somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ওসামা বিন লাদেন নিহত

০৩ রা মে, ২০১১ সকাল ৯:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নিহত হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ ওসামা বিন লাদেন। গত রোববার পাকিস্তানে মার্কিন সশস্ত্র বাহিনীর একটি ছোট দল মাত্র ৪০ মিনিটের অভিযানে তাঁকে হত্যা করে। লাদেনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। তিনি বিশ্ববাসীকে বলেন, ‘ন্যায়বিচার হয়েছে।’ এ ঘোষণার পরপরই উল্লাসে মেতে ওঠে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্ব।
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর। সন্ত্রাসী হামলায় ধসে পড়ল যুক্তরাষ্ট্রের গর্বের প্রতীক বিশ্ব বাণিজ্য কেন্দ্র। এ ঘটনার পরপরই ওসামা বিন লাদেন হয়ে ওঠেন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় শত্রু। এরপর প্রায় ১০ বছর কেটে গেছে। লাদেনের টিকিটি পর্যন্ত ছুঁতে পারেনি যুক্তরাষ্ট্র। তবে শেষ পর্যন্ত এই অসম লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্রই জিতেছে।
ওবামা তাঁর ভাষণে বলেন, ওসামা বিন লাদেনের লাশ মার্কিন হেফাজতে আছে। তবে রাতে এবিসি, সিএনএন ও ফক্স টেলিভিশনের খবরে বলা হয়, বিন লাদেনকে সাগরে সমাহিত করা হয়েছে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন বলেন, ‘বিন লাদেনকে হত্যার মধ্য দিয়ে আল-কায়েদা নির্মূলের যুদ্ধ বন্ধ হবে না। তারা (আল-কায়েদা) যেন না ভাবে, যুদ্ধে আমরা ক্ষান্ত দেব।’
আল-কায়েদার পাকিস্তান শাখা ঘোষণা করেছে, তারা এ হত্যার বদলা নেবে। তোমরা আমাদের কখনো হারাতে পারবে না।
মার্কিন কর্মকর্তারা জানান, অভিযানে লাদেন ছাড়াও তাঁর এক ছেলে, এক অজ্ঞাতনামা নারী এবং লাদেনের এক বার্তাবাহক ও তাঁর ভাই নিহত হয়েছেন। নিহত ওই নারী সম্ভবত লাদেনের কনিষ্ঠ স্ত্রী আমাল আল-সাদাহ। লাদেনের বয়স হয়েছিল ৫৪ বছর। এই অভিযানের বিষয়ে পাকিস্তান কর্তৃপক্ষকে কিছু জানানো হয়নি। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাসহ শীর্ষ কয়েকজন কর্মকর্তা ছাড়া আর কেউ জানতেন না।
দুর্গম গিরি-পর্বতে ছিলেন না লাদেন: নাইন-ইলেভেনের ঘটনার পর লাদেনকে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগে আফগানিস্তানে হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। তালেবানের পতনের পর দেশটির দুর্গম গিরি-পর্বত তন্নতন্ন করেও লাদেনের হদিস পায়নি মার্কিন বাহিনী। তখন একবার যুক্তরাষ্ট্র দাবি করেছিল, হয়তো মার্কিন বাহিনীর অভিযানে তিনি মারা গেছেন। কিন্তু সে দাবি যুক্তরাষ্ট্রের কাছেও বিশ্বাসযোগ্য হয়নি। তখন তারা অভিযোগ করে, লাদেন আফগান সীমান্তবর্তী পাকিস্তানের কোনো আদিবাসী এলাকায় লুকিয়ে আছেন। পরে যুক্তরাষ্ট্র লাদেনের মাথার দামও ঘোষণা করে।
যেভাবে খোঁজ মিলল: মার্কিন প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্মকর্তা গতকাল সাংবাদিকদের জানান, যুক্তরাষ্ট্রে হামলার পর আটক ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করে লাদেনের বিশ্বস্ত এক বার্তাবাহকের কথা জানা যায়। তাঁরা জানান, ওই বার্তাবাহক সম্ভবত লাদেনের সঙ্গেই আছেন। এরপর চার বছরের বেশি সময় ধরে ওই বার্তাবাহককে অনুসরণ করতে থাকেন মার্কিন গোয়েন্দারা। গত বছরের আগস্টে গোয়েন্দারা নিশ্চিত হন, ওই বার্তাবাহক ও তাঁর ভাই পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদ থেকে ৬০ কিলোমিটার উত্তরে অ্যাবোটাবাদের বিলাল এলাকায় একটি বাড়িতে বসবাস করছেন।
মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, ‘বাড়িটি প্রথমে দেখার পর আমাদের বেশ অবাক লাগে। আশপাশের বাড়িগুলো থেকে এই বাড়িটি অনেক বড়। নিরাপত্তাব্যবস্থাও বেশ জোরালো। প্রথম দিকেই আমাদের সন্দেহ হয়, এই বাড়ি থেকে অনেক বড় বড় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে। বিস্তারিত খোঁজখবর নেওয়ার পর আমাদের মনে হতে থাকে, এখানে লাদেনের থাকার সম্ভাবনা আছে।’ সবকিছু বিচার-বিশ্লেষণ শেষে একপর্যায়ে গোয়েন্দারা নিশ্চিত হন, লাদেন এখানেই আছেন। অথচ বাড়িটি থেকে কয়েক গজ দূরে পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমি। আশপাশের বাড়িগুলোতে থাকেন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তারা।
