somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সমাজ থেকে একটি ফুল ঝড়ে যায়নি!

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৯:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

- ভাই, আমি রাব্বি আপনি কোথায়?
- আমিতো যশোরে চলে আসছি।
- ভাই, আপনি কাছে থাকলে আপনার পা ধরে সালাম করতাম।
- হঠাৎ পা ধরে সালাম কেন? কি হয়েছে?
- ভাই, আমি চাকরি পেয়েছি
- কি বলছিস! এটাতো সাংঘাতিক খবর!
- হ ভাই, গাজীপুরে অফিস, ঐ অফিসেই থাকতে হইবো।
- তা কেমন বেতন দিবে?
- ৭০০০ টাকা।
- যাক আলহামদুলিল্লাহ। ওভারটাইম আছে?
- আছে ভাই।

কিছু খবর আছে যা ঢাক ঢোল পিটিয়ে সবাইকে বলতে ইচ্ছে করে। আমার মধ্যে যে আনন্দ আর খুশি কাজ করছে তা সবাইকে বিলিয়ে দিতে ইচ্ছে করছে। তার আগে একটি গল্প বলি-


১ম স্ত্রী মারা যাবার পর বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেছে। দ্বিতীয় স্ত্রী তার সৎ ছেলেদের অবহেলা করত। সুযোগ পেলেই মারত। সৎ মায়ের এই অবহেলা ছোট ছেলেটি মেনে নিতে পারেনি। তাই একদিন বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। কমলাপুর রেলষ্টেশনে কুলির কাজ করার মধ্যে দিয়ে নতুন জীবন শুরু হয়।
ক্লাস ফোর পর্যন্ত পড়তে পেরেছিল। সেই পড়াশোনা বাড়ি থেকে পালিয়ে যাবার কারণে ইতি ঘটে। জীবনে কি হবে তার কিছুই জানা নাই। রাস্তার ছেলে হিসেবেই বড় হতে লাগলো। এইভাবে তিনটি বছর কেটে গেল। একদিন ডাচ নাগরিক ব্রাদার লুসিও নামে একজন সাদামনের মানুষ এই ছেলের সন্ধান পান। তার মধ্যে তিনি সম্ভাবনার ঝলক দেখতে পান। তাকে নিয়ে ভর্তি করে দেন একটি শিশু সদনে। এই শিশু সদনের নাম ডাচ-সালম ফ্যামিলি ফর চিলড্রেন। সেই ছেলেটি এখন আগের চেয়ে সুদর্শন হয়েছে। দেখে মনে হবে কোন অভিজাত ঘরের সন্তান। সাভারের নামকরা সেন্ট যোশেফ স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে। এতক্ষণ যে ছেলের কথা বললাম সেই ছেলেটির নাম রাব্বি। এই ছবিতে ল্যাপটপ কোলে নিয়ে বসে আছে যে ছেলেটি তাকে দেখে কি বোঝা যায় সে একসময় কুলির কাজ করত?
দুই বছর আগে ডিউক অব এডিনবার্গ এওয়ার্ড এর আবাসিক প্রকল্প এর অংশ হিসেবে আমরা সেই শিশু সদনে ৫ দিন ছিলাম। সেখানে গিয়ে আমার রাব্বির সাথে পরিচয় হয়। এই ৫ দিনে ওর সাথে আমার বেশ ভালো সম্পর্ক হয়। তার জীবনের কাহিনী শুনলাম। কি করতে চায় ভবিষ্যতে তাও জানলাম। মেধা আছে বেশ তার। ভালো ছবি আঁকতে পারে। ইলেকট্রিক এর কাজ জানে। চুল কাটতে পারে। সে এবং তার কিছু বন্ধুসহ তারা প্রতিমাসে কমলাপুরে আসে। তারপর তারা কমলাপুরের পথশিশুদের চুল কেটে দেয়। আপনারা কখনো কি ভেবেছেন এই পথশিশুদের চুল কে কেটে দেয়? আমি তাদের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছি। আমি চেষ্টা করেছি রাব্বিকে উৎসাহ দেবার। তাকে আমি আমার জীবনের কাহিনি শোনালাম। কিভাবে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলাম তার কাহিনী শোনালাম। সে যেন হেরে না যায়, হাল না ছেঁড়ে দেয় তার জন্য আমি তাকে বলেছি কোন সমস্যায় পড়লে আমাকে জানাতে।
