গবেষকরা করোনা ভাইরাস থেকে মানবজাতিকে বাঁচানোর জন্য প্রাণান্তকর চেষ্টা করে যাচ্ছেন। কেউ নতুন ভ্যাকসিন আবিষ্কারের চেষ্টা করছেন কেউ নতুন ওষুধ আবিষ্কারের চেষ্টা করছেন। আবার কেউ কেউ পুরাতন কিছু দিয়ে কাজ হয় কিনা তাও গবেষণা করে দেখছেন।
এরমধ্যে গবেষকদের ১০০ বছরের পুরাতন একটা টিকার কথা ভাবছেন। টিকার নাম আমরা সবাই জানি -- বিসিজি। ব্যাসিলাস ক্যালমেট – গুউরিন বা সংক্ষেপে বিসিজি -- যক্ষ্মা রোগের টিকা। দুইটা সম্ভাবনা বা ধারণা থেকে গবেষকদের মাথায় এই টিকার কথা এসেছে। প্রথমত, তারা ভাবছেন যক্ষ্মার ফলে মানুষের ফুসফুস আক্রান্ত হয়, আবার করোনা ভাইরাসেও ফুসফুস আক্রান্ত হয় তা হলে এর মধ্যে কি কোন যোগ সূত্র আছে? দ্বিতীয় ভাবনাটা এসেছে পরিসংখ্যান থেকে। তারা লক্ষ্য করছেন যে সব দেশে বিসিজি টিকা দেয়া আছে সেই সব দেশে মানুষ কম আক্রান্ত হচ্ছে।
প্রশ্ন হচ্ছে: বিসিজি টিকা কি মানুষকে করোনা ভাইরাস থেকে রক্ষা করতে পারবে?
উত্তর হচ্ছে: আমরা এখনো জানিনা।
দেখা যাচ্ছে করোনা ভাইরাস কোন কোন দেশে প্রচণ্ড ভাবে আক্রমণ করেছে আবার কোন কোন দেশে কম আক্রমণ করেছে। এই পরিসংখ্যানকে মাথায় রেখে গবেষকরা একটা সাধারণ সূত্র বের করার চেষ্টা করছেন। তারা একটা সূত্র পেয়েছেন যে এশিয়ার প্রায় সব দেশে বিশেষ করে গরিব এবং অনুন্নত দেশগুলিতে বাচ্চা জন্ম হওয়ার অল্পদিনের মধ্যেই বাধ্যতামূলক ভাবে বিসিজি টিকা দেয়া হয়। কিন্তু ইউরোপিয়ান দেশগুলিতে বাধ্যতামূলক ভাবে দেয়া হয় না, শুধু প্রয়োজন হলেই দেয়া হয়। আর আমেরিকাতে বিসিজি টিকা দেয়াই হয় না। এরমধ্যে কি জন যোগসূত্র আছে? গবেষকরা এটা খুঁজে দেখছেন।
বৈজ্ঞানিকরা বিসিজি টিকাকে "ভাগ্যবান দুর্ঘটনা" বলেন। কারণ এই বিসিজি টিকা যদিও আবিষ্কার করা হয়েছিল যক্ষ্মা রোগের জন্য কিন্তু পরে দেখা গেছে শ্বাসতন্ত্রের অন্যান্য সংক্রমণের ক্ষেত্রেও এটা ভাল কাজ করে। তাছাড়াও সাধারণ ভাবে মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। উদাহরণ হিসাবে, medRxiv এর এক গবেষণায় দেখা গেছে পশ্চিম আফ্রিকাতে বিসিজি টিকা দেয়ার ফলে শিশু মৃত্যুর হার ৫০% কমে গেছে। তাদের শ্বাসযন্ত্রে সংক্রমণ, সেপসিস এবং রক্ত দূষণ কমে গেছে।
জীবন্ত মাইকোব্যাক্টেরিয়াম বোভিসের দুর্বল আকার দিয়ে এই বিসিজি ভ্যাকসিনটি তৈয়ার করা হয়েছে। এই ভ্যাকসিনটি ১৯২০ সালে প্যারিসে আবিষ্কৃত হয়। পরে সারা বিশ্বে এটা পাঠানো হয়। এখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশ নিজ নিজ ফর্মুলা অনুসারে জীবন্ত বেক্টেৰিয়া দিয়ে এই বিসিজি টিকা তৈরি করে। বোস্টন চিলড্রেন হাসপাতালের ভ্যাকসিন প্রোগ্রামের পরিচালক এবং হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের অধ্যাপক ডাঃ ওফের লেভি বলেছেন, একেকটা বিসিজি টিকার একেক ধরণের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমা আছে।
আমেরিকার স্বাস্থ্য ও মানব পরিষেবা বিভাগ বলেছে, সাধারণত জীবন্ত ভ্যাকসিনগুলি (যেমন বিসিজি) জীবাণুর বিরুদ্ধে শক্তিশালী এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বজায় রাখে এবং কখনও কখনও এমনকি আজীবন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বজায় রাখে। কিন্তু তুলনা করলে নিষ্ক্রিয় ভ্যাকসিনগুলি (যেমন ফ্লু ভ্যাকসিনগুলি) তেমন "শক্তিশালী" রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টি করে না।
বিসিজি টিকা দেয়ার ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এমন হয় যে এটা শুধু যক্ষ্মার জীবাণুর বিরুদ্ধেই যুদ্ধ করে না। বরং যেকোনো জীবাণু শরীরে ঢুকলেই একটা প্রাথমিক প্রতিরক্ষা গড়ে তুলে।
তবে বৈজ্ঞানিকরা এখনো এই ব্যাপারে নিশ্চিত না। তাই আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া এবং নেদারল্যান্ডে করোনা ভাইরাসের ক্ষেত্রে বিসিজি টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু হয়েছে।
সূত্র:
১. লাইভ সায়েন্স
২. medRxiv
৩. রিসার্চ গেইট
৪. ভেকসিন ডট গভ
৫. U.S. Department of Health and Human Services
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৯:২৬