somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার বন্ধু শফিক

২২ শে অক্টোবর, ২০২২ দুপুর ১২:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



(ছয়)

আমি সপ্তম শ্রেণীতে উঠলাম। স্কুলে যাচ্ছি আসতেছি কিন্তু মন প্রচন্ড খারাপ থাকতো। শফিক নেই। স্কুলের দ্বিতীয় সাময়ীক পরীক্ষা শেষ এরকম একটা সময় চলছে । একদিন রাতে আমরা রাতের খেতে বসেছি এমন সময় বাবা মাকে বলছে-

-রহম আলী খবর পাঠাইছে বন্দরে কামাই রোজগার নকি অনেক।
-তুমি কি ভাবতিছো? রহম আলির কথা মতো মোংলা পোর্টে যাবা?
- না ভেবে উপায় কি? গ্রামে আয় রোজগার খুবই কম।
- তুমি একা যাবা?
- নাহ; সবাইরে নিয়ে যাবো।
-আমরা থাকবো কোথায়?
- ঘর ভাড়া পাওয়া যায় শুনিছি, ঘর ভাড়া নেবো।

আমি এসব শেনার পর খুশিতে আর ভাত খেতে পারিনি। শফিকের সাথে আবার দেখা হবে।
আমাদের নিয়ে বাবা এক মাসের মধ্যে বন্দরে চলে এলেন। আমার আর স্কুলের ফাইনাল পরিক্ষা আর দেয়া হলো না।
আমরা একটা টিনের ঘরে ভাড়ায় থাকতাম। বাশের চাটাইয়ের বেড়া আর কাচা মাটির মেঝে। রহম আলি খালু বন্দরের তালিকাভুক্ত শ্রমিক। বাবাকেও চাকরি যোগাড় করে দিলেন। এজন্য পাঁচ হাজার টাকা দিতে হয়েছে কোন এক শ্রমিক নেতাকে।

নতুন যায়গা, সবকিছুই অন্যরকম ঠেকতো। প্রথম দিকে মানুষের ভাষা বুজতাম অল্প। কারন চিটাগং, নোয়াখালী, বরিশাল, সিলেটি সহ বহু জেলার লোক থাকতো। সিলেটি লোক ওখানেও ঐসময়ে লন্ডনের হালেই থাকতো। কারন তৎকালীন সময়ে মোংলায় একটা আন্তর্জাতিক মানের আবাসিক হোটেল ছিলো (হোটেল আল-প্রিন্স এন্ড বার) সেটা একজন সিলেটি ভদ্রলোকের ছিলো। আমরা প্রায়ই হোটেলের করিডোরে সাদা সাদা ফরেনার দেখতাম।

আমরা যে বাসায় ভাড়া থকতাম তার পাশের ঘরে একটা নোয়াখালীর পরিবার থাকতো আর অন্য পাশে একটা চিটাগাংয়ের পরিবার থাকতো। ওনাদের অঞ্চলিক কথা অনেকটাই শিখে ফেলেছিলাম বছর খানেকের মধ্যেই।

শফিকের স্কুল আলাদা আমার স্কুল আলাদা। শফিক পোর্ট স্কুলে আর আমি পাদ্রী স্কুলে। দুই স্কুলের দুরত্ব বেশি না। প্রায় প্রতিদিন শফিকের সাথে বিকেলে দেখা হতো। আমরা থানার মাঠে ফুটবল খেলতে আসতাম।

আমরা মুলত শ্রমিক এলাকায় যেটা পৌরসভার এলাকা ওখানেই থাকতাম। শহরের শেষ মাথায় একটা নেভী ক্যাম্প ছিলো আর পাশেই বন্দরের অফিসারের জন্য আবাসিক এলাকা ছিলো। শহরের উত্তর এবং পশ্চিম পাশ দিয়ে প্রবাহিত নদী ছিলো। উত্তর পাশের নদী পার হয়ে বন্দরের জেটি আর পশ্চিমের পশুর নদী সাগরে গিয়ে মিলেছে। বিরাট বিরাট দৈত্যাকার জাহাজ পশুরের বুকে বয়ার সাথে ভেড়ানো থাকতো। সকালে বিকালে নদীর পারে বসে অবাক হয়ে দেখতাম জাহাজগুলো।

প্রায়ই দেখতাম শ্রমিকরা তাদের দাবি দাওয়া নিয়ে বিরাট বিরাট মিছিল মারামারি। অঞ্চলিকতার প্রভাব নিয়ে রক্তক্ষয়ী ফ্যাসাদ লেগেই থাকতো।

সন্ধ্যার পর বাজারে এলে দেখতাম মদ খেয়ে মাতলামি করে অকথ্য গালাগাল করছে দুই এক জন। মোড়ে মোড়ে অসংখ্য পান-বিড়ি-চায়ের দোকান। দুইটা সিনেমা হল তার সামনে সবসময় মানুষ গিজগিজ করতো।

পশুর নদীর পশ্চিম তীরে ছিলো যৌনপল্লী "বানিয়াশান্তা"। প্রথম দিকে বানিয়াশান্তার নাম শুনতাম আশপাশের মহিলাদের ঝগড়া থেকে। ঝগড়ায় একে অন্যকে বলতো তুই বানিশান্তার খানকি। বুজতামনা খানকি কাকে বলে অথবা মনে প্রশ্ন জাগতো খানকিরা কি বানিশান্তায় থাকে?

(চলবে.......)
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে অক্টোবর, ২০২২ দুপুর ১২:১৭
৫টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×