একদিন রাব্বি আমাকে ফোন দিয়ে বলে ভাই, কয়েকদিন পর ঈদ, ঈদের জামা কেনা হয়নি। আমি তখন ছিলাম বেকার। আমার নিজেরই তখন চলতে কষ্ট হয়ে যাচ্ছিল। এদিকে রাব্বিকে কথা দিয়েছিলাম কোন সমস্যায় পরলে জানাতে। আমি তখন ফেইসবুকে রাব্বিকে নিয়ে একটি ফিচার লেখি তখন Prashanta Majumdar ভাই নামের এক সাদামনের মানুষ ভিন্ন ধর্মের হয়েও রাব্বিকে ঈদের পোশাক কিনে দিয়েছিলেন। ধন্যবাদ প্রশান্ত দা। রাব্বির কাহিনী এখানেই শেষ নয়।
পরিবারের আশ্রয়ে বেড়ে না উঠলে শিশুরা উচ্ছ্বৃংখল হয়ে যায়। রাব্বির ক্ষেত্রেও সেটা ঘটেছিল। শিশুসদনের এক মেয়ের সাথে প্রেম শুরু করে দেয়। তাকে নিয়ে পালিয়েও যায়। শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে রাব্বিকে সেই শিশু সদন থেকে বহিষ্কার করা হয়।
আমার খুব ইচ্ছা ছিলো রাব্বিকে একটু গাইড করে একটি ভালো অবস্থানে নিয়ে যাওয়া। ওর মধ্যে সম্ভাবনা আছে। ও পারবে। আমি তখন বেকার ছিলাম, হয়ত আর্থিক সহায়তা দিতে পারতাম না কিন্তু উৎসাহ আর প্রেরণা দিতেতো পারতাম। কিন্তু যখন শুনলাম ও শিশু সদন থেকে পালিয়ে গেছে তখন বেশ খারাপ লাগছিল। ও কি করে খাবে? ওর ভবিষ্যত তো অন্ধকার!
এরপর আমিই রাব্বিকে খুঁজে বের করে ওরে বোঝাই। এটা প্রেম করার বয়স না। তোর চেয়েও খারাপ অবস্থানে থেকে অনেকেই ভালো অবস্থানে চলে গেছে। তাহলে তুই পারবি না কেন? আমি তোকে গাইড করছি, শিশু সদন থেকে তোকে খরচ দিচ্ছে তাহলে তুই থেমে থাকবি কেন?
আমি এতটা ভালো মোটিভেটর নই তবে সেদিন কাজ দিয়েছিল। রাব্বি আর সেই মেয়েটি আবার শিশু সদনে ফিরে যায়। শিশু সদন মেয়েটিকে রাখতে চাইলেও রাব্বির উচ্ছৃংখলতার জন্য তাকে রাখতে চাইনি। তখন আমি শিশু সদনকে বলি- আজ থেকে আমি রাব্বির অভিভাবক। আমি ওর খরচ দিব। শুধু ওরে এখানে থাকতে দিন। আমার প্রস্তাবে তারা রাজি হয়।
আমার মাথায় তখন বিরাট টেনশন। কিভাবে রাব্বির খরচ জোগার করবো। অনেক ভেবেচিন্তে ঠিক করলাম- ওরে জার্মান টেকনিক্যালে ভর্তি করে দিলে ভালো হবে যেহেতু ওর ইলেক্ট্রনিকস এর প্রতি আগ্রহ আছে। রাব্বিকে বোঝাই, সেও রাজি হয় পড়াশোনা ছেড়ে এখানে ভর্তি হতে। সবই ঠিক আছে, কিন্তু খরচ কিভাবে জোগাড় হবে??
আমি যখন টাকার চিন্তা করছিলাম তখন আমার পাশে এসে দাঁড়ালেন আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক রাকিব স্যার। তিনি রাব্বির জার্মান টেকনিক্যালে পড়ার খরচ দিবেন বলে আশ্বস্ত করেন। রাকিব স্যার এর অর্থ আর আমার গাইডেন্স মিলিয়ে রাব্বি এগিয়ে যেতে লাগলো।
আজ রাব্বি ৭০০০ টাকা বেতনে চাকরি পেয়েছে। তার চাকরির খবর শুনে মনে হচ্ছে আমিই যেন চাকরি পেয়েছি। আমি কিন্তু কিছুই করিনি শুধু একটু গাইড করেছি। তাহলে যারা বলেন ভালো কাজ করতে টাকা দরকার, আমার টাকা নেই আমি ভালো কাজ করবো না তাদের উদ্দেশে বলছি ভালো কাজ করতে টাকা নয় ভালো মন দরকার।
আমরা প্রত্যেকেই যদি একজন করে রাব্বির দায়িত্ব নিতাম তাহলে এই দেশ বহু আগেই এগিয়ে যেত। মাত্র একজনের দায়িত্ব! তাকে শুধু গাইড করবেন।

রাব্বির মত সকল ছেলেরা ফুল হয়ে প্রস্ফুটিত হোক এই আশাবাদ ব্যক্ত করছি।
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×