somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

Will to Live

৩১ শে অক্টোবর, ২০১০ সকাল ১০:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :





একেকদিন তুমি বাসে চাপো। ভারী বাহন, জীবাশ্ম জালানীর অন্তর্দহন, আর ওটার বুক চিরে চলে যাওয়া পেছনের কোষ্ঠবদ্ধ আসন বেছে নাও যেথায় সসীম মহাবিশ্বের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে তুমি কিঞ্চিত আশ্বস্ত হতে পারো। তোমার পাশে থাকবে নৈরাজ্যিক-বিশৃঙ্খল আরেকটি নড়বড়ে আসন যা চলার পথের স্পন্দনে-কম্পনে দুলবে, আর তাই হয়তো ওটা ফাঁকাই থাকবে, হবে শূন্যতায় পর্যবসিত, অথবা আশাবাদী-যুক্তিসিদ্ধ কেউ শত প্রতিকূলতা উপেক্ষা করে পাশে এসে বসবে নির্লিপ্ত-নির্বিকার, আর তাই ত্যাগী এবং কষ্ট-সহিষ্ণু এই মানবচরিতকে তুমি সানন্দে অভিনন্দন জানাবে, আর তার বস্তুগত দেহের উত্তাপ ভাগ করে নিতে নিতে তাকাবে ময়লার আস্তর-পড়া জানালার ভাঙা-কাঁচের ফাঁক দিয়ে, এবং কপাল কুঁচকে ভাববে বিবর্তনের ঠিক কোন পর্যায়ে দোমড়ানো-মোচড়ানো নয়-নম্বর বাসের উৎপত্তি ঘটেছিলো যার বহির্দেশে এস্টেরয়েডের অভিঘাতের কোন স্থান বাকী নেই আজ আদৌ। ভিনদেশী মহাজাগতিক জীবনগুলো এখন শুধু মাছের ঝাঁকা, শাকের আঁটি, মুড়ির টিন আর দাতের ফাঁকে গুল-চাপা মাজন-বিক্রেতার দাঁত কেলানো হাসির রেড-শিফটের দিকেই প্রসারিত। আবার পরক্ষণেই যখন গার্মেন্টস শিল্পের অগ্রগতির প্রতীকীরূপে বাহারি লুঙ্গির দীর্ঘকায় সাজানো স্তুপের সাথে উত্তেজিত প্রজনন অঙ্গের মতন খাড়া, ঋজু এবং দাঁড়িয়ে থাকতে আগ্রহী মানুষগুলো পোয়াতি বাসের বুক চিরে দাঁড়াবে, তুমি তখন সৃষ্টিজগতের ‘সংঘবদ্ধ ঐকতান’ নামক বৈশিষ্ট্য নিয়ে প্রশ্ন তুলতেই পারো।

বাসটি যখন চলতে শুরু করবে, তোমার চোখের সামনে ধীরে ধীরে উন্মোচিত হবে এক জগত-বায়স্কোপ। তুমি দেখবে কতিপয় দম্পতি, বাচ্চারা চুপ দাঁড়িয়ে। দেখবে মামা হালিম, স’মিলের পাশে পড়ে থাকা কোন জঙ্গলের মৃতগাছ, ব্যবচ্ছেদের অপেক্ষায়। দেখবে হেঁটে যাওয়া তরুণী, পিছে ধাবমান যুবক, দুরাশয়। দেখবে পথশিশু, পলিথিন, ড্রেনের পানি আর লেক্সাসের চামড়া, তৈরি হয়েছে সুইজারল্যাণ্ডের উচ্চস্থানের কতিপয় গাভী হতে যাদের কোন মশা কামড়ায়নি। দেখবে বাজারের থলে হাতে চার সন্তানের বাবা, বিন্দু-ঘামে মেকাপ-নষ্ট দিশাহারা যুবতী। ফুটে উঠবে ফুটপাতের হকার, নায়িকার ছবি, বাসের লাইনে দাঁড়ানো ব্রিফকেসওয়ালা। স্পষ্ট দেখবে মিষ্টির দোকান, গড়িয়ে চলা ভিক্ষুক, দুই কনুইয়ে ছেঁড়া কাপড় যেন চামড়া ছিলে না যায়। হঠাৎ হয়তো দেখতে পাবে ভিড়ের মাঝে এক ভিক্ষু, অন্যমনস্ক, ফুটপাতের স্যাণ্ডেল কিনছে। তারপর দূরের ঐ ভাঙা দালানগুলো, আর ওদের ফাঁক গলে বিকেলের রোদ, তোমার মুখে পড়ছে। তুমি মুখ ফিরিয়ে নিলে, আলতো স্পর্শ, ছোট্ট বালক, শার্টের দুইটা বোতাম নাই, ভাড়া তুলতে এসেছে। তাকে সন্তুষ্ট করে নির্লিপ্ত চিত্তে পুনরায় মুখ ফিরিয়ে জগত-ঘটনাপ্রবাহ দেখতে উদ্যত তুমি হঠাৎ চমকে গেলে কানে এফএম রেডিও ধরা পাশের সহযাত্রীর চিৎকার শুনে...

