ঢাকা ১
করোনা আসি আসি করে অবশেষে এসেছে, অফিস থেকে বাসায় এসে সবাইকে সাবধান করি। কিন্তু আমার বাপ অদ্ভুত ভাবে তাকায়, অনেকটা হুংকার দিয়েই বললেন বাংলাদেশে করোনা আসে নাই। এগুলা ভোগাস। ঠিক সেই সময় কাজিন তাকে ফোন দেয়। তিনি ফোন রিসিভ করেই বললেন "দেশ আছে নাকি? সব শেষ করোনায়"...আমি পুরাই অবাক, এর হেতু কি? চট করে মন পড়লো.."তিনিতো কঠিন বিটিভি লীগার, বিটিভিতে তখনও করোনা মুক্ত বাংলার কথা প্রচার করে।"
দুই দিন পর দেখি তিনি বাড়তি কিছু চাল, ডাল, আলু কিনছেন যেন বাসা থেকে বাহির হতে না হয়।
ঢাকা ২:
জুনের ২ তারিখ ইনচার্জ এক কাস্টোমার নিয়ে গাজীপুর ভিজিট করেন। ৩, ৪ জুন আমি তার সাথে পাশাপাশি বসে অফিস করি, ৫ তারিখ তার জ্বর আসে, তিনি ৭, ৮ তারিখ ছুটি কাটান, ৯ তারিখ ভালো বোধ করলে অফিস করেন আর ৯ তারিখই সেই কাস্টোমার মারা যান। পরে ইনচার্জ এর করোনা টেস্ট পজিটিভ আসে। এই অবস্থায় আমি অফিস করি আর বাসায় আইসোলেশনে থাকি। অদ্ভুত এক সময় পার করি।
ঢাকা ৩
তখন আমি ফুলটাইম স্টুডেন্ট। কাজিন জানালো নানা বাড়ির দিকের এক স্কুলের নাইট গার্ড এর মেয়ে এইচএসসিতে ৪.৯৯ পেয়েছে মানবিক শাখা থেকে। আমি কাজিনকে বলি মেয়েটা যেন ঢাবিতে পরিক্ষা দেয়। কাজিন জানালো, মেয়েটার সেই অবস্থা নাই। আমিই বললাম, তার ঢাবিতে পরিক্ষার ফর্ম আর একটি গাইড বই দিলে সে প্রস্তুতি নিতে পারবে কিনা। কাজিনটি তার সাথে কথা বলে আমাকে কনর্ফাম করল। সেই অবস্থায় আমার কাছে যা ছিল তাই দিয়ে তাকে ঢাবিতে পরিক্ষার ফর্ম আর একটি বিগত বছরের গাইড বই কিনে তাকে পৌছে দেই। মাঝে মাঝে কাজিনের কাছে তার আপডেট নিতাম। ভালই প্রস্তুতি নিচ্ছে। সময় ঘনিয়ে আসলো পরিক্ষার। তাকে আমি প্রথম দেখি পরিক্ষার শেষে। পরিক্ষা শেষে বেরিয়েই আমাকে জানালো সে সব দিয়েছে, যা জানতো না, তাও। আমি কি কমু, হতাশ হলাম, কি করছে মেয়ে, সর্বনাশ, অসহায়ের মত লাগলো, সেই বারই প্রথম ঢাবির পরিক্ষায় নেগেটিভ মার্কিং শুরু। এতো দিনের পরিশ্রম শেষ।আমি আর বেশি কিছু বলি নাই তাকে। বিদায় নিয়ে চলে আসি।
পরে শুনি, সে বিএম কলেজে অর্থনীতি নিয়ে পড়ছে। তারও পরে শুনি বিয়ে করে সংসার কর্মে ব্যস্ত সে।
ঢাকা ৪
পরের বছর কাজিন একটি ছেলের কথা জানালো, বিজ্ঞান বিভাগে এইচএসসিতে ভালো পাশ দিয়েছে। মেডিক্যালে পড়ার ইচ্ছা, কাজিনই একটু ইনসিস্ট করে তার জন্য কিছু করা যায় কিনা। তার মা নাকি তাকে পড়ার জন্য ভিক্ষা পর্যন্ত করছে। যাইহোক আমি আমার মেডিক্যালে পড়ুয়া বন্ধুকে বিস্তারিত অবহিত করলে সে তার মেডিক্যালে পরিক্ষার প্রস্তুুর সমস্ত বই আমাকে দেয় আর বলে কোচিং এর জন্য একটু সময় লাগবে। দিন দশেক পর বন্ধু জানায় তার পরিচিত সলিমুল্লাহ মেডিক্যালের বন্ধু বিনা ফিতে কোচিং এর ব্যবস্থা করেছে। সেই বন্ধুর সাথে কথা বলে ছেলেটিকে ফোন দিয়ে জানাই রেটিনার কোচিং এ ভর্তির জন্য। তার কথা শুনে মনে হইছিল তাকে ধইরা আছার মারি। ঘটনা হইল সে ঢাকার যাত্রাবাড়িতে তার এক আত্মীয়র বাসায় আসার পর তাকে তিন হাজার টাকা দিয়ে ইউসিসিতে ভর্তি করাইছে। "তো আমাকে জানাইলা না ক্যান?" "সরি ভাইয়া ভুল হইছে,তাহলে ওইটা বাদ দিয়ে দেই", ''যেখানে পড়তাছো পড়ো, সেইখানে পড়েও মেডিক্যাল প্রিপারেশন নেওয়া যাবে"। কিছু কথার পর ফোন রেখে দেই।
পরে শুনি, সে বিএম কলেজে রসায়ন নিয়ে পড়ছে।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ৯:৪৩