somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

আলমগীর জনি
সূর্য থেকে অসম্ভব শক্তিশালী আলোকরশ্মি চাঁদের উপর পড়ে। সে চাঁদ কিছুদিন জোছনা বিলায় আমাদের মাঝে।অমাবস্যায় কেউ চাঁদকে ভুলে যায় না।অপেক্ষা করে জোছনা ফিরে আসার ।সূর্য না হই ,মাঝে মধ্যে জোছনা হতে চাই।অমাবস্যায় হাহাকার হতে চাই মানব মনে।

গল্পঃ পাগল

১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



পাকি সেনারা বুট দিয়ে আয়নাল মিয়ার ঘরের দরজায় লাথি দিয়ে যাচ্ছিল।একটু আগেই আয়নালের ডান পায়ে গুলি করে এখন ঘরের ভেতর ঢুকার চেষ্টা করে যাচ্ছে পাকিরা । ঘরের দরজা বন্ধ। ঘরের ভিতরে আয়নালের দুইমাস আগে বিয়ে করা বউ জুলেখা। জুলেখার সাথে বিয়ের আগে প্রায় তিনবছর প্রেম ছিল আয়নালের । যুদ্ধের ডামাডোলে আয়নাল জুলেখাকে জানাল সে যুদ্ধে যাবে ।কিন্তু জুলেখা কোন কথা শুনতে রাজি হয় নি। তার এক কথা তাকে এখনই বিয়ে করতে হবে। আয়নাল কিছু বলতে পারলো না।প্রিয় মানুষটার কথা আয়নাল ফেলতে পারলো না।বিয়ে করে জুলেখাকে ঘরে তুললো সে। বিয়ের পর জুলেখা কোন ভাবেই আয়নালকে যুদ্ধে যেতে দিবে না । তবুও একমাস সংসার করার পর আয়নালের মনে হলো জুলেখার চেয়েও বড় প্রেমিকার আহবান সে প্রত্যাখ্যান করছে । আয়নাল জুলেখাকে বুঝাল জুলেখার চেয়েও বড় প্রেমিকা বড় ভালবাসার নাম বাংলাদেশ । বড় প্রেমের কাছে ছোটপ্রেম নিতান্তই তুচ্ছই। আয়নাল অনেক কষ্ট করে বুঝিয়ে স্ত্রীর অনুমতি নিয়েই যুদ্ধে গেলো। আয়নালদের যুদ্ধের ময়দানে শক্তি জোগানো এমন লাখো জুলেখা ছিল তখন বাংলার মাটিতে।

আয়নাল মিয়া যুদ্ধে গেলো।দুই মাস পর সে আবার জুলেখার সাথে দেখা করতে আসে । বড় প্রেমকে উপেক্ষা করে নয় বরং যুদ্ধের প্রেরণা বাড়ানোর জন্যই আয়নাল জুলেখার কাছে আসে।আর প্রিয় মানুষটাকে এক নজর দেখার লোভ সামলানোর ক্ষমতা কি মানুষের আছে ?

আয়নাল বাড়ি ফিরেছে এই খবর চলে যায় তখন এদেশের জানোয়ারদের কাছে। সেই খবর তারা পৌঁছে দেয় তাদের দোসর পাক হানাদার বাহিনীর কাছে। আয়নাল বউকে এক নজর দেখার পরপরই শুনতে পায় হানাদারদের বুটের শব্দ। আয়নাল জুলেখাকে বলল ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে দিতে।আয়নাল পাশের ঝোপে লুকাতে গেলেই ধরা পড়ে যায় তাদের কাছে। । আয়নাল কে ঘরের বাহিরে বেঁধে তার ডান পায়ে গুলি করল শুয়োরের বাচ্চারা ।আয়নাল তখনো বুঝতে পারি নি যে তার জন্য কি ভয়াবহ দৃশ্য অপেক্ষা করছে ।

হানাদাররা এক সময় ঘরের দরজা খুলে ফেলে। এক এক করে ঘরের ভেতর ঢুকল চারজন পাক সেনা।আয়নাল মিয়ার ঘরে ঢুকার পর ঠিক আধ ঘণ্টা পর পাকি জানোয়াররা বের হলো । যাওয়ার আগে আয়নালের বাম পায়ে গুলি করে যা বলে গেলো তার বাংলা দাঁড়ায় -কুত্তার বাচ্চা ,হারামখোর, যা ঘরে যা। আর বাহির হওয়ার শখ ভুইলা যাইবি ।