এইসব কি?
এইসবের মানে কি?



১৮২০ খ্রীষ্টাব্দ।
বার্লিন, জার্মানী।
সকাল ১০:৩২।

শ্রেণীকক্ষের খালি গ্যালারির দিকে একরাশ বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে আছেন বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের নতুন প্রভাষক আর্থার। ঘনঘন তাকাচ্ছেন কক্ষের পেছনের দেয়ালে ঝোলা ঘড়ির দিকে। পেন্ডুলাম দুলছে। বার্লিনের এই সময়ের তীব্র ঠাণ্ডায় জমে যায়নি ওটা। বুকপকেটে রাখা ছোট্ট ঘড়িটার সাথে আবার সময় মিলিয়ে নিলেন তিনি। এক নজরে পুনরায় দেখে নিলেন শূন্য শ্রেণীকক্ষ, ডেস্কের ওপাশে কৌতূহলী কিংবা অনুসন্ধিৎসু চোখগুলোর অনুপস্থিতি। হঠাৎ বিষণ্ণ হলেন তিনি, শীতলতার অনুভূতি পেলেন। শূন্য কক্ষে একপরশ শীতল বায়ুর ছোঁয়ায় অনুভব করলেন একাকীত্ব। তীক্ষ্ণ নজরে খুঁজতে চাইলেন শীতল-উৎস। ঘাড় উঁচু করে দেখতে পেলেন গ্যালারির ডানদিকের ঐ বড় জানালার ছোট একটা শার্সি খোলা। ওভারকোটের পকেটে হাত ঢুকালেন তিনি, সহসা। মুঠোবদ্ধ। কিঞ্চিত উষ্ণতায় সাময়িক পরিতৃপ্তির ফাঁকে তার নজরে পড়লো শ্রেণীকক্ষের উঁচু ছাত, দৃষ্টি নেমে এলো অতঃপর, স্থির হোলো পাথরের মেঝের দিকে, ধুলো পড়েছে একটু। তাকালেন দূরের পাথুরে দেয়ালে, শক্ত কঠিন ভাবগম্ভীর।
দশ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত জার্মানীর এই বিশ্ববিদ্যালয় তার নতুনত্বের ভাব ধরে রেখেছে এখনও।

পাঁচ মিনিট পার হয়ে গেছে।
বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের নতুন প্রভাষক আর্থার সোপেনহাওয়ারের গুরুত্বপূর্ণ লেকচার শুরু হওয়ার কথা ছিলো হিম-শীতল বার্লিনের এই সকাল সাড়ে দশটায়। শূন্য শ্রেণীকক্ষে তিনি এখন শুধু শুনতে পাচ্ছেন করিডোরের গুঞ্জন-কোলাহল, দ্রতগামী পদশব্দ, দৌড়ে যাওয়া ছাত্রছাত্রী। কিন্তু আর্থার ঠিকই জানেন সেটা তার শ্রেণীকক্ষকে উদ্দেশ্য করে নয়। তার কানে আসছে দূরের হালকা গমগম আওয়াজ। ভ্রূ কুঁচকানো মুখে বিরক্তির রেখা আরও স্পষ্ট হোলো আর্থারের। তিনি জানেন ঠিক এই মুহূর্তেই দালানের অন্য একটি শ্রেণীকক্ষে এক নির্বোধ লেকচার দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন স্বয়ং মহামতি ফ্রেডরিখ হেগেল। ‘আনাড়ি, গেঁয়ো ভূত!’ – মনে মনে গালি দিলেন তিনি হেগেলকে উদ্দেশ্য করে। আর্থার জানেন তিনি হেরে যাচ্ছেন। পরাজয় অনিবার্য জেনেও ফ্রেডরিকের ক্লাস নেয়ার ঠিক একই সময়ে নিজের ক্লাসের সময়সূচি ঠিক করেছিলেন তিনি, জানিয়েছিলেন উন্মুক্ত দ্বন্দ্বযুদ্ধের আহ্বান।

ধীরে ধীরে হাঁটছেন আর্থার; হাতদুটো পেছনে, মাথা নিচু করে, গভীর মৃদু শ্বাস-প্রশ্বাস তার, জুতোর খট্‌খট্‌।
‘আনাড়ি, গেঁয়ো ভূত। গল্প শোনাচ্ছে শিশুদের। সব গল্প। ভাববাদী মূঢ়!’

