বিজ্ঞান কল্পকাহিনি ও বাস্তবতার সীমারেখা মুছে দেওয়ার মতো এক সাফল্যে চীনা বিজ্ঞানীরা উদ্ভাবন করেছেন এক শক্তিশালী লেজার-ভিত্তিক ইমেজিং সিস্টেম। এই প্রযুক্তি প্রায় ১.৪ কিলোমিটার দূর থেকে মাত্র ১ মিলিমিটার আকারের লেখা—যা এক দানার চালের থেকেও ছোট—পড়তে সক্ষম। Active Intensity Interferometry নামের এক বিশেষ কৌশল ব্যবহার করে সিস্টেমটি দীর্ঘ দূরত্বে সাধারণত দেখা দেওয়া বায়ুমণ্ডলীয় বিকৃতি এবং কম রেজোলিউশনের সমস্যাগুলো অতিক্রম করে

এই উদ্ভাবন প্রত্নতত্ত্ব, বন্যপ্রাণী পর্যবেক্ষণ এবং নিরাপত্তা সহ নানা ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন আনতে পারে। তবে এর পাশাপাশি এটি গোপনীয়তা, নজরদারি ও নৈতিক ব্যবহারের বিষয়ে নতুন উদ্বেগও তৈরি করেছে। এর অভূতপূর্ব নির্ভুলতা দূরবর্তী পর্যবেক্ষণ প্রযুক্তির জন্য আরও কঠোর বিধিনিষেধ আনতে বাধ্য করতে পারে। বিশেষজ্ঞরা ইতিমধ্যেই এর দায়িত্বশীল ব্যবহারের জন্য আন্তর্জাতিক নির্দেশিকা প্রণয়নের আহ্বান জানাচ্ছেন।
কীভাবে চীনের ‘স্পাই’ লেজার কাজ করে
প্রচলিত দূরবীন ও দীর্ঘ-পাল্লার লেন্সগুলো বাতাসের ব্যাঘাত ও আলোর বিচ্ছুরণের সীমাবদ্ধতার কারণে দূরবর্তী সূক্ষ্ম বিবরণ শনাক্ত করতে হিমশিম খায়। চীনা গবেষকরা সরাসরি ছবি তোলার বদলে আলোর প্রতিফলন কীভাবে ঘটে তা বিশ্লেষণ করে এই সমস্যার সমাধান করেছেন। Active Intensity Interferometry কৌশলে লেজার রশ্মি পাঠানো হয় এবং টার্গেট থেকে প্রতিফলিত আলোর প্যাটার্ন পরিমাপ করা হয়। এই তথ্য ব্যবহার করে অত্যন্ত সূক্ষ্ম বৈশিষ্ট্যের উচ্চ রেজোলিউশনের ছবি পুনর্গঠন করা হয়। এই পদ্ধতি প্রচলিত অপটিক্সের শারীরিক সীমাবদ্ধতা এড়িয়ে যেতে সক্ষম এবং পূর্বে অপ্রবেশযোগ্য পরিবেশে সুনির্দিষ্ট ইমেজিং-এর নতুন সুযোগ তৈরি করে।

কেন এই লেজার রেজোলিউশনে বড় ধরনের অগ্রগতি
একই দূরত্বে প্রচলিত একক দূরবীনের তুলনায় এই লেজার সিস্টেম ১৪ গুণ বেশি রেজোলিউশন দিতে সক্ষম। যেখানে সাধারণ সিস্টেম এক মাইল দূরে কেবল ৪২ মিলিমিটার আকারের বস্তু শনাক্ত করতে পারে, সেখানে নতুন এই লেজার মিলিমিটার আকারের লেখা, লেবেল বা খোদাই স্পষ্টভাবে পড়তে পারে। এর ফলে দূর থেকে পূর্বে অদৃশ্য থাকা সূক্ষ্ম চিহ্নও দেখা সম্ভব হচ্ছে।

গুপ্তচরবৃত্তির সম্ভাবনা
যদিও কেউ কেউ এর সম্ভাব্য গুপ্তচর ব্যবহারের ব্যাপারে চিন্তিত, গবেষকরা এর গঠনমূলক প্রয়োগের দিকেই জোর দিচ্ছেন। প্রত্নতত্ত্ববিদরা পাহাড়ের গায়ে খোদাই পড়তে পারবেন বিপদজনক স্থানে না গিয়েই; পরিবেশবিদরা দূরবর্তী বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন কোনো ক্ষতি না করেই; আর অবকাঠামো পরিদর্শকেরা দূরের সেতু বা ভবনের সূক্ষ্ম ফাটল শনাক্ত করতে পারবেন সহজে।
এরপর কী আসছে
গবেষণা দলটি সিস্টেমের ব্যবহারযোগ্যতা বাড়াতে আরও উন্নত লেজার নিয়ন্ত্রণ তৈরি করছে। একইসঙ্গে তারা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা যুক্ত করার কাজ করছে, যাতে দ্রুত ও রিয়েল-টাইমে আরও নিখুঁত ছবি তৈরি করা যায়। সফল হলে, এই প্রযুক্তি উচ্চ রেজোলিউশন ইমেজিং-এর ক্ষেত্রে একটি মানদণ্ডে পরিণত হতে পারে এবং বহু শাখায় বিপ্লব ঘটাতে পারে। এটির ভবিষ্যৎ উন্নয়নে বহনযোগ্যতা ও সহজে স্কেল করার ক্ষমতা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
--India Today

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


