সাম্প্রতিককালে একটি আন্তর্জাতিক কমিউনিটিতে যুক্ত হয়ে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনার সুযোগ হয়েছে। এই আন্তর্জাতিক কমিউনিটিতে ভারত এবং চীনের জনসংখ্যাগত আনুপাতিক কারণে অংশগ্রহণ বেশি। এই কমিউনিটিতে ভারত, চীন ছাড়াও পাকিস্তান, নেপাল, ইউক্রেন, রাশিয়া এবং ইউরোপের ২/১ জন যুক্ত হয়ে থাকেন।
সমস্যাটা হয়েছে ভারত, বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানের মধ্যে। এই তিনটি দেশের মধ্যে ধর্মীয় কারণে দুটি ভাগে বিভক্তি রয়েছে। সেক্যুলার মানসিকতার কারণে ধর্মীয় পরিচয় আমার কাছে মোটেই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়, যদিও সাংস্কৃতিক কারণে ধর্ম আমাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক
এই ধর্মীয় পরিচয়টাই বড় বিপত্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। উল্লিখিত কমিউনিটিতে যখন আমি কথা বলতে গেছি, তখন আমার কাছে আমার দেশ ও ধর্মীয় পরিচয় জানতে চাওয়া হয়েছে।
দেশ ও ধর্মীয় পরিচয় দেওয়ার ফলে প্রথম দুই দিন ভারতীয় মডারেটর আমাকে ও একজন পাকিস্তানিকে কথা বলতে দেননি।
তৃতীয় দিন আমাকে ভিডিও অন করার শর্তে মডারেটর কথা বলার সুযোগ দেন। কথার বিষয়বস্তুতে গুরুত্ব না দিয়ে, মাঝপথে একজন ভারতীয় অংশগ্রহণকারী আমাকে ইসলাম ধর্মাবলম্বী এবং বাংলাদেশি হওয়ায় সেই অনলাইন সভায় ইংরেজি ভাষার বদলে হিন্দিতে চরমভাবে গালিগালাজ করতে শুরু করে।
আমি স্বভাবগতভাবেই সেখানে আর কিছু না বলে অনলাইন মিটিংটি ত্যাগ করি। এখন প্রশ্ন হলো—এই মিটিংয়ের দুজন মানুষের আচরণ দিয়ে কি পুরো ভারতকে বিচার করব, তা বুঝে উঠতে পারছি না। তবে, এই মিটিংয়ের অভিজ্ঞতার কারণে ভারতের প্রতি আমার দৃষ্টিভঙ্গি পুরোপুরি বদলে গেছে।
আমি বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে জাতীয়তা, ধর্মীয় পরিচয় ইত্যাদি আবেগতাড়িত পরিচয়ের ক্ষেত্রে সবসময় নিরপেক্ষ বক্তব্য দিয়ে এসেছি। সেই আমাকেই কিনা ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে বর্ণবৈষম্যের শিকার হতে হলো?
পরে আমার মেয়ে আমাকে বলল—“বাবা, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, চীনসহ বেশ কিছু দেশ খুবই রেসিস্ট।” আমি অনলাইনে যাচাই করে দেখলাম, আমার মেয়ের কথাই পুরোপুরি সত্য।
এই সময়ে, যখন বিজ্ঞান জানে মানুষ কীভাবে পৃথিবীতে এসেছে, যখন মানুষ জানে সে কতটা ক্ষুদ্র, যখন মানুষ জানে এই ইউনিভার্সে প্রকৃতির কাছে মানুষ তো দূরের কথা, পৃথিবী নামক গ্রহটিই অতি অতি অতি নগণ্য—সেখানে একটা মানুষের ধর্ম বা গায়ের রঙ কীভাবে এতটা গুরুত্ব পায়, সেটা আমার বোধগম্য নয়।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই মে, ২০২৫ রাত ১০:৩৯