হ্যাঁ, গেয়র্গ ভিলহেল্ম ফ্রেডরিক হেগেল, ভাববাদী তিনি বটে! জগতটা তার কাছে যেন শুধুই দ্বন্দ্বের বহিঃপ্রকাশ। তার কাছে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, ভাব বা অস্তিত্বের মধ্যে সেই অনন্তকাল ধরেই ‘হ্যাঁ’ এবং ‘না’-এর দ্বন্দ্ব বা বৈপরীত্য চলছে। পরম ধারণা (absolute idea), পরম সত্য (absolute truth) কিংবা পরমাত্মা (absolute spirit) বলে যে মেটাফিজিক্যাল ব্যাপারগুলো আছে, তারা স্ববিরোধী, তাদের ডুয়েলিটি আচরণ আছে, আর এর দ্বান্দ্বিক প্রকাশই হোলো বস্তুজগত বা ফেনোফেনন। তাই এই বস্তুজগত শুধুই পরমের একটি রূপায়ণ, বা রিপ্রেজেনটেশান। বস্তুজগত পরমের ইমেজ? – এখানে কি তাই মনে হতে পারেনা রামানুজাচার্য্যের ‘বিশিষ্ট অদ্বৈতবাদের’ কথা? বেদান্তের এই মতবাদে রামানুজাচার্য্য তো বলেছিলেন, ব্রহ্ম এক, অদ্বিতীয়, কিন্তু জীব এক নয়, জীব বহু, প্রতিটি শরীরেই ভিন্ন, আর জীবাত্মা ব্রহ্মার অংশ। বলেছিলেন, জগৎ ব্রহ্মের মায়াশক্তি প্রসূত। মায়া কি? মায়া হচ্ছে ভুলের কারণ, ভ্রম। পরিবর্তনশীল এই জগতে পরম ব্রহ্মের ত্রুটিযুক্ত প্রতিরূপ দর্শনে এই ভ্রমের সৃষ্টি, কারণ জগৎ ব্রহ্মের মায়াশক্তি প্রসূত। এটাই ভুল, ভ্রম, মায়া। তবে শঙ্করাচার্য্যের অদ্বৈতবাদের মতন ‘ব্রহ্ম সত্য, এই বিশ্ব মিথ্যা’- এটা না বলে রামানুজাচার্য্য বলেছিলেন, ‘জগৎ মিথ্যা নয়, জগতের প্রকৃত সত্তা আছে’। আর হেগেল বলছেন, আমাদের মন বা আমাদের জগত সবসময় দ্বন্দ্বের বা বৈপরীত্যের ভেতর আছে কারণ এগুলো সব অসম্পূর্ণ, ত্রুটিপূর্ণ, অসমাপ্ত; কারণ এগুলো সত্যকে আংশিকভাবে জানে, আংশিকভাবে দেখে, আর তাই এর মতামত বা ধারণাও (Judgement) ত্রুটিপূর্ণ।

হ্যাঁ, ত্রুটিপূর্ণ বটে! মাথা নাড়লেন আর্থার, ক্ষণে ক্ষণে তাকাচ্ছেন দরজার দিকে – পরমকে তাহলে পরিপূর্ণভাবে কীভাবে জানা যাবে? আদৌ যাবে কি? পরম সত্যিকারভাবে কী হতে পারে? – পায়চারি করছেন তিনি শূন্য শ্রেণীকক্ষে। মনে করছেন এক গেঁয়ো ভুতের কথা। হ্যাঁ, গেঁয়ো ভুত হেগেলটা বলতে চায় – মনে করো তুমি একটা বড় গির্জের ভেতর ঢুকলে। প্রথমে ঢুকতে যেয়েই তুমি দেখবে সদর দরজা, আর তার পাশের দেয়ালের কিছু অংশ, আরও দেখবে হয়তো দেয়ালে আঁকা ভাস্কর্যের অংশ, অথবা খোদাই করা প্রতিকৃতির কিয়দংশ। এগুলো তোমার কাছে অবিবক্ষিত, রহস্যময়। সোজা কথা হচ্ছে, তুমি পুরো গির্জেটার ক্ষুদ্রাংশ বা অসম্পূর্ণ অংশই (Fragments) দেখছো। এবার তুমি এগিয়ে যাও, আর প্রবেশ করো। হেঁটে যাও। তুমি একটু একটু করে এগুচ্ছো, আর দেখছো। তুমি চলে যাও গির্জেটার নিস্তব্ধ শেষপ্রান্তে, আর তাকিয়ে দেখো পুরো সমগ্র। তুমি ওটাকে এখন দেখছো পরিপূর্ণভাবেই। তুমি এবার খুঁজে পেয়েছো এতক্ষণ ধরে দেখে আসা গির্জের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশের অর্থ (Meaning)। বুঝে গেছো ওটার উঁচু ছাত, পাথরের স্তম্ভের মানে। সব যুক্তি ছাপিয়ে তুমি এবার অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে বুঝে গেছো ওটার অর্থবহতা। এটাই গির্জে, পরিপূর্ণ রূপে, তোমার কাছে উন্মোচিত। মানুষের জীবনটাও তাই। প্রতিদিন আমরা আমাদের এই জগতটাকে আরও একটু বেশী করে বুঝতে শিখি, বুঝতে শিখি ঘটনাপ্রবাহের কারণ, সংযোগ ঘটাই বিভিন্ন কিয়দংশের। তাই এই জগতটা প্রতিদিনই আমাদের জন্য একটু বেশী অস্তিত্বশীল হয়ে উঠে, আরও একটু বাস্তব হয়ে উঠে যেন। আর ঠিক এই যুক্তিতেই গেঁয়ো ভুতটা বলতে চায় যে এমন একটা সময় নিশ্চয়ই আসবে, মানবসভ্যতার পরম সেই সময়, যখন সবকিছুই অঙ্গীভূত হবে, সবকিছুই আত্তীকৃত হবে, সবকিছুই আত্মস্থ হবে। আর তখনই সকল সাবজেক্ট আর অবেজেক্ট মিলে, স্থান (Space) ও কাল (Time) অতিক্রম করে রূপান্তর ঘটবে পরমে। আর তারপর দ্রীঘাংচু! ওহে পরম! the Absolute!

