(]মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যাদের এখনও সত্যিকার অর্থে শ্রদ্ধাপুর্ন ভালবাসা আছে এ লেখাটা তাদের জন্য। মুক্তিযুদ্ধে আমার অংশগ্রহন নিয়ে যদি সন্দেহ থাকে তবে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের ওয়েবসাইটে ডিজিলাইজড তালিকাটি দয়া করে দেখে নিবেন,তবু মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাকে অপমানজনক মন্তব্য করবেন না। ধন্যবাদ।)
আামি আজও অবাক হয়ে ভাবি-৫০ বছর আগের আমার মত হাবাগোবা ছেলেটি একাত্তুরে কেমন করে যুদ্ধের মতো ভয়ংকর এবং প্রানহানীর শতকরা ১০০ ভাগ আশংকাময় একটি কাজে জড়িয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।
আব্বা ছিলেন আমাদের এগার ভাইবোনের কাছে এক ভয়ংকর ব্যাক্তিত্ব। আব্বা যা বলতেন তা আমাদের এগার ভাইবোনের কাছে ছিল অনিবার্য আদেশ।পারতে ধারে কাছে যেতামনা।কোনভাবে সামনাসামনি পরে গেলে মাথাটা নিচু করে দ্রুত সরে পড়তাম।আমাদের প্রতি তার স্নেহ আর আমাদের পক্ষ হতেও তার প্রতি শ্রদ্ধার কোন অভাব ছিলনা। কিন্তু দুপক্ষেরই Expression ছিল একদিকে গম্ভীর এবং অন্যদিকে ভয়মিশ্রিত শ্রদ্ধা।সে সময়ের হেডমাষ্টারদের চেহারাটা বোধহয় এমনই ছিল।তিনিও ছিলেন একজন হাই স্কুলের হেডমাষ্টার।তার সামনে সন্তানদের নিয়ে একমাত্র গোল ছিল -লেখাপড়া কর,চাকরী কর। রাজনীতি-কক্ষনও না।
তাই-আমি নিজেই অবাক হই-আমার মত বাপের আলাভোলা এবং ভিতু টাইপের আহ্লাদি পোলাটা শুধু রাজনীতি নয়,যুদ্ধের মত ভয়ানক বিষয়ে নিজের প্রান বিলিয়ে দেয়ার জন্য সিদ্ধান্ত নিল।এটা পরিবারের কাছেও অকল্পনীয় ছিল।
সদ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া বয়সে এত ভয়,এত পারিবারিক পরাধীনতা আমি ছেলেটিকে কিছুটা বিক্ষুব্ধ করে তুলছিল। নিজে কিছু করার মত কিছু কিছু কাজ শুরু করলাম।একই সাথে ভয়ও থাকত যে আব্বা যদি জানেন তবে Minimum dose হিসাবে কানমলা তো অনিবার্য্য।
যদিও খারাপ লাগছিল-তবুও আব্বা আম্মাকে জানিয়ে যুদ্ধে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া আমার পক্ষে সম্ভব ছিলনা কারন পরিবারে যুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে।এবং এ যুদ্ধে আমার পরাজয় নিশ্চিত।কিন্তু ভেতরের আবেগ দিনে দিনে এত বড় আগুনে পরিনিত হতে চলছিল যে আমি তাতে শুধু পুড়ছিলাম-যাতে পারিবারক আবেগ,আদর-স্নেহ দিন দিন অনেক দুরে সরে যাচছিল।
আমার ভয়ভীতি,পরিবারের বড় ছেলের জন্য আদর আহ্লাদ সব বিসর্জন করে আমার গ্রামের আরো একত্রিশ জন যুব দের সংগে নিয়ে জুনের মাঝামাঝি অন্ধকার রাতে পালিয়ে যুদ্ধের জন্য নৌকায় উঠি। পকেটে মাত্র পাকস্হানি ১৩ টাকা।
পরবর্তী আগামী পর্বে.....
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:৩২