পাশেই দুটো ভার্সিটি পড়ুয়া ছেলে, কথায় বুঝলো সৌর। দুকাপ কফি হাতে নিয়ে অস্থির হয়ে এদিক ওদিক উঁকি মারছে। কারণটা জেনে মজা পেল ও। বৃষ্টিতে সিগারেটের দোকানদার ঝাঁপ ফেলে দৌঁড় মেরেছে ... তাই! এই ভরা বৃষ্টির দিনে গালভরা ধোঁয়ার নেশা ফিরিয়ে দেয়া কি সহজ কথা!
ওর ঠিক বাম পাশেই দুটো ছেলেমেয়ে। কোন একটা ব্যাপারে উত্তেজিত হয়ে কথা বলছিল, ঠাণ্ডা মাথায় শোনার চেষ্টা করলো ও। হুট করে ডাচের সেলসম্যানকে ডেকে ছেলেটি অনুরোধ করলো, "ভাই, একটি পলিথিন ম্যানেজ করে দিবেন প্লীজ্?" কিছুক্ষণ খুঁজে একটি ছোট্ট পলিথিন হাতে নিয়ে ফিরে এলো ছেলেটি। দুজনে মোবাইল বের করে পলিথিনে মুড়ে নিল, তারপর ছাউনির আড়াল থেকে বৃষ্টিধারার সঙ্গী হল। একসাথে ভিজতে ভিজতে পাশাপাশি হাঁটা আরম্ভ করলো ওরা ........ ওদের দেখে অসম্ভব ভালো লাগা ছুঁয়ে গেল সৌর'র মনজুড়ে। নস্টালজিয়ায় গা ভাসিয়ে দিলো মুহুর্তেই। একদিন ওরাও জানতো ওরা একসাথে ভিজবে, ছুটোছুটি করবে অঝোর ধারার সাথে ..... এখনো বিশ্বাস করে সৌর, কোন না কোনদিন হবে!
এখানে কোন কাজে আসেনি ও। রাজু ভাস্কর্য, সোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বর আর অপরাজেয় বাংলার আশেপাশে ঘুরঘুর করা ওর অভ্যাস। আগেও আসতো, এখনো আসে। আজ এসেই বৃষ্টির হাতে ধরা পড়লো। মোবাইল বের করে সময় দেখলো ও। মিনিট বিশেক কেটে গেছে, তবু আকাশের ক্লান্তি নেই এতোটুকু! রাস্তায় গাড়িঘোড়াও তেমন নেই, রিক্সাগুলোর হুডের নিচে রিক্সাওয়ালারা মাথা গুজে ঠাঁই নিয়েছে। সারা রাস্তায় যেন জলরঙা কার্পেট বিছানো। মাঝে মাঝে দু একটা প্রাইভেট কার সাঁই করে ছুটে যাচ্ছে গন্তব্যে। যেখানে একটু ছায়া, সেখানেই ভিড়! তিন চার জন ছাড়া কেউই বৃষ্টির পথে পা মাড়াচ্ছে না।
এসব দেখতে দেখতে ফুটপাথের পাগলটার উপর নজর পড়লো সৌর’র। হাতে ভাঙা একটা ডাল, পরনে ছেঁড়া ময়লা একটা সাদা শার্ট আর কালো প্যান্ট। ফুটপাথেই শুয়ে আছে ... ওকে দেখে সৌর’র মনে হলো, বিধাতার অবহেলার রাজ্যে আজ যেন বিধাতা ওর মুখপানে চেয়েছে, ঘুণেধরা শরীরে জলধারার স্পর্শ এনে দিয়েছে। ভাবতে ভাবতে চশমার আড়াল হলো পাগলটা, উঠে হাঁটা শুরু করলো সামনে। হয়তোবা গন্তব্যহীন কোন ফুটপাথেরই সন্ধানে .....
এরই মাঝে রাস্তার কিছু ছেলেমেয়ে জলকেলিতে মেতেছে। ওদের দেখে ছেলেবেলার কথা মনে পড়লো সৌর’র। বাবা মা কে লুকিয়ে বৃষ্টিতে ভেজা, ফুটবল নিয়ে কাঁদায় গড়াগড়ি খাওয়া। এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো ওর ঠোঁটে .....
সাতপাঁচ ভাবনার পিছুটান ছেড়ে রাস্তায় নামলো। পাগলটার কথা ভাবতে ভাবতে, শিশুগুলোর অনুভূতির সঙ্গী হয়ে, চিন্তার ডালপালাগুলো বৃষ্টিধারায় ধুয়ে ধীর পায়ে হেঁটে চললো পাশে বৃষ্টিকে রেখে ...... একাকী, আপাত গন্তব্যহীন .....।।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জুন, ২০১১ সকাল ১১:২৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