হেগেলের দর্শনকে তাই বলা যায় a philosophy of becoming। একটা অগ্রগতিশীল, প্রগতিশীল, ক্রমবর্ধিষ্ণু ব্যাপার আছে তার দর্শনের মাঝে। grand structure, indeed!

গল্প। সব গল্প। শিশুদের গল্প। ভাববাদী মূঢ়! – জ্বলছেন আর্থার – ওটার শ্রেণীকক্ষ অপরিপক্বদের দ্বারা পূর্ণ হবে না তো কি আমারটা হবে? মানুষ যে শুধু গল্প শুনতে চায়। রূপকথা, পুরাণকথা, ধর্মীয় গ্রন্থ, এত এত গল্প। আর এখন নতুন গল্প শোনাচ্ছে ঐ ভাববাদী মূঢ়!

আর তাই ভাবছেন আর্থার। ভাবছেন অন্য একজনের কথা।
হ্যাঁ, তিনিই বলেছিলেন কথাটা। Ding an sich!
ইমানুয়েল কান্ট। Ding an sich! তিনি তো এটাই বলেছিলেন!
thing-in-itself। Noumenon।
ইন্দ্রিয়গ্রাহ্যতার ঊর্ধ্বে। স্বচ্ছন্দ। নির্ভরতামুক্ত। এটাই কি হতে পারে পরম? বস্তুর ভেতরের সেই অজানা?
the Absolute?
কিন্তু এটা কি? এই পরম কি?
মৃদু হাসি দর্শন বিভাগের নব্য প্রভাষক আর্থার সোপেনহাওয়ারের ঠোঁটে, আরও প্রসারিত হোলো সেই হাসি যখন খুট্‌ করে শব্দ হোলো হঠাৎ, আর তিনি মুখ তুলে তাকিয়ে শ্রেণীকক্ষের বামদিকের ওই সদর-দরজা খোলার আওয়াজ পেলেন।
ওহ্‌ গুণমুগ্ধ ছাত্র! অবশেষে এই বুঝি পেলেন তিনি তার শিষ্যদের!
হ্যাঁ, ওরা আসছে, গুটিকয়েক। স্নিগ্ধ অনুভূতি আর্থারের মনে। কিন্তু প্রথমেই শ্রেণীকক্ষের ভেতর কৌতূহলী চোখের শিষ্যটিকে দেখে বিদগ্ধ আর্থারের মুখে একরাশ বিরক্তি ও ক্রোধ ফুটে উঠলো অকস্মাৎ।

একজন নারী? শেষ পর্যন্ত একজন নারী!

নির্লিপ্ত চিত্তে মাথা নেড়ে, যেন অনেকটা অনিচ্ছায় সম্মতি জানিয়ে তিনি আবার ভাবতে বসে গেলেন কিছু, আর কাঁধে বেশ লম্বা এক ঝোলা নিয়ে, অষ্টাদশী এক জার্মান তন্বী শীতল বার্লিনের এক সকালে ঢুকে পড়লো ওভারকোটের পকেটে হাত ঢোকানো দর্শন বিভাগের নতুন চিন্তিত প্রভাষক আর্থার সোপেনহাওয়ারের শ্রেণীকক্ষে, যার পকেট-ঘড়িটিতে তখন সকাল ১০:৪৩; অথচ কেউ দেখতে পারছিলোনা সেটা, ওটা ছিলো বুকপকেটের ভেতর।



বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শ্রেণীকক্ষে, কোন এক শীতের সকালে, দর্শন বিভাগের নব্য প্রভাষক আর্থার সোপেনহাওয়ার ভাবতে থাকুক কিছু, গ্যালারির এখানে ওখানে না-হয় বসতে থাকুক গুটিকয়েক নিষ্প্রভ বালকবালিকা যারা হয়তো দ্বিধাচিত্তে এসেছে মহামতি হেগেলের গুরুত্বপূর্ণ গল্প শোনা বাদ দিয়ে, আর এই ফাঁকে আমরা না-হয় ঐ শ্রেণীকক্ষের বিষণ্ণ কাঠের টেবিলটার ঐ ছিদ্র গলে চলে যাই সময়ের একটু সম্মুখে, জেনে নিই কিছু, বুঝে নিই তার দর্শনের সংক্ষিপ্তসার, রূপরেখা, যদি সেটা কেউ আদপে ‘দর্শন’ বলতে রাজী থাকে...

