ্রীমতী মমতা ব্যানার্জি কেন্দ্রে তৎকালীন শ্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন।
বর্তমান সময়ে দেশের সামগ্রিক রাজনীতির বাঁক ও মোড়ের প্রতি আমাদের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রেখেই পথ চলতে হবে এবং আত্মবিশ্বাসে ভর করে আন্দোলন-সংগ্রামের ভবিষ্যত কর্মসূচী নির্দিষ্ট করতে হবে। কিন্তু আমাদের রাজ্যে এখন যা চলছে তার প্রেক্ষিতে গণ-আন্দোলনের কর্মসূচীতে আমাদের সর্বশক্তি নিয়োজিত করতেই হবে। ১৯৭৫ সালের ২৫শে জুন সারা দেশে জরুরী অবস্থা জারি করে গণতন্ত্র ও ব্যক্তিস্বাধীনতার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। সেই দিনটিকে স্মরণে রেখে আগামী ২৫-২৭শে জুন এরাজ্যে বর্তমান সন্ত্রাস ও গণতান্ত্রিক অধিকার হরণের প্রতিবাদে সারা রাজ্যের গণতন্ত্রপ্রিয় জনগণের পক্ষ থেকে রাজ্য বামফ্রন্টের উদ্যোগে কলকাতায় কেন্দ্রীয়ভাবে অবস্থান-বিক্ষোভের কর্মসূচী নেওয়া হয়েছে। এই কর্মসূচীকে সামনে রেখে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে সম্ভবপর সবক্ষেত্রে প্রচার সংগঠিত করা হবে, যা ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে।
যে দাবি সনদকে ঘিরে এই প্রচার সংগঠিত হচ্ছে এবং কলকাতায় কেন্দ্রীয়ভাবে অবস্থান-বিক্ষোভ কর্মসূচী হবে, সেই দাবিগুলি হলোঃ
(১) বামপন্থীসহ বিরোধীদের এবং প্রত্যেক নাগরিকের প্রতিবাদ ও সমালোচনা করার অধিকার, গণতন্ত্র, ব্যক্তিস্বাধীনতা ও মানবাধিকার রক্ষার জন্য অবিলম্বে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
(২) আক্রমণ, খুন সন্ত্রাস ও লুঠতরাজ বন্ধ করতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট অপরাধীদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে।
(৩) শ্রমিক, কর্মচারী, শিক্ষক, কৃষক খেতমজুরসহ সাধারণ মানুষের জীবন জীবিকার ওপরে আক্রমণ বন্ধ করতে হবে।
(৪) বিরোধী রাজনৈতিক দলের কর্মী সমর্থক ও সাধারণ মানুষের ওপরে চাপিয়ে দেওয়া মিথ্যা অভিযোগে দায়ের মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে। ঘরছাড়া প্রতিটি মানুষকে ঘরে ফেরাতে হবে। বামপন্থীসহ সমস্ত বিরোধী রাজনৈতিক দল ও গণসংগঠনগুলির কার্যালয়ের সুরক্ষা দিতে হবে এবং সভা সমিতির অধিকার সুনিশ্চিত করতে হবে।
(৫) নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, শ্লীলতাহানি ও খুনের জন্য দায়ী অপরাধীদের কঠোর শাস্তি দিতে হবে। কর্তব্যে অবহেলার জন্য দায়ী পুলিসকর্মীদের সাজা দিতে হবে।
(৬) পুলিস প্রশাসনকে দলীয় চাপের উর্ধ্বে উঠে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
(৭) রাজ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অটুট রাখতে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। শান্তিশৃঙ্খলা, ঐক্য, সংহতি ও সম্প্রীতি রক্ষায় রাজ্য-জেলাসহ প্রতিটি স্তরে সর্বদলীয় সভা করতে হবে।
(৮) শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে নৈরাজ্য মুক্ত করতে হবে। পরিচালন সমিতি ও ছাত্রসংসদ নির্বাচনে সুস্থ গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় রাখতে হবে। মেধার ভিত্তিতে স্বচ্ছতার সঙ্গে ছাত্রছাত্রীদের ভর্তির ব্যবস্থা করতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট সকলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। পুলিসী হেফাজতে সুদীপ্ত গুপ্তের মৃত্যুর বিচারবিভাগীয় তদন্তের জন্য অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে হবে।
(৯) নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। পেট্রোপণ্য এবং সারের দাম কমাতে হবে। সামাজিক নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থার সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে এবং সকলের জন্য সুনিশ্চিত করতে হবে। পৌরসভা-পঞ্চায়েতে বেনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধ করে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া চালু করতে হবে।
(১০) সমস্ত বন্ধ কল-কারখানা, চা বাগান ও প্রতিষ্ঠানগুলি খুলতে হবে। কর্মসংস্থানের জন্য কৃষি ও শিল্পোন্নয়নের ব্যবস্থা করতে হবে।
জনগণের প্রাত্যহিক জীবন-জীবিকার সংগ্রাম, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে লড়াই এবং গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার সংগ্রাম কখনও সময়ের বাঁধনে বেধে রাখা যায় না। জনগণের উপলব্ধির মধ্য দিয়ে সচেতনভাবে সমাজের বিভিন্ন অংশের মানুষের ঐক্য ও সংহতির ভিত্তিকে শক্তিশালী করার প্রয়াসে ব্রতী হতে হয়। দু’বছর আগে আমরা উল্লেখ করেছিলাম, এখন যে আক্রমণ কমিউনিস্ট ও বামপন্থীদের বিরুদ্ধে শাসক দল নামিয়ে এনেছে তা ভবিষ্যতে সাধারণ গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষের ওপরেও নেমে আসবে। সেধরণের বেশ কিছু ঘটনা এখন ঘটে চলেছে।
আবার রাজ্যের কোনো কোনো এলাকায় সাম্প্রদায়িক শক্তির সক্রিয়তাও লক্ষ্য করা যাচ্ছে। মনে রাখতে হবে, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে বামপন্থীদের আপসহীন ও ধারাবাহিক লড়াইয়ের ফলেই এরাজ্যে সম্প্রীতির মহান ঐতিহ্য গড়ে উঠেছে। এই অশুভ শক্তি সম্পর্কে সব ধরণের গণতন্ত্রপ্রিয় প্রগতিশীল শক্তির পক্ষ থেকে আরো সচেতন উদ্যোগ নিতে হবে। শ্রেণী আন্দোলনের শত্রু সাম্প্রদায়িক শক্তিকে জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন করার ব্যাপক কর্মসূচী নেওয়ার জরুরী প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। অবশ্যই একাজে কমিউনিস্ট ও বামপন্থীদের অগ্রণী ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে।
জনগণের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তুলে রাজ্যে ঐক্য, সংহতি, সম্প্রীতি ও শান্তি-শৃঙ্খলার পরিবেশকে উন্নত করতে এবং নতুন করে সাম্প্রদায়িক বিভাজনের রাজনীতিকে পরাস্ত করতে হবে। এই লক্ষ্যেই গুরুত্ব আরোপ করতে হবে শ্রমিক-কৃষক আন্দোলনকে তীব্র করার ওপর। সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকার সংগ্রাম, গণতন্ত্রের সপক্ষে সংগ্রাম, জিনিসপত্রের দরদাম বৃদ্ধি এবং সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী লড়াই নতুন আঙ্গিকে গড়ে তোলাই আজকের দিনের জরুরী কাজ। আসুন, আমরা সকলে মিলে সেই শপথই গ্রহণ করি।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জুন, ২০১৪ রাত ৯:০০