Reading is an activity subsequent to writing – more resigned, more civil, more intellectual. - Jorge Luis Borges
অরণ্যের মায়াই শুধু শেখাননি বিভূতি; বিষণ্ণ দুপুরে নিশ্চিন্দিপুরের ঐ জংলা জায়গার দিকে অপুর নির্লিপ্ত তাকিয়ে থাকা, কী ভাবনা, রাংতার কথা, রেল দেখতে যাওয়া, বাঁশঝাড়ের ভেতর ছুটে আসা দুরন্ত দূর্গা – এগুলো, আরও অনেককিছু, অন্যকিছু, শব্দের আড়ালে, শব্দের ফাঁকে, উপরে, নিচে, বাক্য শেষ হওয়ার পর সাদাশূন্য ঐ খালি জায়গাটার দিকে, দুটো লাইনের মাঝে না-বলা কথা – এইসব, সবকিছু, আনমনে পড়তে থাকার সময় তুমি শুধু এইসবই ভাবছো না প্রিয় পাঠক, তুমি ভাবছো আরও অনেককিছু। তুমি ভাবছো সময়ের কথা, অন্য কিছু, অন্য মাত্রায়, অন্য ব্যাপ্তিতে, ইন্দির ঠাকুরণের চলে যাওয়ার সময় মাড়িয়ে যাওয়া ঘাসের কথা, সর্বজয়ার ব্যাখ্যাতীত সহিষ্ণুতার পাশে পড়ে থাকা ভাঙা হাঁড়ির কথা, বোন হারানো বালকের শৈশবের ক্রান্তিলগ্নে যখন পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন "মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে, ঠাঙাড়ে বীরু রায়ের বটতলায় কি ধলচিতের খেয়াঘাটের সীমানায়?"...তুমি কি জান বিভূতি, তুমি কি জানো তুমি বানিয়েছো কী এক স্বপ্নভূবন, বল্লালী-বালাই, আম-আঁটির ভেঁপু, অক্রূর সংবাদে তুমি দেখিয়েছো এক অন্যভুবন, প্রতিটি পাঠক নিজের মতন করে খুঁজে নিয়েছে একজন অপু, একজন দূর্গা, একজন সর্বজয়া, একজন হরিহর! এগুলোই কী ভীষণ বিস্ময়!
তাই যখন উচ্চারিত হয়, ‘অপু’ একবারই তৈরী হতে পারে, বিভূতি বন্ধ করে গেছেন সব পথ, বাংলার কোন এক রোমান্টিক বালককে নিয়ে লেখার সব পথ বিভূতি বন্ধ করে গেছেন – তখন ভাবনা হয়, বাল্য-শৈশবের কোন এক সময় এক ‘অপু’ যার কাছে এসে দাঁড়িয়েছে, সেই ‘অপু’ তো আর একা নয়! সে যে অবতার হয়ে বেঁচে আছে প্রতিটি পাঠকের কাছে। স্ব-চরিত্রে, স্ব-আবিষ্টতায়।
নিজেকে পড়া তাই, পাঠক হিসেবে, যদি তুমি লেখক হও, যদি তুমি কবি হও।
এই জীবন যেমন তোমার লেখার খাতা, তুমি লিখে চলেছো নিরন্তর, সময় পার হচ্ছে, তুমি করছো নিত্য নতুন শব্দচয়ন, তুমি পাতা উলটাচ্ছো, আর লিখে যাচ্ছো। অবিশ্রান্ত, ক্লান্তিহীন। বিমর্ষচিত্তে, কিংবা প্রফুল্লতায়। তুমি লিখেই যাচ্ছো। হ্যাঁ, তুমি তো লিখবেই, কিন্তু আমি শুধু বলবো এই ক্ষণে, চুপচাপ, ফিসফিস, একটু রোসো বন্ধু। তোমার খাতাখানি শেষ হওয়ার আগেই একটু না হয় পড়ে নাও নিজেকে, একজন পাঠক হিসেবে। নয় কোন হিসেব মেলানো, ওটা তো মিলবেনা কভু, শুধু একটু পড়ে নাও পাতা, তোমার পেছনের পাতাগুলো, যখন কাউকে তুমি ফেলে এসেছো নবম পৃষ্ঠায়...