এরপর থেকে আয়নাল মিয়া আর সুস্থ হয় নি । আয়নাল মিয়াকে যুদ্ধের পর সবাই পাগল বলে ডাকত।একটা কথা আছে নিজের বুঝ পাগলেও বুঝে। একজন পাগল কিন্তু এক সময় সুস্থ মানুষ ছিল। সে পাগল হয়ে যায় হয়তো তার দুঃখের ভার সে না সইতে পারে না আর।

মুক্তিযোদ্ধা আয়নাল মিয়া এখন শহীদ মিনারে রাত কাটায়।যদিও এই সোনার বাংলার মানুষরা তাদের পাগল বলেই চিনে।

আয়নাল রাতে ঘুমানোর আগে একবার পুরো ঢাকা শহর ঘুরে যায় । ধানমন্ডি ৩২ নাম্বারে শেখের বাড়ির সামনে ঘুরে যায় । এখানে এসেই কি জানি বলতে থাকে । আঙ্গুল আকাশের দিকে দেখিয়ে কি জানি বলে বেড়ায় ।আয়নালের বুকের ভাষা কেউ বুঝে না এখন কিন্তু মুখের ভাষা বুঝতে কারো অসুবিধা হয় না ।কারণ এই কথাগুলো অতি পরিচিত। আয়নাল নিজে সবই বুঝে । আয়নাল আঙুল উঁচিয়ে বলতে থাকে , "এবারের সংগ্রাম ,আমাদের মুক্তির সংগ্রাম।" আয়নাল মুক্তিযোদ্ধাদের কোন ভাস্কর্য দেখলেই কপালে স্যালুট দিয়ে পা দিয়ে জোরে মাটিতে আঘাত করে । আয়নাল ভাবে ইশ! আমিও তো এদের দলে থাকতে পারতাম । আমি কেন বেঁচে গেলাম?

যে যন্ত্রণা নিয়ে আয়নাল মিয়া ঢাকা শহর চষে বেড়ায় সেটা মোটেই তার এক পা নাই বলে নয়। আয়নাল জুলেখার চেহারাটা ভুলতে পারে নি এখনো । জুলেখার ক্ষতবিক্ষত দেহটা আয়নালের চোখে ভাসে এখনো । জুলেখাকে দেখে আয়নালের পায়ের সব ব্যাথা সেদিন হারিয়ে গিয়েছিল ।বুকের ভেতর এক অসম্ভব ঝাঁকুনি খেলো আয়নাল মিয়া । মানুষ কিভাবে মানুষকে এভাবে কুঁকড়ে খেতে পারে সেটা আজ দেখল আয়নাল । আয়নালের মস্তিষ্ক সেদিন থেকেই আজ পর্যন্ত এই ভাবনাটা ভেবেই চলছে ।কিন্তু কোন সুরাহা পায় নি সে । সুরাহা পাবে বলেও মনে হয় না । আয়নাল মিয়া বেঁচে গেছে হয়তো এটা দেখার জন্য যে, দেশ স্বাধীন হলেও জুলেখারা এখনো স্বাধীন হয় নি । ক্যান্টনমেন্টে জুলেখাদের কুঁকড়ে খাওয়া লাশ এখনো পাওয়া যায়। বুড়িগঙ্গার ময়লা পানিতে খড় কুটোর মত এখন জুলেখারা ভেসে যায়। রাস্তার ধারে পাওয়া যায় শকুন রুপী মানুষে খাওয়া ক্ষত বিক্ষত লাশ ।

আইন ও সালিশ কেন্দ্র(আসক) এর হিসাব অনুযায়ী ২০১৭ সালে ধর্ষিত হন প্রায় ৮১৮ জন নারী । এছাড়াও ২০১৭ সালেই ধর্ষিত হয় প্রায় ৫৯৩ জন শিশু ( সুত্রঃ বি এ এস এফ)। এঁদের মধ্যে ৭০ জন শিশু গণ ধর্ষণের শিকার হয়। এই শিশুদের বয়স ১২ বছরেরও কম ।

আয়নাল মিয়ার কাছে এসব হিসাব হয়তো পৌঁছায় না। কারণ যারা পাগল হয়ে যান তারা তখন নিজেদের একটা দুনিয়ার মধ্যেই বসবাস করেন । ভাগ্যিস আয়নাল মিয়ারা আমাদের দুনিয়ার খবর রাখেন না!

[ পুনশ্চঃ গল্পটা রিপোস্ট করা ।

আজ ১৬ ডিসেম্বর। মহান বিজয় দিবস। ১৯৭১ সালে যে উদ্দেশ্য নিয়ে একটি স্বাধীন ভূমির জন্য আত্মত্যাগ করেন এদেশের লাখো বীর যোদ্ধা তাদের সেই সোনার বাংলাদেশ হোক সব কালো থাবা মুক্ত। সবাইকে মহান বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা।

জয় বাংলা।]
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১:২৩
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×