শুরুটা হবে স্বয়ং ইমানুয়েল কান্টকে দিয়েই...
ইমানুয়েল কান্ট। জার্মান দার্শনিক। তিনিই বলেছিলেন সিন্থেটিক এ-প্রায়োরি জাজমেন্টের কথা, সেই সত্যিকার জ্ঞান যা কিনা অভিজ্ঞতালব্ধ নয়, ইন্ডিপেন্ডেন্ট অফ এ্যানি এক্সপেরিয়েন্স। এটাই বুঝি সেই পরম বা Absolute, যে পরমের খোঁজে যুগযুগান্তরে সচেতন মানব আত্মহারা, দিশাহারা, আর সর্বশেষে বাকহারা। বলেছিলেন, চিন্তা আর যুক্তির সীমাবদ্ধতার কথা। বলেছিলেন যে এই জগতের কোন কিছু যদি আমাদের জন্য বাস্তব হতে হয়, তবে তার স্থান এবং কাল থাকতেই হবে। বলেছিলেন স্থান বা স্পেস ‘আমাদের’ বাইরে (এই ‘আমরা’ এখানে সাবজেক্ট, বা thinking self) অবজেক্টিভ জগতে অস্তিত্বহীন, কিন্তু এই স্পেস নাকি আবার আমাদের চেতনারও একটা অংশ। স্পেস কোন অভিজ্ঞতা থেকে আসে না, কিন্তু এটা নাকি আবার সকল অভিজ্ঞতার শর্ত। স্পেস ইন্দ্রিয়গোচর বা পদার্থ, বা বস্তু না, স্পেস যুক্তির মাধ্যমে পৌঁছানো কোন ধারণাও না, স্পেস হচ্ছে খাঁটি ইন্টিউসন, বা অন্তর্জ্ঞান, বা সহজজ্ঞান। এই অন্তর্জ্ঞান হলো সরাসরি জ্ঞান, ডিরেক্ট নলেজ, কোন প্রকার যুক্তিবিন্যাস বা যুক্তিপাত ছাড়াই। কান্ট বলছেন, এই স্পেস বা স্থান সম্পর্কিত অন্তর্জ্ঞান একটা এ-প্রায়োরি সিন্থেটিক জাজমেন্টের শর্ত। সময়ের ক্ষেত্রেও তাই, বলছেন ইমানুয়েল। সময় কোন বস্তু না, সবকিছু সময়ের মধ্যেই আছে, নিমজ্জিত, নিমগ্ন। চেতনাও (consciousness) তাই; চেতনার ছোট ছোট অংশ হতে পারে না, কারণ চেতনা অক্ষত, অটুট। বলছেন, বিজ্ঞান আমাদের বস্তজগতের কানেক্টিভিটি সম্পর্কে ধারণা দিতে পারে, কিন্তু বস্তুর সত্যিকারের গুণাবলী সম্পর্কে কোন অন্তর্জ্ঞান দিতে পারে না। এগুলোই সীমাবদ্ধতা; বস্তুকে জানার এবং বোঝার সীমাবদ্ধতা, অন্তত কান্টের কথা অনুযায়ী। জার্মান ভাষায় তিনি এই পরম ভাবের নাম দিলেন Ding an sich, বা thing-in-itself, এটাকে Noumenon নামেও আখ্যায়িত করা যায়। যদিও ইমানুয়েল এই Ding an sich কে ‘পরম’ (Absolute) বলতে চাননি হয়তো, কিন্তু সেটা কিই বা হতে পারে যখন তিনি এটাকে আখ্যায়িত করছেন ‘the actual object’ হিসেবে? – যেখানে object তো এপিষ্টেমোলজির সেই শব্দই যা নির্দেশ করে ইন্দ্রিয়গোচর বস্তু, বা পদার্থ, বা সামগ্রী – তোমার সামনের টেবিল, কফি-কাপ, মাটি, ফুল, নদী, ঘাস, আকাশ, আঁধারে তোমার ভয়, একটা পাথর, তোমার ঘৃণা, ভালোবাসা নামক বস্তু, এইসব সেনসেশন। আর এই সকল অবজেক্টিভ রূপায়নই যদি ব্রহ্মের মায়াশক্তি প্রসূত হয়, তবে এইসব object’এর ‘actual form’ই কি বস্তুর ভেতরের সেই পরম বা Absolute নয়? – যার গুণাগুণগুলো পর্যবেক্ষকের নিয়ন্ত্রনমুক্ত, স্বতন্ত্র, স্বচ্ছন্দ, independent of any observer। স্থূল জ্ঞান নিয়ে আপাততঃ এটাকেই ভ্রূ কুঁচকে হাতের মুঠোয় নিই, ক্ষণিকের তরে, ফেলে দিতে পারি যেকোন সময় যেহেতু ‘নিশ্চিত’ শব্দটার সাথে পরিচিত নই।