তোমায় আমি ফেলে এসেছি নবম পৃষ্ঠায়, হারিয়ে যাওয়া এক ছেঁড়া মলাটের বই, তবু নির্লজ্জ সরল দোলকের মতন তোমার ফিরেফিরে আসা, মৃদু পায়ে, টিকটিক, আকঁড়ে আছো চোরকাঁটা। আমার ক্ষীণকায় দেহের কোথাও নেই তুমি, নেই তোমার স্পর্শ, শিউরে উঠা ছায়া, কেঁপে উঠা রাতের পাখি। তুমি দুপুরের রোদে পুড়ে যাওয়া রুধির, হিমশীতল রাতের উত্তপ্ত নিঃশ্বাস।
তোমায় আমি ফেলে এসেছি আজ বহুদূর, তবু তোমার অকারণ সঙ্গ আমার একান্ত স্বপনে, নিরালায় চুপচাপ তুমি নিঃসঙ্গ জলের প্রতিচ্ছায়ায়।
আমিতো ভালোবাসিনা; হ্যাঁ, আমিতো ঘৃণা করি প্রেম, আমিতো লিখিনা সেই মুহূর্ত, অন্তরালে চাপা দেয়া সমাধিতে, তোমার শীতল বুকের উপর আলতোভাবে শুইয়ে, যেভাবে সৈনিকের ফেলে যাওয়া ক্রুশ পরম মমতায় বুকপকেটে রেখে দেয় কোন সহযোদ্ধা; অথচ এই আমিতো করিনি কোন যুদ্ধ তোমার সাথে, তোমার বৈপরীত্যে, আমি ছিলাম নির্লিপ্ত, নিঃসাড়, আর তাই তোমার শবসৎকারে আমি কী ভীষণ উদার, তুমি কি আমায় ধন্যবাদ দেবেনা!
সকালের অনুতাপবিদ্ধ শিশিরের মতন আমি ঝরে যাইনা, উদ্বায়ী হইনা, আমি উড়তে পারি না ভাবের সান্দ্রতায়। ডানছাড়া ইউনিকর্ন, নিঃস্বার্থ অথচ একাকী। শুষ্ক মৃত্তিকার উপর ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা প্রস্তর তুমি ছুঁয়ে দেখোনি কখনও, তুমি ছুঁয়েছো আমায়, কিন্তু বোঝোনি তার শীতলতা, শ্বাসরোধ। তুমি কোথায় শুনেছো কুলকুল বয়ে যাওয়া নদী? অনর্গল নিঃসৃত প্রেমরস? তুমি বিভ্রম, তুমি মোহ। তুমি বিশ্বাস করতে ঐন্দ্রজাল, মায়া; এগুলোই তোমার প্রথাগত আচার; কারণ, পাথরের ঠুনকো দৃঢ়তা তুমি বোঝোনি, প্রিয়তম। পাথরের কান্না তুমি শোনোনি।
আর তারপর তুমি থামতে পারো, ভাবতে পারো, অথবা চুপ করে লিখতে পারো অন্যকিছু, অন্য সুরে, অন্য মাত্রায়, যখন তোমার জীবন বইটা বন্ধ হবে, তুমি স্বস্তি পাবে হয়তো কিছুটা, কারণ তুমি সব করেছো তোমার নিজের মতন করেই...!
And now, the end is near,
And so I face the final curtain.
My friends, I'll say it clear;
I'll state my case of which I'm certain.
I've lived a life that's full -
I've traveled each and every highway.
And more, much more than this,
I did it my way.
Regrets? I've had a few,
But then again, too few to mention.
I did what I had to do
And saw it through without exemption.
I planned each charted course -
Each careful step along the byway,
And more, much more than this,
I did it my way...
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১০ রাত ১:১১