যেভাবে অভিযান: লাদেনের অবস্থান নিশ্চিত হওয়ার পরও পাকিস্তানে সরাসরি কোনো অভিযান পরিচালনা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিল মার্কিন বাহিনী। বিষয়টি নিয়ে গত মার্চ ও এপ্রিলে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে কয়েক দফায় বৈঠক করেন মার্কিন শীর্ষ সেনা কর্মকর্তারা। অবশেষে অভিযান চালানোর জন্য সবুজ সংকেত দেন প্রেসিডেন্ট ওবামা।
পরিকল্পনা অনুযায়ী গত রোববার পাকিস্তানের স্থানীয় সময় রাত পৌনে দুইটার দিকে ওই বাড়িতে অভিযান চালায় মার্কিন মেরিন সেনার একটি ছোট দল। চারটি হেলিকপ্টার নিয়ে তারা সেখানে অবতরণ করে। এরপর মার্কিন বাহিনী ঢুকে পড়ে বাড়িটির নিরাপত্তাবলয়ের মধ্যে। মার্কিন কর্তৃপক্ষের দাবি অনুযায়ী, অপর দিক থেকে গুলি ছোড়া হয় মার্কিন সেনাদের লক্ষ্য করে। ৪০ মিনিটের মতো দুই পক্ষে গোলাগুলি চলে। এতেই নিহত হন যুক্তরাষ্ট্রের আতঙ্ক আল-কায়েদার নেতা ওসামা বিন লাদেন। মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান তিনি।
অভিযানে মার্কিন বাহিনীর পক্ষে কেউ হতাহত হয়নি। তবে তাদের একটি হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয় যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে। তবে পাকিস্তানি কর্মকর্তা ও স্থানীয় লোকজন জানান, বাড়ির ছাদ থেকে রকেটচালিত গ্রেনেডের আঘাতে হেলিকপ্টারটি বিধ্বস্ত হয়। অভিযানের পর পাকিস্তানি বাহিনী এলাকাটি ঘিরে রাখে।
প্রত্যক্ষদর্শীর কথা: অ্যাবোটাবাদের বিলাল এলাকার এক বাসিন্দা এএফপিকে বলেন, ‘মাঝরাতে হেলিকপ্টারের শব্দে ঘুম ভেঙে গেল। একটু পরই শুরু হলো গোলাগুলি। চলল অনেকক্ষণ। হঠাৎ একটি বিকট বিস্ফোরণে লোকজন বাড়ির বাইরে বেরিয়ে আসে। তখনো বুঝতে পারিনি কী হচ্ছে। এরপর শুনতে পেলাম অ্যাম্বুলেন্সের শব্দ। একটি জায়গা থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছিল। সবাই তখন ভয়ে কাঁপছিল। সকালে টেলিভিশনে শুনলাম, লাদেন মারা গেছেন।’
লড়াই চালিয়ে যাবে আল-কায়েদা: লাদেনের মৃত্যু সত্ত্বেও লড়াই চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছে আল-কায়েদা। তাঁদের প্রার্থনা, লাদেনের মৃত্যুর খবরটি যেন সঠিক না হয়। আর সঠিক হলে প্রতিশোধ নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন তাঁরা।
আল-কায়েদার এক বার্তায় বলা হয়, লাদেনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত নতুন কোনো পদ সৃষ্টি না করতে সুমুখ আল-ইসলাম ফোরামের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
আরেকটি বার্তায় বলা হয়, ‘সিংহশাবক সিংহই হয়। অনুগতরা তাঁর পদাঙ্কই অনুসরণ করবে।’
আল-কায়েদার আরবিভাষী একটি ফোরামের বার্তায় বলা হয়, ‘হে আল্লাহ, লাদেনের মৃত্যুর খবরটি মিথ্যা করে দাও। ওবামা, আল্লাহ তোমাকে শাস্তি দেবেন। মার্কিনরা শুনে রাখো, তোমাদের শিরশ্ছেদ করাটা আমাদের কর্তব্য।’
সতর্ক যুক্তরাষ্ট্র: লাদেন হত্যার প্রতিশোধ নিতে আল-কায়েদা বা উগ্র ইসলামি সংগঠনগুলো হামলা চালাতে পারে—এমন আশঙ্কায় সতর্ক অবস্থায় রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে মার্কিন সামরিক ও কূটনৈতিক স্থাপনাগুলোকে সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে। এ ছাড়া মার্কিন নাগরিকদের ভ্রমণের ক্ষেত্রেও সতর্কতা জারি করেছে সে দেশের পররাষ্ট্র দপ্তর। এএফপি, বিবিসি, রয়টার্স।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=আকাশে তাকিয়ে ডাকি আল্লাহকে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০১


জীবনে দুঃখ... আসলে নেমে
শান্তি গেলে থেমে;
আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে হই উর্ধ্বমুখী,
আল্লাহকে বলি সব খুলে, কমে যায় কষ্টের ঝুঁকি।

আমি আল্লাহকে বলি আকাশে চেয়ে,
জীবন নাজেহাল প্রভু দুনিয়ায় কিঞ্চিত কষ্ট পেয়ে;
দূর করে দাও সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

"ছাত্র-জনতার বেপ্লবের" ১৮ মাস পরে, আপনার ভাবনাচিন্তা ঠিক আগের মতোই আছে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৭



২০২৪ সালের পহেলা জুলাই "ছাত্র-জনতার বেপ্লব শুরু হয়, "৩৬শে জুলাই" উহা বাংলাদেশে "নতুন বাংলাদেশ" আনে; তখন আপনি ইহাকে ব্যাখ্যা করেছেন, ইহার উপর পোষ্ট লিখেছেন, কমেন্ট করেছেন; আপনার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

×