ঢাকা ১
সরকারী হাসপাতালে আয়া হিসাবে কাজ করতেন তিনি। অবসরে এককালীন ১৯ লক্ষ টাকা পান পাশাপাশি অবসরকালীন ভাতাও পান এখন। একটা ব্যাংকে টাকাটা ফিক্সড ডিপোজিট হিসাবে রেখেছেন। যখন রাখেন তখন ত্রৈমাসিক রেট ছিল ৭.৫%। যা পেতেন তা দিয়ে ভালো ভাবেই চলে যেত। মাঝে সেখান থেকে ১.৫ লক্ষ টাকা উত্তোলন করে নাতির বিয়েতে খরচ করেন। এর মাঝে তিনি আবার অসুস্থ হন জটিল কি এক রোগে। আবার লক্ষানেকের মত টাকা উত্তোলন করেন। গত এপ্রিল থেকে ত্রৈমাসিক রেট নির্ধারন করা হয় ৫% যেহেতু "প্রম" আবদার করেছেন। তাই অবসরপ্রাপ্তীর সেই ডিপোজিট দিয়ে যা আয় হচ্ছে তা নুন আনতে পান্তা ফুরানোর মত অব্স্থা। সরকারী সঞ্চয়পত্র কেনারও নানান ঝামেলা। টাকাটা তিনি লাগাবেন। কিন্তু এই সময় টাকা একবার হাত থেকে বেড়িয়ে গেলে আর ফেরত পাবার সম্ভবনা খুবই কম। এতগুলো টাকা কিন্তু ভ্যালু কত কম!
ঢাকা ২
অফিসে এক বয়স্ক চাচা আসেন তার মনিবের পক্ষ থেকে। কথায় কথায় জানতে পারলাম তার চার মেয়ে। সবাইকেই বিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু মেঝ মেয়ের হাজবেন্ড একটা বাচ্চা রেখে মারা যান। সেই মেয়েকে নিয়ে তিনি জীবনের এই সময়টা পার করছেন।
ঢাকা ৩
গলির এক বাসার সামনে এক মহিলা এপার্টমেন্ট এর বয়স্ক দারোয়ানকে চার্জ করছে "আমাকে দেখে কি ফ্ল্যাটের মালিক মনে হয় না? আপনি আমাকে দেখে সালাম দেন না কেন?"
বরিশাল ১
জিয়া নামে এক ড্রাইভার ছিলেন আব্বার অফিসে। তিনি সেই ৯০-৯১ সালের চুলের স্টাইল ফলো করতেন সব সময়। ৯০-৯১ সালে আমি তখন নতুন নতুন স্কুলে যাওয়া শুরু করেছি। সরকারী কলোনীতে থাকি। মাঝে মাঝে দেখতাম জিয়া আংকেলরা কলোনীতে মিছিল বের করতেন। "কেউ খাব কেউ খাবেনা, তা হবে না তা হবে না, স্বৈরাচারীর কালো হাত গুঁড়িয়ে দাও গুঁড়িয়ে দাও"। সরকারী চাকুরি নিয়মিত করনেরও আন্দোলন করা হত। কিন্তু আজ পর্যন্ত তা আর হয় নাই।
তার সাথে শেষ আলাপ ২০০৩ সালে।তখন অফিসের কাজে বরিশাল থেকে ট্রাক নিয়ে এসেছেন ঢাকায়। সেই চুলের স্টাইল। সেই হাসি হাসি মাখা মুখ। বছরখানেক পর আব্বার কাছে শুনি তিনি ট্রাক অ্যাক্সিডেন্টে মারা গেছেন। অফিসকর্মীরা তাদের সাধ্যমত জিয়া আংকেলের পরিবারকে সহায়তা করেন। কিন্তু তার পরিবার সরকার এর কাছ থেকে কোন সহায়তা পান না। যেহেতু তিনি নিয়মিত কর্মী ছিলেন না। অথচ কোটি টাকার সরকারি গাড়ি দায়িত্ব নিয়ে চালিয়েছেন।
তিনি একবার ডিভি লটারিতে অংশগ্রহন করেন এবং ডিভি লটারি পান কিন্তু এইচ এস সি পাশ না হওয়া তিনি ভিসা পান না।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে অক্টোবর, ২০২০ রাত ৯:৩৭