যা-হোক, কান্ট পাশাপাশি এটাও বলেছিলেন যে এই পরম বা noumena’এর জগত আমরা কখনও অনুধাবন করতে পারবো না, বুঝতে সক্ষম হবোনা। এটা মানবপ্রজাতির এক চরম এবং অলঙ্ঘনীয় সীমাবদ্ধতা। হুমম...উদাহরণ? আচ্ছা লঘুভাবে যেমন, মহান সক্রেটিস – তাঁকে কি সত্যিকারভাবে জানা যাবে কখনই? কারণ সক্রেটিস তো প্লেটোর দ্বারাই প্রকাশিত, প্লেটোর এক প্রতিরূপ, ‘সত্যিকার’ সক্রেটিস বা ‘পরম’ সক্রেটিস তো আসলেই ধরা ছোঁয়ার বাইরে। যেমন, ঈশ্বর বা মহাকাল সম্পর্কিত, যদিও এই শব্দগুলো টেনে আনা অহেতুক নিষ্প্রয়োজন, তারপরও এমন কিছু যদি আদপে থেকেও থাকে, তাকে বস্তুজগতের বোধশক্তি আর পারসেপশনে আবদ্ধ যুক্তি দিয়ে প্রমাণ করা যাবেনা কখনই। ঠিক এমন একটা জায়গায় এসেই, মেটাফিজিক্যাল ডোমেইনগুলোকে ফিজিক্যাল সীমাবদ্ধতায় ব্যাখ্যা করার অপচেষ্টায় বিংশ শতাব্দীর এক অদ্ভুত মানুষ লুডউইগ উইটগেন্সটাইন তার Tractatus Logico-Philosophicus’এর শেষের সাত নম্বর অনুসিদ্ধান্তে একটাই কথা ছুঁড়ে দিয়েছিলেন; বলেছিলেন, What we cannot speak about we must pass over in silence... নীরবতা, আর চুপ থাকা; যৎসামান্য এই জগতে কারও চিন্তার প্রতিধ্বনি অন্যকোথাও শোনা গেলে এই বিশ্বজগৎ আদৌ উদ্দেশ্যহীন হয়না... Zeitgeist কিছু একটা...অরুন্তুদ!

পরমে ফিরে আসি। thing-in-itself।
কান্টের পর সবাই তাই এই Ding an sich’কে নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলো। যদিও ইমানুয়েল বলে গিয়েছিলেন সীমাবদ্ধতার কথা, বলে গিয়েছিলেন এই thing-in-itself বোঝা সম্ভব নয় কখনও শুদ্ধ-যুক্তি দিয়ে, তথাপি উত্তর পোল্যাণ্ডের বাল্টিক উপকূলের ড্যানজিগ শহরে জন্মানো এক জার্মান দার্শনিক বলে উঠলেন, ‘হুহ! যদি কেউ না জানে এই thing-in-itself কি জিনিস, এই পরম the actual object এর ব্যাপারটা কি, তো সেটা আমি জানি, আর আমিই জানি!’
কী জানেন তিনি! কী বলতে চান তিনি!
The world is stupefied – বলছেন আর্থার, আমি জানি এটা, সত্যিকারভাবেই। জানি আমার অন্তর্জ্ঞান (intuition) দিয়ে, এই অন্তর্জ্ঞান হোলো সরাসরি জ্ঞান, ডিরেক্ট নলেজ, কোন প্রকার যুক্তিবিন্যাস বা যুক্তিপাত ছাড়াই।

ও মন তার উপরে মণিকোঠা
তাতে কিছু না যায় টোটা
সে তো বসিয়ে আছে হয়ে টোটা
সে ঢাকায় বসে দিল্লীর খবর জানে

মানুষ স্বয়ং একটা thinking self হলেও এটা পাশাপাশি একটা বস্তুও বটে – বলছেন আর্থার – আর যেহেতু আমি একটা বস্তু (thing), I must seek my absolute in my intuition, what I am in my essence। বলছেন – আমি জানি, I know that the most elementary and fundamental thing in myself is the ‘will to live’।

