আমেরিকা সৌদি আরবকে অত্যাধুনিক প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য ১ বিলিয়ন ডলারের একটি চুক্তি করেছে।
রাজকীয় সৌদি বিমানবাহিনীকে প্রশিক্ষণ দেয়ার লক্ষ্যে সম্পাদিত চুক্তিটি স্টেট ডিপার্টমেন্ট অনুমোদন করেছে।
এই প্রশিক্ষণ থেকে সৌদি আরব কি লাভ করবে?
১. ফ্লাইট প্রশিক্ষণ
২. প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ
৩. বিশেষ প্রশিক্ষণ
৪. পেশাদার সামরিক প্রশিক্ষণ
৫. ইংরেজি ভাষা শিক্ষার প্রশিক্ষণ
৬. প্রোগ্রাম ব্যবস্থাপনা
৭. প্রশিক্ষক প্রশিক্ষণ
৮. সিমুলেটর
৯. চিকিৎসা সহায়তা ইত্যাদি।
৩৩৯ জন প্রশিক্ষকের এই দলে থাকবে ভ্রাম্যমাণ প্রশিক্ষণ দল, বিশেষ প্রশিক্ষণ দল এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা দল।
এই প্রশিক্ষণ কর্মসূচির সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিকগুলির মধ্যে একটি হল যে যুদ্ধের সময় কি ভাবে "বেসামরিক হতাহত পরিহার করা যায়" এটার প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। তাছাড়া "সশস্ত্র সংঘাতের আইন, মানবাধিকার, কমান্ড ও নিয়ন্ত্রণ" এই বিষয়গুলিও অন্তর্ভুক্ত থাকবে৷
এই চুক্তির মূল লক্ষ্য:
এই চুক্তির ফলে আমেরিকা তার পররাষ্ট্র নীতির লক্ষ্য এবং জাতীয় নিরাপত্তা লক্ষ্য অর্জন করতে পারবে। এই চুক্তির ফলে সৌদি আরবের নিরাপত্তা বৃদ্ধি পাবে যা মধ্যপ্রাচ্যে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
সৌদি আরবের কাছে সরঞ্জাম এবং সমর্থন বিক্রি এই অঞ্চলে ক্ষমতার ভারসাম্যের উপর কোন প্রভাব ফেলবে না বা আমেরিকার প্রস্তুতির ক্ষতি করবে না বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এই চুক্তি এটি ইঙ্গিত দিতে পারে যে আমেরিকা এবং সৌদি আরবের মধ্যে সম্পর্কের উন্নতি হচ্ছে।
আমেরিকা সৌদি আরবের উপর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা শিথিল করবে?
আমেরিকা সৌদি আরবের কাছে অস্ত্র বিক্রির উপর কিছু নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার পরিকল্পনা করছে। ইয়েমেনে আমেরিকার অস্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে বলে উদ্বেগ প্রকাশের পর ২০২১ সালে প্রেসিডেন্ট বাইডেন এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিলেন।
ইয়েমেনে যুদ্ধ:
২০১৫ সালের মার্চ মাস থেকে সৌদি আরব ইয়েমেনে ইরান সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে। এতে অনেক আরব রাষ্ট্র সৌদিদের সাথে যোগ দেয়। সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট ইয়েমেনের বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুতে ১৫০ টিরও বেশি বিমান হামলা চালিয়েছে, যার মধ্যে বাড়ি, হাসপাতাল এবং অন্যান্য অ-সামরিক স্থান রয়েছে। এই পর্যন্ত এই যুদ্ধে ২৪ হাজার ইয়েমেনি নিহত হয়েছে।
সৌদি আরব মুসলিম হয়েও ইয়েমেনের ২৪ হাজার মুসলিম মারল কিন্তু কোন বিক্ষোভ, বিদ্রোহ তো দূরের কথা বিশ্বের কোন মুসলিম টু শব্দটা করলো না। পক্ষান্তরে আমেরিকা এই হত্যার প্রতিবাদে ২০২১ সালে সৌদিতে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করে দেয়।
এই চুক্তির তাৎপর্য:
১. ৭ অক্টোবর হামাসের আক্রমণের পর আরব রাষ্ট্রগুলি ইরানের শক্তি সম্পর্কে সতর্ক হয়ে গেছে। তাই তারা তাদের শক্তি বৃদ্ধি করতে চাইছে।
২. ইরানের শক্তি আরো বৃদ্ধি পেলে আরব রাষ্ট্রগুলি তাদের বিদ্যমান শক্তি দিয়ে তা মোকাবেলা করতে সক্ষম হবে না।
৩. সৌদি আরবকে ইরান ইতোমধ্যে তিন দিক থেকে ঘিরে ফেলেছে। উত্তর দিক থেকে লেবাননে হিজবুল্লাহ, এবং সিরিয়া, পূর্ব দিক থেকে ইরাকের শিয়া গ্রুপ কাতাইব হিজবাল্লাহ এবং দক্ষিণ দিক থেকে ইয়েমেনের হুতি। তাছাড়া পূর্বদিকে ইরান নিজেই অবস্থান করছে।
৪. হরমুজ প্রণালী এবং বাব আল মান্দাব প্রণালী দুইটাই ইরান এবং ইরান সমর্থিত হুতিদের আওতায়। এই দুই প্রণালী বন্ধ হলে আরব রাষ্ট্রগুলির তেল বাণিজ্যে ধ্বস নামবে।
৫. আমেরিকা মধ্যপ্রাচ্যে পারতপক্ষে সৈন্য পাঠাবে না। সেই ক্ষেত্রে আরব রাষ্ট্রগুলির নিজেদের নিরাপত্তা নিজেদেরকেই নিশ্চিত করতে হবে।
৬. হুতিরা যখন সৌদি আরবে ড্রোন হামলা করে তেল শোধনাগারগুলিকে ধ্বংস করে দেয়, তখন সৌদি আরব আমেরিকার কাছে প্রতিরক্ষা চেয়েছিল। আমেরিকা তা দিতে অস্বীকার করে। এতে সৌদি আরব ক্ষিপ্ত হয় এবং আমেরিকার সাথে সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায়।
৭. এই চুক্তির মাধ্যমে সম্পর্ক আবার ভাল হওয়ার ইঙ্গিত দেয়। তবে চুক্তির ধরন দেখে মনে হচ্ছে আমেরিকা আগের নীতিতেই আছে। অর্থাৎ আরবের নিজের নিরাপত্তা নিজেকেই নিশ্চিত করতে হবে। প্রশিক্ষণ এবং অস্ত্র দুইটাই দিবে কিন্তু আমেরিকা সরাসরি জড়িত হবে না।
[তথ্য যাচাই, বিশ্লেষণ এবং ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্য নেয়া হয়েছে।]
সূত্র: দা ডেইলি ডাইজেস্ট, সৌদি গেজেট, ভয়েস অফ আমেরিকা ইত্যাদি।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ১১:৫২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