কি ছিলো আর্থার সোপেনহাওয়ারের এই will to live?
সোপেনহাওয়ার নিজেই বলেছেন যে তিনি এই শব্দগুলো বেছে নিয়েছেন কারণ এর চেয়ে ভালো কোন শব্দ তিনি খুঁজে পাননি তার ভাবখানি প্রকাশের জন্য, আর তাই এখানে শব্দগুলো ঠিক আক্ষরিক নয়, শব্দগুলো শুধু বেঁচে থাকার ইচ্ছা বোঝায়না, অথবা শুধুই বোঝায়না মানুষ এবং অন্য প্রাণীদের ‘টিকে থাকা’ বা ‘অস্তিত্বমান’ হওয়ার অভিপ্রায়/আকাঙ্ক্ষা, বরং পাশাপাশি শব্দগুলো এটাও বোঝায় একটা সাধারণ পাথরের প্রতিরোধ স্পৃহা (resistance), দৃশ্যমান আলোর অটল/অনড় বিরতিহীনভাবে বজায় থাকা (persistence) ইত্যাদি। তাই ব্যাপারটা অনেকাংশে the will to ‘be’ – ব্যাপারটা আমার জন্য যেভাবে প্রযোজ্য, ঠিক একইভাবে প্রযোজ্য আমার সামনের ঐ চেয়ারটার জন্য, জানালা দিয়ে তাকিয়ে খুঁজে পাওয়া ঐ গাছটার জন্য, দূরের ঐ পাহাড়টার জন্য। সোপেনহাওয়ার বলছেন এটাই সেই কান্টিয়ান Noumenon, the absolute। বলছেন এই উইল-টু-লিভ শুধুই স্থান এবং কালে অস্তিত্বশীল বা সীমাবদ্ধ নয়, it is beyond time and space, it is within itself and can manifest itself only when it becomes a phenomenon (limited in time and space)। এটা এক একক-সত্তা (single entity)। কিন্তু যখনই এই একক/স্বতন্ত্র সত্তা ইন্দ্রিয়গ্রাহ্যতার আওতায় চলে আসে (passes to the phenomenological world), এটা ভেঙে যায়, বিভাজিত হয়, বৈপরীত্যে দোল খায়, হয় স্বতন্ত্র/ব্যক্তিগতভাবে সুনির্দিষ্ট। সোপেনহাওয়ার এটাকে বলছেন principium individuationis। আবারও কি সেই রামানুজাচার্য্য! বেদান্তের এই মতবাদেও তার কথায় কি এমন সুরই বাজেনি যখন তিনি বলেছিলেন – ব্রহ্ম এক, অদ্বিতীয়, কিন্তু জীব এক নয়, জীব বহু, প্রতিটি শরীরেই ভিন্ন, আর জীবাত্মা ব্রহ্মার অংশ? বলেছিলেন, পরিবর্তনশীল এই জগতে পরম ব্রহ্মের ত্রুটিযুক্ত প্রতিরূপ দর্শনে এই ভ্রমের সৃষ্টি, কারণ জগৎ ব্রহ্মের মায়াশক্তি প্রসূত।
কে জানে!

যাই-হোক, মায়া হোক-না-হোক, এই উইল-টু-লিভের ইন্দ্রিয়গ্রাহ্যতায় রূপান্তরে এই জগত পরিণত হয়েছে এক অবিশ্রান্ত অসুস্থতায়, অস্থিরতায়। বিয়োগান্তক/ট্র্যাজিক জগত এটা। ভাবের লেটুস নয়। খাচ্ছো তুমি, মরছে কেউ না-খেয়ে। চালাচ্ছে তোমায় ফুড চেইন। তুমি প্রতিনিয়ত পরিতৃপ্ত/পরিতুষ্ট/চরিতার্থ করছো তোমার উইল-টু-লিভ। চলছো তুমি তোমার আকাঙ্ক্ষায়, কামনায়, বাসনায়, ইচ্ছা-অভিলাষে। আর নিরর্থক, উদ্দেশ্যহীন, অর্থহীন তোমার আকাঙ্ক্ষা, কামনা, বাসনা, ইচ্ছা-অভিলাষ। কোন মানে নেই এই ত্রুটিপূর্ণ উইল-টু-লিভের। ট্র্যাজেডিক জীবন। সিদ্ধার্থ গৌতম দেখেছিলেন এই ট্র্যাজেডি মহানিষ্ক্রমণের আগে। দেখেছিলেন – মৃত্যু, বার্ধক্য, রোগ। উইল-টু-বি এই জগতকে শ্রান্ত/পীড়িত করেছে, করছে, এগুলো থেকে মুক্তি নেই, হবেনা। এটাই পরম বাস্তবতা। রাণীকে বাঁচাতে সৈন্য পিপীলিকার মৃত্যু, দেশকে বাঁচাতে দেশপ্রেমিকের মৃত্যু, আমরা যতই তত্ত্ব দিই ইউসোস্যাল প্রাণী/এ্যাল্ট্রুইজম/ন্যাচারাল সিলেকশন/বিবর্তন/দক্ষতার সাথে জীনের বিস্তার, কিন্তু কী এসবের মানে? we are just rationalizing। পরম ব্যাপার হচ্ছে life is a continuous, culpable malaise। তিনি বলছেন – love and personal happiness cannot exist because the individual is sacrificed for the species...

আর্থার তাই খুব বিরক্ত ছিলেন নারীজাতির উপর, কারণ তারাই জন্ম দিচ্ছে, আর প্রতিনিয়ত এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে এই অসুস্থতাকে! নারীবাদী ছিলেননা তিনি মোটেই! তবে তিনিই একসময় বলেছিলেন যে, কোন নারী যদি নিজেকে সাধারণের উপরে টেনে তুলতে পারে; যদি নিজেকে সরিয়ে নেয়, প্রত্যাহার করে সর্বসাধারণ থেকে, তবে সেই নারী সবাইকে ছাড়িয়ে যাবে।
কম্পলিমেন্ট! অথবা অমার্জিত কথাবার্তা!

অমার্জিত মানুষটা আরও বলছেন, Man can never attain individual happiness. Our will to live forces us to consume others or to be consumed by them
বলছেন, Happiness or pleasure is nothing more than the satisfying of a malaise

হুম। এই জটিলাবস্থা বা মানসিক বৈক্লব্য থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় কি তাহলে?

আত্মহত্যা?
উমম...হয়তো-না। কেন?
কারণ আত্মহত্যার মাধ্যমে নাকি শুধু উইল-টু-লিভকেই সমর্থন করা হয়। আত্মহত্যার মাধ্যমে ঐ মুহূর্তে আমি নাকি এটাই প্রমাণ করছি যে আমার উইল-টু-লিভ পরিতৃপ্ত হয়নি, তুষ্ট হয়নি।
জড়বুদ্ধির যৌক্তিকতা!

তাহলে?
উত্তর হচ্ছে - I kill my will to live within myself
কীভাবে!

ধ্যান!
চিন্তা!
ভাবনা!
কিল ইউর উইল-টু-লিভ!
আত্ম-অস্বীকৃতি আর ধ্যানের মাধ্যমে জীবন কাটাও।
প্রতিভাবান সেই যে জগতটাকে নেয় খেলাচ্ছলে। এটাই উৎকৃষ্ট পন্থা।

The genius is disinterested.
He has fun with the world.
He perceives its atrocities but delights in its atrocities.
The genius in general is useless in practical life, because he does not seek his personal interest. He is antisocial, but sees the world better because he is objective.

ওরা বলে আর্থার সোপেনহাওয়ার একজন ‘পেসিমিস্ট’। শব্দটা দিয়ে আসলে কিছুই বলা হয়না...
তার জীবনবিমুখী দর্শন জীবন ছুঁয়েছে। অনেক অনেক বছর ধরে যে জীবনকে বোঝার তরে যে দর্শন জীবনের বাইরে ছিলো, জীবনকে বোঝার একনিষ্ঠ প্রচেষ্টায় যে হয়ে উঠেছিলো এতটাই বুদ্ধিবৃত্তিক/উচ্চমার্গীয়, সে যেন হঠাৎ জীবনকে ছুঁয়ে দিয়েছিলো, ছুঁয়ে ফেলেছিলো। শক্ত সরল মৃত্তিকার উপর হাঁটতে চাই, ভাবনার সান্দ্রতায় উড়তে চাইনা, শুধু বুঝতে চাইনা, ধরতে চাই পরম বাস্তবতা, ছুঁতে চাই হাতের তালুতে নিয়ে, আর তারপর ছিন্ন করতে চাই, ধ্বংস করতে চাই কিছু, নিশপিশে আঙুল আমার, স্পর্শ-আকাঙ্ক্ষা – আর্থার ছিলেন কি এমন একজন? তিনি কোন বলিষ্ঠ মতবাদ প্রকাশিত করেননি বটে, আর তাই তার দর্শন সত্যিকার দর্শন নয় হয়তো; যদিও শিল্প/সাহিত্য/চিত্রকলা নিয়ে তার আকর্ষণীয় তত্ত্ব আছে। তার মতবাদগুলো আসলে অনেকটাই সাইকোলজিক্যাল বলা যায়, দর্শন না বলে; কিন্তু দর্শন আসলে কি, বা কি হওয়া উচিত? কোন দার্শনিক তত্ত্বই বেশীদিন টেকেনা, যুগযুগান্তরে কত দার্শনিক মতানৈক্য, দ্বন্দ্বের সমাহারে ব্যতিব্যস্ত মানুষ জ্ঞানের সত্যিকার রূপ কি জানবে কখনও, বা পারবে কি আদৌ? আর এখানেই সোপেনহাওয়ার আর হেগেল নন, কান্টও নন, এখানেই তিনি হয়ে উঠেছেন ‘আর্থার সোপেনহাওয়ার’, নিজস্ব চিন্তাভাবনায়, নিজস্ব দর্শনে, কান্টিয়ান/হেগেলিয়ান মহাবিশ্বের পাশাপাশি তার স্বতন্ত্র সোপেনহাওয়ারিয়ান নক্ষত্র; জ্বলছে এখনও, মিটমিট।
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×